কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

১৬. জানাযা-কাফন-দাফনের অধ্যায়

হাদীস নং: ৩০৭৭
আন্তর্জাতিক নং: ৩০৮৯ - ৩০৯০
১৮০. গুনাহ মার্জনাকারী রোগের বর্ণনা।
৩০৭৭. আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ নুফায়লী (রাহঃ) ....... আমের রাম (যিনি খুযর সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আমাদের শহরে ছিলাম। হঠাৎ আমরা কিছু নিশান ও পতাকা দেখতে পাই। তখন আমি জিজ্ঞাসা করিঃ এ সব কি? লোকেরা বলেঃ এ সব রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিশান। তখন আমি তাঁর কাছে আসি। এ সময় তিনি একটি গাছেব নীচে কম্বলের উপর বসা ছিলেন এবং তাঁর সাহাবীরাও চারদিকে উপবিষ্ট ছিলেন। আমিও তাঁদের সঙ্গে সেখানে বসে পড়ি।

এ সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিভিন্ন ধরনের অসুখ সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেনঃ যখন কোন মুমিন রোগগ্রস্ত হয়, এরপর আল্লাহ তাকে রোগমুক্ত করেন, ঐ অসুখ তার বিগত জীবনের গুনাহের জন্য কাফফারা হয়ে যায় এবং তার ভবিষ্যত জীবনের জন্য তা নসীহতস্বরূপ হয়। অপরপক্ষে, যখন কোন মুনাফিক অসুস্থ হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠে, তার উদাহরণ ঐ উটের ন্যায়, যাকে তার মালিক বেঁধে রাখার পর পুনরায় বন্ধনমুক্ত করে দেয়। অথচ সে জানে না, তাকে কি জন্য বাঁধা হয়েছিল এবং কেন বন্ধনমুক্ত করা হলো।

তখন তাঁর পাশের জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! অসুখ কি জিনিস? আল্লাহর শপথ! আমি তো কখনো অসুস্থ হইনি! তখন নবী (ﷺ) বলেনঃ তুমি এখান থেকে উঠে যাও, তুমি আমাদের দলভুক্ত নও। এমতাবস্থায় আমরা যখন তাঁর কাছে উপস্থিত ছিলাম, তখন সেখানে কম্বল পরিহিত জনৈক ব্যক্তি হাযির হয়, যার হাতে কিছু জিনিস ছিল। তখন সে বলেঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনাকে দেখার পর যখন আপনার নিকট আসছিলাম, তখন পথিমধ্যে একটা ঝোপের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম। তখন সেখানে আমি চড়ুই পাখির বাচ্চার কিচিরমিচির শব্দ শুনতে পাই, যাদের ধরে আমি আমার কম্বলের মাঝে রাখি। এ সময় এদের মা এসে আমার মাথার উপর ঘুরতে থাকে। তখন আমি বাচ্চাদের উপর হতে কম্বল সরিয়ে নিলে তৎক্ষণাৎ চড়ুই পাখিটি তার বাচ্চাদের উপর আছড়ে পড়ে। ফলে আমি এদের সকলকে আমার কম্বলের মাঝে জড়িয়ে ফেলি। তখন তিনি বলেনঃ তুমি ওদের এখানে রেখে দাও। তখন আমি ওদের সেখানে রেখে দেই, কিন্তু সে সময়ও ওদের মা বাচ্চার কাছেই ছিল।

তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ তোমরা কি চড়ুই পাখিটির তার শাবকের প্রতি ভালবাসা দেখে বিস্মিত হয়েছ? তখন তারা বলেনঃ হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বলেনঃ ঐ যাতের শপথ! যিনি আমাকে সত্য নবী হিসাবে পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপর এর চাইতেও বেশী স্নেহশীল, যতটুকু এ পাখি তার বাচ্চাদের প্রতি স্নেহপ্রবণ। তুমি এদের সেখানে রেখে এস, যেখান থেকে তাদের নিয়ে এসেছ এবং ওদের মাতাকেও রেখে এসো। এরপর তিনি তাদের (বাসায়) ফেরত দিয়ে আসেন।

মুহাম্মাদ ইবনু খালিদ (রহঃ) থেকে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি (দাদা) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাহচর্য লাভ করেছেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছিঃ কোনো ব্যক্তির জন্য বিনাশ্রমে আল্লাহর পক্ষ থেকে মর্যাদার আসন নির্ধারিত হলে আল্লাহ তার দেহ, সম্পদ অথবা সন্তানকে বিপদগ্রস্ত করেন। অতঃপর সে তাতে ধৈর্য ধারণ করলে শেষ পর্যন্ত বরকতময় মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত উক্ত মর্যাদার স্তরে উপনীত হয়।
باب الأَمْرَاضِ الْمُكَفِّرَةِ لِلذُّنُوبِ
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ النُّفَيْلِيُّ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَاقَ، قَالَ حَدَّثَنِي رَجُلٌ، مِنْ أَهْلِ الشَّامِ يُقَالُ لَهُ أَبُو مَنْظُورٍ عَنْ عَمِّهِ، قَالَ حَدَّثَنِي عَمِّي، عَنْ عَامِرٍ الرَّامِ، أَخِي الْخُضْرِ - قَالَ أَبُو دَاوُدَ قَالَ النُّفَيْلِيُّ هُوَ الْخُضْرُ وَلَكِنْ كَذَا قَالَ - قَالَ إِنِّي لَبِبِلاَدِنَا إِذْ رُفِعَتْ لَنَا رَايَاتٌ وَأَلْوِيَةٌ فَقُلْتُ مَا هَذَا قَالُوا هَذَا لِوَاءُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَتَيْتُهُ وَهُوَ تَحْتَ شَجَرَةٍ قَدْ بُسِطَ لَهُ كِسَاءٌ وَهُوَ جَالِسٌ عَلَيْهِ وَقَدِ اجْتَمَعَ إِلَيْهِ أَصْحَابُهُ فَجَلَسْتُ إِلَيْهِمْ فَذَكَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الأَسْقَامَ فَقَالَ " إِنَّ الْمُؤْمِنَ إِذَا أَصَابَهُ السَّقَمُ ثُمَّ أَعْفَاهُ اللَّهُ مِنْهُ كَانَ كَفَّارَةً لِمَا مَضَى مِنْ ذُنُوبِهِ وَمَوْعِظَةً لَهُ فِيمَا يَسْتَقْبِلُ وَإِنَّ الْمُنَافِقَ إِذَا مَرِضَ ثُمَّ أُعْفِيَ كَانَ كَالْبَعِيرِ عَقَلَهُ أَهْلُهُ ثُمَّ أَرْسَلُوهُ فَلَمْ يَدْرِ لِمَ عَقَلُوهُ وَلَمْ يَدْرِ لِمَ أَرْسَلُوهُ " . فَقَالَ رَجُلٌ مِمَّنْ حَوْلَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا الأَسْقَامُ وَاللَّهِ مَا مَرِضْتُ قَطُّ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " قُمْ عَنَّا فَلَسْتَ مِنَّا " . فَبَيْنَا نَحْنُ عِنْدَهُ إِذْ أَقْبَلَ رَجُلٌ عَلَيْهِ كِسَاءٌ وَفِي يَدِهِ شَىْءٌ قَدِ الْتَفَّ عَلَيْهِ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي لَمَّا رَأَيْتُكَ أَقْبَلْتُ إِلَيْكَ فَمَرَرْتُ بِغَيْضَةِ شَجَرٍ فَسَمِعْتُ فِيهَا أَصْوَاتَ فِرَاخِ طَائِرٍ فَأَخَذْتُهُنَّ فَوَضَعْتُهُنَّ فِي كِسَائِي فَجَاءَتْ أُمُّهُنَّ فَاسْتَدَارَتْ عَلَى رَأْسِي فَكَشَفْتُ لَهَا عَنْهُنَّ فَوَقَعَتْ عَلَيْهِنَّ مَعَهُنَّ فَلَفَفْتُهُنَّ بِكِسَائِي فَهُنَّ أُولاَءِ مَعِي . قَالَ " ضَعْهُنَّ عَنْكَ " . فَوَضَعْتُهُنَّ وَأَبَتْ أُمُّهُنَّ إِلاَّ لُزُومَهُنَّ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لأَصْحَابِهِ " أَتَعْجَبُونَ لِرُحْمِ أُمِّ الأَفْرَاخِ فِرَاخَهَا " . قَالُوا نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . قَالَ " فَوَالَّذِي بَعَثَنِي بِالْحَقِّ لَلَّهُ أَرْحَمُ بِعِبَادِهِ مِنْ أُمِّ الأَفْرَاخِ بِفِرَاخِهَا ارْجِعْ بِهِنَّ حَتَّى تَضَعَهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَخَذْتَهُنَّ وَأُمُّهُنَّ مَعَهُنَّ " . فَرَجَعَ بِهِنَّ .

حدَّثنا عبدُ الله بن محمدِ النُّفيليُّ وإبراهيمُ بن مَهديٍّ المِصِّيصِيُّ -المعنى- قالا: حدَّثنا أبو المليحِ، عن محمدِ بن خالدٍ قال إبراهيم: السُّلَمي -عن أبيه عن جده- وكانت له صحبةٌ من رسول الله -صلَّى الله عليه وسلم- قال: سمعتُ رسولَ الله -صلَّى الله عليه وسلم- يقول: "إن العَبدَ إذا سَبَقَت له من الله عزَّ وجلَّ منزلَةٌ لم يَبلُغْها بعملِه، ابتلاه اللهُ جل وعز في جَسَدِه، أو في مالِه، أو في وَلَدِه -زاد ابنُ نُفَيلِ: "ثم صَبَّرَه على ذلك" ثم اتفقا- "حتَّى يُبلغَهُ المنزلةَ التي سبقتْ له من الله جل وعز

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে প্রত্যেক মু'মিনের জন্য অনেক বড় সুসংবাদ রয়েছে। কেননা মানুষের সাধারণত কোনও না কোনও দুঃখ-কষ্ট ও বালা-মসিবত থাকেই। থাকে শারীরিক রোগ- ব্যাধি ও মানসিক কষ্ট। দেখা দেয় জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতি ও নানারকম পেরেশানি। এ হাদীছ জানাচ্ছে, এসবের ভেতর কোনও না কোনও কল্যাণ নিহিত থাকে। বান্দাকে সেইসব কল্যাণ দেওয়ার জন্যেই আল্লাহ তা'আলা এসব কষ্ট ও পেরেশানী দিয়ে থাকেন। সুতরাং কোন মু'মিনই আল্লাহ তা'আলার দিক থেকে কল্যাণকামনার বাইরে নয়। যে-কেউ সবর করবে, সেই আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণ লাভ করবে। কল্যাণ দুনিয়াবীও হতে পারে, পরকালীনও হতে পারে। দুনিয়াবী কল্যাণ তো এই যে, বিপদ- আপদ হলে মু'মিন আল্লাহ তা'আলার অভিমুখী হয়। ফলে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে সে সাহায্য লাভ করে। আল্লাহ তা'আলা তার মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করেন, রোগ- ব্যাধি থেকে আরোগ্য দান করেন, তাকে নানামুখী অভিজ্ঞতা দান করেন, তার প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, ফলে মানুষ তার সাহায্যে এগিয়ে আসে, তার প্রতি সহমর্মী হয় কিংবা ফিরিশতা দিয়ে তাকে সাহায্য করেন ও তার প্রতি রহমত বর্ষণ করেন। মোটকথা ইহকালীন কোনও না কোনও লাভ তার হয়ই। আর পরকালীন লাভ তো স্পষ্ট, যেমন পেছনের হাদীছগুলো দ্বারা জানা গেছে যে, এর দ্বারা গুনাহ মাফ হয় ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে—

«إن العبد إذا سبقت له من الله منزلة، لم يبلغها بعمله ابتلاه الله في جسده، أو في ماله، أو في ولده» قال أبو داود: زاد ابن نفيل: «ثم صبره على ذلك - ثم اتفقا - حتى يبلغه المنزلة التي سبقت له من الله تعالى»

‘আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য যখন কোনও মর্যাদা স্থিরীকৃত থাকে আর বান্দা নিজ আমল দ্বারা সেখানে পৌঁছতে সক্ষম না হয়, তখন আল্লাহ তা'আলা তাকে তার দেহ, তার সন্তান বা তার মালের দ্বারা কোনও মসিবতে ফেলেন। তারপর তাতে তাকে ধৈর্যধারণের শক্তি দেন, যাতে সে সেই মর্যাদায় পৌঁছতে পারে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. বিপদ-আপদকে অমঙ্গলজনক মনে করতে নেই। কেননা তার ভেতর দুনিয়া ও আখিরাতের প্রভূত কল্যাণ নিহিত থাকে।

খ. বিপদ-আপদ দেখা দিলে সবরের পাশাপাশি এই ভাবনায় আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা চাই যে, এর মাধ্যমে তিনি তার কল্যাণ সাধন করতে চাচ্ছেন।

গ. অন্যের বিপদ দেখে তাকে অভিশপ্ত গণ্য না করে তাকে আল্লাহর প্রিয়পাত্র মনে করা চাই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
rabi
বর্ণনাকারী: