কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ
৩৫. সুন্নাহের গুরুত্ব ও আকাঈদ অধ্যায়
হাদীস নং: ৪৬৯৩
আন্তর্জাতিক নং: ৪৭৬৮
২৯. খারেজীদের সাথে যুদ্ধ সম্পর্কে।
৪৬৯৩. হাসান ইবনে আলী (রাহঃ) ..... যায়দ ইবনে ওয়াহাব যুহানী (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আলী (রাযিঃ)-এর ঐ সেনাবাহিনীর সাথে ছিলাম, যারা খারিজীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য গিয়েছিল। তখন আলী (রাযিঃ) বলেনঃ হে লোকগণ! আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে এরূপ বলতে শুনেছিঃ আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক সৃষ্টি হবে, যারা কুরআন এমন সুন্দরভাবে পড়বে যে, তাদের তুলনায় তোমাদের কিরাত কিছুই হবে না। তাদের নামাযের তুলনায় তোমাদের নামায কিছুই হবে না এবং তাদের রোযার তুলনায় তোমাদের রোযা কিছুই হবে না। বস্তুত তারা এ মনে করে কুরআন পড়ে যে, তারা এর সাওয়াব পাবে, কিন্তু আসলে তারা এর কারণে শাস্তিপ্রাপ্ত হবে। তাদের নামায তাদের গলার নীচে নামবে না এবং তারা ইসলাম থেকে এরূপ বেরিয়ে যাবে, যেরূপ ধনুক থেকে তীর বেরিয়ে যায়।
যারা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, তাদের বিনিময় সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা তার নবীর যবাণীতে যা বর্ণনা করেছেন, তা যদি তারা জানতো, তবে তারা সব ধরনের আমল ছেড়ে দিত। তাদের পরিচয় এই যে, তাদের মাঝে এমন এক ব্যক্তি থাকবে, যার বাহুমূল থাকবে, কিন্তু তার হাত থাকবে না। তার সে বাহুতে স্তনের বোঁটার মত থাকবে, যার উপর সাদা পশম হবে। কী ব্যাপার! তোমরা মুআবিয়া এবং শামবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য যাচ্ছ, অথচ তোমরা তাদেরকে তোমাদের মাল ও সন্তান-সন্ততিদের কাছে রেখে যাচ্ছ! (যারা তাদের ক্ষতি করবে।) আল্লাহর শপথ! আমার মনে হয়, এরাই তারা, (যাদের সম্পর্কে নবী (ﷺ) বলেছেন), যারা হারাম রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং লোকদের চারণভূমি লুন্ঠন করেছে। কাজেই, তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গমন কর।
রাবী সালামা ইবনে কুহায়ল (রাহঃ) বলেনঃ যায়দ ইবনে ওয়াহাব (রাহঃ) আমাকে এমন একস্থানে নিয়ে যান, যেখানে আমরা একটা পুলের উপর দিয়ে যাই; সেখানে দু’পক্ষের সৈন্যরা মুখোমুখি হয় এবং সেখানে খারিজীদের নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে ওয়াহাবও উপস্থিত ছিল। সে তার সেনাবাহিনীর প্রতি এরূপ নির্দেশ দেয়ঃ তোমরা বল্লম ফেলে দাও এবং খাপ থেকে তরবারি বের কর। কেননা, আমার আশঙ্কা হচ্ছে, এরা তোমাদের সেরূপ বিচ্ছিন্ন করবে, যেরূপ ’হারুরার’* দিন করেছিল।
রাবী বলেনঃ তার এ নির্দেশ পাওয়ার পর সৈন্যরা তাদের বল্লম ফেলে দিয়ে তরবারি ধারণ করে। তখন মুসলমানরা বল্লম নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং তাদের হত্যা করে গাদা দিয়ে রাখে।
রাবী বলেনঃ এ দিনের যুদ্ধে আলী (রাযিঃ)-এর পক্ষে মাত্র দু’জন শহীদ হন। এরপর আলী (রাযিঃ) এরূপ নির্দেশ দেনঃ লাশের স্তুপের মধ্য থেকে মাখদাজ অর্থাৎ ছোট হাত-বিশিষ্ট ব্যক্তির লাশ বের কর। কিন্তু সৈন্যরা তার লাশের সন্ধান পায় না।
রাবী বলেনঃ অবশেষে আলী (রাযিঃ) সেখানে যান, যেখানে লাশ গাদা দেয়া ছিল এবং বলেনঃ এদের আলাদা করে রাখ। এরপর সমস্ত লাশকে আলাদা করে রাখার পর দেখা যায় যে, সে ব্যক্তির লাশ সবার নীচে মাটির উপর পড়ে আছে। এ সময় তিনি ’আল্লাহ আকবর’ ধ্বনি দিয়ে বলেনঃ মহান আল্লাহ সত্য বলেছেন এবং তাঁর রাসূল তা আমাদের কাছে পৌছে দিয়েছেন। একথা শুনে উবাইদা সালমানী (রাযিঃ) আলী (রাযিঃ)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলেনঃ ইয়া আমীরুল মু’মিনীন। ঐ জাতের কসম! যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, আপনি কি ইহা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে শুনেছেন? জবাবে তিনি বলেনঃ ঐ আল্লাহ যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, আমি ইহা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে শুনেছি। বাকী তিনবার শপথপূর্বক এর জবাব দেন।
* ‘হারুরা' একটি স্থানের নাম যেখানে খারিজীরা সর্বপ্রথম একত্রিত হয়েছিল। এ সময় আলী (রাযিঃ) আব্দুল্লাহ্ ইবন আব্বাস (রাযিঃ)-কে তাদের কাছে পাঠান বুঝাবার জন্য। ফলে, কিছু লোক তার কথা মানে এবং কতক অমান্য করে। এরপর তারা নাহরাওন নামক স্থানে গিয়ে একত্রিত হয়। - অনুবাদক
যারা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, তাদের বিনিময় সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা তার নবীর যবাণীতে যা বর্ণনা করেছেন, তা যদি তারা জানতো, তবে তারা সব ধরনের আমল ছেড়ে দিত। তাদের পরিচয় এই যে, তাদের মাঝে এমন এক ব্যক্তি থাকবে, যার বাহুমূল থাকবে, কিন্তু তার হাত থাকবে না। তার সে বাহুতে স্তনের বোঁটার মত থাকবে, যার উপর সাদা পশম হবে। কী ব্যাপার! তোমরা মুআবিয়া এবং শামবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য যাচ্ছ, অথচ তোমরা তাদেরকে তোমাদের মাল ও সন্তান-সন্ততিদের কাছে রেখে যাচ্ছ! (যারা তাদের ক্ষতি করবে।) আল্লাহর শপথ! আমার মনে হয়, এরাই তারা, (যাদের সম্পর্কে নবী (ﷺ) বলেছেন), যারা হারাম রক্ত প্রবাহিত করেছে এবং লোকদের চারণভূমি লুন্ঠন করেছে। কাজেই, তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গমন কর।
রাবী সালামা ইবনে কুহায়ল (রাহঃ) বলেনঃ যায়দ ইবনে ওয়াহাব (রাহঃ) আমাকে এমন একস্থানে নিয়ে যান, যেখানে আমরা একটা পুলের উপর দিয়ে যাই; সেখানে দু’পক্ষের সৈন্যরা মুখোমুখি হয় এবং সেখানে খারিজীদের নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে ওয়াহাবও উপস্থিত ছিল। সে তার সেনাবাহিনীর প্রতি এরূপ নির্দেশ দেয়ঃ তোমরা বল্লম ফেলে দাও এবং খাপ থেকে তরবারি বের কর। কেননা, আমার আশঙ্কা হচ্ছে, এরা তোমাদের সেরূপ বিচ্ছিন্ন করবে, যেরূপ ’হারুরার’* দিন করেছিল।
রাবী বলেনঃ তার এ নির্দেশ পাওয়ার পর সৈন্যরা তাদের বল্লম ফেলে দিয়ে তরবারি ধারণ করে। তখন মুসলমানরা বল্লম নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং তাদের হত্যা করে গাদা দিয়ে রাখে।
রাবী বলেনঃ এ দিনের যুদ্ধে আলী (রাযিঃ)-এর পক্ষে মাত্র দু’জন শহীদ হন। এরপর আলী (রাযিঃ) এরূপ নির্দেশ দেনঃ লাশের স্তুপের মধ্য থেকে মাখদাজ অর্থাৎ ছোট হাত-বিশিষ্ট ব্যক্তির লাশ বের কর। কিন্তু সৈন্যরা তার লাশের সন্ধান পায় না।
রাবী বলেনঃ অবশেষে আলী (রাযিঃ) সেখানে যান, যেখানে লাশ গাদা দেয়া ছিল এবং বলেনঃ এদের আলাদা করে রাখ। এরপর সমস্ত লাশকে আলাদা করে রাখার পর দেখা যায় যে, সে ব্যক্তির লাশ সবার নীচে মাটির উপর পড়ে আছে। এ সময় তিনি ’আল্লাহ আকবর’ ধ্বনি দিয়ে বলেনঃ মহান আল্লাহ সত্য বলেছেন এবং তাঁর রাসূল তা আমাদের কাছে পৌছে দিয়েছেন। একথা শুনে উবাইদা সালমানী (রাযিঃ) আলী (রাযিঃ)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলেনঃ ইয়া আমীরুল মু’মিনীন। ঐ জাতের কসম! যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, আপনি কি ইহা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে শুনেছেন? জবাবে তিনি বলেনঃ ঐ আল্লাহ যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, আমি ইহা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে শুনেছি। বাকী তিনবার শপথপূর্বক এর জবাব দেন।
* ‘হারুরা' একটি স্থানের নাম যেখানে খারিজীরা সর্বপ্রথম একত্রিত হয়েছিল। এ সময় আলী (রাযিঃ) আব্দুল্লাহ্ ইবন আব্বাস (রাযিঃ)-কে তাদের কাছে পাঠান বুঝাবার জন্য। ফলে, কিছু লোক তার কথা মানে এবং কতক অমান্য করে। এরপর তারা নাহরাওন নামক স্থানে গিয়ে একত্রিত হয়। - অনুবাদক
باب فِي قَتْلِ الْخَوَارِجِ
حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ أَبِي سُلَيْمَانَ، عَنْ سَلَمَةَ بْنِ كُهَيْلٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي زَيْدُ بْنُ وَهْبٍ الْجُهَنِيُّ، : أَنَّهُ كَانَ فِي الْجَيْشِ الَّذِينَ كَانُوا مَعَ عَلِيٍّ عَلَيْهِ السَّلاَمُ الَّذِينَ سَارُوا إِلَى الْخَوَارِجِ فَقَالَ عَلِيٌّ عَلَيْهِ السَّلاَمُ : أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : " يَخْرُجُ قَوْمٌ مِنْ أُمَّتِي يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لَيْسَتْ قِرَاءَتُكُمْ إِلَى قِرَاءَتِهِمْ شَيْئًا وَلاَ صَلاَتُكُمْ إِلَى صَلاَتِهِمْ شَيْئًا وَلاَ صِيَامُكُمْ إِلَى صِيَامِهِمْ شَيْئًا، يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ يَحْسَبُونَ أَنَّهُ لَهُمْ وَهُوَ عَلَيْهِمْ، لاَ تُجَاوِزُ صَلاَتُهُمْ تَرَاقِيَهُمْ يَمْرُقُونَ مِنَ الإِسْلاَمِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ، لَوْ يَعْلَمُ الْجَيْشُ الَّذِينَ يُصِيبُونَهُمْ مَا قُضِيَ لَهُمْ عَلَى لِسَانِ نَبِيِّهِمْ صلى الله عليه وسلم لَنَكَلُوا عَلَى الْعَمَلِ، وَآيَةُ ذَلِكَ أَنَّ فِيهِمْ رَجُلاً لَهُ عَضُدٌ وَلَيْسَتْ لَهُ ذِرَاعٌ، عَلَى عَضُدِهِ مِثْلُ حَلَمَةِ الثَّدْىِ عَلَيْهِ شَعَرَاتٌ بِيضٌ " . أَفَتَذْهَبُونَ إِلَى مُعَاوِيَةَ وَأَهْلِ الشَّامِ وَتَتْرُكُونَ هَؤُلاَءِ يَخْلُفُونَكُمْ فِي ذَرَارِيِّكُمْ وَأَمْوَالِكُمْ وَاللَّهِ إِنِّي لأَرْجُو أَنْ يَكُونُوا هَؤُلاَءِ الْقَوْمَ، فَإِنَّهُمْ قَدْ سَفَكُوا الدَّمَ الْحَرَامَ، وَأَغَارُوا فِي سَرْحِ النَّاسِ فَسِيرُوا عَلَى اسْمِ اللَّهِ . قَالَ : سَلَمَةُ بْنُ كُهَيْلٍ : فَنَزَّلَنِي زَيْدُ بْنُ وَهْبٍ مَنْزِلاً مَنْزِلاً حَتَّى مَرَّ بِنَا عَلَى قَنْطَرَةٍ قَالَ فَلَمَّا الْتَقَيْنَا وَعَلَى الْخَوَارِجِ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ وَهْبٍ الرَّاسِبِيُّ فَقَالَ لَهُمْ : أَلْقُوا الرِّمَاحَ وَسُلُّوا السُّيُوفَ مِنْ جُفُونِهَا، فَإِنِّي أَخَافُ أَنْ يُنَاشِدُوكُمْ كَمَا نَاشَدُوكُمْ يَوْمَ حَرُورَاءَ قَالَ : فَوَحَّشُوا بِرِمَاحِهِمْ وَاسْتَلُّوا السُّيُوفَ وَشَجَرَهُمُ النَّاسُ بِرِمَاحِهِمْ - قَالَ - وَقَتَلُوا بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضِهِمْ . قَالَ : وَمَا أُصِيبَ مِنَ النَّاسِ يَوْمَئِذٍ إِلاَّ رَجُلاَنِ فَقَالَ عَلِيٌّ عَلَيْهِ السَّلاَمُ : الْتَمِسُوا فِيهِمُ الْمُخْدَجَ فَلَمْ يَجِدُوا قَالَ : فَقَامَ عَلِيٌّ رضى الله عنه بِنَفْسِهِ حَتَّى أَتَى نَاسًا قَدْ قُتِلَ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ فَقَالَ : أَخْرِجُوهُمْ فَوَجَدُوهُ مِمَّا يَلِي الأَرْضَ فَكَبَّرَ وَقَالَ : صَدَقَ اللَّهُ وَبَلَّغَ رَسُولُهُ . فَقَامَ إِلَيْهِ عَبِيدَةُ السَّلْمَانِيُّ فَقَالَ : يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ وَاللَّهِ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ لَقَدْ سَمِعْتَ هَذَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ : إِي وَاللَّهِ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ حَتَّى اسْتَحْلَفَهُ ثَلاَثًا وَهُوَ يَحْلِفُ .
