কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ
৩৩. শরীআত বিধিত দন্ডের অধ্যায়
হাদীস নং: ৪৪২৯
আন্তর্জাতিক নং: ৪৪৮৮ - ৪৪৮৯
৩৫. বার বার মদ পানকারীর শাস্তি সম্পর্কে।
৪৪২৯. ইবনে সারুহ (রাহঃ) .... আব্দুর রহমান ইবনে আযহার (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে একজন মদ পানকারী ব্যক্তিকে হাযির করা হয়, যখন তিনি হুনায়নে অবস্থান করছিলেন। তিনি মুখের উপর এক মুষ্টি মাটি নিক্ষেপ করেন এবং তাঁর সাহাবীগণকে নির্দেশ দেন তাকে মারধর করার জন্য। তখন তাঁরা তাকে মারধর করে। এরপর তিনি যখন বলেনঃ মারপিট বন্ধ কর; তখন তারা তা থেকে বিরত হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ইন্তিকালের পর, আবু বকর (রাযিঃ) মদ পানকারীদের চল্লিশ কোড়া মারতেন। উমর (রাযিঃ) তাঁর খিলাফতের প্রথম দিকে চল্লিশ দোররা মারতেন, পরে তাঁর খিলাফতের শেষের দিকে আশি দোররা মারতেন। উছমান (রাযিঃ) তাঁর আমলে কখনো চল্লিশ এবং কখনো আশি দোররা মারতেন। অবশেষে মুআবিয়া (রাযিঃ) তাঁর শাসনামলে আশি দোররা নির্ধারিত করেন।
আব্দুর রহমান ইবনু আযহার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মক্কা বিজয়ের দিন সকালবেলা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জনতার ভীড়ের মধ্যে পদব্রজে খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ (রাঃ)-এর শিবিরের সন্ধান করতে দেখি। আমি তখন উঠতি বয়সের যুবক। তাঁর নিকট এক মদ্যপায়ীকে উপস্থিত করা হলে তাঁর নির্দেশে লোকজন তাকে তাদের হাতের নিকট সহজলভ্য জিনিস দ্বারা প্রহার করে। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার প্রতি ধূলা নিক্ষেপ করেন। আবু বকর (রাঃ)-এর সময় এক মদপায়ীকে উপস্থিত করা হলে তিনি লোকজনকে প্রশ্ন করেন যে, নবী (ﷺ) উক্ত ব্যক্তিকে কয়টি বেত্রাঘাত করেছেন?
তারা চল্লিশ বার বেত্রাঘাতের কথা উল্লেখ করে। অতএব আবু বকর (রাঃ) চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেন। উমার (রাঃ) খলীফাহ হলে খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ (রাঃ) তাকে লিখে পাঠান যে, লোকজন মাদক গ্রহণের নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করছে এবং হাদ্দ ও শাস্তির ভয়কে পরোয়া করছে না। উমার (রাঃ) বলেন, আপনার নিকট যারা আছে তাদের প্রশ্ন করুন। তার সঙ্গে ছিলেন সর্বাগ্রে ইসলাম গ্রহণকারী মুহাজিরগণ। তিনি তাদের নিকট প্রশ্ন করলে তারা আশিটি বেত্রাঘাত সম্পর্কে ঐকমত্য হন। বর্ণনাকারী বলেন, ’আলী (রাঃ) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি মাদক গ্রহণ করলে সে মিথ্যা কথা বলে। অতএব আমি মনে করি, তাকে মিথ্যা বলার শাস্তির মতই শাস্তি দেয়া উচিত।
আব্দুর রহমান ইবনু আযহার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মক্কা বিজয়ের দিন সকালবেলা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জনতার ভীড়ের মধ্যে পদব্রজে খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ (রাঃ)-এর শিবিরের সন্ধান করতে দেখি। আমি তখন উঠতি বয়সের যুবক। তাঁর নিকট এক মদ্যপায়ীকে উপস্থিত করা হলে তাঁর নির্দেশে লোকজন তাকে তাদের হাতের নিকট সহজলভ্য জিনিস দ্বারা প্রহার করে। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার প্রতি ধূলা নিক্ষেপ করেন। আবু বকর (রাঃ)-এর সময় এক মদপায়ীকে উপস্থিত করা হলে তিনি লোকজনকে প্রশ্ন করেন যে, নবী (ﷺ) উক্ত ব্যক্তিকে কয়টি বেত্রাঘাত করেছেন?
তারা চল্লিশ বার বেত্রাঘাতের কথা উল্লেখ করে। অতএব আবু বকর (রাঃ) চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেন। উমার (রাঃ) খলীফাহ হলে খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ (রাঃ) তাকে লিখে পাঠান যে, লোকজন মাদক গ্রহণের নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করছে এবং হাদ্দ ও শাস্তির ভয়কে পরোয়া করছে না। উমার (রাঃ) বলেন, আপনার নিকট যারা আছে তাদের প্রশ্ন করুন। তার সঙ্গে ছিলেন সর্বাগ্রে ইসলাম গ্রহণকারী মুহাজিরগণ। তিনি তাদের নিকট প্রশ্ন করলে তারা আশিটি বেত্রাঘাত সম্পর্কে ঐকমত্য হন। বর্ণনাকারী বলেন, ’আলী (রাঃ) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি মাদক গ্রহণ করলে সে মিথ্যা কথা বলে। অতএব আমি মনে করি, তাকে মিথ্যা বলার শাস্তির মতই শাস্তি দেয়া উচিত।
باب إِذَا تَتَابَعَ فِي شُرْبِ الْخَمْرِ
حَدَّثَنَا ابْنُ السَّرْحِ، قَالَ وَجَدْتُ فِي كِتَابِ خَالِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدِ الْحَمِيدِ عَنْ عُقَيْلٍ أَنَّ ابْنَ شِهَابٍ أَخْبَرَهُ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الأَزْهَرِ أَخْبَرَهُ عَنْ أَبِيهِ قَالَ أُتِيَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِشَارِبٍ وَهُوَ بِحُنَيْنٍ فَحَثَى فِي وَجْهِهِ التُّرَابَ ثُمَّ أَمَرَ أَصْحَابَهُ فَضَرَبُوهُ بِنِعَالِهِمْ وَمَا كَانَ فِي أَيْدِيهِمْ حَتَّى قَالَ لَهُمُ " ارْفَعُوا " . فَرَفَعُوا فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ جَلَدَ أَبُو بَكْرٍ فِي الْخَمْرِ أَرْبَعِينَ ثُمَّ جَلَدَ عُمَرُ أَرْبَعِينَ صَدْرًا مِنْ إِمَارَتِهِ ثُمَّ جَلَدَ ثَمَانِينَ فِي آخِرِ خِلاَفَتِهِ ثُمَّ جَلَدَ عُثْمَانُ الْحَدَّيْنِ كِلَيْهِمَا ثَمَانِينَ وَأَرْبَعِينَ ثُمَّ أَثْبَتَ مُعَاوِيَةُ الْحَدَّ ثَمَانِينَ .
حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ، حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ عُمَرَ، حَدَّثَنَا أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَزْهَرَ، قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم غَدَاةَ الْفَتْحِ وَأَنَا غُلاَمٌ شَابٌّ يَتَخَلَّلُ النَّاسَ يَسْأَلُ عَنْ مَنْزِلِ خَالِدِ بْنِ الْوَلِيدِ فَأُتِيَ بِشَارِبٍ فَأَمَرَهُمْ فَضَرَبُوهُ بِمَا فِي أَيْدِيهِمْ فَمِنْهُمْ مَنْ ضَرَبَهُ بِالسَّوْطِ وَمِنْهُمْ مَنْ ضَرَبَهُ بِعَصًا وَمِنْهُمْ مَنْ ضَرَبَهُ بِنَعْلِهِ وَحَثَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم التُّرَابَ فَلَمَّا كَانَ أَبُو بَكْرٍ أُتِيَ بِشَارِبٍ فَسَأَلَهُمْ عَنْ ضَرْبِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم الَّذِي ضَرَبَهُ فَحَزَرُوهُ أَرْبَعِينَ فَضَرَبَ أَبُو بَكْرٍ أَرْبَعِينَ فَلَمَّا كَانَ عُمَرُ كَتَبَ إِلَيْهِ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ إِنَّ النَّاسَ قَدِ انْهَمَكُوا فِي الشُّرْبِ وَتَحَاقَرُوا الْحَدَّ وَالْعُقُوبَةَ . قَالَ هُمْ عِنْدَكَ فَسَلْهُمْ . وَعِنْدَهُ الْمُهَاجِرُونَ الأَوَّلُونَ فَسَأَلَهُمْ فَأَجْمَعُوا عَلَى أَنْ يَضْرِبَ ثَمَانِينَ . قَالَ وَقَالَ عَلِيٌّ إِنَّ الرَّجُلَ إِذَا شَرِبَ افْتَرَى فَأَرَى أَنْ يَجْعَلَهُ كَحَدِّ الْفِرْيَةِ . قَالَ أَبُو دَاوُدَ أَدْخَلَ عُقَيْلُ بْنُ خَالِدٍ بَيْنَ الزُّهْرِيِّ وَبَيْنَ ابْنِ الأَزْهَرِ فِي هَذَا الْحَدِيثِ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الأَزْهَرِ عَنْ أَبِيهِ .
حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ، حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ عُمَرَ، حَدَّثَنَا أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَزْهَرَ، قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم غَدَاةَ الْفَتْحِ وَأَنَا غُلاَمٌ شَابٌّ يَتَخَلَّلُ النَّاسَ يَسْأَلُ عَنْ مَنْزِلِ خَالِدِ بْنِ الْوَلِيدِ فَأُتِيَ بِشَارِبٍ فَأَمَرَهُمْ فَضَرَبُوهُ بِمَا فِي أَيْدِيهِمْ فَمِنْهُمْ مَنْ ضَرَبَهُ بِالسَّوْطِ وَمِنْهُمْ مَنْ ضَرَبَهُ بِعَصًا وَمِنْهُمْ مَنْ ضَرَبَهُ بِنَعْلِهِ وَحَثَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم التُّرَابَ فَلَمَّا كَانَ أَبُو بَكْرٍ أُتِيَ بِشَارِبٍ فَسَأَلَهُمْ عَنْ ضَرْبِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم الَّذِي ضَرَبَهُ فَحَزَرُوهُ أَرْبَعِينَ فَضَرَبَ أَبُو بَكْرٍ أَرْبَعِينَ فَلَمَّا كَانَ عُمَرُ كَتَبَ إِلَيْهِ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ إِنَّ النَّاسَ قَدِ انْهَمَكُوا فِي الشُّرْبِ وَتَحَاقَرُوا الْحَدَّ وَالْعُقُوبَةَ . قَالَ هُمْ عِنْدَكَ فَسَلْهُمْ . وَعِنْدَهُ الْمُهَاجِرُونَ الأَوَّلُونَ فَسَأَلَهُمْ فَأَجْمَعُوا عَلَى أَنْ يَضْرِبَ ثَمَانِينَ . قَالَ وَقَالَ عَلِيٌّ إِنَّ الرَّجُلَ إِذَا شَرِبَ افْتَرَى فَأَرَى أَنْ يَجْعَلَهُ كَحَدِّ الْفِرْيَةِ . قَالَ أَبُو دَاوُدَ أَدْخَلَ عُقَيْلُ بْنُ خَالِدٍ بَيْنَ الزُّهْرِيِّ وَبَيْنَ ابْنِ الأَزْهَرِ فِي هَذَا الْحَدِيثِ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الأَزْهَرِ عَنْ أَبِيهِ .
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে লক্ষণীয়।
ক. মদ পান করেছে এমন এক ব্যক্তিকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে হাজির করা;
খ. তিনি তাকে মারপিট করতে বললে সকলে মিলে তাকে মারধর করা
যে ব্যক্তি মদপান করেছিল তাকে হাজির করা হয়েছিল একজন অপরাধীরূপে। মদপান করা এক দণ্ডনীয় অপরাধ। ইসলামে এর শাস্তি হল ৪০ দোররা। সে মদপানের অপরাধ করেছিল বলে তাকে এ শাস্তিদানের জন্য হাজির করা হয়।
মদপান প্রথম দিকে নিষেধ ছিল না। এটা নিষেধ করা হয় পর্যায়ক্রমে। প্রথমে এর ক্ষতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় (দ্র: সূরা বাকারা (২), আয়াত নং ২১৯)। তারপর নামাযের সময় মদপান করতে নিষেধ করা হয় (দ্র: সূরা নিসা (৪), আয়াত নং ৪৩)। সবশেষে সুস্পষ্টভাবে এটি স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। এ মর্মে অবতীর্ণ হয়-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (90) إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ (91)
‘হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমার বেদী ও জুয়ার তীর অপবিত্র, শয়তানী কাজ। সুতরাং এসব পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন কর। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষের বীজই বপন করতে চায় এবং চায় তোমাদেরকে আল্লাহর যিকির ও নামায থেকে বিরত রাখতে। সুতরাং, তোমরা কি (ওসব জিনিস থেকে) নিবৃত্ত হবে? ১৮৫
সঙ্গে সঙ্গে সাহাবীগণ বলে উঠলেন, আমরা নিবৃত্ত হলাম, আমরা নিবৃত্ত হলাম। তাঁরা নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেলেন। মদের মটকা ভেঙ্গে ফেললেন। রাস্তাঘাটে পানির মত মদ বইতে লাগল। মদের আসর উঠে গেল। বহুদিনের অভ্যাস খতম হয়ে গেল। তাঁরা মাদকাসক্তি ছেড়ে আল্লাহপ্রেমে নিমজ্জিত হলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইশক ও মহব্বত এবং দীনের অনুসরণকেই আসক্তির বিষয় বানিয়ে নিলেন। মদ ও মাদকাসক্তি নিবারণে অভূতপূর্ব বিপ্লব সূচিত হল। বলা যায় ইসলামী সমাজ থেকে মাদকাসক্তির চূড়ান্ত নির্বাসন ঘটে গেল। মাদকাসক্তি নিবারণে এরকম সফলতা কোনও রাষ্ট্রীয় আইন, কোনও নেতার নির্দেশ বা কোনও সামাজিক আন্দোলন কখনও দেখাতে পারেনি।
এ সফলতার প্রাণশক্তি ছিল আল্লাহ ও রাসূলপ্রেম এবং তাকওয়া ও পরহেযগারীর চর্চা। কাজেই এই যে ব্যক্তিকে মদপানের অপরাধে হাজির করা হল এর দ্বারা এ ধারণা নেওয়া ঠিক হবে না যে, তখনও বুঝি মদপানের ব্যাপক প্রচলন রয়ে গিয়েছিল। বা লুকাছাপা করে হলেও মানুষ ব্যাপকভাবে মদপান করত। ব্যাপারটা সেরকম নয় মোটেই। গোটা নবীজীবন এবং তারপর খেলাফতে রাশেদার চল্লিশ বছরের দীর্ঘ সময়কালে এরকম ঘটনা গোনাগুণতি কয়েকটাই ঘটেছে। এরূপ বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটা মূলত না ঘটারই নামান্তর।
দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, লোকটিকে ধরে নিয়ে আসার দ্বারা বোঝা যায়, ইসলামে এটা একটা দণ্ডনীয় অপরাধ এবং রাষ্ট্রের কর্তব্য এরূপ অপরাধীর উপর দণ্ড কার্যকর করা। হাদীছের বর্ণনা দ্বারা বাহ্যত বোঝা যায় তাকে গণধোলাই দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টা তা নয়। মদপানের অপরাধে জনগণ তাকে নিজেদের ইচ্ছামত মারধর করেনি; বরং তারা তাকে ধরে আদালতে হাজির করেছে। তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই ছিলেন বিচারক। তিনিই উপস্থিত লোকজনকে তার উপর শাস্তি কার্যকরের হুকুম দিয়েছেন। সেই হিসেবে ইসলাম মদপানকারীর শাস্তি হিসেবে যে ৪০ দোররার ব্যবস্থা রেখেছে, তারা সেটাই প্রয়োগ করেছে। কোনও কোনও বর্ণনায় স্পষ্টই আছে যে, গুণে দেখা গেছে তাদের সকলের মারের পরিমাণ চল্লিশই হয়েছিল। সকলকে দিয়ে মারানোর উদ্দেশ্য ছিল হয়ত শাস্তিকে দৃষ্টান্তমূলক করা। যাতে ফের কেউ এ জাতীয় অপরাধে লিপ্ত হওয়ার সাহস না করে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. মদপান একটি শরীআতী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
খ. শরীআতী শাস্তি প্রয়োগ করা আদালতের কাজ। সাধারণ জনগণ নিজেদের পক্ষ থেকে তা প্রয়োগের অধিকার রাখে না।
গ. শরীআতী শাস্তিযোগ্য অপরাধ কেউ করলে শাস্তি আরোপ করা আদালতের অবশ্যকর্তব্য। আদালত তা ক্ষমার এখতিয়ার রাখে না।
১৮৫. সূরা মায়িদা (৫), আয়াত নং ৯০, ৯১
ক. মদ পান করেছে এমন এক ব্যক্তিকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে হাজির করা;
খ. তিনি তাকে মারপিট করতে বললে সকলে মিলে তাকে মারধর করা
যে ব্যক্তি মদপান করেছিল তাকে হাজির করা হয়েছিল একজন অপরাধীরূপে। মদপান করা এক দণ্ডনীয় অপরাধ। ইসলামে এর শাস্তি হল ৪০ দোররা। সে মদপানের অপরাধ করেছিল বলে তাকে এ শাস্তিদানের জন্য হাজির করা হয়।
মদপান প্রথম দিকে নিষেধ ছিল না। এটা নিষেধ করা হয় পর্যায়ক্রমে। প্রথমে এর ক্ষতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় (দ্র: সূরা বাকারা (২), আয়াত নং ২১৯)। তারপর নামাযের সময় মদপান করতে নিষেধ করা হয় (দ্র: সূরা নিসা (৪), আয়াত নং ৪৩)। সবশেষে সুস্পষ্টভাবে এটি স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। এ মর্মে অবতীর্ণ হয়-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (90) إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ (91)
‘হে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমার বেদী ও জুয়ার তীর অপবিত্র, শয়তানী কাজ। সুতরাং এসব পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলতা অর্জন কর। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষের বীজই বপন করতে চায় এবং চায় তোমাদেরকে আল্লাহর যিকির ও নামায থেকে বিরত রাখতে। সুতরাং, তোমরা কি (ওসব জিনিস থেকে) নিবৃত্ত হবে? ১৮৫
সঙ্গে সঙ্গে সাহাবীগণ বলে উঠলেন, আমরা নিবৃত্ত হলাম, আমরা নিবৃত্ত হলাম। তাঁরা নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেলেন। মদের মটকা ভেঙ্গে ফেললেন। রাস্তাঘাটে পানির মত মদ বইতে লাগল। মদের আসর উঠে গেল। বহুদিনের অভ্যাস খতম হয়ে গেল। তাঁরা মাদকাসক্তি ছেড়ে আল্লাহপ্রেমে নিমজ্জিত হলেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইশক ও মহব্বত এবং দীনের অনুসরণকেই আসক্তির বিষয় বানিয়ে নিলেন। মদ ও মাদকাসক্তি নিবারণে অভূতপূর্ব বিপ্লব সূচিত হল। বলা যায় ইসলামী সমাজ থেকে মাদকাসক্তির চূড়ান্ত নির্বাসন ঘটে গেল। মাদকাসক্তি নিবারণে এরকম সফলতা কোনও রাষ্ট্রীয় আইন, কোনও নেতার নির্দেশ বা কোনও সামাজিক আন্দোলন কখনও দেখাতে পারেনি।
এ সফলতার প্রাণশক্তি ছিল আল্লাহ ও রাসূলপ্রেম এবং তাকওয়া ও পরহেযগারীর চর্চা। কাজেই এই যে ব্যক্তিকে মদপানের অপরাধে হাজির করা হল এর দ্বারা এ ধারণা নেওয়া ঠিক হবে না যে, তখনও বুঝি মদপানের ব্যাপক প্রচলন রয়ে গিয়েছিল। বা লুকাছাপা করে হলেও মানুষ ব্যাপকভাবে মদপান করত। ব্যাপারটা সেরকম নয় মোটেই। গোটা নবীজীবন এবং তারপর খেলাফতে রাশেদার চল্লিশ বছরের দীর্ঘ সময়কালে এরকম ঘটনা গোনাগুণতি কয়েকটাই ঘটেছে। এরূপ বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটা মূলত না ঘটারই নামান্তর।
দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, লোকটিকে ধরে নিয়ে আসার দ্বারা বোঝা যায়, ইসলামে এটা একটা দণ্ডনীয় অপরাধ এবং রাষ্ট্রের কর্তব্য এরূপ অপরাধীর উপর দণ্ড কার্যকর করা। হাদীছের বর্ণনা দ্বারা বাহ্যত বোঝা যায় তাকে গণধোলাই দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টা তা নয়। মদপানের অপরাধে জনগণ তাকে নিজেদের ইচ্ছামত মারধর করেনি; বরং তারা তাকে ধরে আদালতে হাজির করেছে। তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই ছিলেন বিচারক। তিনিই উপস্থিত লোকজনকে তার উপর শাস্তি কার্যকরের হুকুম দিয়েছেন। সেই হিসেবে ইসলাম মদপানকারীর শাস্তি হিসেবে যে ৪০ দোররার ব্যবস্থা রেখেছে, তারা সেটাই প্রয়োগ করেছে। কোনও কোনও বর্ণনায় স্পষ্টই আছে যে, গুণে দেখা গেছে তাদের সকলের মারের পরিমাণ চল্লিশই হয়েছিল। সকলকে দিয়ে মারানোর উদ্দেশ্য ছিল হয়ত শাস্তিকে দৃষ্টান্তমূলক করা। যাতে ফের কেউ এ জাতীয় অপরাধে লিপ্ত হওয়ার সাহস না করে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. মদপান একটি শরীআতী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
খ. শরীআতী শাস্তি প্রয়োগ করা আদালতের কাজ। সাধারণ জনগণ নিজেদের পক্ষ থেকে তা প্রয়োগের অধিকার রাখে না।
গ. শরীআতী শাস্তিযোগ্য অপরাধ কেউ করলে শাস্তি আরোপ করা আদালতের অবশ্যকর্তব্য। আদালত তা ক্ষমার এখতিয়ার রাখে না।
১৮৫. সূরা মায়িদা (৫), আয়াত নং ৯০, ৯১
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)


বর্ণনাকারী: