কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ
১. পবিত্রতা অর্জনের অধ্যায়
হাদীস নং: ৮২
আন্তর্জাতিক নং: ৮২
ওযুর বর্ণনায় উভয় কব্জি ধৌত করা প্রসঙ্গে
৮২। মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম বসরী (রাহঃ) ......... মুগীরা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। তাঁর কাছে একটি লাঠি ছিল। (পথের এক স্থানে) তিনি লাঠিটি দিয়ে আমার পিঠে ঠোকা দিলেন। পরে তিনি রাস্তা থেকে সরে গেলেন। আমিও তাঁর সঙ্গে সরে গেলাম। (কিছুক্ষণ চলার পর) এক স্থানে এসে উট থামালেন। তারপর তিনি আবার চলতে লাগলেন। রাবী বলেনঃ তিনি এতদুর গেলেন যে, আমার থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
(ক্ষণিক পর) ফিরে এসে বললেন, তোমার নিকট পানি আছে? আমার সাথে একটি পানির পাত্র ছিল। আমি তা নিয়ে তাঁর নিকট আসলাম এবং পানি ঢেলে দিতে লাগলাম। তিনি তাঁর হাত মুখ ধুলেন এবং কব্জির উপরিভাগ ধৌত করতে চাইলেন। তখন তাঁর পরিধানে ছিল চিকন হাতার একটি শামী (সিরীয়) জুব্বা। তিনি জুব্বার ভেতর থেকে হাত বের করে আনলেন এবং মুখমণ্ডল ও হাত ধৌত করলেন। তিনি কপাল ও পাগড়ির কিছু অংশ মাসাহ করেছিলেন বলে রাবী উল্লেখ করেছেন।
(হাদীসের একজন রাবী) ইবনে আওন (রাহঃ) বলেনঃ আমার যেমন ইচ্ছা ছিল হাদীসটি তেমন স্মরণ রাখতে পারিনি। (অতঃপর রাবী বলেন) এরপর তিনি তাঁর মোজার উপর মাসাহ করেন এবং বললেনঃ তোমার প্রয়োজন সমাধা করো। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার প্রয়োজন নেই। তারপর আমরা চলে আসলাম। আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাযিঃ) অগ্রগামী দলে ছিলেন।
(এদিকে রাসূল (ﷺ) এর বিলম্বের কারণে) আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাযিঃ) লোকদেরকে নিয়ে ফজরের নামায এক রাকআত আদায় করলেন। আমি আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাযিঃ) কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আগমন সংবাদ দেয়ার ইচ্ছা করি কিন্তু তিনি (নবী (ﷺ)) আমাকে নিষেধ করেন। অতএব আমরা যতটুকু পেলাম তা (জামাআতে) আদায় করলাম এবং যা আমরা পাইনি তা নিজেরা আদায় করে নিলাম।
(ক্ষণিক পর) ফিরে এসে বললেন, তোমার নিকট পানি আছে? আমার সাথে একটি পানির পাত্র ছিল। আমি তা নিয়ে তাঁর নিকট আসলাম এবং পানি ঢেলে দিতে লাগলাম। তিনি তাঁর হাত মুখ ধুলেন এবং কব্জির উপরিভাগ ধৌত করতে চাইলেন। তখন তাঁর পরিধানে ছিল চিকন হাতার একটি শামী (সিরীয়) জুব্বা। তিনি জুব্বার ভেতর থেকে হাত বের করে আনলেন এবং মুখমণ্ডল ও হাত ধৌত করলেন। তিনি কপাল ও পাগড়ির কিছু অংশ মাসাহ করেছিলেন বলে রাবী উল্লেখ করেছেন।
(হাদীসের একজন রাবী) ইবনে আওন (রাহঃ) বলেনঃ আমার যেমন ইচ্ছা ছিল হাদীসটি তেমন স্মরণ রাখতে পারিনি। (অতঃপর রাবী বলেন) এরপর তিনি তাঁর মোজার উপর মাসাহ করেন এবং বললেনঃ তোমার প্রয়োজন সমাধা করো। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার প্রয়োজন নেই। তারপর আমরা চলে আসলাম। আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাযিঃ) অগ্রগামী দলে ছিলেন।
(এদিকে রাসূল (ﷺ) এর বিলম্বের কারণে) আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাযিঃ) লোকদেরকে নিয়ে ফজরের নামায এক রাকআত আদায় করলেন। আমি আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাযিঃ) কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আগমন সংবাদ দেয়ার ইচ্ছা করি কিন্তু তিনি (নবী (ﷺ)) আমাকে নিষেধ করেন। অতএব আমরা যতটুকু পেলাম তা (জামাআতে) আদায় করলাম এবং যা আমরা পাইনি তা নিজেরা আদায় করে নিলাম।
صفة الوضوء :
غسل الكفين
غسل الكفين
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الْبَصْرِيُّ، عَنْ بِشْرِ بْنِ الْمُفَضَّلِ، عَنِ ابْنِ عَوْنٍ، عَنْ عَامِرٍ الشَّعْبِيِّ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الْمُغِيرَةِ، عَنِ الْمُغِيرَةِ، وَعَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ، عَنْ رَجُلٍ، حَتَّى رَدَّهُ إِلَى الْمُغِيرَةِ - قَالَ ابْنُ عَوْنٍ وَلاَ أَحْفَظُ حَدِيثَ ذَا مِنْ حَدِيثِ ذَا - أَنَّ الْمُغِيرَةَ قَالَ كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي سَفَرٍ فَقَرَعَ ظَهْرِي بِعَصًا كَانَتْ مَعَهُ فَعَدَلَ وَعَدَلْتُ مَعَهُ حَتَّى أَتَى كَذَا وَكَذَا مِنَ الأَرْضِ فَأَنَاخَ ثُمَّ انْطَلَقَ . قَالَ فَذَهَبَ حَتَّى تَوَارَى عَنِّي ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ " أَمَعَكَ مَاءٌ " . وَمَعِي سَطِيحَةٌ لِي فَأَتَيْتُهُ بِهَا فَأَفْرَغْتُ عَلَيْهِ فَغَسَلَ يَدَيْهِ وَوَجْهَهُ وَذَهَبَ لِيَغْسِلَ ذِرَاعَيْهِ وَعَلَيْهِ جُبَّةٌ شَامِيَّةٌ ضَيِّقَةُ الْكُمَّيْنِ فَأَخْرَجَ يَدَهُ مِنْ تَحْتِ الْجُبَّةِ فَغَسَلَ وَجْهَهُ وَذِرَاعَيْهِ وَذَكَرَ مِنْ نَاصِيَتِهِ شَيْئًا وَعِمَامَتِهِ شَيْئًا - قَالَ ابْنُ عَوْنٍ لاَ أَحْفَظُ كَمَا أُرِيدُ ثُمَّ مَسَحَ عَلَى خُفَّيْهِ - ثُمَّ قَالَ " حَاجَتَكَ " . قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ لَيْسَتْ لِي حَاجَةٌ فَجِئْنَا وَقَدْ أَمَّ النَّاسَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ وَقَدْ صَلَّى بِهِمْ رَكْعَةً مِنْ صَلاَةِ الصُّبْحِ فَذَهَبْتُ لأُوذِنَهُ فَنَهَانِي فَصَلَّيْنَا مَا أَدْرَكْنَا وَقَضَيْنَا مَا سُبِقْنَا
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এখানে হাদীসটি সংক্ষিপ্ত আকারে আনা হয়েছে। অন্যান্য বর্ণনার আলোকে নিম্নে পূর্ণাঙ্গ হাদীস ও তার ব্যাখ্যা পেশ করা হলো।
হযরত মুগীরা ইবন শু'বা রাযি. বলেন, কোনও এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সফরে ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, তোমার কাছে কি পানি আছে? আমি বললাম, হাঁ। তিনি সাওয়ারি থেকে নামলেন। তারপর হাঁটতে থাকলেন। এমনকি তিনি রাতের অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। তারপর ফিরে আসলেন। আমি পাত্র থেকে তাঁর হাতে পানি ঢেলে দিলাম। তিনি মুখ ধুইলেন। তাঁর গায়ে একটি পশমের জুব্বা ছিল। তিনি তার ভেতর থেকে বাহুদু'টি বের করতে পারলেন না। শেষে জুব্বার নিচ দিয়ে সে দু'টি বের করলেন। তারপর তা ধুইলেন। তারপর মাথা মাসাহ করলেন। আমি তাঁর মোজাদু'টি খুলতে উদ্যত হলাম। তিনি বললেন, এ দু'টি ছেড়ে দাও। আমি এ দু'টি পরেছি পবিত্র অবস্থায়। তিনি তার উপর মাসাহ করলেন।
এ বর্ণনায় হযরত মুগীরা ইবন শু'বা রাযি. যে ঘটনা উল্লেখ করেছেন, তা ঘটেছিল তাবুকের যুদ্ধে। রোমানদের বিরুদ্ধে পরিচালিত এ যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল হিজরী ৯ম সনে। এটাই ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের সর্বশেষ যুদ্ধাভিযান। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি উটনীর পিঠে সওয়ার ছিলেন। তাঁর সে উটনীটির নাম ছিল আল-কাসওয়া। তাঁর ইস্তিঞ্জার প্রয়োজন হলে উটনীর পিঠ থেকে নেমে রাতের অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে যান। অর্থাৎ তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। এটা ইস্তিঞ্জার আদব। ইস্তিঞ্জার জরুরত হলে যথাসম্ভব মানুষের দৃষ্টির আড়ালেই তা সম্পন্ন করা উচিত।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রাকৃতিক প্রয়োজন সম্পন্ন করার পর সঙ্গীদের কাছে ফিরে আসলেন। তিনি আগেই জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়েছিলেন যে, হযরত মুগীরা ইবন শু'বা রাযি.-এর কাছে পানি আছে। সুতরাং তিনি ওযু করতে বসে গেলেন। এটা ছিল ফজরের সময়। তিনি ফজরের নামাযের জন্য ওযু করছিলেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিধানে ছিল একটি পশমের জুব্বা। এক বর্ণনায় সেটিকে শামী জুব্বা বলা হয়েছে। অর্থাৎ সেটি ছিল শামের তৈরি। সেকালে শাম বলতে বর্তমানকালের ফিলিস্তীন, জর্ডান, লেবানন ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাকে বোঝানো হত।
হযরত মুগীরা রাযি. পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযু করছিলেন। হাত ধোওয়ার সময় তিনি জুব্বার হাতা গুটাতে পারছিলেন না। কারণ হাতা ছিল সংকীর্ণ। অগত্যা জুব্বার ভেতর থেকে হাত বের করে আনেন। তিনি চেহারা ধুইলেন, কনুই পর্যন্ত হাত ধুইলেন, মাথা মাসাহ করলেন, তারপর আসল পা ধোওয়ার পালা। কিন্তু তাঁর পায়ে মোজা পরিহিত ছিল। হযরত মুগীরা রাযি. চিন্তা করলেন পা ধোওয়ার জন্য তো মোজা খুলতে হবে। তাই তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পা থেকে মোজা খুলে দিতে উদ্যত হলেন। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বলে তাঁকে বারণ করলেন যে, আমি পবিত্র অবস্থায় এ দু'টি পরিধান করেছি। তারপর তিনি মোজার উপর মাসাহ করলেন।
এখানে দু'টি বিষয় লক্ষণীয়। এক হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পা না ধুয়ে মোজার উপর মাসাহ করেছেন। এর দ্বারা বোঝা গেল পায়ে মোজা পরা থাকলে তা খুলে পা ধোওয়ার প্রয়োজন নেই; মাসাহ করাই যথেষ্ট। এ বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের সকল ইমাম একমত। এমনকি মোজার উপর মাসাহ করার বৈধতায় বিশ্বাস করা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের অন্তর্ভুক্ত থাকার পরিচায়ক। শী'আ সম্প্রদায় এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে। তাদের মতে মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয নয়।
