কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

২০. ইলমের অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৬০৪
আন্তর্জাতিক নং: ৩৬৪৩
৪১৫. ইলমের ফযীলত সম্পর্কে।
৩৬০৪. আহমদ ইবনে ইউনুস (রাহঃ) ..... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ইলম হাসিল করার জন্য কোন রাস্তা অতিক্রম করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেন। আর যে ব্যক্তির আমল তাকে পেছনে ফেলে রাখবে, তার বংশ-গরিমা তাকে এগিয়ে দেবে না।
باب الْحَثِّ عَلَى طَلَبِ الْعِلْمِ
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ، حَدَّثَنَا زَائِدَةُ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَا مِنْ رَجُلٍ يَسْلُكُ طَرِيقًا يَطْلُبُ فِيهِ عِلْمًا إِلاَّ سَهَّلَ اللَّهُ لَهُ بِهِ طَرِيقَ الْجَنَّةِ وَمَنْ أَبْطَأَ بِهِ عَمَلُهُ لَمْ يُسْرِعْ بِهِ نَسَبُهُ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ইলম অন্বেষণের ফযীলত

এ হাদীছে ইলম অন্বেষণের ফযীলত সম্পর্কে বলা হয়েছে من سلك طريقا يلتمس فيه علما (যে ব্যক্তি ইলমের সন্ধানে কোনও পথে চলে)। বলাবাহুল্য এর দ্বারা ইলমে দীনের সন্ধান বোঝানোই উদ্দেশ্য, তা সরাসরি কুরআন ও হাদীছ শিক্ষা করা হোক বা কুরআন ও হাদীছ থেকে উদ্ভাবিত ইলম হোক। যেমন ফিক্হ, উসূলুল ফিক্হ, উসূলুল হাদীছ, তাফসীর, উসূলুত তাফসীর ইত্যাদি। এমনিভাবে এসব ইলম অর্জনের জন্য যেসকল বুনিয়াদী শাস্ত্রের প্রয়োজন হয়, তা হাসিলের প্রচেষ্টাও এর অন্তর্ভুক্ত হবে। যেমন নাহব, সরফ, লুগাত, বালাগাত, গণিত ইত্যাদি।
ইলমের সন্ধানে পথচলা দুভাবে হয়। এক হচ্ছে বাহ্যিক চলা। অর্থাৎ ঘর থেকে বের হয়ে এমন কোনও ব্যক্তি বা এমন কোনও প্রতিষ্ঠানে চলে যাওয়া, যেখানে ইলমের চর্চা হয়ে থাকে। আরেক হচ্ছে অভ্যন্তরীণ বা বিমূর্ত চলা। অর্থাৎ কুরআন, হাদীছ, মাসআলা-মাসাইল ইত্যাদি মুখস্থ করা, পর্যায়ক্রমিকভাবে এ বিষয়ক কিতাব ও বই-পুস্তক পাঠ করা, তা বোঝার চেষ্টা করা এবং গভীরে পৌঁছানোর জন্য চিন্তাভাবনা ও গবেষণা করা। ইলম হাসিলের জন্য উভয় প্রকার চলাই জরুরি। এর জন্য প্রয়োজনে দূর-দূরান্তে সফর করা এবং উলামা-মাশায়েখের মজলিস ও দীনী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বছরের পর বছর কাটাতে পারা অতি বড় সৌভাগ্যের ব্যাপার।
ইলমের জন্য বিস্ময়কর সফর ও কষ্ট-ক্লেশের কিছু দৃষ্টান্ত
সাহাবায়ে কেরাম থেকে নিয়ে সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত যুগে যুগে জ্ঞানপিপাসুগণ যেসব বিস্ময়কর ইলমী সফর করেছেন, ইলমের প্রকৃত সন্ধানীর পক্ষে তা গভীর প্রেরণাদায়ী।
হযরত জাবির রাযি. 'কিসাস' সম্পর্কিত একটি হাদীছ জানার জন্য মদীনা মুনাউওয়ারা থেকে মিশর সফর করেছিলেন। আরেকবার তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উনাইস রাযি.-এর নিকট থেকে কিয়ামতের বিভীষিকা সম্পর্কিত একটি হাদীছ জানার জন্য মদীনা মুনাউওয়ারা থেকে এক মাসের সফর করে শামে পৌঁছেছিলেন।
হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাযি. ও হযরত উকবা ইবন আমির রাযি.-এর কাছে সুদূর মিশরে সফর করেছিলেন মানুষের দোষ গোপন করা সম্পর্কিত একটি হাদীছের জন্য।
মাত্র একটি হাদীছের তাহকীক করার জন্য ইমাম শু'বা বসরা থেকে মক্কায়, সেখান থেকে মদীনায় আবার সেখান থেকে বসরায় একটানা সফর করেছেন। বিখ্যাত তাবি'ঈ হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব রহ. বলেন, আমি একটামাত্র হাদীছ শেখার জন্য দিনের পর দিন ও রাতের পর রাত একটানা সফর করেছি।
আব্দুর রহমান ইবন কাসিম রহ. মিশর থেকে মদীনা মুনাউওয়ারায় এসে একাধারে ১৭ বছর ইমাম মালিক রহ.-এর কাছে ইলম শিক্ষায় রত থেকেছেন। ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ ইবন মান্দা রহ. হিজরী ৩১০ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৩৯৫ সালে ইন্তিকাল করেন। এ ৮৫ বছর জীবনকালের ৪৫ বছরই তিনি সফরে সফরে কাটিয়েছেন। এ সুদীর্ঘ সফরের উদ্দেশ্য ছিল কেবলই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীছ সংগ্রহ করা। বিভিন্ন দেশে ঘুরে ঘুরে তিনি প্রায় ১৭০০মুহাদ্দিছ থেকে হাদীছের শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।
ইমাম আবূ সা'দ সাম'আনী রহ. হাদীছ সংগ্রহের জন্য বহু নগর-বন্দর সফর করেছেন। আরব, অনারব ও পূব-পশ্চিমের প্রায় একশ' নগরে তিনি যাতায়াত করেছেন। এতে তাঁর সময় লেগেছিল আনুমানিক ২০ বছর।
ইমাম বাকী' ইবন মাখলাদ রহ. দু-দু'বার পায়ে হেঁটে সুদূর আন্দালুসিয়া থেকে মক্কা, মদীনা, শাম, ইরাক প্রভৃতি অঞ্চল সফর করেছেন। প্রথমবার সফরে ১৪ বছর এবং দ্বিতীয় সফরে ২০ বছর সময়কাল ব্যয় হয়েছে। এ অবর্ণনীয় কষ্ট-ক্লেশ তিনি স্বীকার করেছেন কেবলই ইলমে দীন শেখার উদ্দেশ্যে।
ইমাম আবূ হাতিম রাযী রহ. ইলমে দীন শেখার লক্ষ্যে সফর করেছেন শত শত মাইল। তিনি বলেন, আমি পায়ে হেঁটে যে পথ অতিক্রম করেছি, প্রথমদিকে তা গুণে রাখতাম। যখন তা ১০০০ ফারসাথ অতিক্রম করল তখন গণা বাদ দিয়েছি। উল্লেখ্য, এক ফারসাথ সমান ৫ কিলোমিটার। তার মানে তিনি ৫০০০ কিলোমিটারেরও অনেক বেশি পথ পায়ে হেঁটে হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন। ভাবা যায়, ইলমে দীন শেখার কী অদম্য উৎসাহ তিনি তাঁর অন্তরে লালন করতেন!
ইলমে দীন চর্চার ইতিহাসে এরকম ঘটনা আছে শত শত। সাহাবায়ে কেরাম ও তাবি'ঈন থেকে শুরু করে পরবর্তী শত শত বছর আমাদের উলামায়ে কেরাম হাদীছ, ফিক্হ প্রভৃতি শাস্ত্র সংগ্রহের লক্ষ্যে এরকম বহু রোমাঞ্চকর পরিভ্রমণ করেছেন। সেসব সফরে তারা সহ্য করেছেন অবর্ণনীয় কষ্ট-ক্লেশ। তারা মসজিদকে বানিয়ে নিয়েছিলেন থাকার জায়গা। বিশ্রামের জন্য বালিশের পরিবর্তে মসজিদের খুঁটিই ছিল তাদের অবলম্বন। তাদের বিছানা ছিল মসজিদের চাটাই। তাদের খাদ্য ছিল হাদীছ, ফিক্হ প্রভৃতি শাস্ত্রের লিখন ও মুখস্থকরণ। তাদের গল্প ছিল পারস্পরিক জ্ঞানবিনিময়। তাদের বিনোদন ছিল ইলমের লেনাদেনা। তাদের সুগন্ধি ছিল লেখার কালি। রাতের পর রাত তারা জেগে কাটাতেন। রাত জাগাটাই যেন ছিল তাদের ঘুম। আরামের সঙ্গে তাদের পরিচয় ছিল না। মাথা থাকত আলুথালু, কাপড় ছেঁড়াফাঁড়া, উদর অভুক্ত, ঠোঁট শুকনো, রং বিবর্ণ, শরীর জরাজীর্ণ। কিন্তু এসবের প্রতি তাদের ভ্রুক্ষেপ ছিল না। তাদের ছিল একই লক্ষ্য- ইলমে দীনের সংগ্রহ। এর জন্য তারা বিসর্জন দিয়েছেন সবকিছু। পিতামাতা, ভাইবোন, আত্মীয়-স্বজন, পুত্র-কন্যা, স্ত্রী ও অন্যান্য সকল প্রিয়জনের স্নেহ-মমতা ত্যাগ করে দূর-দূরান্তের সফর করেছেন। বছরের পর বছর মাতৃভূমি থেকে দূরে থেকেছেন। সে থাকাটাও ছিল অকল্পনীয় ও অবর্ণনীয় কষ্ট-ক্লেশের সঙ্গে। তাদের সে ত্যাগ-তিতিক্ষারই সুফল যে, আজ আমরা অতি আসানের সঙ্গে কুরআন-সুন্নাহ'র সংরক্ষিত, সুবিন্যস্ত ও বিশুদ্ধ ইলম হাসিল করতে পারছি।
বস্তুত ইলমের জন্য ঘর থেকে বের হওয়া এবং উলামা-মাশায়েখের মজলিসে ছোটাছুটি করা অতীব জরুরি। ঘরে বসে বসে কিতাবাদি পড়ার দ্বারাই এ মহামূল্যবান সম্পদ অর্জন করা যায় না। এ এমনই এক সম্পদ, যা দ্বারা আল্লাহকে চেনা যায়, তাঁর মর্জি ও খুশি-নাখুশির বিষয়ে অবহিত হওয়া যায়, হালাল-হারাম সম্পর্কে ধারণা লাভ হয়, কোন্ পথ জান্নাতের ও কোন পথ জাহান্নামের তা উপলব্ধি হয়, এর দ্বারাই মন্দ আখলাক পরিহার করে সচ্চরিত্র অর্জনের উপায় অবলম্বন করা যায়, জানা যায় নিজের হক, আত্মীয়ের হক, প্রতিবেশীর হক, মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের হক এমনকি পশু-পাখিরও হক, পরিচিত হওয়া যায় জীবনের সকল ক্ষেত্রে নিজ দায়িত্ব কর্তব্যের সঙ্গে, এরই দ্বারা ঘটানো যায় মনুষ্যত্বের বিকাশ, এরই সঙ্গে সম্পৃক্ত দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণ, এরই মাধ্যমে রক্ষা পাওয়া যায় উভয় জাহানের সমূহ অকল্যাণ থেকে, এটা চোখের জ্যোতি, অন্তর্দৃষ্টির আলো, প্রাণের শান্তি, মন ও মননের খোরাক, এটা প্রকাশ্য ও গুপ্ত শত্রুর বিরুদ্ধে অস্ত্র, হক ও বাতিলের মীমাংসা, এর মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপন করা যায় আল্লাহর সঙ্গে, নিজেকে পরিণত করা যায় তাঁর মাহবূব বান্দায় এবং এ এক অবিনশ্বর সম্পদ, যা নশ্বর জগতের সীমানা ভেদ করে অনন্ত আখেরাতেও পৌঁছে যায়। এর জন্য সারাটা জীবনও যদি সফরে সফরে কাটিয়ে দেওয়া হয় এবং দুনিয়ায় উদয়াচল থেকে অস্তাচল পর্যন্ত বিস্তীর্ণ জগতকে বিচরণভূমি বানিয়ে নেওয়া হয়, তাও এর মহামূল্যের বিপরীতে নিতান্ত তুচ্ছই গণ্য হবে।
যাহোক ইলমের জন্য সফর করা ও গভীর অভিনিবেশের সাথে চিন্তাভাবনায় লিপ্ত থাকা অত্যন্ত ফযীলতের কাজ। এ মেহনতের বদৌলতে জান্নাত লাভের পথ সহজ ও সুগম হয়ে যায়। যেমন এ হাদীছের পরবর্তী বাক্যে ইরশাদ হয়েছে سهل الله له طريقا الى الجنة (আল্লাহ তার জন্য জান্নাতগামী পথ সুগম করে দেন)। অর্থাৎ ইলমের সন্ধান ও তা অর্জনের পুরস্কারস্বরূপ তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ সহজ করে দেন। ফলে সে হাশরের ময়দানের বিভীষিকা দেখতে পাবে না, যেমনটা অন্যরা দেখতে পাবে। সে নির্বিঘ্নে নিরাপদে জান্নাতে পৌঁছে যাবে। নিঃসন্দেহে এটা অনেক বড় পুরস্কার। এতবড় পুরস্কার প্রাপ্তির কারণ ইলমে দীন শেখার কাজটি অনেক কঠিন। এর জন্য প্রচুর ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। সবরের কষ্ট ছাড়াও থাকার কষ্ট ও খানাপিনার কষ্ট বরদাশত করতে হয়। ঘুম ও আরামের ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। বেছে নিতে হয় আত্মীয়-স্বজন ও প্রিয়জন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুনিয়ার হাজারও ভোগ-উপভোগ বিবর্জিত এক কঠিন তপস্যার জীবন। সে ত্যাগ-তিতিক্ষার ফলস্বরূপ আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে পৌঁছা সহজ করে দেন।
এর দ্বারা ইলমে দীন সন্ধানের মেহনত-যে কত মর্যাদাবান তা অনুভব করা যায়।স্বাভাবিকভাবেই এর দ্বারা ইলমে দীনের চর্চা ও প্রচার-প্রসারে লিপ্ত থাকার মর্যাদাও পরিস্ফুট হয়।
প্রকাশ থাকে যে, ইলমে দীন আহরণের এ ফযীলত কেবল তখনই লাভ হতে পারে, যখন তা ইখলাসের সঙ্গে আহরণ করা হবে অর্থাৎ কেবল আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যেই করা হবে, দুনিয়াবী কোনও স্বার্থে নয়। ইলম সন্ধানকারীকে এ বিষয়টা বিশেষভাবে স্মরণ রাখতে হবে। কেননা অন্যান্য ইবাদতের মত এ ক্ষেত্রেও রিয়া ঢুকে পড়ে; বরং রিয়ার প্রকোপ এ ক্ষেত্রে একটু বেশিই হয়। তাই ইখলাস ও সহীহ নিয়তের সাধনাও এ ক্ষেত্রে বেশি প্রয়োজন।

আমল করার প্রয়োজনীয়তা

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপরে বর্ণিত আমলসমূহের ফযীলত বয়ান করার পর এবার আমলের গুরুত্ব তুলে ধরছেন। বান্দাকে কেন এসব আমল করতে হবে, না করলে তার কী ক্ষতি, সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি ইরশাদ করছেন- ومن بطأ به عمله لم يسرع به نسبه (যাকে তার আমল পিছিয়ে দেয়, তাকে তার বংশমর্যাদা এগিয়ে দিতে পারে না)।
