কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ

৫. নামাযের অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৪৮
আন্তর্জাতিক নং: ৪৪৮
নামাযের ফরযসমূহ এবং আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের বর্ণনাকারীদের সনদ সম্পর্কিত মতভেদ ও শব্দ প্রয়োগে তাদের বিভিন্নতা
৪৪৯। ইয়াকূব ইবনে ইবরাহীম (রাহঃ) ......... মালিক ইবনে সা’সা’আ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (ﷺ) বলেছেনঃ আমি কাবার নিকট তন্দ্রাচ্ছন্নাবস্থায় ছিলাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম, তিনজনের একটি দলের মধ্যবর্তী ব্যক্তিটি এগিয়ে আসল। আমার নিকট হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি স্বর্ণের পাত্র আনা হল। তারপর ঐ ব্যক্তি আমার সিনার অগ্রভাগ থেকে নাভি পর্যন্ত বিদীর্ণ করলো। তারপর যমযমের পানি দ্বারা ‘কলব’ ধৌত করলো। তারপর হিকমত ও ঈমান দ্বারা তা ভরে দেয়া হল।

পরে আমার নিকট আকারে খচ্চরের চেয়ে ছোট এবং গাধার চেয়ে বড় এরূপ একটি জন্তু আনা হল। আমি জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম)-এর সাথে চলতে থাকি। পরে আমরা দুনিয়ার (নিকতবর্তী) আকাশ পর্যন্ত পৌঁছি। তখন বলা হল, কে? জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) বললেন, (আমি) জিবরাঈল। জিজ্ঞাসা করা হল, আপনার সঙ্গে কে? জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) বললেন, মুহাম্মাদ (ﷺ)। বলা হল, তাঁকে আনার জন্য কি দূত প্রেরণ করা হয়েছে? তাঁকে স্বাগতম, তাঁর আগমন কতই না শুভ।

এরপর আমি আদম (আলাইহিস সালাম) এর নিকট আসলাম, তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, স্বাগতম (হে) পুত্র ও নবী। তারপর আমরা দ্বিতীয় আসমানে আসলাম। জিজ্ঞাসা করা হল, কে? জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) বললেন, (আমি) জিবরাঈল। বলা হল, আপনার সঙ্গে কে? জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) বললেন, মুহাম্মাদ (ﷺ)। পুর্ববৎ তাঁকে স্বাগতম জানানো হল। এরপর আমি ইয়াহইয়া ও ঈসা (আলাইহিমুস সালাম) এর নিকট আসলাম এবং তাঁদের উভয়কে সালাম দিলাম। তাঁরা বললেন স্বাগতম (হে) ভাই ও নবী। তারপর আমরা তৃতীয় আসমানে আসলাম। এখানেও জিজ্ঞাসা করা হল, কে? তিনি বললেন, আমি জিবরাঈল। বলা হল, আপনার সঙ্গে কে?

তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (ﷺ)। পুর্ববৎ তাঁকে স্বাগতম জানানো হল। এখানে আমি ইউসুফ (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট আসলাম এবং তাঁকে সালাম দিলাম। তিনিও বললেন, স্বাগতম (হে) ভাই ও নবী। এরপর আমরা পঞ্চম আসমানে আসলাম। এখানেও পুর্ববৎ প্রশ্নোত্তর হল ও সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হল। পরে আমি হারুন (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট আসলাম এবং তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, স্বাগতম (হে) ভাই ও নবী। এরপর আমরা ষষ্ঠ আসমানে আসলাম। এখানেও প্রশ্ন উত্তর সম্বর্ধনার পর আমি মুসা (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট আসলাম এবং তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, স্বাগতম (হে) ভাই ও নবী।

