আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

২৪- রোযার অধ্যায়

হাদীস নং: ১৮৪৪
আন্তর্জাতিক নং: ১৯৬৮
১২৩৩. কোন ব্যক্তি তাঁর ভাইয়ের নফল রোযা ভাঙ্গার জন্য কসম দিলে এবং তার জন্য এ রোযার কাযা ওয়াজিব মনে না করলে, যখন রোযা পালন না করা তার জন্য উত্তম হয়।
১৮৪৪। মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার (রাহঃ) ......... আবু জুহায়ফা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) সালমান (রাযিঃ) ও আবুদ-দারদা (রাযিঃ) এর মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন করে দেন। (একবার) সালমান (রাযিঃ) আবুদ-দারদা (রাযিঃ) এর সাথে সাক্ষাত করতে এসে উম্মে দারদা (রাযিঃ) কে মলিন কাপড় পরিহিত দেখতে পান। তিনি এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে উম্মে দারদা (রাযিঃ) বললেন, আপনার ভাই আবুদ-দারদার পার্থিব কোন কিছুর প্রতি মোহ নেই। কিছুক্ষণ পরে আবুদ-দারদা (রাযিঃ) এলেন। তারপর তিনি সালমান (রাযিঃ) এর জন্য আহার্য প্রস্তুত করান এবং বলেন, আপনি খেয়ে নিন, আমি রোযা পালন করছি। সালমান (রাযিঃ) বললেন, আপনি না খেলে আমি খাব না। এরপর আবুদ-দারদা (রাযিঃ) সালমান (রাযিঃ) এর সঙ্গে খেলেন। রাত হলে আবুদ-দারদা (রাযিঃ) (নামায আদায়ে) দাঁড়াতে গেলেন। সালমান (রাযিঃ) বললেন, এখন ঘুমিয়ে যান। আবুদ-দারদা (রাযিঃ) ঘুমিয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পরে আবুদ-দারদা (রাযিঃ) আবার নামাযে দাঁড়াতে উদ্যত হলেন, সালমান (রাযিঃ) বললেন, ঘুমিয়ে যান। যখন রাতের শেষভাগ হল, সালমান (রাযিঃ) আবুদ-দারদা (রাযিঃ) কে বললেন, এখন দাঁড়ান। এরপর তারা দুজনে নামায আদায় করলেন।
পরে সালমান (রাযিঃ) তাঁকে বললেন, আপনার প্রতিপালকের হক আপনার উপর আছে। আপনার নিজেরও হক আপনার উপর রয়েছে। আবার আপনার পরিবারেরও হক রয়েছে। প্রত্যেক হকদারকে তার হক প্রদান করুন। এরপর আবুদ-দারদা (রাযিঃ) নবী (ﷺ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে এ ঘটনা বর্ণনা করলেন। (সব শুনে) নবী (ﷺ) বললেনঃ সালমান ঠিকই বলেছে।
باب مَنْ أَقْسَمَ عَلَى أَخِيهِ لِيُفْطِرَ فِي التَّطَوُّعِ وَلَمْ يَرَ عَلَيْهِ قَضَاءً، إِذَا كَانَ أَوْفَقَ لَهُ
1968 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ عَوْنٍ، حَدَّثَنَا أَبُو العُمَيْسِ، عَنْ عَوْنِ بْنِ أَبِي جُحَيْفَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: آخَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ سَلْمَانَ، وَأَبِي الدَّرْدَاءِ، فَزَارَ سَلْمَانُ أَبَا الدَّرْدَاءِ، فَرَأَى أُمَّ الدَّرْدَاءِ مُتَبَذِّلَةً، فَقَالَ لَهَا: مَا شَأْنُكِ؟ قَالَتْ: أَخُوكَ أَبُو الدَّرْدَاءِ لَيْسَ لَهُ حَاجَةٌ فِي الدُّنْيَا، فَجَاءَ أَبُو الدَّرْدَاءِ فَصَنَعَ لَهُ طَعَامًا، فَقَالَ: كُلْ؟ قَالَ: فَإِنِّي صَائِمٌ، قَالَ: مَا أَنَا بِآكِلٍ حَتَّى تَأْكُلَ، قَالَ: فَأَكَلَ، فَلَمَّا كَانَ اللَّيْلُ ذَهَبَ أَبُو الدَّرْدَاءِ يَقُومُ، قَالَ: نَمْ، فَنَامَ، ثُمَّ ذَهَبَ يَقُومُ فَقَالَ: نَمْ، فَلَمَّا كَانَ مِنْ آخِرِ اللَّيْلِ قَالَ: سَلْمَانُ قُمِ الآنَ، فَصَلَّيَا فَقَالَ لَهُ سَلْمَانُ: إِنَّ لِرَبِّكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَلِنَفْسِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، وَلِأَهْلِكَ عَلَيْكَ حَقًّا، فَأَعْطِ كُلَّ ذِي حَقٍّ حَقَّهُ، فَأَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَدَقَ سَلْمَانُ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ বর্ণনায় যে হযরত সালমান ফারিসী ও আবুদ দারদা রাযি.-এর মধ্যে ভ্রাতৃবন্ধনের কথা বলা হয়েছে- এর ব্যাখ্যা এই যে, কাফের-মুশরিকদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মুসলিমগণ যখন আল্লাহ তা'আলার হুকুমে মক্কা মুকাররামা ছেড়ে মদীনা মুনাওয়ারায় চলে আসেন, তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনার আনসার সাহাবীগণের প্রত্যেকের সাথে একেকজন মুহাজির সাহাবীর সম্পর্ক স্থাপন করে দেন। এটা ছিল ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক। এ সম্পর্কের কারণে তাঁদের একজনের উপর অন্যজনের সর্বপ্রকার সাহায্য-সহযোগিতা করা অবশ্যকর্তব্য হয়ে গিয়েছিল। মূলত সাহায্য করতেন আনসারগণই। মুহাজিরগণ তো ছিলেন হৃতসর্বস্ব। তাঁরা মক্কা মুকাররামায় তাঁদের সবকিছু ছেড়ে দিয়ে খালি হাতে চলে এসেছিলেন। ফলে আনসারগণ প্রত্যেকে নিজ নিজ অর্থ-সম্পদের অর্ধেক অর্ধেক তাঁদের মুহাজির ভাইদের দিয়ে দিয়েছিলেন। নিরুপায় মুহাজিরদের কেউ কেউ তা গ্রহণ করেছিলেন এবং অনেকেই কৃতজ্ঞতার সাথে তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং নিজ নিজ চেষ্টায় রোজগারের ব্যবস্থা করে নিয়েছিলেন। তো নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই যে ভ্রাতৃবন্ধন স্থাপন করেছিলেন, তার মধ্যে মক্কা মুকাররামা থেকে আসা মুহাজিরগণ ছাড়াও অন্যান্য স্থান থেকে যারা মদীনা মুনাওয়ারায় চলে এসেছিলেন তারাও শামিল ছিলেন। হযরত সালমান ফারিসী রাযি.-ও তাদের একজন।

হযরত আবুদ দারদা রাযি.-এর সঙ্গে ভ্রাতৃবন্ধন স্থাপিত হয়ে যাওয়ার পর হযরত সালমান রাযি. মাঝেমধ্যে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে আসতেন। হযরত আবুদ দারদা রাযি. ছিলেন অত্যন্ত দুনিয়াবিমুখ। পার্থিব কোনওকিছুর প্রতিই তাঁর আগ্রহ ছিল না। দিন কাটাতেন রোযা রেখে এবং রাতভর নামায পড়তেন। স্বাভাবিকভাবেই স্ত্রীর উপর তাঁর এ দুনিয়াভোলা অবস্থার প্রভাব পড়ে যায়। তখনও পর্দার বিধান নাযিল হয়নি। সুতরাং হযরত সালমান রাযি. একদা যখন তাঁর এ আনসার ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য তাঁর বাড়িতে আসেন, তখন তাঁর স্ত্রীর বেহাল অবস্থা তাঁর নজরে পড়ে যায়।

হযরত আবুদ দারদা রাযি.-এর স্ত্রীর মূল নাম খায়রা। উম্মুদ দারদা উপনামেই পরিচিত ছিলেন। স্বামীর মত তিনিও একজন বুদ্ধিমতী, 'ইবাদতগুযার ও দুনিয়াবিমুখ সাহাবীয়া ছিলেন। তিনি হযরত উছমান রাযি.-এর খেলাফতকালে শামে ইন্তিকাল করেন। তখনও তাঁর স্বামী আবুদ দারদা রাযি. জীবিত।

তো হযরত উম্মুদ দারদা রাযি.-এর জীর্ণ মলিন অবস্থা দেখে হযরত সালমান ফারিসী রাযি.-এর খুব কষ্ট লাগল। তিনি এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। উত্তরে তিনি স্বামীর দুনিয়াবিমুখ অবস্থার কথাই ব্যক্ত করলেন। দুনিয়ার কোনও কিছুতেই তাঁর প্রয়োজন নেই। বোঝাতে চাচ্ছিলেন, তিনি স্ত্রীর প্রতিও নির্বিকার। কামাই-রোজগারেও মন নেই। তিনি কেবল তাঁর 'ইবাদত-বন্দেগী নিয়েই থাকেন। আর সেজন্যই আমাদের এ অবস্থা।

এরই মধ্যে আবুদ দারদা রাযি. বাড়িতে ফিরলেন। নিজে যতই গরীব হোন না কেন, মেহমানের ইকরাম ও যত্ন নেওয়ার ফযীলত তো জানেন। সুতরাং তাড়াতাড়ি তাঁর খানার ইন্তিজাম করলেন এবং তাঁকে তা খেতে অনুরোধ করলেন। নিজে রোযাদার ছিলেন বলে ওজর পেশ করলেন যে, খাবারে মেহমানের সঙ্গে শরীক হতে পারবেন না। কিন্তু হযরত সালমান ফারিসী রাযি. মানলেন না। জোর করে তাঁকে খানায় শরীক করে নিলেন। এমনিভাবে রাতে ঘুমাতে বাধ্য করলেন। তারপর শেষরাতে দু'জনে মিলে তাহাজ্জুদ আদায় করলেন।

হযরত আবুদ দারদা রাযি.-এর আমলে ব্যতিক্রম ঘটে গেল। নিয়মিত রোযা রাখেন, রাতভর ইবাদত করেন, কিন্তু গতকাল রোযা ভাঙতে হয়েছে এবং আজ রাতের পুরোটা ইবাদত করা হয়নি, কিছুক্ষণ ঘুমের মধ্যে চলে গেছে। হযরত সালমান রাযি. তাঁকে ঘুমাতে বাধ্য করেছেন।

হযরত সালমান ফারিসী রাযি. তাঁকে দিয়ে যে রোযা ভাঙালেন এবং রাতে ঘুমাতে বাধ্য করলেন, এর সপক্ষে তিনি যুক্তি ও নসীহত হিসেবে আল্লাহর হকের পাশাপাশি নিজ শরীর ও পরিবারবর্গের হক থাকা ও তা আদায় করার প্রতি তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। অর্থাৎ আল্লাহর হক আদায়ার্থে যেমন ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে, তেমনি শরীরের হক আদায় করার জন্য ঠিকভাবে পানাহার করতে হবে এবং শরীরকে বিশ্রাম দিতে হবে। কাজেই একটানা রোযা রাখলে শরীরের হক নষ্ট করা হবে, যেমন রাতে না ঘুমালেও শরীরের হক নষ্ট হবে। এমনিভাবে স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হক আদায় করাও জরুরি। ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদের পানাহার, পোশাক- আশাক ও অন্যান্য জরুরত পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় হক অনাদায়ের জন্য দায়ী থাকতে হবে। ইসলাম এসব হক আদায়েরও নির্দেশ দেয়। তাই এতে অবহেলার সুযোগ নেই।

তো বরাবরের মত রোযা রাখতে না পারা, সারারাত ইবাদত করতে না পারা এবং এই যে হকের কথা বলা হল এ বিষয়ে তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের মতামত জানার প্রয়োজন বোধ করলেন। তাই তাঁর কাছে গিয়ে সব কথা খুলে বললেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত সালমান রাযি.-এর সমর্থন করলেন এবং বললেন, সালমান সঠিক বলেছে।

এর দ্বারা উপলব্ধি করা যায় আমাদের ইসলাম কী ভারসাম্যপূর্ণ দীন। এ দীনে আল্লাহর হকসমূহ আদায়ের সাথে পার্থিব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গসমূহের কী অপূর্ব সমন্বয় সাধন করা হয়েছে। একদিকে বলা হয়েছে, ফরয ইবাদতের পাশাপাশি যতটা সম্ভব নফলও আদায় করতে থাক আর এভাবে পর্যায়ক্রমে আল্লাহ তা'আলার নৈকট্যের ধাপসমূহ অতিক্রম করে তাঁর বেলায়েতের স্তর হাসিল করে নাও। অপরদিকে তাগিদ করা হয়েছে, নফল ইবাদত-বন্দেগীতে এমনভাবে ডুবে যেও না, যাতে পার্থিব জীবনের ব্যাপারে সম্পূর্ণ সন্ন্যাসী হয়ে পড়।

সামাজিক জীব হওয়ার সুবাসে নিজ পরিবার-পরিজনের বাইরেও আত্মীয়স্বজন ও পাড়াপ্রতিবেশীসহ বৃহত্তর সমাজের সাথে প্রত্যেকের সম্পর্ক রয়েছে এবং সে সম্পর্কের কারণে প্রত্যেকের উপর অন্যদের কিছু না কিছু হক আরোপিত হয়। সুষ্ঠু মানবীয় জীবনযাপনের জন্য পর্যায়ক্রমে সে সকল হক আদায় করা জরুরি। আর সেসব হক আদায়ের লক্ষ্যে সর্বপ্রথম কর্তব্য নিজের হক আদায় করা।

প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যেই শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিপুল সম্ভাবনা নিহিত আছে। সে সম্ভাবনার বিকাশ দ্বারা একেকজন মানুষের জীবন বহুবিচিত্র কর্মে কীর্তিমান হয়ে উঠতে পারে আর তা দ্বারা সাধিত হতে পারে গোটা মানবসমাজের বহুমুখী কল্যাণ। যার দ্বারা মানুষের যত বেশি কল্যাণ সাধিত হয়, ইসলামের দৃষ্টিতে সে ততটাই শ্রেষ্ঠ মানুষ। বলাবাহুল্য, সেই শ্রেষ্ঠ মানুষে পরিণত হওয়ার জন্য, যার লক্ষ্যবস্তু কেবলই আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি, সবার আগে প্রয়োজন নিজের হক আদায় করা। অর্থাৎ নিজ শরীরের যত্ন নেওয়া এবং শারীরিক ও মানসিক সকল জরুরত মেটানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তাই এ হাদীছে বলা হয়েছে- তোমার উপর তোমার নিজেরও হক রয়েছে।

হক আদায় প্রয়োজন স্ত্রীরও। স্ত্রীর মাধ্যমে প্রত্যেকের শরীর-মনের স্বস্তি অর্জিত হয়। এবং জীবনে শৃঙ্খলা আসে। তারপর বংশবিস্তারেও স্ত্রীর ভূমিকা প্রধান। 'সন্তান' নামক আল্লাহর মহান নি'আমতলাভে পিতা অপেক্ষা মায়ের ত্যাগ তিতিক্ষা অনেক বেশি। সে ত্যাগ যাতে স্বস্তির সাথে স্বীকার করতে পারে এবং স্বামী-সন্তানের পরিচর্যায় প্রাণভরে ভূমিকা রাখতে পারে, সে লক্ষ্যে স্বামীর কর্তব্য তার হক আদায়ে পুরোপুরি গুরুত্ব দেওয়া।

এমনিভাবে আরও যত রকম হক আছে, যার বিস্তারিত বিবরণ কুরআন ও হাদীছে দেওয়া হয়েছে, তা আদায়ের মাধ্যমেই মানবজীবনে পরিপূর্ণতা আসে। আর সে পরিপূর্ণতা আল্লাহ তা'আলার হক আদায়ের পক্ষেও অনেক বেশি সহায়ক। তাই ইসলাম ইবাদত-বন্দেগীতে মধ্যপন্থা অবলম্বনের জোর তাগিদ করেছে। বলাবাহুল্য, সে তাগিদ রয়েছে সংসারকর্ম ও ইহজাগতিক জীবনযাপনের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বনেও। এভাবেই ব্যক্তির ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনে ভারসাম্য আসে, যে ভারসাম্যসৃষ্টি দীনে ইসলামের এক অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এ হাদীছে সে ভারসাম্যের প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে এর উপর আমল করার তাওফীক দান করুন, আমীন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারাও ইবাদত-বন্দেগীতে মধ্যপন্থার গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষালাভ হয়।

খ. আরও জানা যায়, আল্লাহর জন্য দুই মুসলিমের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববন্ধন স্থাপিত হতে পারে, যদিও একই দীনের অনুসারী হওয়ার কারণে সকল মুসলিম ভাই ভাই।

গ. এক মুসলিম ভাইয়ের উচিত অপর মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়া ও তার খোঁজখবর নেওয়া।
ঘ. প্রত্যেক মুসলিমের উচিত সকল মুসলিমের প্রতি কল্যাণকামী হওয়া এবং কারও কোনও ত্রুটিবিচ্যুতি নজরে আসলে সে সম্পর্কে তাকে সচেতন করা।

ঙ. এ হাদীছ দ্বারা জানা যায়, রাতের প্রথমাংশে ঘুমিয়ে শেষরাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়া উত্তম।

চ. আরও জানা যায়, কোনও নফল ও মুস্তাহাবে লিপ্ত থাকার কারণে কারও দ্বারা যদি ফরয-ওয়াজিব বিধান লঙ্ঘন হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে তাকে সে নফল ও মুস্তাহাব থেকে বিরত রাখার অবকাশ আছে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)