এর দ্বারা বোঝা যাচ্ছে আল্লাহ তাআলার কাছে উচ্চমর্যাদায় উপনীত হওয়ার একমাত্র উপায় নেক আমল। আখেরাতে অগ্রগামী থাকারও অবলম্বন কেবলই সৎকর্ম। যে ব্যক্তি আমলে যতবেশি অগ্রগামী হবে, সে তত আগে মুক্তি পাবে। বংশমর্যাদা ও কৌলিন্য দ্বারা তা লাভ করা যাবে না। যে ব্যক্তি আমলে পিছিয়ে থাকবে, আখেরাতেও তাকে পিছিয়েই থাকতে হবে, তা সে নবীপুত্রই হোক না কেন কিংবা হোক কোনও নবীর পিতা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার সর্বাপেক্ষা বেশি প্রিয় হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাঁর আত্মীয়-স্বজনকে এই বলে সতর্ক করেছেন যে يا بني عبد مناف، أنقذوا أنفسكم من النار، يا معشر بني هاشم، أنقذوا أنفسكم من النار، يا بني عبد المطلب، أنقذوا أنفسكم من النار، يا فاطمة بنت محمد، أنقذي نفسك من النار، فإني والله لا أملك لكم من الله شيئا 'হে আব্দে মানাফের বংশধরগণ! তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। হে বন্ধু হাশিম সম্প্রদায়। তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। হে আব্দুল মুত্তালিবের ছেলেমেয়েরা! তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। হে মুহাম্মাদের মেয়ে ফাতেমা! তুমি নিজে নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। আল্লাহর কসম, আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচাতে আমি তোমাদের জন্য কিছুই করতে পারব না।
বস্তুত আমল যার উন্নত, বংশীয় তুচ্ছতায় তার কোনও ক্ষতি নেই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতে যে বিলাল রাযি.-এর পদচারণার আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন, তিনি তো একজন হাবশী ও একদার ক্রীতদাসই ছিলেন।
জাহান্নামের উপর যে পুলসিরাত স্থাপিত থাকবে, প্রত্যেক মুমিনকেই তার উপর দিয়ে যেতে হবে। তা কেউ পার হবে হেঁটে হেঁটে, কেউ দৌড়ে, কেউ দ্রুতগামী অশ্বের গতিতে, কেউ বাতাসের বেগে, কেউ বা বিজলীর গতিতে। গতির এই যে পার্থক্য, তা আমলে প্রভেদের কারণেই হবে। দুনিয়ায় আমলে যে যত বেগবান, তার জান্নাতে যাওয়াও তেমনি সবেগেই হবে। সুতরাং কুরআন মাজীদেও আল্লাহ তাআলা আমলে গতিশীল হতে উৎসাহ দান করেছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ এবং নিজ প্রতিপালকের পক্ষ হতে মাগফিরাত ও সেই জান্নাত লাভের জন্য একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হও, যার প্রশস্ততা আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীতুল্য। তা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
সুতরাং বংশমর্যাদা বা অন্য কোনও শ্রেষ্ঠত্বের ভরসায় আমলে অবহেলা না করে প্রত্যেকের উচিত সৎকর্মে অন্যকে ছাড়িয়ে যেতে সচেষ্ট থাকা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. আমরা অবশ্যই ইলমে দীন অর্জনের পথে একজন আত্মনিবেদিত পথিক হয়ে থাকব, যাতে আল্লাহ তাআলা আমাদের জান্নাতে পৌছা সহজ করে দেন।

খ. আল্লাহ তাআলার রহমতে তাঁর নৈকট্য ও আখেরাতের মুক্তি আমলের মাধ্যমেই লাভ হবে। জান্নাতে পৌছার অগ্রগামিতাও সাব্যস্ত হবে আমলের ভিত্তিতে, অন্যকিছুর ভিত্তিতে নয়। সুতরাং আমলে পিছিয়ে না থেকে অন্যদের ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টাই প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক নিষ্প্রয়োজন