আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

২৬- ক্রয় - বিক্রয়ের অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ২০৪৮
১২৭৭.আল্লাহ্ তাআলার এ বাণী সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে (ইরশাদ করছেন): সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে ও আল্লাহ্ তাআলাকে অধিক স্মরন করবে, যাতে তোমরা সফলকাম হও। যখন তারা দেখল ব্যবসায় কৌতুক, তখন তারা আপনাকে দাঁড়ান অবস্থায় রেখে সেদিকে ছুটে গেল। বলুন,আল্লাহ্ তাআলার নিকট যা আছে, তা ক্রীড়া-কৌতুক ও ব্যবসা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা। (৬২:১০-১১)। আর আল্লাহ্ তাআলার বাণী: তোমরা নিজেদের মধ্যে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করোনা। কিন্তু তোমাদের পরস্পর রাযী হয়ে ব্যবসা করা বৈধ।
১৯২০. আব্দুল আযীয ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) ......... আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রাযিঃ) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন মদীনায় আসি, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার এবং সা’দ ইবনে রাবী’ (রাযিঃ) এর মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন সৃষ্টি করে দেন। পরে সা’দ ইবনে রাবী’ বললেন, আমি আনসারদের মাঝে অধিক ধন-সম্পত্তির অধিকারী। আমার অর্ধেক সম্পত্তি তোমাকে ভাগ করে দিচ্ছি এবং আমার উভয় স্ত্রীকে দেখে যাকে তোমার পছন্দ হয়, বল আমি তাকে তোমার জন্য পরিত্যাগ করব। যখন (সে ইদ্দত পূর্ণ করবে), তখন তুমি তাকে বিবাহ করে নিবে। আব্দুর রহমান (রাযিঃ) বললেন, এ সবে আমার কোন প্রয়োজন নেই। বরং (আপনি বলুন) ব্যবসা বাণিজ্য করার মতো কোন বাজার আছে কি? তিনি বললেন, কায়নুকার বাজার আছে। পরের দিন আব্দুর রহমান (রাযিঃ) সে বাজারে গিয়ে পনীর ও ঘি (খরিদ করে) নিয়ে আসলেন। এরপর ক্রমাগত যাওয়া আসা করতে থাকেন। কিছুকাল পরে আব্দুর রহমান (রাযিঃ) এর কাপড়ে বিয়ের মেহেদী দেখা গেল। এতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি বিবাহ করেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সে কে? তিনি বললেন, জনৈকা আনসারী মহিলা। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কী পরিমাণ মাহর দিয়েছ? আব্দুর রহমান (রাযিঃ) বললেন, খেজুরের এক আঁটি পরিমাণ স্বর্ণ। নবী করীম (ﷺ) তাঁকে বললেন, একটি বকরী দিয়ে হলেও ওয়ালীমা কর।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ওলীমা বলা হয় ওই দাওয়াতের অনুষ্ঠানকে, যা বিবাহের পর ছেলের বাড়িতে করা হয়ে থাকে। এটা করা সুন্নত। হযরত আব্দুর রহমান ইবন আওফ রাযি. বিবাহ করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে হুকুম করলেন أولم ولو بشاة “তুমি ওলীমা কর, যদিও একটি ছাগল দ্বারা হয়।২৯৫
ওলীমার অনুষ্ঠান যখন সুন্নত, তখন সামর্থ্য অনুযায়ী এটা করা উচিত। আর এটা যেহেতু সুন্নত, তখন করাও উচিত সুন্নতের মর্যাদা রক্ষা করে শরীআতবিরোধী কোনও কর্মকাণ্ড তাতে যুক্ত করা বাঞ্ছনীয় নয়। ওলীমার অনুষ্ঠান যদি শরীআতবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত হয়, তবে তার দাওয়াত কবুল করা চাই। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন إذا دعي أحدكم إلى الوليمة فليأتها ‘তোমাদের কাউকে ওলীমার দাওয়াত দেওয়া হলে সে যেন তাতে আসে।২৯৬

ওলীমার দাওয়াত কবুল করা জরুরি কেবল তখনই, যখন তাতে আপত্তিকর কিছু না থাকে। যদি তাতে আপত্তিকর কিছু থাকে, তখন তা কবুল করা জরুরি নয়। ইদানীংকার অধিকাংশ দাওয়াতই এমন, যাতে যাওয়ার পরিবেশ থাকে না। সুন্নত দাওয়াতকেও নানারকম পাপাচারে পঙ্কিল করে ফেলা হয়েছে। ওলীমার দাওয়াত সুন্নত। কিন্তু আজকাল অধিকাংশ ওলীমার অনুষ্ঠান সহীহ পন্থায় হয় না। তাতে গানবাদ্য থাকে, পর্দার পরিবর্তে থাকে পর্দাহীনতার প্রতিযোগিতা, নারী-পুরুষ একই জায়গায় বসে খাওয়া-দাওয়া করা হয়, থাকে উপহারের প্রদর্শনী ও উপহার লেনদেনের সামাজিক বাধ্যবাধকতা, এছাড়াও নানারকম অনুচিত উপসর্গ। দীনদার ব্যক্তির এ জাতীয় দাওয়াতে যাওয়ার কোনও উপায় থাকে না। তাদের বরং না যাওয়াই উচিত। হাঁ, যদি সেখানে গিয়ে আপত্তিকর বিষয়গুলো অপসারণ করতে পারবে বলে আত্মবিশ্বাস থাকে, তবে ভিন্ন কথা। আগেও এরকম শর্ত দেওয়া যেতে পারে যে, অনুষ্ঠানে আপত্তিকর কিছু করা চলবে না। তারপর যাওয়ার পর যদি দেখা যায় যথাযথভাবে কথা রাখা হয়নি, তবে কোনও কিছুর পরওয়া না করে ফিরে আসবে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার ছবিযুক্ত পর্দা দেখে নিজ ঘরেই ঢোকা হতে বিরত থেকেছিলেন। একবার মেয়ে-জামাতা হযরত ফাতিমা রাযি. ও হযরত আলী রাযি.-এর বাড়ি থেকেও ফিরে এসেছিলেন। একবার হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাযি. এক দাওয়াতে গিয়ে দেখতে পান দেওয়ালে পর্দা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কেন অর্থের এ অপচয়, এ কারণে তিনি সেখান থেকে ফিরে আসেন। তাঁরা আমাদের আদর্শ। তাঁদের পথে চলাতেই সঠিক সমাজগঠন ও সমাজ সংস্কারে সফলতা নির্ভর করে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ওলীমা করা সুন্নত।

খ. সামর্থ্য অনুযায়ী ওলীমা করা উচিত।

২৯৫. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২০৪৮; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৪২৭; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২১০৯; জামে তিরমিযী, হাদীছ নং ১০৯৪; সুনানে নাসাঈ, হাদীছ নং ৩৩৫১; সুনানে ইবন মাজাহ, হাদীছ নং ১৯০৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ১২৬৮৫, মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীছ নং ১০৪১০; মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবা, হাদীছ নং ১৭১৫৯

২৯৬. সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ৫১৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীছ নং ১৪২৯; সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২৭৩৬; নাসাঈ, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ৬৫৭৩; সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীছ নং ৫২৯৪; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১৪৫১৩; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং ২৩১৩
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন