আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
২৪- রোযার অধ্যায়
হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ২০২৪
১২৫৭. রমযানের শেষ দশকের আমল।
১৮৯৭। আলী ইবনে আব্দুল্লাহ (রাহঃ) ......... আয়িশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রমযানের শেষ দশক আসত, তখন নবী (ﷺ) তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশী বেশী ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত্রে জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।
হাদীসের ব্যাখ্যা:
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সারা বছরই ফরয ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদতও করতেন। তিনি প্রতিরাতে তাহাজ্জুদ পড়তেন। এর আগের হাদীছ দ্বারা জানা গেছে, তাহাজ্জুদে এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, তাঁর পা ফুলে ফেটে যেত। কিন্তু রমযান মাসে তাঁর ইবাদত-বন্দেগীর মাত্রা অনেক বেড়ে যেত। আর রমযানের শেষ দশকে এর পরিমাণ হত অনেক অনেক বেশি। কত- যে বেশি হত তা বোঝানোর জন্য এ হাদীছে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে أحيا الليل । এর আক্ষরিক অর্থ রাতকে জীবিত করতেন। রাতকে জীবিত করার অর্থ রাত্রিজাগরণ করা। ঘুমকে বলা হয় মৃত্যুর ভাই। কাজেই না ঘুমানো মানে জীবিত থাকা। যে ব্যক্তি রাত জাগল সে যেন রাতে নিজেকে জীবিত রাখল। সারারাত না ঘুমিয়ে জীবিত থাকাকেই এ হাদীছে রাত্রিকে ‘জীবিত করা’ শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। এর দ্বারা এ ইঙ্গিতও হয় যে, 'ইবাদত যেন রাতের প্রাণ। যে ব্যক্তি রাতে ইবাদত করে না, তার রাত যেন মৃত অবস্থায় থাকে।
এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঘর। যে ঘরে ইবাদত হয় না, সে ঘর যেন মৃত। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- لا تجعلوا بيوتكم قبورا “তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর বানিও না।সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২০৪২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৮৮০৪
অর্থাৎ তোমরা এমনভাবে ঘুমিয়ে থেক না যে, তোমরা ঘরের মধ্যে মৃত ব্যক্তির পড়ে থাকবে আর ঘর হয়ে যাবে তোমাদের কবর।
তো এ হাদীছে যে বলা হয়েছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতকে জীবিত করতেন। অর্থাৎ তিনি শেষ দশকে রাতে ঘুমাতেন না। রাতভর ইবাদত-বন্দেগী করতেন। আর এভাবে রাত ‘ইবাদতের প্রাণ পেত ও জীবিত হয়ে থাকত।
রমযানের শেষ দশক অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে ফযীলত লাভের জন্য কেবল নিজে জাগরণ করতেন তা-ই নয়; ঘরের লোকজনকেও জাগিয়ে দিতেন, যাতে তারা নামায পড়ে এবং এ মূল্যবান সময়কে নেয়া কাজে ভরে তোলে। হযরত যায়নাব বিনতে উম্মে সালামা রাযি. থেকে বর্ণিত আছে-"
لم يكن النبي صلّى الله عليه وسلم إذا بقي من رمضان عشرة أيام يدع أحدا من أهل بيته يطيق القيام إلا أقامه
“রমযান মাসের যখন শেষ দশদিন অবশিষ্ট থাকত, তখন নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পরিবারের যাদের পক্ষে রাতজেগে ‘ইবাদত করা সম্ভব হত, তাদেরকে অবশ্যই জাগিয়ে দিতেন।উমদাতুল কারী, ১১খ, ১৪০পৃ.
প্রকাশ থাকে যে, রমযানের শেষ দশকে রাত জাগা অত্যন্ত ফযীলতের কাজ হলেও তা নফলই বটে। ফরয বা ওয়াজিব নয়। তা সত্ত্বেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিবারের লোকজনকে সেই ফযীলত লাভের জন্য ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতেন। এর দ্বারা অতি সহজেই বোঝা যায়, তাদের ফরয-ওয়াজিব আমলের প্রতি তাঁর কতটা সচেতন থাকার কথা, যদিও এ কথা ভাবা যায় না যে, তাদের ফরয-ওয়াজিব আদায়ে কোনওরকম অবহেলা হবে। কিন্তু এর দ্বারা আমরা এ শিক্ষা অবশ্যই পাই যে, পরিবারের লোকজনের আমল-আখলাকের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা আমাদের অতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। তিনি যখন পরিবারের লোকজনকে দিয়ে নফল আমল করানোরও ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন, তখন আমরা আমাদের পরিবারের লোকজনের ফরয ও ওয়াজিব আমলের প্রতি কোনওরূপ অবহেলা প্রদর্শন করতে পারি কি? সুতরাং এ ব্যাপারে আমাদের কর্তব্য আরও বেশি সজাগ ও সতর্ক হওয়া।
