কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

২৭. পোশাক-পরিচ্ছদের ইসলামী বিধান

হাদীস নং: ৪০০৭
আন্তর্জাতিক নং: ৪০৪৯
৮. রেশমী কাপড় পরিধানে নিষেধাজ্ঞা।
৪০০৭. ইয়াযীদ ইবনে খালিদ (রাহঃ) .... আবুল হুসাইন হায়ছাম ইবনে শাকী (রাহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আমার সঙ্গীর সাথে, যার কুনিয়াত ছিল আবু আমির এবং সে ছিল মুআফির গোত্রের লোক, বায়তুল মুকাদ্দাসে নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে গমন করি। তখন আযদ গোত্রের আবু রায়হারা (রাযিঃ) নামক এক সাহাবী সেখানকার ওয়ায-নসীহতকারী ছিল।

রাবী আবুল হুসাইন (রাহঃ) বলেন, আমার সাথী প্রথমে মসজিদে প্রবেশ করে, তারপর আমি করি এবং তার পাশে গিয়ে বসি। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করেনঃ তুমি কি আবু রায়হান (রাযিঃ) এর বক্তৃতা শুনেছ? আমি বলিঃ না। তখন তিনি বলেনঃ আমি তাকে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দশটি কাজ করতে নিষেধ করেছেন। আর তা হলোঃ

১) দাঁত ধারালো করতে,
২) চামড়ার উপর সুচ দিয়ে খোদায় করতে,
৩) চুল উপড়াতে,
৪) দু’জন পুরুষের বিবস্ত্র অবস্থায় একই চাদরের নীচে শয়ন করতে,
৫) দু’জন স্ত্রীলোকের বিবস্ত্র অবস্থায় একই চাদরের নীচে শুতে,
৬) অনারবদের মত কোন ব্যক্তিকে নিজের কাপড়ের নীচে রেশম লাগাতে,
৭) আজমীদের মত কাঁধে রেশম লাগাতে,
৮) লুট-তরাজ করতে,
৯) হিংস্র জন্তুর চামড়ার উপর সওয়ার হতে এবং
১০) বাদশাহ ব্যতীত অন্যদের আংটি পরিধান করতে।
باب مَنْ كَرِهَهُ
عَنْ أَبِي الْحُصَيْنِ، - يَعْنِي الْهَيْثَمَ بْنَ شَفِيٍّ - قَالَ خَرَجْتُ أَنَا وَصَاحِبٌ، لِي يُكْنَى أَبَا عَامِرٍ - رَجُلٌ مِنَ الْمَعَافِرِ - لِنُصَلِّيَ بِإِيلْيَاءَ وَكَانَ قَاصَّهُمْ رَجُلٌ مِنَ الأَزْدِ يُقَالُ لَهُ أَبُو رَيْحَانَةَ مِنَ الصَّحَابَةِ قَالَ أَبُو الْحُصَيْنِ فَسَبَقَنِي صَاحِبِي إِلَى الْمَسْجِدِ ثُمَّ رَدِفْتُهُ فَجَلَسْتُ إِلَى جَنْبِهِ فَسَأَلَنِي هَلْ أَدْرَكْتَ قَصَصَ أَبِي رَيْحَانَةَ قُلْتُ لاَ . قَالَ سَمِعْتُهُ يَقُولُ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ عَشْرٍ عَنِ الْوَشْرِ وَالْوَشْمِ وَالنَّتْفِ وَعَنْ مُكَامَعَةِ الرَّجُلِ الرَّجُلَ بِغَيْرِ شِعَارٍ وَعَنْ مُكَامَعَةِ الْمَرْأَةِ الْمَرْأَةَ بِغَيْرِ شِعَارٍ وَأَنْ يَجْعَلَ الرَّجُلُ فِي أَسْفَلِ ثِيَابِهِ حَرِيرًا مِثْلَ الأَعَاجِمِ أَوْ يَجْعَلَ عَلَى مَنْكِبَيْهِ حَرِيرًا مِثْلَ الأَعَاجِمِ وَعَنِ النُّهْبَى وَرُكُوبِ النُّمُورِ وَلُبُوسِ الْخَاتَمِ إِلاَّ لِذِي سُلْطَانٍ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে বাঘ ও অন্যান্য হিংস্র প্রাণীর চামড়াকে বিছানা বানাতে কিংবা পশুর পিঠে বিছিয়ে তার উপর সওয়ার হতে নিষেধ করা হয়েছে। সেকালে অনারবরা এটা করত। এটা এক রকম অহমিকা। বিলাসিতাও বটে। অহংকারী লোক মানুষকে দেখানোর জন্য এ জাতীয় বিলাসিতা সেকালেও করত, এখনও করে থাকে। গৌরব দেখানো ভালো নয়। বিলাসিতাও পসন্দনীয় নয়। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে নিষেধ করে দিয়েছেন যে, তারা যেন বাঘ বা অন্য কোনও হিংস্র পশুর চামড়াকে বিছানা বানিয়ে তার উপর না বসে কিংবা তাতে সওয়ার না হয় অর্থাৎ তা দ্বারা সওয়ারীর জিন না বানায়। সারকথা একজন মুমিনের দৃষ্টি থাকবে সর্বদা আখিরাতের দিকে। কীভাবে আখিরাতের মুক্তিলাভ হতে পারে, তার যাবতীয় কাজকর্ম সে লক্ষ্যেই সম্পাদিত হবে। সে ভোগ-বিলাসিতায় লিপ্ত হয়ে আখিরাত থেকে উদাসীন হবে না। তার পোশাক-আশাক ও অন্যান্য ব্যবহার্য সামগ্রী হবে সাদামাটা। এসব বস্তু অতিরিক্ত দামি বা বিলাসিতাপূর্ণ হলে অন্তরে তার প্রতি ভালোবাসার সৃষ্টি হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে এগুলো মানুষের সেবক থাকে না, উল্টো মানুষ এর সেবক হয়ে যায়। এভাবে মানুষ আখিরাত থেকে উদাসীন হয়ে এসব সামগ্রী সংগ্রহ ও এর সেবাযত্নে লিপ্ত হয়ে পড়ে, যা কিনা মানবসৃষ্টির উদ্দেশ্যেরও পরিপন্থি এবং দুনিয়ার বস্তুসামগ্রী সৃষ্টির উদ্দেশ্যের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

মুমিনদের উচিত সর্বপ্রকার বিলাসসামগ্রী ও অহমিকাজনক বস্তুর ব্যবহার থেকে বেঁচে থাকা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
rabi
বর্ণনাকারী:
সুনানে আবু দাউদ - হাদীস নং ৪০০৭ | মুসলিম বাংলা