কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

১৬. জানাযা-কাফন-দাফনের অধ্যায়

হাদীস নং: ৩১৮০
আন্তর্জাতিক নং: ৩১৯৪
২৩৬. জানাযা নামায পড়ার সময় ইমাম মৃত ব্যক্তির কোন স্থান বরাবর দাঁড়াবে।
৩১৮০. দাউদ ইবনে মু’আয (রাহঃ) ..... নাফি আবু গালিব (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমি সিক্কাতুল মিওবাদ নামক স্থানে ছিলাম। এ সময় সেখান দিয়ে একটি জানাযা (লাশ) অতিক্রম করছিল, যার সাথে অনেক লোক ছিল। লোকেরা বলাবলি করছিলঃ এটা আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ)-এর জানাযা। তখন আমিও তাদের অনুসরণ করি। এ সময় আমি এমন এক ব্যক্তিকে দেখতে পাই, যিনি পাতলা চাদর মুড়ি দিয়ে একটি ছোট মুখ বিশিষ্ট অশ্বে সওয়ার ছিলেন। আর রোদের তাপ থেকে বাঁচার জন্য তাঁর মাথার উপর একখণ্ড কাপড়ও ছিল। তাঁকে দেখে আমি জিজ্ঞাসা করিঃ ইনি কোন জমিদার? লোকেরা বলেঃ ইনি আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ)।

অতঃপর যখন জানাযা (লাশ) রাখা হয়, তখন আনাস (রাযিঃ) দাঁড়ান এবং জানাযার নামায পড়ান। এ সময় আমি তাঁর পেছনে ছিলাম এবং তাঁর ও আমার মাঝে আর কোন অন্তরায় ছিল না। তিনি তাঁর (মৃত ব্যক্তির) মাথা বরাবর দাঁড়ান এবং চার তাকবীরে নামায শেষ করেন, যা অধিক দীর্ঘ ও সংক্ষিপ্ত ছিল না। অতঃপর তিনি বসার জন্য গমন করেন। তখন লোকেরা তাঁকে বলেঃ হে আবু হামযা! এটি একটি আনসার মহিলার জানাযা। তখন তারা সেটি নিকটে নিয়ে আসে এবং সেটি সবুজ গিলাফে ঢাকা ছিল।

তখন তিনি [আনাস (রাযিঃ)] তাঁর কোমর বরাবর খাড়া হয়ে ঐরূপে জানাযা নামায আদায় করেন, যেরূপ তিনি পুরুষ লোকটির নামায পড়িয়েছিলেন। অতঃপর তিনি উপবেশন করেন। তখন আলা ইবনে যিয়াদ তাঁকে জিজ্ঞাসা করেনঃ হে আবু হামযা! আপনি যেভাবে জানাযার নামায আদায় করলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কি আপনার মত করে সালাতুল-জানাযা আদায় করতেন? তিনি কি চার তাকবীর বলতেন এবং পুরুষের জানাযার মাথা বরাবর ও স্ত্রীলোকদের জানাযার কোমর বরাবর দণ্ডায়মান হতেন? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ।

অতঃপর তিনি (আলা) বলেনঃ হে আবু হামযা! আপনি কি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সঙ্গে জিহাদে শরীক হয়েছিলেন? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ। আমি তার সঙ্গে হুনায়নের যুদ্ধে শরীক হয়েছিলাম। এ সময় মুশরিকরা (তাদের দুর্গ হতে) বেরিয়ে এসে আমাদের উপর (প্রচণ্ড) হামলা করে। ফলে আমরা আমাদের ঘোড়াকে আমাদের পেছনে দেখতে পাই। আর মুশরিকদের মাঝে এমন এক ব্যক্তি ছিল, যে আমাদের উপর (তীব্র) হামলা করেছিল এবং তরবারির আঘাতে আমাদের ক্ষত-বিক্ষত করছিল। অবশেষে আল্লাহ তাদের পরাজিত করেন। তিনি তাদের নিয়ে আসেন এবং তারা এসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট ইসলামের উপর বায়’আত গ্রহণ করতে থাকে।