দ্বিতীয় বিষয় হল হযরত মুগীরা ইবন শু'বা রাযি. মোজা খুলে দিতে চাইলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এটা পরিধান করেছি পবিত্র অবস্থায়। অর্থাৎ পবিত্র অবস্থায় মোজা পরিধান করলে তার উপর মাসাহ করাই যথেষ্ট। পা ধোওয়া জরুরি নয়। এরই ভিত্তিতে মাসআলা হল কেউ যদি ওযু না থাকা অবস্থায় মোজা পরিধান করে আর এ অবস্থায় তার ওযুর প্রয়োজন হয়, তবে তাকে মোজা খুলে পা ধুইতে হবে। তার জন্য মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয হবে না। তা জায়েয হয় কেবল তখনই, যখন ওযু অবস্থায় মোজা পরিধান করা হয়। তারপর যখন তার ওষু ভেঙে যাবে, তখন নতুন ওযু করার জন্য মোজা খুলতে হবে না; বরং মোজার উপর দিয়ে মাসাহ করলেই যথেষ্ট হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. পশমের তৈরি পোশাক পরা জায়েয।
খ. অমুসলিম জাতির তৈরি করা পোশাক পরা মুসলিমদের জন্য দূষণীয় নয়।
গ. ওযু করাতে অন্যের সহযোগিতা নেওয়া জায়েয আছে। যেমন একজন পানি ঢেলে দিল এবং অন্যজন তা দ্বারা ওযু করল।
ঘ. মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয।
হযরত মুগীরা ইবন শু'বা রাযি. বলেন, কোনও এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সফরে ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, তোমার কাছে কি পানি আছে? আমি বললাম, হাঁ। তিনি সাওয়ারি থেকে নামলেন। তারপর হাঁটতে থাকলেন। এমনকি তিনি রাতের অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। তারপর ফিরে আসলেন। আমি পাত্র থেকে তাঁর হাতে পানি ঢেলে দিলাম। তিনি মুখ ধুইলেন। তাঁর গায়ে একটি পশমের জুব্বা ছিল। তিনি তার ভেতর থেকে বাহুদু'টি বের করতে পারলেন না। শেষে জুব্বার নিচ দিয়ে সে দু'টি বের করলেন। তারপর তা ধুইলেন। তারপর মাথা মাসাহ করলেন। আমি তাঁর মোজাদু'টি খুলতে উদ্যত হলাম। তিনি বললেন, এ দু'টি ছেড়ে দাও। আমি এ দু'টি পরেছি পবিত্র অবস্থায়। তিনি তার উপর মাসাহ করলেন।
এ বর্ণনায় হযরত মুগীরা ইবন শু'বা রাযি. যে ঘটনা উল্লেখ করেছেন, তা ঘটেছিল তাবুকের যুদ্ধে। রোমানদের বিরুদ্ধে পরিচালিত এ যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল হিজরী ৯ম সনে। এটাই ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের সর্বশেষ যুদ্ধাভিযান। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি উটনীর পিঠে সওয়ার ছিলেন। তাঁর সে উটনীটির নাম ছিল আল-কাসওয়া। তাঁর ইস্তিঞ্জার প্রয়োজন হলে উটনীর পিঠ থেকে নেমে রাতের অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে যান। অর্থাৎ তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান। এটা ইস্তিঞ্জার আদব। ইস্তিঞ্জার জরুরত হলে যথাসম্ভব মানুষের দৃষ্টির আড়ালেই তা সম্পন্ন করা উচিত।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রাকৃতিক প্রয়োজন সম্পন্ন করার পর সঙ্গীদের কাছে ফিরে আসলেন। তিনি আগেই জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়েছিলেন যে, হযরত মুগীরা ইবন শু'বা রাযি.