কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ
৩৫. সুন্নাহের গুরুত্ব ও আকাঈদ অধ্যায়
হাদীস নং: ৪৫৫৩
আন্তর্জাতিক নং: ৪৬০৮
৬. সুন্নতের অনুসরণ করা জরুরী।
৪৫৫৩. মুসাদ্দাদ (রাহঃ) .... আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী (ﷺ) বলেছেনঃ অধিক বচসা ও ঝগড়াকারী লোকেরা ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছে। তিনি তিনবার এরূপ বলেন।
باب فِي لُزُومِ السُّنَّةِ
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنِ ابْنِ جُرَيْجٍ، قَالَ حَدَّثَنِي سُلَيْمَانُ، - يَعْنِي ابْنَ عَتِيقٍ - عَنْ طَلْقِ بْنِ حَبِيبٍ، عَنِ الأَحْنَفِ بْنِ قَيْسٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أَلاَ هَلَكَ الْمُتَنَطِّعُونَ " . ثَلاَثَ مَرَّاتٍ .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
المتنطعون-এ শব্দটি تنطع থেকে নির্গত। এর এক অর্থ ইমাম নববী রহ. নিজেই করে দিয়েছেন, যেমনটা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। ইমাম খাত্তাবী রহ. বলেন, এর দ্বারা ওই সকল লোককে বোঝানো হয়, যারা ধর্মতত্ত্ববিদদের রীতিনীতি অনুযায়ী অহেতুক বিষয় নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করে এবং আকলবুদ্ধি দ্বারা যার সমাধান সম্ভব নয় এমন বিষয়ের চর্চায় লিপ্ত হয়। ইবনুল আছীর রহ. বলেন, আক্ষরিক অর্থে এর দ্বারা ওই সকল লোককে বোঝানো হয়, যারা ভান ভনিতা করে কথা বলে। অতঃপর এর ব্যবহার হয় এমনসব লোকের ক্ষেত্রে, যারা কাজেকর্মে বাড়াবাড়ি করে।
এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীনের সহজ বিষয়কে কঠিন করে তোলা ও অহেতুক বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হওয়ার নিন্দা করেছেন।
অতীত জাতিসমূহের মধ্যে এমন অনেক হয়েছে যে, সহজ সহজ বিষয়ে অহেতুক কঠোরতা করা হয়েছিল আর তার পরিণামে সেসব জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংস হওয়ার দ্বারা ভূপৃষ্ঠ হতে সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে যাওয়াই যে বুঝতে হবে এর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। বিপথগামী হওয়া তো ধ্বংস হওয়াই বটে। অহেতুক বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়ে যারা নিজেদের দীন-ধর্ম বিকৃত করে ফেলে, তারা দুনিয়ায় বেঁচেবর্তে থেকেও আত্মিকভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে আখিরাতে তাদের পরিণাম হয় জাহান্নাম। এটাই তো প্রকৃত ধ্বংস। ইহুদী ও খ্রিষ্টান জাতি এরকম ধ্বংসের শিকার হয়েছে। ইহুদী জাতি কিভাবে সহজ জিনিসকে কঠিন করে তুলত, কুরআন মাজীদে তার অনেক দৃষ্টান্ত আছে। একটি হত্যার ঘটনায় তাদেরকে গরু জবাই করতে বলা হয়েছিল। যেমন ইরশাদ হয়েছে-
إِنَّ اللهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تَذْبَحُوا بَقَرَةٌ
অর্থ : আল্লাহ তা'আলা তোমাদের আদেশ করছেন একটি গাভী যবাহ করতে।সূরা বাকারা, আয়াত ৬৭