এ সময় নবী (ﷺ)-এর জনৈক সাহাবী এরূপ মান্নত করেন যে, সে দিন যে ব্যক্তি আমাদের তরবারির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করেছিল, আল্লাহ যদি তাকে এনে দেন, তবে আমি তার শিরশ্ছেদ করব। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) চুপ থাকেন। অতঃপর সে ব্যক্তিকে আনা হয়। সে ব্যক্তি যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে দেখে, তখন বলেঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আল্লাহর কাছে তাওবা করেছি। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে বায়’আত করা হতে বিরত থাকেন, যাতে অপর ব্যক্তি (সাহাবী) তাঁর মান্নত পুরা করার সুযোগ পায়। অপরপক্ষে সে সাহাবী এ অপেক্ষায় ছিল যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে হত্যার নির্দেশ দিবেন।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন দেখলেন যে, সে (সাহাবী) কিছুই করছে না, তখন তাকে বায়’আত করেন। তখন সে ব্যক্তি (সাহাবী) বললঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মান্নত কিরূপে পূর্ণ হবে? তিনি বলেনঃ আমি তাকে আজকের পূর্ব পর্যন্ত বায়’আত করাতে এ জন্য বিরত ছিলাম, যাতে তুমি তোমার মান্নত পুরা করতে পার। তখন সে (সাহাবী) বলেঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাকে কেন ইশারা করলেন না? তখন নবী (ﷺ) বলেনঃ ইশারা করা নবীর শান নয়।

রাবী আবু গালিব বলেনঃ অতঃপর আমি লোকদের কাছে আনাস (রাযিঃ) মহিলার জানাযার নামায পড়বার সময় কেন তার কোমর বরাবর দাঁড়ালেন, এর কারণ জিজ্ঞাসা করি। তখন তারা আমাকে বলেনঃ প্রথম যুগে খাটিয়ার প্রচলন ছিল না, (যাতে মহিলাদের লাশ ঢেকে রাখা যেত)। এ জন্য ইমাম মহিলা জানাযার (লাশের) কোমর বরাবর দাঁড়াতেন, যাতে তা মুক্তাদীদের দৃষ্টির আড়ালে থাকে।
باب أَيْنَ يَقُومُ الإِمَامُ مِنَ الْمَيِّتِ إِذَا صَلَّى عَلَيْهِ
حَدَّثَنَا دَاوُدُ بْنُ مُعَاذٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ، عَنْ نَافِعٍ أَبِي غَالِبٍ، قَالَ كُنْتُ فِي سِكَّةِ الْمِرْبَدِ فَمَرَّتْ جَنَازَةٌ مَعَهَا نَاسٌ كَثِيرٌ قَالُوا جَنَازَةُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَيْرٍ فَتَبِعْتُهَا فَإِذَا أَنَا بِرَجُلٍ عَلَيْهِ كِسَاءٌ رَقِيقٌ عَلَى بُرَيْذِينَتِهِ وَعَلَى رَأْسِهِ خِرْقَةٌ تَقِيهِ مِنَ الشَّمْسِ فَقُلْتُ مَنْ هَذَا الدِّهْقَانُ قَالُوا هَذَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ . فَلَمَّا وُضِعَتِ الْجَنَازَةُ قَامَ أَنَسٌ فَصَلَّى عَلَيْهَا وَأَنَا خَلْفَهُ لاَ يَحُولُ بَيْنِي وَبَيْنَهُ شَىْءٌ فَقَامَ عِنْدَ رَأْسِهِ فَكَبَّرَ أَرْبَعَ تَكْبِيرَاتٍ لَمْ يُطِلْ وَلَمْ يُسْرِعْ ثُمَّ ذَهَبَ يَقْعُدُ فَقَالُوا يَا أَبَا حَمْزَةَ الْمَرْأَةُ الأَنْصَارِيَّةُ فَقَرَّبُوهَا وَعَلَيْهَا نَعْشٌ أَخْضَرُ فَقَامَ عِنْدَ عَجِيزَتِهَا فَصَلَّى عَلَيْهَا نَحْوَ صَلاَتِهِ عَلَى الرَّجُلِ ثُمَّ جَلَسَ فَقَالَ الْعَلاَءُ بْنُ زِيَادٍ يَا أَبَا حَمْزَةَ هَكَذَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي عَلَى الْجَنَازَةِ كَصَلاَتِكَ يُكَبِّرُ عَلَيْهَا أَرْبَعًا وَيَقُومُ عِنْدَ رَأْسِ الرَّجُلِ وَعَجِيزَةِ الْمَرْأَةِ قَالَ نَعَمْ . قَالَ يَا أَبَا حَمْزَةَ غَزَوْتَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ نَعَمْ غَزَوْتُ مَعَهُ حُنَيْنًا فَخَرَجَ الْمُشْرِكُونَ فَحَمَلُوا عَلَيْنَا حَتَّى رَأَيْنَا خَيْلَنَا وَرَاءَ ظُهُورِنَا وَفِي الْقَوْمِ رَجُلٌ يَحْمِلُ عَلَيْنَا فَيَدُقُّنَا وَيَحْطِمُنَا فَهَزَمَهُمُ اللَّهُ وَجَعَلَ يُجَاءُ بِهِمْ فَيُبَايِعُونَهُ عَلَى الإِسْلاَمِ فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِنَّ عَلَىَّ نَذْرًا إِنْ جَاءَ اللَّهُ بِالرَّجُلِ الَّذِي كَانَ مُنْذُ الْيَوْمِ يَحْطِمُنَا لأَضْرِبَنَّ عُنُقَهُ . فَسَكَتَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَجِيءَ بِالرَّجُلِ فَلَمَّا رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ تُبْتُ إِلَى اللَّهِ . فَأَمْسَكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لاَ يُبَايِعُهُ لِيَفِيَ الآخَرُ بِنَذْرِهِ . قَالَ فَجَعَلَ الرَّجُلُ يَتَصَدَّى لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِيَأْمُرَهُ بِقَتْلِهِ وَجَعَلَ يَهَابُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ يَقْتُلَهُ فَلَمَّا رَأَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ لاَ يَصْنَعُ شَيْئًا بَايَعَهُ فَقَالَ الرَّجُلُ يَا رَسُولَ اللَّهِ نَذْرِي . فَقَالَ " إِنِّي لَمْ أُمْسِكْ عَنْهُ مُنْذُ الْيَوْمِ إِلاَّ لِتُوفِيَ بِنَذْرِكَ " . فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلاَ أَوْمَضْتَ إِلَىَّ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " إِنَّهُ لَيْسَ لِنَبِيٍّ أَنْ يُومِضَ " . قَالَ أَبُو غَالِبٍ فَسَأَلْتُ عَنْ صَنِيعِ أَنَسٍ فِي قِيَامِهِ عَلَى الْمَرْأَةِ عِنْدَ عَجِيزَتِهَا فَحَدَّثُونِي أَنَّهُ إِنَّمَا كَانَ لأَنَّهُ لَمْ تَكُنِ النُّعُوشُ فَكَانَ الإِمَامُ يَقُومُ حِيَالَ عَجِيزَتِهَا يَسْتُرُهَا مِنَ الْقَوْمِ . قَالَ أَبُو دَاوُدَ قَوْلُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم " أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُولُوا لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ " . نَسَخَ مِنْ هَذَا الْحَدِيثِ الْوَفَاءَ بِالنَّذْرِ فِي قَتْلِهِ بِقَوْلِهِ إِنِّي قَدْ تُبْتُ .
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
rabi
বর্ণনাকারী:
সুনানে আবু দাউদ - হাদীস নং ৩১৮০ | মুসলিম বাংলা