কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

৩৬. ইসলামী শিষ্টাচারের অধ্যায়

হাদীস নং: ৫০১০
আন্তর্জাতিক নং: ৫০৯৮
১১১. ঝড়-বাতাদের সময় যে দুআ পাঠ করবে।
৫০১০. আহমদ ইবনে সালিহ (রাহঃ) ..... নবী (ﷺ)-এর স্ত্রী আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে এত জোরে হাসতে দেখিনি, যাতে তাঁর আলজিভ দেখা যেতো, বরং যখন হাসতেন, তখন মুচকি হাসতেন। আর যখন তিনি মেঘ বা জোরে বাতাস প্রবাহিত হতে দেখতেন, তখন তাঁর চেহারায় অস্থিরতা প্রকাশ পেতো। তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করিঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! মানুষেরা এজন্য মেঘ দেখে খুশী হয় যে, এখনই বৃষ্টিপাত হবে। কিন্তু আমি দেখি যে, যখনই আপনি মেঘ দেখেন, তখনই আপনার চেহারায় অস্থিরতা ফুটে উঠে? তখন তিনি বলেনঃ হে আয়িশা! আমার ভয় হয়, না জানি এতে আযাব আছে কি না? কেননা, পূর্ববর্তী এক কওমের উপর বাতাদের আযাব এসেছিল। অপর এক কওম (ছামূদ) মেঘ দেখে বলেছিলঃ এ মেঘতো আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবে! (কিন্তু তা থেকে তাদের উপর আযাব স্বরূপ পাথর বর্ষিত হয়েছিল।)
باب مَا يَقُولُ إِذَا هَاجَتِ الرِّيحُ
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ صَالِحٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنَا عَمْرٌو، أَنَّ أَبَا النَّضْرِ، حَدَّثَهُ عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ عَائِشَةَ، زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهَا قَالَتْ مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَطُّ مُسْتَجْمِعًا ضَاحِكًا حَتَّى أَرَى مِنْهُ لَهَوَاتِهِ إِنَّمَا كَانَ يَتَبَسَّمُ وَكَانَ إِذَا رَأَى غَيْمًا أَوْ رِيحًا عُرِفَ ذَلِكَ فِي وَجْهِهِ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ النَّاسُ إِذَا رَأَوُا الْغَيْمَ فَرِحُوا رَجَاءَ أَنْ يَكُونَ فِيهِ الْمَطَرُ وَأَرَاكَ إِذَا رَأَيْتَهُ عُرِفَتْ فِي وَجْهِكَ الْكَرَاهِيَةُ فَقَالَ " يَا عَائِشَةُ مَا يُؤَمِّنُنِي أَنْ يَكُونَ فِيهِ عَذَابٌ قَدْ عُذِّبَ قَوْمٌ بِالرِّيحِ وَقَدْ رَأَى قَوْمٌ الْعَذَابَ فَقَالُوا هَذَا عَارِضٌ مُمْطِرُنَا " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাসি তিন রকম হয়ে থাকে। এক হল মুচকি হাসি। এ হাসিতে মুখ খোলে না ও দাঁত দেখা যায় না। কেবল ঠোঁট প্রসারিত হয় ও চেহারা উদ্ভাসিত হয়। আরবীতে একে تَبسم ও اِبتِسَامُ বলে। যে হাসিতে মুখ খুলে যায় ও দাঁত দেখা যায় কিন্তু শব্দ হয় না, তাকে ضحك বলে। আর যদি শব্দও হয়, তবে তাকে বলা হয় قهقهَةٌ অর্থাৎ অট্টহাসি।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও অট্টহাসি দিতেন না। অধিকাংশ সময় তাঁর হাসি হতো মুচকি হাসি। যেমনটা এ হাদীছে বলা হয়েছে। কখনও কখনও তিনি মুখ খুলেও হাসি দিতেন। তখন তাঁর সামনের দাঁতসমূহ দেখা যেত।

مُسْتَجْمعًا শব্দটির উৎপত্তি اِسْتِجمَاعٌ থেকে। এর অর্থ একত্র করা, জড়ো করা, পরিপূর্ণরূপে সম্পাদন করা। এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাসিতে ঠোঁট, দাঁত, মুখগহ্বর ইত্যাদি হাসির অঙ্গসমূহের পরিপূর্ণ ব্যবহার করতেন না। অর্থাৎ সবগুলো অঙ্গের ব্যবহার দ্বারা পূর্ণাঙ্গ হাসি তিনি দিতেন না। অধিকাংশ সময় কেবল ঠোঁটের সাহায্যে মুচকি হাসি দিতেন।

এর দ্বারা বোঝানো উদ্দেশ্য হাসির ক্ষেত্রেও তিনি পরিমিত স্বভাবের ছিলেন। হাসির বিপুল বিস্তার ও অট্টহাসি দিয়ে তিনি নিজ ভাবগাম্ভীর্য নষ্ট করতেন না। যত বড় আনন্দের বিষয়ই হোক না কেন, তাতে তাঁর শান্ত সমাহিত ভাব ক্ষুণ্ণ হতে পারত না। সে আনন্দের প্রকাশে তিনি মুচকি হাসি দিয়েই ক্ষান্ত থাকতেন। বড়জোর সামনের দাঁত দেখা যেত। এর বেশি নয়। অর্থাৎ কখনওই শব্দ করে হাসতেন না।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

গাম্ভীর্য ও ধীর-শান্ত প্রকৃতি রক্ষা করা সর্বাবস্থায় কাম্য ও প্রশংসনীয়। এমনকি হাসি ও আনন্দ প্রকাশের ক্ষেত্রেও।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন
সুনানে আবু দাউদ - হাদীস নং ৫০১০ | মুসলিম বাংলা