অর্থাৎ গাভীটি জবাই করার পর তার একটি অংশ নিহত ব্যক্তির শরীরে ছোঁয়াও। তাতে আল্লাহর কুদরতে তার বাকশক্তি খুলে যাবে এবং সে তোমাদের বলে দেবে কে তাকে হত্যা করেছে। খুব সহজ হুকুম। তারা আল্লাহর হুকুম মোতাবেক যে-কোনও একটি গাভী যবাই করলেই চলত এবং তাতে উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে যেত। কিন্তু তারা বাড়াবাড়ি করল। প্রথমে হুকুমটির উপরেই আপত্তি তুলল, তারপর একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকল, যা কুরআন মাজীদে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। ফলে ব্যাপারটা জটিল হয়ে গেল। তারা প্রশ্ন করে করে এমন এক গাভী নিরূপণ করাল, যা পেতে তাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছিল।
অনুরূপ বাড়াবাড়ির শিকার হয়েছে খ্রিষ্টসম্প্রদায়ও। হযরত ঈসা আলাইহিস- সালামের সহজ সহজ কথার এমন এমন জটিল ব্যাখ্যা তারা দিয়েছে, যা শেষপর্যন্ত কারও কাছে আর বোধগম্য থাকেনি। এখন তারা নিজেরাই সে ব্যাখ্যার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে হয়রান। এমনকি সে ব্যাখ্যার মারপ্যাচে পড়ে তারা এ মহান নবীর তাওহীদী শিক্ষাকেও শিরক ও পৌত্তলিকতায় পর্যবসিত করেছে। আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন হিসেবে বিনা পিতায় যাঁর জন্ম হয়েছে সে নবীকে তারা আল্লাহর পুত্র বানিয়ে এবং আল্লাহকে তাঁর পিতা বানিয়ে এক আল্লাহর স্থানে তিন ঈশ্বরের মতবাদ চালু করেছে। আবার সেই তিন ঈশ্বর মিলে নাকি পূর্ণ এক ঈশ্বর! ফের তাদের প্রত্যেকে পূর্ণাঙ্গ এক ঈশ্বর! এই গোলকধাঁধার ঘোর অন্ধকারে কারও পক্ষে আলো পাওয়া কি সম্ভব? বস্তুত এটাই হয়। সহজকে জটিল করার পরিণতি। তাই নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, অহেতুক বাড়াবাড়ি যারা করেছে তারা ধ্বংস হয়ে গেছে।
তিনি এর দ্বারা আমাদেরকে সাবধান করছেন যেন আমরা সেরকম কোনও বাড়াবাড়িতে লিপ্ত না হই। দীনের সহজ কোনও বিষয়কে অহেতুক জটিল করে না তুলি। যে আমল আসানীর সঙ্গে করা যায় তাতে যেন অযথা কঠোরতা অবলম্বন না করি। তিনি আমাদের সামনে এক সহজ দীন পেশ করেছেন। এ দীনের যে আমলকে তিনি যে পর্যায়ে রেখেছেন, আমরা যেন তা সেখানেই রাখি। উপরেও না তুলি, নিচেও না নামাই। এমনিভাবে যে আমল যেভাবে করতে বলেছেন ঠিক সেভাবেই করি। নিজেদের পক্ষ থেকে তাতে কিছু যোগ না করি এবং কিছু কাটছাঁটও না করি। তা করতে গেলেই আমরা তাঁর রেখে যাওয়া দীন থেকে বিচ্যুত হয়ে যাব, পরিণামে যা আমাদের ইহকালীন ও পরকালীন ধ্বংস ডেকে আনবে। দোজাহানের ধ্বংস থেকে বাঁচতে চাইলে আমাদের কর্তব্য হবে অহেতুক কঠোরতা ও বাড়াবাড়ি পরিত্যাগ করে সহজ-সরল দীনের হুবহু অনুসরণ করতে থাকা।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. ইসলাম যেহেতু এক সহজ দীন এবং এর প্রতিটি বিধান সহজসাধ্য, তাই মনগড়াভাবে এর কোনও বিষয়কে কঠিন করে তোলা উচিত নয়।
খ. শরী'আত যে সকল ক্ষেত্রে ছাড় ও অবকাশ দিয়েছে, তাতে কোনও দ্বিধা-কুণ্ঠাকে প্রশ্রয় দিতে নেই। সুতরাং সফর অবস্থায় স্বচ্ছন্দমনে কসর পড়তে হবে, দাঁড়িয়ে নামায পড়তে না পারলে স্বচ্ছন্দমনে বসে বসে পড়বে ইত্যাদি।
গ. আকীদাগত যে সকল বিষয়ে কুরআন-হাদীছ বিস্তারিত ব্যাখ্যাবিশ্লেষণ দেয়নি তা নিয়ে অহেতুক খোঁড়াখুঁড়িতে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। সাদামাটাভাবে বিশ্বাস করেই ক্ষান্ত হওয়া উচিত।
ঘ. শরী'আত যে সকল আমল শর্তহীনভাবে উল্লেখ করেছে, তাতে নিজের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকম শর্ত জুড়ে দেওয়া এবং সে অনুযায়ী তা পালন করাকে জরুরি সাব্যস্ত করা এ হাদীছের আলোকে একটি ধ্বংসাত্মক কাজ। তা থেকে বিরত থাকাই জরুরি। যেমন চল্লিশা, প্রচলিত মিলাদ-কিয়াম ইত্যাদি।
এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীনের সহজ বিষয়কে কঠিন করে তোলা ও অহেতুক বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হওয়ার নিন্দা করেছেন।
অতীত জাতিসমূহের মধ্যে এমন অনেক হয়েছে যে, সহজ সহজ বিষয়ে অহেতুক কঠোরতা করা হয়েছিল আর তার পরিণামে সেসব জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংস হওয়ার দ্বারা ভূপৃষ্ঠ হতে সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে যাওয়াই যে বুঝতে হবে এর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। বিপথগামী হওয়া তো ধ্বংস হওয়াই বটে। অহেতুক বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়ে যারা নিজেদের দীন-ধর্ম বিকৃত করে ফেলে, তারা দুনিয়ায় বেঁচেবর্তে থেকেও আত্মিকভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে আখিরাতে তাদের পরিণাম হয় জাহান্নাম। এটাই তো প্রকৃত ধ্বংস। ইহুদী ও খ্রিষ্টান জাতি এরকম ধ্বংসের শিকার হয়েছে। ইহুদী জাতি কিভাবে সহজ জিনিসকে কঠিন করে তুলত, কুরআন মাজীদে তার অনেক দৃষ্টান্ত আছে। একটি হত্যার ঘটনায় তাদেরকে গরু জবাই করতে বলা হয়েছিল। যেমন ইরশাদ হয়েছে-
إِنَّ اللهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تَذْبَحُوا بَقَرَةٌ
অর্থ : আল্লাহ তা'আলা তোমাদের আদেশ করছেন একটি গাভী যবাহ করতে।সূরা বাকারা, আয়াত ৬৭
অর্থাৎ গাভীটি জবাই করার পর তার একটি অংশ নিহত ব্যক্তির শরীরে ছোঁয়াও। তাতে আল্লাহর কুদরতে তার বাকশক্তি খুলে যাবে এবং সে তোমাদের বলে দেবে কে তাকে হত্যা করেছে। খুব সহজ হুকুম। তারা আল্লাহর হুকুম মোতাবেক যে-কোনও একটি গাভী যবাই করলেই চলত এবং তাতে উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে যেত। কিন্তু তারা বাড়াবাড়ি করল। প্রথমে হুকুমটির উপরেই আপত্তি তুলল, তারপর একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকল, যা কুরআন মাজীদে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। ফলে ব্যাপারটা জটিল হয়ে গেল। তারা প্রশ্ন করে করে এমন এক গাভী নিরূপণ করাল, যা পেতে তাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছিল।
অনুরূপ বাড়াবাড়ির শিকার হয়েছে খ্রিষ্টসম্প্রদায়ও। হযরত ঈসা আলাইহিস- সালামের সহজ সহজ কথার এমন এমন জটিল ব্যাখ্যা তারা দিয়েছে, যা শেষপর্যন্ত কারও কাছে আর বোধগম্য থাকেনি। এখন তারা নিজেরাই সে ব্যাখ্যার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে হয়রান। এমনকি সে ব্যাখ্যার মারপ্যাচে পড়ে তারা এ মহান নবীর তাওহীদী শিক্ষাকেও শিরক ও পৌত্তলিকতায় পর্যবসিত করেছে। আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন হিসেবে বিনা পিতায় যাঁর জন্ম হয়েছে সে নবীকে তারা আল্লাহর পুত্র বানিয়ে এবং আল্লাহকে তাঁর পিতা বানিয়ে এক আল্লাহর স্থানে তিন ঈশ্বরের মতবাদ চালু করেছে। আবার সেই তিন ঈশ্বর মিলে নাকি পূর্ণ এক ঈশ্বর! ফের তাদের প্রত্যেকে পূর্ণাঙ্গ এক ঈশ্বর! এই গোলকধাঁধার ঘোর অন্ধকারে কারও পক্ষে আলো পাওয়া কি সম্ভব? বস্তুত এটাই হয়। সহজকে জটিল করার পরিণতি। তাই নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, অহেতুক বাড়াবাড়ি যারা করেছে তারা ধ্বংস হয়ে গেছে।
তিনি এর দ্বারা আমাদেরকে সাবধান করছেন যেন আমরা সেরকম কোনও বাড়াবাড়িতে লিপ্ত না হই। দীনের সহজ কোনও বিষয়কে অহেতুক জটিল করে না তুলি। যে আমল আসানীর সঙ্গে করা যায় তাতে যেন অযথা কঠোরতা অবলম্বন না করি। তিনি আমাদের সামনে এক সহজ দীন পেশ করেছেন। এ দীনের যে আমলকে তিনি যে পর্যায়ে রেখেছেন, আমরা যেন তা সেখানেই রাখি। উপরেও না তুলি, নিচেও না নামাই। এমনিভাবে যে আমল যেভাবে করতে বলেছেন ঠিক সেভাবেই করি। নিজেদের পক্ষ থেকে তাতে কিছু যোগ না করি এবং কিছু কাটছাঁটও না করি। তা করতে গেলেই আমরা তাঁর রেখে যাওয়া দীন থেকে বিচ্যুত হয়ে যাব, পরিণামে যা আমাদের ইহকালীন ও পরকালীন ধ্বংস ডেকে আনবে। দোজাহানের ধ্বংস থেকে বাঁচতে চাইলে আমাদের কর্তব্য হবে অহেতুক কঠোরতা ও বাড়াবাড়ি পরিত্যাগ করে সহজ-সরল দীনের হুবহু অনুসরণ করতে থাকা।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. ইসলাম যেহেতু এক সহজ দীন এবং এর প্রতিটি বিধান সহজসাধ্য, তাই মনগড়াভাবে এর কোনও বিষয়কে কঠিন করে তোলা উচিত নয়।
খ. শরী'আত যে সকল ক্ষেত্রে ছাড় ও অবকাশ দিয়েছে, তাতে কোনও দ্বিধা-কুণ্ঠাকে প্রশ্রয় দিতে নেই। সুতরাং সফর অবস্থায় স্বচ্ছন্দমনে কসর পড়তে হবে, দাঁড়িয়ে নামায পড়তে না পারলে স্বচ্ছন্দমনে বসে বসে পড়বে ইত্যাদি।
গ. আকীদাগত যে সকল বিষয়ে কুরআন-হাদীছ বিস্তারিত ব্যাখ্যাবিশ্লেষণ দেয়নি তা নিয়ে অহেতুক খোঁড়াখুঁড়িতে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। সাদামাটাভাবে বিশ্বাস করেই ক্ষান্ত হওয়া উচিত।
ঘ. শরী'আত যে সকল আমল শর্তহীনভাবে উল্লেখ করেছে, তাতে নিজের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকম শর্ত জুড়ে দেওয়া এবং সে অনুযায়ী তা পালন করাকে জরুরি সাব্যস্ত করা এ হাদীছের আলোকে একটি ধ্বংসাত্মক কাজ। তা থেকে বিরত থাকাই জরুরি। যেমন চল্লিশা, প্রচলিত মিলাদ-কিয়াম ইত্যাদি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