আমি যখন তাঁকে অতিক্রম করে যাই, তখন তিনি কাঁদতে থাকেন। জিজ্ঞাসা করা হল আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, হে আমার রব! এ যুবক, যাকে আপনি আমার পর নবীরূপে প্রেরণ করেছেন, আমার উম্মত হতে যত সংখ্যক লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাঁর উম্মত থেকে তার চেয়ে অধিক সংখ্যক লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাঁরা মর্যাদায় হবেন শ্রেষ্ঠতর। তারপর আমরা সপ্তম আসমানে আসলাম। এখানেও পূর্বের ন্যায় প্রশ্ন-উত্তর ও সম্বর্ধনার পর আমি ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর সঙ্গে সাক্ষাত করলাম। তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি বললেন, খোশ আমদেদ স্বাগতম (হে) পুত্র ও নবী। তারপর আমার সামনে বায়তুল মা’মূর তুলে ধরা হল।

আমি জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, এ কোন স্থান? তিনি বললেন, এ বায়তুল মা’মূর। এখানে প্রতিদিন সত্তর হাজার ফিরিশতা নামায আদায় করেন। একদিনে যারা এখানে নামায আদায় করেন, তারা এখানে কোনদিন প্রত্যাবর্তন করবেন না। এটাই তাদের শেষ (প্রবেশ)। তারপর আমার সামনে ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ তুলে ধরা হল। তার (সিদরাতুল মুনতাহার) গাছের ফল আকারে হাজর (নামক স্থান-এর) কলসীর ন্যায় এবং পাতাগুলো হাতির কানের মত এবং দেখলাম যে, তার মূল হতে চারটি নহর প্রবাহমান। দু’টি অপ্রকাশ্য ও দু’টি প্রকাশ্য।

আমি জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম)-কে এগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, অপ্রকাশ্য নহর দু’টি জান্নাতে প্রবাহমান। আর প্রকাশ্য নহর দু’টির একটি ফুরাত ও অন্যটি নীল। তারপর আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হল। ফেরার পথে আমি মুসা (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট এলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি করে আসলেন? বললাম, আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়েছে।

তিনি বললেন, আমি মানুষের (প্রকৃতি) সম্পর্কে আপনার চেয়ে অধিক অবগত। আমি বনী ইসরাঈলকে নিয়ে কঠিনভাবে চেষ্টা করেছি। একথা নিশ্চিত যে, এগুলো আদায় করতে আপনার উম্মত সক্ষম হবে না। আপনি আপনার রবের নিকট ফিরে যান এবং এ নির্দেশ সহজ করে নিয়ে আসুন। আমি আমার প্রতিপালকের নিকট পুনরায় গেলাম এবং এ বিধান সহজ করার আবেদন জানালাম। এতে তিনি চল্লিশ ওয়াক্ত করে দিলেন।

আমি আবার মুসা (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট এলাম। তিনি বললেন, আপনি কি করে আসলেন? আমি বললাম, চল্লিশ ওয়াক্ত করে দিয়েছেন। তিনি এবারও আমাকে পূর্বের ন্যায় বললেন। আমি আমার মহান প্রতিপালকের নিকট ফিরে গেলাম। তিনি এবার ত্রিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। আমি আবার মুসা (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট এলাম এবং তাকে অবহিত করলাম। তিনি আমাকে পূর্বের মত বললেন।

