আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

২৪- রোযার অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ১৯৬০
১২২৯. বাচ্চাদের রোযা পালন করা।
রমাযানে দিনের বেলায় এক নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিকে উমর (রাযিঃ) বলেন, আমাদের বাচ্চারা পর্যন্ত রোযা পালন করছে। তোমার সর্বনাশ হোক! অতঃপর উমর (রাযিঃ) তাঁকে মারলেন।
১৮৩৬। মুসাদ্দাদ (রাহঃ) ......... রুবায়্যি‘ বিনতে মুআব্বিয (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আশূরার* সকালে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আনসারদের সকল পল্লীতে এ নির্দেশ দিলেনঃ যে ব্যক্তি রোযা পালন করেনি সে যেন দিনের বাকি অংশ না খেয়ে থাকে, আর যার রোযা অবস্থায় সকাল হয়েছে, সে যেন রোযা পূর্ণ করে। তিনি (রুবায়্যি রাযিঃ) বলেন, পরবর্তীতে আমরা ঐ দিন রোযা রাখতাম এবং আমাদের শিশুদের রোযা রাখাতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরী করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য ]তাকে ঐ খেলনা দিয়ে ইফতার পর্যন্ত ভুলিয়ে রাখতাম। আবু আব্দুল্লাহ (রাহঃ) বলেন, عِهْن অর্থ পশম।

*মুহাররম মাসের দশ তারিখ। রমযানের রোযা ফরয হওয়ার আগে এই দিন রোযা পালন করার নির্দেশ ছিল।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

প্রত্যেক ঈমানদারের কর্তব্য হলো- প্রথমত নিজের জীবনকে কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে পরিচালিত করা। কিন্তু পরকালে মুক্তির জন্য এটাই যথেষ্ট নয়। এর সঙ্গে নিজের পরিবার, সমাজ ও প্রতিবেশীদের হিদায়াতের পথে পরিচালিত করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বিশেষত নিজের পরিবার ও অধীন লোকেরা যাতে জান্নাতের পথে চলতে পারে, পরিবারপ্রধানের উচিত সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি নিবদ্ধ করা।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো (জাহান্নামের) আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর...।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)
রমাজানের মাহাত্ম্য অর্জনে ব্যক্তিগত ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি পারিবারিক পরিমণ্ডলেও পবিত্র আবহ সৃষ্টি করা আবশ্যক। রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর পরিবারকে তাহাজ্জুদে উদ্বুদ্ধ করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রমজানের শেষ দশক এলে রাসুল (সা.) কোমর শক্ত করে বেঁধে নিতেন, রাত জেগে থাকতেন এবং পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২৪)

তাই প্রত্যেক মা-বাবার দায়িত্ব হলো সন্তানকে পর্যাপ্ত ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া। পাশাপাশি আমল ও ইবাদতের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে তোলা। মহান আল্লাহ ইবাদতের ওপর সন্তানদের লালন-পালনের দায়িত্ব মা-বাবার ওপর অর্পণ করেছেন। সাহাবায়ে কেরাম তাঁদের সন্তানদের ছোটবেলা থেকে নামাজ-রোজায় অভ্যস্ত করাতেন, যেন তারা এ মহান ইবাদত পালনে আগ্রহী হয়ে ওঠে। সন্তানকে উত্তম গুণাবলি ও ভালো কাজে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য মহানবী (সা.) বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। নামাজ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘তোমরা সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজ আদায়ের আদেশ করো। এ ব্যাপারে অবহেলা করলে ১০ বছর বয়সে তাদের প্রহার করো এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দাও।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৫)

শিশুদের রোজার অভ্যাস গড়ে তোলার ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে : রুবাই বিনতে মুআব্বিজ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আশুরার সকালে আল্লাহর রাসুল (সা.) আনসারদের সব পল্লীতে এ নির্দেশ দিলেন, যে ব্যক্তি সাওম পালন করেনি সে যেন দিনের বাকি অংশ না খেয়ে থাকে, আর যার সাওম অবস্থায় সকাল হয়েছে, সে যেন সওম পূর্ণ করে। রুবায়্যি (রা.) বলেন, পরবর্তী সময় আমরা ওই দিন সাওম পালন করতাম এবং আমাদের শিশুদের সাওম পালন করাতাম। আমরা তাদের জন্য পশমের খেলনা তৈরি করে দিতাম। তাদের কেউ খাবারের জন্য কাঁদলে তাকে ওই খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম। আর এভাবেই ইফতারের সময় হয়ে যেত। (বুখারি, হাদিস : ১৯৬০)

ইমাম বুখারি (রহ.) এই অনুচ্ছেদের নামকরণ করেছেন—‘সাওমুস সিবয়ান’ বা শিশুদের রোজা। এ অনুচ্ছেদের অধীনে তিনি ওমর (রা.)-এর একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ওমর (রা.) রমজান মাসে এক নেশাগ্রস্ত লোককে বলেছিলেন, ‘তোমার জন্য আফসোস! আমাদের ছোট শিশুরা পর্যন্ত রোজাদার! (অথচ তুমি রোজা রাখো না)।’ এরপর ওমর (রা.) তাকে প্রহার করেন। এর ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানি (রহ.) লিখেছেন, ইবনে সিরিন, ইমাম জুহুরি ও ইমাম শাফেয়ি (রহ.)সহ পূর্ববর্তী বহু মনীষী শিশুদের রোজায় অভ্যস্ত করানোকে মুস্তাহাব ইবাদত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর মতে, নামাজের মতো সাত থেকে ১০ বছরের শিশুদের রোজায় অভ্যস্ত করানো যায়। (ফাতহুল বারি : ৫/৩)

#সংগৃহীত
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন