আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

২৬- ক্রয় - বিক্রয়ের অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ২০৬২
১২৮৫. ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বের হওয়া। মহান আল্লাহর বাণীঃ তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহের সন্ধান কর। (৬২:১০)
১৯৩৩. মুহাম্মাদ (রাহঃ) ......... উবাইদুল্লাহ ইবনে উমায়র (রাহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আবু মুসা আশআরী (রাযিঃ) উমর ইবনে খাত্তাব (রাযিঃ)-এর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইলে তাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি; সম্ভবতঃ তিনি কোন কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তাই আবু মুসা (রাযিঃ) ফিরে আসেন। পরে উমর (রাযিঃ) পেরেশান হয়ে বললেন, আমি কি আব্দুল্লাহ ইবনে কায়স (আবু মুসার নাম) এর আওয়াজ শুনতে পাইনি? তাঁকে আসতে বল। কেউ বলল, তিনি তো ফিরে চলে গেছেন। উমর (রাযিঃ) তাঁকে ডেকে পাঠালেন। তিনি (উপস্থিত হয়ে) বললেন, আমাদের এরূপই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উমর (রাযিঃ) বললেন, তোমাকে এর উপর সাক্ষী পেশ করতে হবে। আবু মুসা (রাযিঃ) ফিরে গিয়ে আনসারদের এক মজলিসে পৌঁছে তাদের এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। তাঁরা বললেন, এ ব্যাপারে আমাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ)-ই সাক্ষ্য দেবে। তিনি আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ)-কে নিয়ে গেলেন। উমর (রাযিঃ) (তার কাছ থেকে সে হাদীসটি শুনে) বললেন, (কি আশ্চর্য) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নির্দেশ কি আমার কাছ থেকে গোপন রয়ে গেল? (আসল ব্যাপার হল) বাজারের ক্রয়-বিক্রয় অর্থাৎ ব্যবসায়ের জন্য বের হওয়া আমাকে অনবহিত রেখেছে।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বস্তুত এটা ছিল হযরত উমর ফারুক রাযি.-এর দূরদর্শীতা ও হাদীছ বিষয়ে তাঁর কঠোর সতর্কতা। হযরত আবূ মূসা রাযি.-এর বিশ্বস্ততায় তাঁর কোনও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু হাদীছ যেহেতু শরী'আতের দলীল, তাই এর বর্ণনায় যাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয় সেটাই ছিল তাঁর লক্ষ্যবস্তু। তাঁর আমলে তিনি ছিলেন সমগ্র উম্মতের অভিভাবক। তাই উম্মতের দীন ও দুনিয়া উভয় বিষয়ে তাঁর সতর্ক অবস্থান বাঞ্ছনীয় ছিল। বিশেষত এ শরী'আত যেহেতু সর্বশেষ শরী'আত, তাই কিয়ামত পর্যন্ত এর সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উম্মতের উলামা ও শাসকবর্গের অপরিহার্য কর্তব্য ছিল। সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে পরবর্তী শত শত বছর উম্মতের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ এ কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে এসেছে। ফলে আজ এ আখেরী শরী'আত ও এর উৎস কুরআন-সুন্নাহ যথাযথভাবে সংরক্ষিত আছে।

যাহোক অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা হল তিনবার। তিনবারের পর আর অনুমতি চাওয়া সঙ্গত নয়। এটা পীড়াপীড়ির মধ্যে পড়ে। কাউকে পীড়াপীড়ি করে কষ্ট দেওয়া উচিত না। অনুমতি চাইলে যে অনুমতি দিতেই হবে এর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। মানুষের নানারকম ওজর থাকতে পারে। হয়তো এমন সময় অনুমতি চাওয়া হয়েছে, যখন অনুমতি দেওয়াটা সম্ভব নয়। তা দিতে গেলে বিশেষ কষ্ট বা পেরেশানি হবে। সাক্ষাৎপ্রার্থীর উচিত মানুষের কষ্ট-ক্লেশ বা ওজর-অজুহাতকে সম্মান দেওয়া এবং অনুমতি না পাওয়াকে সহজভাবে গ্রহণ করা। হাঁ, সাক্ষাৎপ্রার্থীর প্রয়োজনও বিশেষ জরুরি হতে পারে। তাই যথাসম্ভব অনুমতি দেওয়া বাঞ্ছনীয়। কঠিন ওজর না থাকলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া সঙ্গত নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে আগে অনুমতি নেওয়া জরুরি।

খ. অনুমতি চাওয়ার সর্বোচ্চ সীমা তিনবার। তৃতীয়বারেও অনুমতি পাওয়া না গেলে ফিরে যেতে হবে। চতুর্থ বার অনুমতি চাওয়া বিধিসম্মত নয়।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন