কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

২০. ইলমের অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৬২৫
আন্তর্জাতিক নং: ৩৬৬৬
৪২৭. কিসসা বর্ণনা প্রসঙ্গে।
৩৬২৫. মুসাদ্দাদ (রাহঃ) ...... আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমি একদল গরীব মুহাজিরের মাঝে বসা ছিলাম, আর এ সময় তারা একে অন্যের আশ্রয় নিয়ে তার উন্মুক্ত সতর ঢাকার চেষ্টা করছিল। তখন একজন ক্বারী আমাদের কুরআন পাঠ করে শুনাচ্ছিলেন। এ সময় হঠাৎ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সেখানে আসেন এবং আমাদের সামনে দাঁড়ান। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সেখানে দাঁড়ানোর কারণে ক্বারী কিরা’আত পাঠ করা বন্ধ করে দেয়। এরপর তিনি সালাম করে জিজ্ঞাসা করেনঃ তোমরা কি করছিলে? আমরা বললামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি হলেন কারী, আমরা তার নিকট হতে কুরআন পাঠ শুনছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার উম্মতের মধ্যে এমন লোকদের পয়দা করেছেন, যাদের সঙ্গে সবর করার জন্য আমাকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রাবী বলেনঃ এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের সঙ্গে ভ্রাতৃত্ববোধ প্রকাশের জন্য আমাদের মাঝে বসে পড়েন। এরপর তিনি তাঁর হাতের ইশারায় সকলকে গোলাকার হয়ে বসতে বলেন। পরে সকলে হালকা করে বসলে সকলের চেহারা নবী (ﷺ)-এর দিকে হয়।

রাবী বলেনঃ আমার জানামতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের মধ্য হতে আমাকে ব্যতীত আর কাউকে চিনতে পারেন নি। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ হে ফকীর মুহাজির দল! তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর কিয়ামতের দিন পূর্ণ আলো পাওয়ার। তোমরা ধনী-ব্যক্তিদের অর্ধ-দিন আগেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর সে অর্ধ-দিন হবে পাঁচশ বছরের সমান।
باب فِي الْقَصَصِ
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنِ الْمُعَلَّى بْنِ زِيَادٍ، عَنِ الْعَلاَءِ بْنِ بَشِيرٍ الْمُزَنِيِّ، عَنْ أَبِي الصِّدِّيقِ النَّاجِيِّ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ جَلَسْتُ فِي عِصَابَةٍ مِنْ ضُعَفَاءِ الْمُهَاجِرِينَ وَإِنَّ بَعْضَهُمْ لَيَسْتَتِرُ بِبَعْضٍ مِنَ الْعُرْىِ وَقَارِئٌ يَقْرَأُ عَلَيْنَا إِذْ جَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَامَ عَلَيْنَا فَلَمَّا قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم سَكَتَ الْقَارِئُ فَسَلَّمَ ثُمَّ قَالَ " مَا كُنْتُمْ تَصْنَعُونَ " . قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ كَانَ قَارِئٌ لَنَا يَقْرَأُ عَلَيْنَا فَكُنَّا نَسْتَمِعُ إِلَى كِتَابِ اللَّهِ . قَالَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي جَعَلَ مِنْ أُمَّتِي مَنْ أُمِرْتُ أَنْ أَصْبِرَ نَفْسِي مَعَهُمْ " . قَالَ فَجَلَسَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَسَطَنَا لِيَعْدِلَ بِنَفْسِهِ فِينَا ثُمَّ قَالَ بِيَدِهِ هَكَذَا فَتَحَلَّقُوا وَبَرَزَتْ وُجُوهُهُمْ لَهُ - قَالَ - فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَرَفَ مِنْهُمْ أَحَدًا غَيْرِي . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " أَبْشِرُوا يَا مَعْشَرَ صَعَالِيكِ الْمُهَاجِرِينَ بِالنُّورِ التَّامِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ قَبْلَ أَغْنِيَاءِ النَّاسِ بِنِصْفِ يَوْمٍ وَذَاكَ خَمْسُمِائَةِ سَنَةٍ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়েছেন যে, গরীবেরা ধনীদের পাঁচশ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এর কারণ, হিসাব-নিকাশের জন্য ধনীদের আটকে রাখা হবে। তারা কোন পথে সম্পদ অর্জন করেছিল এবং কোন কোন খাতে ব্যয় করেছিল সে সম্পর্কে তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে। গরীবদের তো সে বালাই নেই।

হযরত মালিক ইবন দীনার রহ. এক সফরে নদীর এক পার থেকে অপর পারে গেলেন। ওপারে যেতেই কর আদায়কারীগণ ধরল। তোমার মালামালের কর দিয়ে যাও। তিনি দু'হাত উঁচু করে বললেন, দেখ কী আছে, নিয়ে নাও। তারা দেখল সঙ্গে মালামাল বলতে কিছুই নেই। তাদের তো ব্যস্ততা। শুধু শুধু কথা বলে সময় নষ্ট করার অবকাশ নেই। তাড়া দিয়ে বলল, যাও যাও! তিনি কতদূর এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালেন। তারপর নিজেকে সম্বোধন করে বললেন, ওহে দীনারের পুত্র মালিক। আখিরাতের বিষয়টি তো এমনই হবে। অর্থাৎ মাল নেই তো হিসাবও নেই। মাল থাকলে হিসাব দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকো।

এর দ্বারা বোঝা গেল ধনী দীনদার অপেক্ষা গরীব দীনদারের আখিরাতে পার হওয়া সহজ হবে। দীনদার ব্যক্তি ধনী হলে তার সম্পদের হিসাব দেওয়ার একটা ব্যাপার যেহেতু আছে, তাই তার কিছু না কিছু বিলম্ব অবশ্যই হবে। হাঁ, আল্লাহ তা'আলা যাদেরকে বিনা হিসেবে পার করে দেবেন তাদের কথা আলাদা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. গরীবানা অবস্থা বাহ্যদৃষ্টিতে কষ্টকর হলেও আখিরাতের পক্ষে কল্যাণকর। তাই গরীবদের উচিত অভাব-অনটনের জন্য আক্ষেপ না করে ধৈর্য ও সহ্যের সঙ্গে দুনিয়ার জীবন পার করা।

খ. বিষয়টা যেহেতু জান্নাতে প্রবেশের, তাই দীনদারীর শর্ত অবশ্যই আছে। সুতরাং কেবল গরীবানা অবস্থার উপর নির্ভর করার সুযোগ নেই। নিজ দীন ও ঈমানেরও যত্ন নিতে হবে।

গ. বিলম্বে হলেও দীনদার ধনী ব্যক্তি অবশ্যই জান্নাতে যাবে। তাই ধনী ব্যক্তিরও নিজ দ্বীনদারীর পরিচর্যা করা অবশ্যকর্তব্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
সুনানে আবু দাউদ - হাদীস নং ৩৬২৫ | মুসলিম বাংলা