বলা হয়েছে جد -তিনি অত্যধিক মেহনত করতেন। অর্থাৎ অন্যান্য সময় তিনি রাতজেগে যে পরিমাণ ইবাদত করতেন, এ সময় তিনি তারচে আরও বেশি করতেন। সমগ্র রাত জাগতেন। এবং তাতে যে কষ্ট হত তা অনায়াসে স্বীকার করে নিতেন। তিনি তা করতেন এ কারণে যে, এই দশ রাতের যে-কোনও রাতেই শবে কদর হতে পারে, যে রাতে ‘ইবাদত করার ফযীলত এক হাজার মাস ‘ইবাদত করার চেয়েও বেশি। এক হাদীছে আছে, যে ব্যক্তি শবে কদরে ঈমানের সঙ্গে ও ছাওয়াবের আশায় ‘ইবাদত বন্দেগী করে, আল্লাহ তা'আলা তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা রমযানের শেষ দশ দিনের ফযীলত জানা যায়।
খ. সম্ভব হলে রমযানের শেষ দশকে সারারাত জেগে ‘ইবাদত করা চাই, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম করতেন। এতে শবে কদর পাওয়ার আশা বেশি থাকে।
গ. কেবল নিজে ইবাদত করেই ক্ষান্ত হওয়া উচিত নয়। পরিবারের লোকজনও যাতে ‘ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাতে মুক্তি লাভ করতে পারে, সেদিকেও লক্ষ রাখা উচিত।
এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঘর। যে ঘরে ইবাদত হয় না, সে ঘর যেন মৃত। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ- لا تجعلوا بيوتكم قبورا “তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর বানিও না।সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ২০৪২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ৮৮০৪
অর্থাৎ তোমরা এমনভাবে ঘুমিয়ে থেক না যে, তোমরা ঘরের মধ্যে মৃত ব্যক্তির পড়ে থাকবে আর ঘর হয়ে যাবে তোমাদের কবর।
তো এ হাদীছে যে বলা হয়েছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতকে জীবিত করতেন। অর্থাৎ তিনি শেষ দশকে রাতে ঘুমাতেন না। রাতভর ইবাদত-বন্দেগী করতেন। আর এভাবে রাত ‘ইবাদতের প্রাণ পেত ও জীবিত হয়ে থাকত।
রমযানের শেষ দশক অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে ফযীলত লাভের জন্য কেবল নিজে জাগরণ করতেন তা-ই নয়; ঘরের লোকজনকেও জাগিয়ে দিতেন, যাতে তারা নামায পড়ে এবং এ মূল্যবান সময়কে নেয়া কাজে ভরে তোলে। হযরত যায়নাব বিনতে উম্মে সালামা রাযি. থেকে বর্ণিত আছে-"
لم يكن النبي صلّى الله عليه وسلم إذا بقي من رمضان عشرة أيام يدع أحدا من أهل بيته يطيق القيام إلا أقامه
“রমযান মাসের যখন শেষ দশদিন অবশিষ্ট থাকত, তখন নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পরিবারের যাদের পক্ষে রাতজেগে ‘ইবাদত করা সম্ভব হত, তাদেরকে অবশ্যই জাগিয়ে দিতেন।উমদাতুল কারী, ১১খ, ১৪০পৃ.
প্রকাশ থাকে যে, রমযানের শেষ দশকে রাত জাগা অত্যন্ত ফযীলতের কাজ হলেও তা নফলই বটে। ফরয বা ওয়াজিব নয়। তা সত্ত্বেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিবারের লোকজনকে সেই ফযীলত লাভের জন্য ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতেন। এর দ্বারা অতি সহজেই বোঝা যায়, তাদের ফরয-ওয়াজিব আমলের প্রতি তাঁর কতটা সচেতন থাকার কথা, যদিও এ কথা ভাবা যায় না যে, তাদের ফরয-ওয়াজিব আদায়ে কোনওরকম অবহেলা হবে। কিন্তু এর দ্বারা আমরা এ শিক্ষা অবশ্যই পাই যে, পরিবারের লোকজনের আমল-আখলাকের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা আমাদের অতি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। তিনি যখন পরিবারের লোকজনকে দিয়ে নফল আমল করানোরও ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন, তখন আমরা আমাদের পরিবারের লোকজনের ফরয ও ওয়াজিব আমলের প্রতি কোনওরূপ অবহেলা প্রদর্শন করতে পারি কি? সুতরাং এ ব্যাপারে আমাদের কর্তব্য আরও বেশি সজাগ ও সতর্ক হওয়া।
বলা হয়েছে جد -তিনি অত্যধিক মেহনত করতেন। অর্থাৎ অন্যান্য সময় তিনি রাতজেগে যে পরিমাণ ইবাদত করতেন, এ সময় তিনি তারচে আরও বেশি করতেন। সমগ্র রাত জাগতেন। এবং তাতে যে কষ্ট হত তা অনায়াসে স্বীকার করে নিতেন। তিনি তা করতেন এ কারণে যে, এই দশ রাতের যে-কোনও রাতেই শবে কদর হতে পারে, যে রাতে ‘ইবাদত করার ফযীলত এক হাজার মাস ‘ইবাদত করার চেয়েও বেশি। এক হাদীছে আছে, যে ব্যক্তি শবে কদরে ঈমানের সঙ্গে ও ছাওয়াবের আশায় ‘ইবাদত বন্দেগী করে, আল্লাহ তা'আলা তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা রমযানের শেষ দশ দিনের ফযীলত জানা যায়।
খ. সম্ভব হলে রমযানের শেষ দশকে সারারাত জেগে ‘ইবাদত করা চাই, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম করতেন। এতে শবে কদর পাওয়ার আশা বেশি থাকে।
গ. কেবল নিজে ইবাদত করেই ক্ষান্ত হওয়া উচিত নয়। পরিবারের লোকজনও যাতে ‘ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাতে মুক্তি লাভ করতে পারে, সেদিকেও লক্ষ রাখা উচিত।
