কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

৩৫. সুন্নাহের গুরুত্ব ও আকাঈদ অধ্যায়

হাদীস নং: ৪৫৩৫
আন্তর্জাতিক নং: ৪৬১২
৬. সুন্নতের অনুসরণ করা জরুরী।
৪৫৩৫. মুহাম্মাদ ইবনে কাছীর (রাহঃ) ......... সুফিয়ান (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি উমর ইবনে আব্দুল আযীয (রাহঃ)-এর নিকট পত্রযোগে তাকদীর সম্পর্কে জানতে চান। আবুস সালত (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি তাকদীর সম্পর্কে জানার জন্য উমর ইবনে আব্দুল আযীয (রাহঃ)-কে পত্র লেখেন। এর জবাবে তিনি লেখেনঃ আমি তোমাকে ওসীয়ত করছি আল্লাহকে ভয় করার জন্য এবং তাঁর হুকুম মেনে চলার জন্য এবং তাঁর নবীর সুন্নতের অনুসরণ করাব জন্য। আর বিদ’আতিগণ যা উদ্ভাবন করেছে, তা পরিহার করার জন্য আমি তোমাকে ওসীয়ত করছি। বিদ’আতীরা এসব কথা তখন উদ্ভাবন করেছে, যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিদ’আত সৃষ্টির পর তারা বিভ্রান্ত হয়েছে। তোমার উচিত, সুন্নতকে দুঢ়ভাবে ধারণ করা। কেননা, সুন্নতের উপর আমল করলে তুমি আল্লাহর হুকুমে গুমরাহী থেকে বেঁচে যাবে।

জেনে রাখ! লোকেরা এমন কোন বিদ’আত সৃষ্টি করিনি, যা বাতিল হওয়ার জন্য দলীল বর্ণিত হয়নি এবং তা দেখাতে শিক্ষা হয়নি। আর সুন্নতকে তিনি জারী করেছেন, যিনি জানতেন, এর বিরোধিতা করলে কিরূপ গুনাহ, ক্রটি-বিচ্যূতি ও আহমকী হবে। কাজেই তুমি সে তরীকার অনুসরণ কর, যে তরীকা অনুসরণ করেছিল পূর্ববর্তীগণ। কেননা, তাঁরা দ্বীনের ইলম সম্পর্কে গভীর জ্ঞানী ছিলেন। আর যে কাজ করতে তাঁরা নিষেধ করেছেন, তা জেনে-শুনেই করেছেন। তারা দ্বীনের অর্থ বুঝার ক্ষেত্রে আমাদের চাইতে অনেক ক্ষমতার অধিকারী ছিল। আর তাদের মাঝে যে যোগ্যতা ছিল, তা ছিল উন্নতমানের।

তোমরা যে তরীকার উপর প্রতিষ্ঠিত আছ, যদি তা-ই হিদায়াত হয়, তবে তোমরা অগ্রগামী হয়ে যাবে। আর যদি তোমরা বল, যারা দ্বীনের মধ্যে নতুন কথা সৃষ্টি করেছে; তবে আমরা বলবোঃ আগের লোকেরাই উত্তম ছিল এবং তারা এদের চাইতে অগ্রগামী ছিল। যতটুকু বর্ণনা করার, তা তাঁরা করেছেন। আর যতটুকু বলা দরকার, তা সবই করেছেন; এর উপরেও কিছু বলার নেই এবং নীচেও কিছু বলার নেই। কিছু লোক তাদের থেকে কম বর্ণনা করেছে, তারা ক্ষতি করেছে; আর কিছু লোক তাদের চাইতে বেশী বর্ণনা করেছেন। পূর্ববর্তী আলিমগণ মধ্যপন্থী ছিলেন এবং তাঁরা সোজা-সরল রাস্তার অনুসরণকারী ছিলেন।

তুমি পত্রে তাকদীর সম্পর্কে জানতে চেয়েছ। আল্লাহর হুকুমে তুমি এ প্রশ্ন সম্পর্কে তাদের চাইতে অধিক জ্ঞানী। আমি মনে করি, যত বিদ’আতী সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা যা নতুন উদ্ভাবন করেছে, এর মধ্যে তাকদীরের বর্ণনা খুবই স্পষ্ট এবং মজবুত। জাহিলী যুগের লোকেরা তাদের কথাবার্তায় তাকদীরের কথা বলতো এবং তাদের কবিতায় তাকদীর থেকে মুসীবত দূর করে দিত। অবশেষে ইসলাম এ ধারণাকে আরো শক্ত করেছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এক বা দুই হাদীসে নয়, বরং অনেক হাদীসে তাকদীরের কথা বর্ণনা করেছেন। মুসলমানেরা তাঁর থেকে এসব শুনেছেন এবং অন্যের কাছে বর্ণনাও করেছেন তাঁর জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরও; এর উপর বিশ্বাস রেখে এবং মেনে নিয়ে।

আর নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে জেনে যে এমন কিছুই নেই, যা আল্লাহ জানেন না এবং তাঁর কিতাবে লেখা নেই, অথবা এ ব্যাপারে আল্লাহর-ফায়সালা বাস্তবায়িত হয়নি। উল্লেখ্য যে, তাকদীরের বর্ণনা আল্লাহর মজবুত কিতাবে রয়েছে, তা থেকে পূর্ববর্তীগণ তাকদীরের মাসআলা-মাসায়েল শিখেছে। যদি তুমি বলঃ কেন আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন, আর কেন এমন বলেন (যা বাহ্যতঃ তাকদীরের বিপরীত)? এর জবাব হলোঃ আগের যুগের লোকেরা এ আয়াত পড়েছিল এবং তারা এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে সম্যক অবহিত ছিল, যা তোমরা জান না। তারা আল্লাহর কিতাব ও তাকদীর সম্পর্কে বলতোঃ তা-ই হবে, যা আল্লাহ চান ; আর তা হবে না, যা তিনি চান না। আর আমরা আমাদের উপকার ও অপকারের পূর্ণ ক্ষমতা রাখি না। এ বিশ্বাসের উপর পূর্ববর্তীগণ উত্তম কাজ করতেন এবং খারাপ কাজ করতে ভয় পেতেন।
باب فِي لُزُومِ السُّنَّةِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ، قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ كَتَبَ رَجُلٌ إِلَى عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ يَسْأَلُهُ عَنِ الْقَدَرِ، ح وَحَدَّثَنَا الرَّبِيعُ بْنُ سُلَيْمَانَ الْمُؤَذِّنُ، قَالَ حَدَّثَنَا أَسَدُ بْنُ مُوسَى، قَالَ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ دُلَيْلٍ، قَالَ سَمِعْتُ سُفْيَانَ الثَّوْرِيَّ، يُحَدِّثُنَا عَنِ النَّضْرِ، ح وَحَدَّثَنَا هَنَّادُ بْنُ السَّرِيِّ، عَنْ قَبِيصَةَ، قَالَ حَدَّثَنَا أَبُو رَجَاءٍ، عَنْ أَبِي الصَّلْتِ، - وَهَذَا لَفْظُ حَدِيثِ ابْنِ كَثِيرٍ وَمَعْنَاهُمْ - قَالَ كَتَبَ رَجُلٌ إِلَى عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ يَسْأَلُهُ عَنِ الْقَدَرِ فَكَتَبَ أَمَّا بَعْدُ أُوصِيكَ بِتَقْوَى اللَّهِ وَالاِقْتِصَادِ فِي أَمْرِهِ وَاتِّبَاعِ سُنَّةِ نَبِيِّهِ صلى الله عليه وسلم وَتَرْكِ مَا أَحْدَثَ الْمُحْدِثُونَ بَعْدَ مَا جَرَتْ بِهِ سُنَّتُهُ وَكُفُوا مُؤْنَتَهُ فَعَلَيْكَ بِلُزُومِ السُّنَّةِ فَإِنَّهَا لَكَ بِإِذْنِ اللَّهِ عِصْمَةٌ ثُمَّ اعْلَمْ أَنَّهُ لَمْ يَبْتَدِعِ النَّاسُ بِدْعَةً إِلاَّ قَدْ مَضَى قَبْلَهَا مَا هُوَ دَلِيلٌ عَلَيْهَا أَوْ عِبْرَةٌ فِيهَا فَإِنَّ السُّنَّةَ إِنَّمَا سَنَّهَا مَنْ قَدْ عَلِمَ مَا فِي خِلاَفِهَا وَلَمْ يَقُلِ ابْنُ كَثِيرٍ مَنْ قَدْ عَلِمَ . مِنَ الْخَطَإِ وَالزَّلَلِ وَالْحُمْقِ وَالتَّعَمُّقِ فَارْضَ لِنَفْسِكَ مَا رَضِيَ بِهِ الْقَوْمُ لأَنْفُسِهِمْ فَإِنَّهُمْ عَلَى عِلْمٍ وَقَفُوا وَبِبَصَرٍ نَافِذٍ كَفَوْا وَلَهُمْ عَلَى كَشْفِ الأُمُورِ كَانُوا أَقْوَى وَبِفَضْلِ مَا كَانُوا فِيهِ أَوْلَى فَإِنْ كَانَ الْهُدَى مَا أَنْتُمْ عَلَيْهِ لَقَدْ سَبَقْتُمُوهُمْ إِلَيْهِ وَلَئِنْ قُلْتُمْ إِنَّمَا حَدَثَ بَعْدَهُمْ . مَا أَحْدَثَهُ إِلاَّ مَنِ اتَّبَعَ غَيْرَ سَبِيلِهِمْ وَرَغِبَ بِنَفْسِهِ عَنْهُمْ فَإِنَّهُمْ هُمُ السَّابِقُونَ فَقَدْ تَكَلَّمُوا فِيهِ بِمَا يَكْفِي وَوَصَفُوا مِنْهُ مَا يَشْفِي فَمَا دُونَهُمْ مِنْ مَقْصَرٍ وَمَا فَوْقَهُمْ مِنْ مَحْسَرٍ وَقَدْ قَصَّرَ قَوْمٌ دُونَهُمْ فَجَفَوْا وَطَمَحَ عَنْهُمْ أَقْوَامٌ فَغَلَوْا وَإِنَّهُمْ بَيْنَ ذَلِكَ لَعَلَى هُدًى مُسْتَقِيمٍ كَتَبْتَ تَسْأَلُ عَنِ الإِقْرَارِ بِالْقَدَرِ فَعَلَى الْخَبِيرِ بِإِذْنِ اللَّهِ وَقَعْتَ مَا أَعْلَمُ مَا أَحْدَثَ النَّاسُ مِنْ مُحْدَثَةٍ وَلاَ ابْتَدَعُوا مِنْ بِدْعَةٍ هِيَ أَبْيَنُ أَثَرًا وَلاَ أَثْبَتُ أَمْرًا مِنَ الإِقْرَارِ بِالْقَدَرِ لَقَدْ كَانَ ذَكَرَهُ فِي الْجَاهِلِيَّةِ الْجُهَلاَءُ يَتَكَلَّمُونَ بِهِ فِي كَلاَمِهِمْ وَفِي شِعْرِهِمْ يُعَزُّونَ بِهِ أَنْفُسَهُمْ عَلَى مَا فَاتَهُمْ ثُمَّ لَمْ يَزِدْهُ الإِسْلاَمُ بَعْدُ إِلاَّ شِدَّةً وَلَقَدْ ذَكَرَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي غَيْرِ حَدِيثٍ وَلاَ حَدِيثَيْنِ وَقَدْ سَمِعَهُ مِنْهُ الْمُسْلِمُونَ فَتَكَلَّمُوا بِهِ فِي حَيَاتِهِ وَبَعْدَ وَفَاتِهِ يَقِينًا وَتَسْلِيمًا لِرَبِّهِمْ وَتَضْعِيفًا لأَنْفُسِهِمْ أَنْ يَكُونَ شَىْءٌ لَمْ يُحِطْ بِهِ عِلْمُهُ وَلَمْ يُحْصِهِ كِتَابُهُ وَلَمْ يَمْضِ فِيهِ قَدَرُهُ وَإِنَّهُ مَعَ ذَلِكَ لَفِي مُحْكَمِ كِتَابِهِ مِنْهُ اقْتَبَسُوهُ وَمِنْهُ تَعَلَّمُوهُ وَلَئِنْ قُلْتُمْ لِمَ أَنْزَلَ اللَّهُ آيَةَ كَذَا وَلِمَ قَالَ كَذَا . لَقَدْ قَرَءُوْا مِنْهُ مَا قَرَأْتُمْ وَعَلِمُوا مِنْ تَأْوِيلِهِ مَا جَهِلْتُمْ وَقَالُوا بَعْدَ ذَلِكَ كُلِّهِ بِكِتَابٍ وَقَدَرٍ وَكُتِبَتِ الشَّقَاوَةُ وَمَا يُقَدَّرْ يَكُنْ وَمَا شَاءَ اللَّهُ كَانَ وَمَا لَمْ يَشَأْ لَمْ يَكُنْ وَلاَ نَمْلِكُ لأَنْفُسِنَا ضَرًّا وَلاَ نَفْعًا ثُمَّ رَغَبُوا بَعْدَ ذَلِكَ وَرَهِبُوا .
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
rabi
বর্ণনাকারী:
সুনানে আবু দাউদ - হাদীস নং ৪৫৩৫ | মুসলিম বাংলা