কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

৩০. ফিতনাসমূহের বিবরণ ও করণীয়

হাদীস নং: ৪২০১
আন্তর্জাতিক নং: ৪২৪৯ - ৪২৫০
১. ফিতনা ফাসাদের উল্লেখ এবং এর নিদর্শনাবলী।
৪২০১. মুহাম্মাদ ইহন ইয়াহয়া (রাহঃ) .... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী (ﷺ) বলেছেনঃ আরবের ঐ ফিতনার প্রতি আফসোস! যা খুবই নিকটবর্তী। যে ব্যক্তি নিজের হাতকে তা থেকে ফিরিয়ে রাখবে, সে নাজাত পাবে।*

ইমাম আবু দাউদ (রাহঃ) বলেন, ইবনে ওয়াহাব, জারির, উবাইদুল্লাহ নাফি’ (রাহঃ) সূত্রে ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ সে সময় অতি নিকটবর্তী, যখন মুসলমানদের মদীনাতে ঘিরে ফেলা হবে, এমনকি সব চাইতে দূরে, সালাহ নামক স্থানে, তাদের পতাকাবাহী নেতা হবে।**

* সম্ভবতঃ এ হাদীসে উছমান (রাযিঃ), আলী (রাযিঃ) ও মুআবিয়া (রাযিঃ)-এর সময়ের ফিতনার প্রতি ইংগিত করা হয়েছে, যা নবী (ﷺ) এর ভবিষ্যদ্বাণীর পর-পরই অনুষ্ঠিত হয়। – (অনুবাদক)

** সালাহ খায়বরের নিকট অবস্থিত একটি স্থানের নাম। সম্ভবতঃ এ অবস্থা হবে দাজ্জাল প্রকাশের সময়। -(অনুবাদক)
باب ذِكْرِ الْفِتَنِ وَدَلاَئِلِهَا
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى بْنِ فَارِسٍ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُوسَى، عَنْ شَيْبَانَ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " وَيْلٌ لِلْعَرَبِ مِنْ شَرٍّ قَدِ اقْتَرَبَ أَفْلَحَ مَنْ كَفَّ يَدَهُ " .

الَ أَبُو دَاوُدَ حُدِّثْتُ عَنِ ابْنِ وَهْبٍ، قَالَ حَدَّثَنَا جَرِيرُ بْنُ حَازِمٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " يُوشِكُ الْمُسْلِمُونَ أَنْ يُحَاصَرُوا إِلَى الْمَدِينَةِ حَتَّى يَكُونَ أَبْعَدُ مَسَالِحِهِمْ سَلاَحَ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আরবদের সম্পর্কে আসন্ন বিপর্যয়ের দুঃসংবাদ
এর দ্বারা কোন বিপর্যয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। হতে পারে হযরত উছমান রাযি.-এর শাহাদাত-পরবর্তী ফিতনা ফাসাদের কথা বোঝানো হয়েছে। তাঁর শাহাদাতকে কেন্দ্র করে মুসলিম উম্মাহ'র মধ্যে বিভক্তির সূচনা ঘটে। কালক্রমে সে বিভক্তি বহু শাখা-প্রশাখায় বিস্তার লাভ করে। এভাবে উম্মাহ'র ঐক্য ও সংহতি বিনষ্ট হয়ে যায়। পরিণামে তারা আত্মকলহে নিপতিত হয়ে নিজেদের অপ্রতিরোধ্য শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং শত্রুদের অন্তর থেকে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি নিঃশেষ হয়ে যায়। এ অবকাশে শত্রুগণ সর্বশক্তি নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে-

يوشك الأمم أن تداعى عليكم كما تداعى الأكلة على قصعتها، فقال قائل : ومن قلة نحن يومئذ؟ قال: «بل أنتم يومئذ كثير، ولكنكم غثاء كغثاء السيل، ولينزعن الله من صدور عدوكم المهابة منكم، وليقذفن الله في قلوبكم الوهن»، فقال قائل : يا رسول الله! ما الوهن؟ قال: «حب الدنيا وكراهية الموت»

‘অচিরেই দুনিয়ার জাতিসমূহ তোমাদেরকে গ্রাস করার জন্য একে অন্যকে ডাকবে, যেমন আহারকারীগণ খাবার পাত্রের দিকে একে অন্যকে ডেকে থাকে। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, তা কি এ কারণে যে, আমরা তখন সংখ্যায় কম থাকব? তিনি বললেন, না, বরং তখন তোমরা সংখ্যায় বেশিই থাকবে, কিন্তু তোমরা হয়ে পড়বে ঢলবাহী খড়কুটার মত। আল্লাহ তা'আলা তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয়-ভীতি তুলে নেবেন এবং তোমাদের অন্তরে ‘ওয়াহান' সঞ্চার করবেন। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ওয়াহান কী? তিনি বললেন, দুনিয়ার আসক্তি ও মৃত্যু অপসন্দ করা। (সুনানে আবূ দাউদ, হাদীছ নং ৪২৯৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ নং ২২৩৯৭: বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, হাদীছ নং ১০৩৭২: বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ, হাদীছ নং ৪২২৪)

নিজেদের আদর্শ থেকে বিচ্যুতি ও আত্মকলহের পরিণামে এ জাতির ওপর তাদের শত্রুগণ অনেক সময়ই শক্তি পরীক্ষা করেছে। ক্রুসেড যুদ্ধসমূহ ও তাতারী বিভীষিকার কথা তো সকলেরই জানা। তারপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে দুনিয়ার সব কুফরী শক্তি একতাবদ্ধ হয়ে মুসলিম জাহানে হামলা চালিয়েছে এবং ইসলামী বিশ্বকে নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়ার মচ্ছব চালিয়েছে। আজও এ জাতির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ সবরকম আগ্রাসনই চালানো হচ্ছে। অতীতে তারা সেসব আগ্রাসনের সুযোগ পেয়েছিল এবং বর্তমানেও পাচ্ছে আমাদেরই আদর্শচ্যুতির কারণে। আমরা ছিলাম যাহিদ ও দুনিয়ার প্রতি নিরাসক্ত এক জাতি। আমরা ছিলাম শহীদী প্রেরণায় উজ্জীবিত। সেখানে আজ আমরা হয়ে পড়েছি সম্পূর্ণ দুনিয়ামুখী এবং মৃত্যুভয়ে ভীত এক নিস্তেজ ও লালসাকাতর জাতি, যেমনটা হাদীছে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে।\

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা উম্মতের প্রতি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের গভীর মমত্ববোধের পরিচয় পাওয়া যায়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)