আমি আবার প্রতিপালকের নিকট হাযির হলাম। তিনি বিশ ওয়াক্ত করে দিলেন। এরপর দশ ওয়াক্ত এবং তারপর পাঁচ ওয়াক্ত করে দিলেন। এরপরে আমি মুসা (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট এলাম। তিনি পূর্বের মত একই কথা বললেন। আমি বললাম, আমি আবার আল্লাহর নিকট যেতে লজ্জাবোধ করছি। তারপর আল্লাহর তরফ থেকে ঘোষণা দেয়া হল, আমি আমার বিধান চূড়ান্ত করলাম এবং আমার বান্দাদের জন্য সহজ করে দিলাম। আর আমি একটি নেককাজের বিনিময়ে দশটি প্রতিদান দিব।
باب فَرْضِ الصَّلاَةِ وَذِكْرِ اخْتِلاَفِ النَّاقِلِينَ فِي إِسْنَادِ حَدِيثِ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ - رضى الله عنه - وَاخْتِلاَفِ أَلْفَاظِهِمْ فِيهِ
أَخْبَرَنَا يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، قَالَ حَدَّثَنَا هِشَامٌ الدَّسْتَوَائِيُّ، قَالَ حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ مَالِكِ بْنِ صَعْصَعَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " بَيْنَا أَنَا عِنْدَ الْبَيْتِ بَيْنَ النَّائِمِ وَالْيَقْظَانِ إِذْ أَقْبَلَ أَحَدُ الثَّلاَثَةِ بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ فَأُتِيتُ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ مَلآنَ حِكْمَةً وَإِيمَانًا فَشَقَّ مِنَ النَّحْرِ إِلَى مَرَاقِّ الْبَطْنِ فَغَسَلَ الْقَلْبَ بِمَاءِ زَمْزَمَ ثُمَّ مُلِئَ حِكْمَةً وَإِيمَانًا ثُمَّ أُتِيتُ بِدَابَّةٍ دُونَ الْبَغْلِ وَفَوْقَ الْحِمَارِ ثُمَّ انْطَلَقْتُ مَعَ جِبْرِيلَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَأَتَيْنَا السَّمَاءَ الدُّنْيَا فَقِيلَ مَنْ هَذَا قَالَ جِبْرِيلُ . قِيلَ وَمَنْ مَعَكَ قَالَ مُحَمَّدٌ . قِيلَ وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ مَرْحَبًا بِهِ وَنِعْمَ الْمَجِيءُ جَاءَ فَأَتَيْتُ عَلَى آدَمَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ قَالَ مَرْحَبًا بِكَ مِنِ ابْنٍ وَنَبِيٍّ . ثُمَّ أَتَيْنَا السَّمَاءَ الثَّانِيَةَ قِيلَ مَنْ هَذَا قَالَ جِبْرِيلُ . قِيلَ وَمَنْ مَعَكَ قَالَ مُحَمَّدٌ فَمِثْلُ ذَلِكَ فَأَتَيْتُ عَلَى يَحْيَى وَعِيسَى فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِمَا فَقَالاَ مَرْحَبًا بِكَ مِنْ أَخٍ وَنَبِيٍّ . ثُمَّ أَتَيْنَا السَّمَاءَ الثَّالِثَةَ قِيلَ مَنْ هَذَا قَالَ جِبْرِيلُ . قِيلَ وَمَنْ مَعَكَ قَالَ مُحَمَّدٌ فَمِثْلُ ذَلِكَ فَأَتَيْتُ عَلَى يُوسُفَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ قَالَ مَرْحَبًا بِكَ مِنْ أَخٍ وَنَبِيٍّ . ثُمَّ أَتَيْنَا السَّمَاءَ الرَّابِعَةَ فَمِثْلُ ذَلِكَ فَأَتَيْتُ عَلَى إِدْرِيسَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَقَالَ مَرْحَبًا بِكَ مِنْ أَخٍ وَنَبِيٍّ . ثُمَّ أَتَيْنَا السَّمَاءَ الْخَامِسَةَ فَمِثْلُ ذَلِكَ فَأَتَيْتُ عَلَى هَارُونَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ قَالَ مَرْحَبًا بِكَ مِنْ أَخٍ وَنَبِيٍّ . ثُمَّ أَتَيْنَا السَّمَاءَ السَّادِسَةَ فَمِثْلُ ذَلِكَ ثُمَّ أَتَيْتُ عَلَى مُوسَى عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَقَالَ مَرْحَبًا بِكَ مِنْ أَخٍ وَنَبِيٍّ . فَلَمَّا جَاوَزْتُهُ بَكَى قِيلَ مَا يُبْكِيكَ قَالَ يَا رَبِّ هَذَا الْغُلاَمُ الَّذِي بَعَثْتَهُ بَعْدِي يَدْخُلُ مِنْ أُمَّتِهِ الْجَنَّةَ أَكْثَرُ وَأَفْضَلُ مِمَّا يَدْخُلُ مِنْ أُمَّتِي . ثُمَّ أَتَيْنَا السَّمَاءَ السَّابِعَةَ فَمِثْلُ ذَلِكَ فَأَتَيْتُ عَلَى إِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَقَالَ مَرْحَبًا بِكَ مِنِ ابْنٍ وَنَبِيٍّ . ثُمَّ رُفِعَ لِيَ الْبَيْتُ الْمَعْمُورُ فَسَأَلْتُ جِبْرِيلَ فَقَالَ هَذَا الْبَيْتُ الْمَعْمُورُ يُصَلِّي فِيهِ كُلَّ يَوْمٍ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ فَإِذَا خَرَجُوا مِنْهُ لَمْ يَعُودُوا فِيهِ آخِرَ مَا عَلَيْهِمْ ثُمَّ رُفِعَتْ لِي سِدْرَةُ الْمُنْتَهَى فَإِذَا نَبِقُهَا مِثْلُ قِلاَلِ هَجَرٍ وَإِذَا وَرَقُهَا مِثْلُ آذَانِ الْفِيَلَةِ وَإِذَا فِي أَصْلِهَا أَرْبَعَةُ أَنْهَارٍ نَهْرَانِ بَاطِنَانِ وَنَهْرَانِ ظَاهِرَانِ فَسَأَلْتُ جِبْرِيلَ فَقَالَ أَمَّا الْبَاطِنَانِ فَفِي الْجَنَّةِ وَأَمَّا الظَّاهِرَانِ فَالْفُرَاتُ وَالنِّيلُ ثُمَّ فُرِضَتْ عَلَىَّ خَمْسُونَ صَلاَةً فَأَتَيْتُ عَلَى مُوسَى فَقَالَ مَا صَنَعْتَ قُلْتُ فُرِضَتْ عَلَىَّ خَمْسُونَ صَلاَةً . قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ بِالنَّاسِ مِنْكَ إِنِّي عَالَجْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَشَدَّ الْمُعَالَجَةِ وَإِنَّ أُمَّتَكَ لَنْ يُطِيقُوا ذَلِكَ فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَاسْأَلْهُ أَنْ يُخَفِّفَ عَنْكَ فَرَجَعْتُ إِلَى رَبِّي فَسَأَلْتُهُ أَنْ يُخَفِّفَ عَنِّي فَجَعَلَهَا أَرْبَعِينَ ثُمَّ رَجَعْتُ إِلَى مُوسَى عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَقَالَ مَا صَنَعْتَ قُلْتُ جَعَلَهَا أَرْبَعِينَ . فَقَالَ لِي مِثْلَ مَقَالَتِهِ الأُولَى فَرَجَعْتُ إِلَى رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ فَجَعَلَهَا ثَلاَثِينَ فَأَتَيْتُ عَلَى مُوسَى عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ لِي مِثْلَ مَقَالَتِهِ الأُولَى فَرَجَعْتُ إِلَى رَبِّي فَجَعَلَهَا عِشْرِينَ ثُمَّ عَشْرَةً ثُمَّ خَمْسَةً فَأَتَيْتُ عَلَى مُوسَى عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَقَالَ لِي مِثْلَ مَقَالَتِهِ الأُولَى فَقُلْتُ إِنِّي أَسْتَحِي مِنْ رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ أَنْ أَرْجِعَ إِلَيْهِ فَنُودِيَ أَنْ قَدْ أَمْضَيْتُ فَرِيضَتِي وَخَفَّفْتُ عَنْ عِبَادِي وَأَجْزِي بِالْحَسَنَةِ عَشْرَ أَمْثَالِهَا " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ইসরা ও মি'রাজের সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে বায়তুল মাকদিসে গমন করেন। সেখানে নবীগণকে নিয়ে নামায পড়েন। তারপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁকে নিয়ে এক এক করে সাত আসমান পাড়ি দেন। প্রত্যেক আসমানে পৌঁছলে সে আসমানের দ্বাররক্ষী জিজ্ঞেস করে, কে? হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, আমি জিবরীল। তারপর জিজ্ঞেস করে, আপনার সঙ্গে কে? তিনি উত্তর দেন, মুহাম্মাদ। এভাবে প্রত্যেকবার তিনি পরিচয় দিতে গিয়ে নিজের নাম বলেছেন। বলেননি যে, আমি। নাম বলতে গিয়েও নিজের সুপরিচিত নাম 'জিবরীল' বলেছেন। অন্য কোনও নাম নয়। তাঁর এছাড়া আরও নাম আছে, যেমন আর-রূহুল আমীন, রূহুল কুদ্‌স। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিচয় দিতে গিয়েও তিনি তাঁর সুপরিচিত নাম 'মুহাম্মাদ' উল্লেখ করেছেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরও আরও বহু নাম আছে, যেমন আহমাদ, আল-মাহী, আল-হাশির, আল-আকিব ইত্যাদি। তাঁর কুনয়াত বা উপনাম হল আবুল কাসিম। তিনি খাতামুন নাবিয়্যীন। তিনি সায়্যিদুল বাশার। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম এসবের কোনওটিই না বলে উভয় প্রসিদ্ধ ও পরিচিত নামই বলেছেন। এর দ্বারা বোঝা গেল ঘরের ভেতর থেকে আগন্তুকের পরিচয় জানতে চাওয়া হলে তাকে যে নামে সবাই চেনে সেই নাম বলেই পরিচয় দিতে হবে। 'আমি' বলা কিংবা এমন কোনও নাম বা উপাধি বলাও ঠিক নয়, যা বললে জিজ্ঞাসাকারী তাকে ভালোভাবে চিনতে পারবে না। পরিচয় জিজ্ঞেস করার উদ্দেশ্যই তো চিনতে পারা। যা বললে সে চিনতে পারবে না, তা বলার ফায়দা কী? তাতে বরং ঝামেলাই বাড়ে। কথা বেশি বলতে হয়, সময়ও নষ্ট হয়।

অনেক সময় বাক্তি বড় হলে নিজ নাম বলতে আত্মসম্মানে বাধে। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম ও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে বড় মাখলূক আর কে আছে? তাঁদেরই যখন পরিচয় দিতে গিয়ে নিজ নাম বলতে কুণ্ঠাবোধ হয়নি, তখন অন্যদের কেন এতে আপত্তি লাগবে? অকপটে নিজ নাম উচ্চারণ করার দ্বারা কেবল পরিচয়দানই সহজ হয় না; এটা বিনয়েরও পরিচায়ক।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা ও মি'রাজের ঘটনা সত্য। এতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।

খ. আকাশ সাতটি। এতেও বিশ্বাস রাখতে হবে।

গ. প্রত্যেক আকাশে উপরে ওঠার দরজা আছে। আছে দরজার প্রহরীও। একেক ফিরিশতাকে আল্লাহ তা'আলা একেক দরজার দায়িত্বে নিযুক্ত করেছেন।

ঘ. দ্বাররক্ষী ফিরিশতাগণ সদা সতর্ক ও সচেতন। দায়িত্বপালনে তাদের দ্বারা কখনও কোনও ত্রুটি হয় না।

ঙ. কারও দরজায় পৌঁছলে নিজের নাম-পরিচয় দেওয়া কর্তব্য।

চ. পরিচয় দিতে গিয়ে সবাই যে নামে চেনে সেটাই বলা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সুনানে নাসায়ী - হাদীস নং ৪৪৮ | মুসলিম বাংলা