-এর কাছে পানি আছে। সুতরাং তিনি ওযু করতে বসে গেলেন। এটা ছিল ফজরের সময়। তিনি ফজরের নামাযের জন্য ওযু করছিলেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিধানে ছিল একটি পশমের জুব্বা। এক বর্ণনায় সেটিকে শামী জুব্বা বলা হয়েছে। অর্থাৎ সেটি ছিল শামের তৈরি। সেকালে শাম বলতে বর্তমানকালের ফিলিস্তীন, জর্ডান, লেবানন ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাকে বোঝানো হত।
হযরত মুগীরা রাযি. পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযু করছিলেন। হাত ধোওয়ার সময় তিনি জুব্বার হাতা গুটাতে পারছিলেন না। কারণ হাতা ছিল সংকীর্ণ। অগত্যা জুব্বার ভেতর থেকে হাত বের করে আনেন। তিনি চেহারা ধুইলেন, কনুই পর্যন্ত হাত ধুইলেন, মাথা মাসাহ করলেন, তারপর আসল পা ধোওয়ার পালা। কিন্তু তাঁর পায়ে মোজা পরিহিত ছিল। হযরত মুগীরা রাযি. চিন্তা করলেন পা ধোওয়ার জন্য তো মোজা খুলতে হবে। তাই তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পা থেকে মোজা খুলে দিতে উদ্যত হলেন। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বলে তাঁকে বারণ করলেন যে, আমি পবিত্র অবস্থায় এ দু'টি পরিধান করেছি। তারপর তিনি মোজার উপর মাসাহ করলেন।
এখানে দু'টি বিষয় লক্ষণীয়। এক হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পা না ধুয়ে মোজার উপর মাসাহ করেছেন। এর দ্বারা বোঝা গেল পায়ে মোজা পরা থাকলে তা খুলে পা ধোওয়ার প্রয়োজন নেই; মাসাহ করাই যথেষ্ট। এ বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের সকল ইমাম একমত। এমনকি মোজার উপর মাসাহ করার বৈধতায় বিশ্বাস করা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা'আতের অন্তর্ভুক্ত থাকার পরিচায়ক। শী'আ সম্প্রদায় এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে। তাদের মতে মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয নয়।
দ্বিতীয় বিষয় হল হযরত মুগীরা ইবন শু'বা রাযি. মোজা খুলে দিতে চাইলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এটা পরিধান করেছি পবিত্র অবস্থায়। অর্থাৎ পবিত্র অবস্থায় মোজা পরিধান করলে তার উপর মাসাহ করাই যথেষ্ট। পা ধোওয়া জরুরি নয়। এরই ভিত্তিতে মাসআলা হল কেউ যদি ওযু না থাকা অবস্থায় মোজা পরিধান করে আর এ অবস্থায় তার ওযুর প্রয়োজন হয়, তবে তাকে মোজা খুলে পা ধুইতে হবে। তার জন্য মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয হবে না। তা জায়েয হয় কেবল তখনই, যখন ওযু অবস্থায় মোজা পরিধান করা হয়। তারপর যখন তার ওষু ভেঙে যাবে, তখন নতুন ওযু করার জন্য মোজা খুলতে হবে না; বরং মোজার উপর দিয়ে মাসাহ করলেই যথেষ্ট হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. পশমের তৈরি পোশাক পরা জায়েয।
খ. অমুসলিম জাতির তৈরি করা পোশাক পরা মুসলিমদের জন্য দূষণীয় নয়।
গ. ওযু করাতে অন্যের সহযোগিতা নেওয়া জায়েয আছে। যেমন একজন পানি ঢেলে দিল এবং অন্যজন তা দ্বারা ওযু করল।
ঘ. মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
