কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ
৩৬. ইসলামী শিষ্টাচারের অধ্যায়
হাদীস নং: ৪৮০৪
আন্তর্জাতিক নং: ৪৮৮২
৩৯. গীবত বা পরনিন্দা সম্পর্কে।
৪৮০৪. ওয়াসিল ইবনে আব্দুল আ’লা (রাহঃ) ..... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ মুসলমানের জন্য প্রত্যেক কষ্টদায়ক বস্তু অন্য মুসলমানের জন্য হারাম, অর্থাৎ তার মাল তার ইযযাত ও তার রক্ত এবং কোন ব্যক্তির জন্য এ অন্যায়টুকু যথেষ্ট যে, সে তার মুসলমান ভাইকে নগণ্য বলে মনে করে।
باب فِي الْغِيبَةِ
حَدَّثَنَا وَاصِلُ بْنُ عَبْدِ الأَعْلَى، حَدَّثَنَا أَسْبَاطُ بْنُ مُحَمَّدٍ، عَنْ هِشَامِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ مَالُهُ وَعِرْضُهُ وَدَمُهُ حَسْبُ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ " .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
একে অন্যের জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তাদান
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- كل المسلم على المسلم حرام عرضه وماله ودمه ‘এক মুসলিমের সবই অপর মুসলিমের উপর হারাম তার মান-সম্ভ্রম, তার ধন-সম্পদ ও তার রক্ত'। হাদীছের এ অংশে আমাদেরকে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি মূলনীতি বলে দেওয়া হয়েছে। তা এই যে, ঈমান ও ইসলামের কারণে এক মুসলিমের সবকিছুই নিরাপদ হয়ে যায়। তার কোনও কিছুতেই অন্যায় হস্তক্ষেপ করা কারও জন্য বৈধ নয়।
এতে প্রথমে 'সবকিছুই হারাম বলার পর তার ব্যাখ্যা করে দেওয়া হয়েছে তার মান-সম্ভ্রম, তার ধন-সম্পদ ও তার রক্ত। অর্থাৎ এ তিনটিই হচ্ছে তার সবকিছু। প্রকৃতপক্ষে একজন মানুষের মূল বিষয় এ তিনটিই তার জান, তার মাল ও তার ইজ্জত। জান বা রক্ত হচ্ছে তার অস্তিত্ব, মাল ও সম্পদ তার অস্তিত্ব রক্ষার উপকরণ আর ইজ্জত-সম্মান হচ্ছে তার বৈশিষ্ট্য, যা দ্বারা অন্যান্য জীবজন্তু হতে তার পার্থক্য নিরূপিত হয়। অস্তিত্ব সকল জীবেরই আছে। কোনও না কোনও ধরনের মালও তাদের আছে। কিন্তু ইজ্জত-সম্মান কেবল মানুষেরই বিশেষত্ব। এর দ্বারা তার মানবিক অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। ইজ্জত-সম্মানবিহীন মানুষ পশুতুল্য। তাই ইসলাম মানুষের ইজ্জত-সম্মানকে তার অস্তিত্ব ও সম্পদের সমান মর্যাদা দিয়েছে। এর প্রত্যেকটিকেই অন্যদের জন্য হারাম ও মর্যাদাপূর্ণ করেছে, যা ক্ষুণ্ণ করা কারও জন্য জায়েয নয়। কারও প্রতি এমন কোনও আচরণ করা জায়েয নয়, যা দ্বারা তার সম্মানের হানি হতে পারে। কারও অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করা বা তাতে কোনওরকম খেয়ানত করা সম্পূর্ণ অবৈধ। এমনিভাবে কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা, শারীরিক আঘাত করা বা কোনও অঙ্গহানি ঘটানো কঠিন পাপ ও নাজায়েয।
প্রকৃতপক্ষে অন্যের জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা রক্ষা করা তাকওয়ার মাধ্যমেই সম্ভব। যার মধ্যে আল্লাহভীতি আছে, কেবল সেই অন্যের এ তিন বিষয়ের উপর আঘাত করা হতে বিরত থাকতে পারে। যার মধ্যে তাকওয়া ও আল্লাহভীতি নেই, তার দ্বারা কোনও না কোনওভাবে অন্যের হক নষ্ট হয়েই যায়। হয়তো সে শারীরিকভাবে কাউকে কষ্ট দেবে, কিংবা অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ ভোগ করবে অথবা ইচ্ছা-অনিচ্ছায় অন্যের ইজ্জত-সম্মানের উপর আঘাত করবে। এর প্রত্যেকটিই কঠিন পাপ। এ পাপ থেকে আত্মরক্ষার জন্য প্রত্যেকের কর্তব্য তাকওয়ার অধিকারী হওয়া।
কোনও মুসলিমকে তুচ্ছ মনে না করা
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন এক ব্যক্তির মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ গণ্য করবে'। অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার কোনও মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ গণ্য করে সে নেহাৎ মন্দ। কিভাবে কোনও মুসলিম ব্যক্তিকে তুচ্ছ গণ্য করা যেতে পারে, যখন আল্লাহ তাআলা তাকে সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এর মধ্যকার যাবতীয় বিষয়কে তার সেবায় নিয়োজিত করে দিয়েছেন, তাকে মুসলিম, মুমিন ও বান্দা নামে অভিহিত করেছেন এবং তার স্বজাতীয়দের মধ্য থেকে আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম বান্দা তথা নবী-রাসূল মনোনীত করেছেন? কিছুতেই তা করা যায় না। তা করা অহংকারেরই নামান্তর। অহংকার করা কঠিন পাপ। হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন মাস'উদ রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- الكبر بطر الحق وغمط الناس “অহংকার হচ্ছে সত্য প্রত্যাখ্যান করা ও মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা।
অহংকারের পরিণাম জান্নাত থেকে বঞ্চিত হয়ে যাওয়া। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সতর্ক করেনঃ- لا يدخل الجنة من كان في قلبه مثقال ذرة من كبر 'যার অন্তরে কণা পরিমাণ অহংকার আছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
তাকওয়াই যখন মানুষের মর্যাদার মাপকাঠি, তখন কাউকে ছোট মনে করার সুযোগ কই? কেউ টাকা-পয়সার কমতি দ্বারা ছোট হয়ে যায় না। ছোট হয় না চেহারা সুরতের ঘাটতি দ্বারাও। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানিয়ে দিয়েছেনঃ- إن الله لا ينظر إلى صوركم وأموالكم ولكن ينظر إلى قلوبكم وأعمالكم 'আল্লাহ তোমাদের চেহারা-সুরত ও অর্থ-সম্পদ দেখেন না, তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও আমল।
তিনি যখন অন্তর ও আমল দেখেন, চেহারা-সুরত ও অর্থ-সম্পদ নয়, তখন কর্তব্য নিজ অন্তর ও আমল ভালো করার সাধনায় লিপ্ত থাকা। অন্যের চেহারা-সুরত ও সম্পদের কমতি দেখে ধোঁকায় পড়া উচিত নয়। হযরত বিলাল হাবশী রাযি. হযরত আতা ইব্ন আবী রাবাহ রহ. এবং এরকম হাজারও আল্লাহওয়ালা দুনিয়া ও আখেরাতের মর্যাদা কুঁড়িয়েছিলেন অন্তরের তাকওয়া ও বিশুদ্ধ আমল দ্বারাই। চেহারা সুরত ও অর্থ-সম্পদে তারা লাখও মানুষের চেয়ে পেছনে ছিলেন। সে পেছনে থাকাটা আল্লাহর কাছে তাদের এগিয়ে থাকা ও মর্যাদালাভে বাধা হয়নি। এখনও তা কারও জন্য বাধা নয়। কাজেই কাউকে এ ক্ষেত্রে পেছনে দেখলে সে-যে তাকওয়া পরহেযগারী দ্বারা আমার চেয়ে এগিয়ে নয় তা কী করে বলা যাবে? সে এগিয়ে থাকা ব্যক্তিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা নিজেকেই ধোঁকা দেওয়ার নামান্তর।
সুতরাং কোনও অন্ধ, খঞ্জ, বিকলাঙ্গ বা কৃষ্ণাঙ্গকে শারীরিক ত্রুটির কারণে তুচ্ছ মনে করার কোনও সুযোগ নেই। কোনও গরীব বা অশিক্ষিতকেও ছোট মনে করার অবকাশ নেই। এমনকি কোনও পাপীকেও নিজের চেয়ে ক্ষুদ্র ভাবার বৈধতা নেই। এরা সকলেই সহানুভূতি ও সহমর্মিতা পাওয়ার হকদার। এক মুমিন আরেক মুমিনের আয়না। তাই পাপীর ক্ষেত্রে কর্তব্য দরদী মন নিয়ে তাকে পাপ থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা, পাপের কারণে তাকে ঘৃণা করা নয়। শারীরিক বা কর্মগত ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে কারও প্রতি অপ্রীতিকর আচার-আচরণ বাঞ্ছনীয় নয়। তারা বয়সে বড় হলে তো শ্রদ্ধাই তাদের প্রাপ্য। বয়সে ছোট হলে তারা স্নেহের পাত্র। যদি তারা সমবয়সী হয়, তবে তাদের প্রতি ভাইয়ের মত আচরণই সমীচীন।
ইয়াহইয়া ইব্ন মুআয রহ, বড় সুন্দর বলেছেন- তোমার কাছ থেকে মুমিন ব্যক্তির প্রাপ্য তিনটি : তুমি তার উপকার করতে না পারলে অন্তত ক্ষতি করবে না; তাকে আনন্দ দিতে না পারলে অন্তত দুঃখ দেবে না; তার প্রশংসা করতে না পারলে অন্তত নিন্দা করবে না।
এ হাদীছের সারকথা হচ্ছে, প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য সে প্রত্যেক মুমিন-মুসলিমকে নিজের চেয়ে উৎকৃষ্ট গণ্য করবে। বয়সে যে ছোট তাকে উত্তম মনে করবে এ কারণে যে, সে হয়তো গুনাহ করেইনি অথবা তারচে' কম করেছে, বড়কে এ কারণে যে, সে তারচে বেশি ইবাদত-বন্দেগী করেছে। আলেমকে উৎকৃষ্ট মনে করবে তার ইলমের কারণে আর বে-আলেমকে এ কারণে যে, সে গুনাহ করে ফেলেছে অজ্ঞতার কারণে, জেনেশুনে নয়। আমি আলেম হয়ে থাকলে জেনেশুনে কত পাপ করি, যা তুলনামূলকভাবে বেশি অন্যায়। এমনকি কাফের ব্যক্তির ক্ষেত্রেও তো শেষটায় ঈমান ও তাওবার সম্ভাবনা আছে। তাকেইবা ঘৃণা করার অবকাশ কই? আসল ধর্তব্য তো শেষ অবস্থাই। আল্লাহ তাআলা আমাদের শেষ অবস্থা শুভ করুন ঈমানের সঙ্গে মৃত্যু দান করুন, আমীন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. মুসলিম ব্যক্তির জান, মাল ও ইজ্জতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকব। এ তিনটির কোনও ক্ষেত্রেই কারও প্রতি জুলুম করব না।
খ. কখনও কোনও মুসলিম ব্যক্তিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করব না।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- كل المسلم على المسلم حرام عرضه وماله ودمه ‘এক মুসলিমের সবই অপর মুসলিমের উপর হারাম তার মান-সম্ভ্রম, তার ধন-সম্পদ ও তার রক্ত'। হাদীছের এ অংশে আমাদেরকে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি মূলনীতি বলে দেওয়া হয়েছে। তা এই যে, ঈমান ও ইসলামের কারণে এক মুসলিমের সবকিছুই নিরাপদ হয়ে যায়। তার কোনও কিছুতেই অন্যায় হস্তক্ষেপ করা কারও জন্য বৈধ নয়।
এতে প্রথমে 'সবকিছুই হারাম বলার পর তার ব্যাখ্যা করে দেওয়া হয়েছে তার মান-সম্ভ্রম, তার ধন-সম্পদ ও তার রক্ত। অর্থাৎ এ তিনটিই হচ্ছে তার সবকিছু। প্রকৃতপক্ষে একজন মানুষের মূল বিষয় এ তিনটিই তার জান, তার মাল ও তার ইজ্জত। জান বা রক্ত হচ্ছে তার অস্তিত্ব, মাল ও সম্পদ তার অস্তিত্ব রক্ষার উপকরণ আর ইজ্জত-সম্মান হচ্ছে তার বৈশিষ্ট্য, যা দ্বারা অন্যান্য জীবজন্তু হতে তার পার্থক্য নিরূপিত হয়। অস্তিত্ব সকল জীবেরই আছে। কোনও না কোনও ধরনের মালও তাদের আছে। কিন্তু ইজ্জত-সম্মান কেবল মানুষেরই বিশেষত্ব। এর দ্বারা তার মানবিক অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। ইজ্জত-সম্মানবিহীন মানুষ পশুতুল্য। তাই ইসলাম মানুষের ইজ্জত-সম্মানকে তার অস্তিত্ব ও সম্পদের সমান মর্যাদা দিয়েছে। এর প্রত্যেকটিকেই অন্যদের জন্য হারাম ও মর্যাদাপূর্ণ করেছে, যা ক্ষুণ্ণ করা কারও জন্য জায়েয নয়। কারও প্রতি এমন কোনও আচরণ করা জায়েয নয়, যা দ্বারা তার সম্মানের হানি হতে পারে। কারও অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করা বা তাতে কোনওরকম খেয়ানত করা সম্পূর্ণ অবৈধ। এমনিভাবে কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা, শারীরিক আঘাত করা বা কোনও অঙ্গহানি ঘটানো কঠিন পাপ ও নাজায়েয।
প্রকৃতপক্ষে অন্যের জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা রক্ষা করা তাকওয়ার মাধ্যমেই সম্ভব। যার মধ্যে আল্লাহভীতি আছে, কেবল সেই অন্যের এ তিন বিষয়ের উপর আঘাত করা হতে বিরত থাকতে পারে। যার মধ্যে তাকওয়া ও আল্লাহভীতি নেই, তার দ্বারা কোনও না কোনওভাবে অন্যের হক নষ্ট হয়েই যায়। হয়তো সে শারীরিকভাবে কাউকে কষ্ট দেবে, কিংবা অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ ভোগ করবে অথবা ইচ্ছা-অনিচ্ছায় অন্যের ইজ্জত-সম্মানের উপর আঘাত করবে। এর প্রত্যেকটিই কঠিন পাপ। এ পাপ থেকে আত্মরক্ষার জন্য প্রত্যেকের কর্তব্য তাকওয়ার অধিকারী হওয়া।
কোনও মুসলিমকে তুচ্ছ মনে না করা
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন এক ব্যক্তির মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ গণ্য করবে'। অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার কোনও মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ গণ্য করে সে নেহাৎ মন্দ। কিভাবে কোনও মুসলিম ব্যক্তিকে তুচ্ছ গণ্য করা যেতে পারে, যখন আল্লাহ তাআলা তাকে সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এর মধ্যকার যাবতীয় বিষয়কে তার সেবায় নিয়োজিত করে দিয়েছেন, তাকে মুসলিম, মুমিন ও বান্দা নামে অভিহিত করেছেন এবং তার স্বজাতীয়দের মধ্য থেকে আল্লাহর শ্রেষ্ঠতম বান্দা তথা নবী-রাসূল মনোনীত করেছেন? কিছুতেই তা করা যায় না। তা করা অহংকারেরই নামান্তর। অহংকার করা কঠিন পাপ। হযরত আব্দুল্লাহ ইব্ন মাস'উদ রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- الكبر بطر الحق وغمط الناس “অহংকার হচ্ছে সত্য প্রত্যাখ্যান করা ও মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা।
অহংকারের পরিণাম জান্নাত থেকে বঞ্চিত হয়ে যাওয়া। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সতর্ক করেনঃ- لا يدخل الجنة من كان في قلبه مثقال ذرة من كبر 'যার অন্তরে কণা পরিমাণ অহংকার আছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
তাকওয়াই যখন মানুষের মর্যাদার মাপকাঠি, তখন কাউকে ছোট মনে করার সুযোগ কই? কেউ টাকা-পয়সার কমতি দ্বারা ছোট হয়ে যায় না। ছোট হয় না চেহারা সুরতের ঘাটতি দ্বারাও। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানিয়ে দিয়েছেনঃ- إن الله لا ينظر إلى صوركم وأموالكم ولكن ينظر إلى قلوبكم وأعمالكم 'আল্লাহ তোমাদের চেহারা-সুরত ও অর্থ-সম্পদ দেখেন না, তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও আমল।
তিনি যখন অন্তর ও আমল দেখেন, চেহারা-সুরত ও অর্থ-সম্পদ নয়, তখন কর্তব্য নিজ অন্তর ও আমল ভালো করার সাধনায় লিপ্ত থাকা। অন্যের চেহারা-সুরত ও সম্পদের কমতি দেখে ধোঁকায় পড়া উচিত নয়। হযরত বিলাল হাবশী রাযি. হযরত আতা ইব্ন আবী রাবাহ রহ. এবং এরকম হাজারও আল্লাহওয়ালা দুনিয়া ও আখেরাতের মর্যাদা কুঁড়িয়েছিলেন অন্তরের তাকওয়া ও বিশুদ্ধ আমল দ্বারাই। চেহারা সুরত ও অর্থ-সম্পদে তারা লাখও মানুষের চেয়ে পেছনে ছিলেন। সে পেছনে থাকাটা আল্লাহর কাছে তাদের এগিয়ে থাকা ও মর্যাদালাভে বাধা হয়নি। এখনও তা কারও জন্য বাধা নয়। কাজেই কাউকে এ ক্ষেত্রে পেছনে দেখলে সে-যে তাকওয়া পরহেযগারী দ্বারা আমার চেয়ে এগিয়ে নয় তা কী করে বলা যাবে? সে এগিয়ে থাকা ব্যক্তিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা নিজেকেই ধোঁকা দেওয়ার নামান্তর।
সুতরাং কোনও অন্ধ, খঞ্জ, বিকলাঙ্গ বা কৃষ্ণাঙ্গকে শারীরিক ত্রুটির কারণে তুচ্ছ মনে করার কোনও সুযোগ নেই। কোনও গরীব বা অশিক্ষিতকেও ছোট মনে করার অবকাশ নেই। এমনকি কোনও পাপীকেও নিজের চেয়ে ক্ষুদ্র ভাবার বৈধতা নেই। এরা সকলেই সহানুভূতি ও সহমর্মিতা পাওয়ার হকদার। এক মুমিন আরেক মুমিনের আয়না। তাই পাপীর ক্ষেত্রে কর্তব্য দরদী মন নিয়ে তাকে পাপ থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা, পাপের কারণে তাকে ঘৃণা করা নয়। শারীরিক বা কর্মগত ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে কারও প্রতি অপ্রীতিকর আচার-আচরণ বাঞ্ছনীয় নয়। তারা বয়সে বড় হলে তো শ্রদ্ধাই তাদের প্রাপ্য। বয়সে ছোট হলে তারা স্নেহের পাত্র। যদি তারা সমবয়সী হয়, তবে তাদের প্রতি ভাইয়ের মত আচরণই সমীচীন।
ইয়াহইয়া ইব্ন মুআয রহ, বড় সুন্দর বলেছেন- তোমার কাছ থেকে মুমিন ব্যক্তির প্রাপ্য তিনটি : তুমি তার উপকার করতে না পারলে অন্তত ক্ষতি করবে না; তাকে আনন্দ দিতে না পারলে অন্তত দুঃখ দেবে না; তার প্রশংসা করতে না পারলে অন্তত নিন্দা করবে না।
এ হাদীছের সারকথা হচ্ছে, প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য সে প্রত্যেক মুমিন-মুসলিমকে নিজের চেয়ে উৎকৃষ্ট গণ্য করবে। বয়সে যে ছোট তাকে উত্তম মনে করবে এ কারণে যে, সে হয়তো গুনাহ করেইনি অথবা তারচে' কম করেছে, বড়কে এ কারণে যে, সে তারচে বেশি ইবাদত-বন্দেগী করেছে। আলেমকে উৎকৃষ্ট মনে করবে তার ইলমের কারণে আর বে-আলেমকে এ কারণে যে, সে গুনাহ করে ফেলেছে অজ্ঞতার কারণে, জেনেশুনে নয়। আমি আলেম হয়ে থাকলে জেনেশুনে কত পাপ করি, যা তুলনামূলকভাবে বেশি অন্যায়। এমনকি কাফের ব্যক্তির ক্ষেত্রেও তো শেষটায় ঈমান ও তাওবার সম্ভাবনা আছে। তাকেইবা ঘৃণা করার অবকাশ কই? আসল ধর্তব্য তো শেষ অবস্থাই। আল্লাহ তাআলা আমাদের শেষ অবস্থা শুভ করুন ঈমানের সঙ্গে মৃত্যু দান করুন, আমীন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. মুসলিম ব্যক্তির জান, মাল ও ইজ্জতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকব। এ তিনটির কোনও ক্ষেত্রেই কারও প্রতি জুলুম করব না।
খ. কখনও কোনও মুসলিম ব্যক্তিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করব না।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
