কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

১৩. ওছিয়াতের অধ্যায়

হাদীস নং: ২৮৬৫
আন্তর্জাতিক নং: ২৮৭৫
১১৩. ইয়াতীমের মাল ভক্ষণের শাস্তি সম্পর্কে।
২৮৬৫. ইবরাহীম ইবনে ইয়াকুব জাওযাজানী (রাহঃ) ..... উবাইদ ইবনে উমাইর (রাহঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেনঃ যিনি সাহাবী ছিলেন। তিনি বলেনঃ একদা জনৈক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কবীরা গুনাহ কোনগুলো? তিনি বলেনঃ তা নয়টি। তখন তিনি উপরোক্ত হাদীসে বর্ণিত গুনাহগুলোর উল্লেখ করেন এবং অতিরিক্ত এও বলেনঃ মুসলমান পিতা ও মাতাকে কষ্ট দেওয়া এবং আল্লাহর ঘরকে সম্মান না করা, যা তোমাদের জীবনে ও মরণে কিবলা।
باب مَا جَاءَ فِي التَّشْدِيدِ فِي أَكْلِ مَالِ الْيَتِيمِ
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ يَعْقُوبَ الْجُوزَجَانِيُّ، حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ هَانِئٍ، حَدَّثَنَا حَرْبُ بْنُ شَدَّادٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ عَبْدِ الْحَمِيدِ بْنِ سِنَانٍ، عَنْ عُبَيْدِ بْنِ عُمَيْرٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ حَدَّثَهُ - وَكَانَتْ، لَهُ صُحْبَةٌ - أَنَّ رَجُلاً، سَأَلَهُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا الْكَبَائِرُ فَقَالَ " هُنَّ تِسْعٌ " . فَذَكَرَ مَعْنَاهُ زَادَ " وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ الْمُسْلِمَيْنِ وَاسْتِحْلاَلُ الْبَيْتِ الْحَرَامِ قِبْلَتِكُمْ أَحْيَاءً وَأَمْوَاتًا " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

মৌলিকভাবে গুনাহ দুই প্রকার- সগীরা গুনাহ (ছোট গুনাহ) ও কবীরা গুনাহ (বড় গুনাহ)। আবার বড় গুনাহের মধ্যেও কিছু আছে অধিকতর বড়।

কেউ কেউ সগীরা গুনাহ'র অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন। তাদের মতে সব গুনাহই কবীরা। কিন্তু কুরআন-হাদীছের ভাষ্যের প্রতি লক্ষ করলে তা সঠিক মনে হয় না। কেননা কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা স্পষ্টভাবেই কবীরা গুনাহ'র উল্লেখ করেছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে إِنْ تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُدْخَلًا كَرِيمًا ‘তোমাদেরকে যেই বড় বড় গুনাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে, তোমরা যদি তা পরিহার করে চল, তবে আমি নিজেই তোমাদের ছোট ছোট গুনাহ তোমাদের থেকে মিটিয়ে দেব এবং তোমাদেরকে এক মর্যাদাপূর্ণ স্থানে দাখিল করব ।

আরও ইরশাদ হয়েছে الَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ إِلَّا اللَّمَمَ إِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ “সেইসব লোককে, যারা বড়-বড় গুনাহ ও অশ্লীল কাজ থেকে বেঁচে থাকে, অবশ্য কদাচিৎ পিছলে পড়লে সেটা ভিন্ন কথা। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক প্রশস্ত ক্ষমাশীল।

এর দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় কতক গুনাহ ছোটও আছে। তবে এ কথা সত্য যে, ছোট গুনাহকে তাচ্ছিল্য করলে তখন আর তা ছোট থাকে না। কেননা এটা আল্লাহ তাআলার প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শনের নামান্তর।

কবীরা গুনাহ কাকে বলে, উলামায়ে কেরাম তা বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তবে সব ব্যাখ্যারই সারকথা একই। তা এই যে, কুরআন ও হাদীছে যেসকল গুনাহকে কবীরা গুনাহ, জুলুম, ধ্বংসাত্মক ইত্যাদি গুরুতরতাজ্ঞাপক বিশেষণে বিশেষিত করা হয়েছে কিংবা যেসব অপরাধ সম্পর্কে কঠিন শাস্তির সতর্কবাণী ঘোষিত হয়েছে সেগুলো কবীরা গুনাহ ।

ইমামুল হারামায়ন রহ. বলেন, যেসকল অপরাধ দীনের প্রতি ব্যক্তির বিশেষ তোয়াক্কা না থাকা এবং দীনদারীতে তার ঘাটতি থাকার ইঙ্গিত বহন করে সেগুলোই কবীরা গুনাহ ।

কোন্ কোন্ অপরাধ কবীরা গুনাহ এ সম্পর্কে উলামায়ে কেরামের অনেকেই পৃথক কিতাব লিখেছেন। তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুন্দর ও পূর্ণাঙ্গ হলো মুহাক্কিক শিহাবুদ্দীন আহমাদ ইবন হাজার হায়তামী রহ.-এর লেখা আয-যাওয়াজির ‘আন ইকতিরাফিল কাবাইর।

পিতা-মাতার অবাধ্যতা করা

পিতা-মাতার আনুগত্য করাকে যেমন بر বলে, তেমনি তাদের অবাধ্যতা করাকে عقوق বলে। এ শব্দটির উৎপত্তি عق থেকে। এর অর্থ ছিন্ন করা, বিরোধিতা করা। সন্তানের যেসকল আচার-আচরণ দ্বারা পিতা-মাতার অমর্যাদা হয় এবং তারা কষ্ট পায়, পরিভাষায় তাকে عقوق বলা হয়ে থাকে। এটা সর্বোচ্চ পর্যায়ের কবীরা গুনাহ। পিতা মাতার প্রতি এরূপ আচরণকারী সন্তানকে عاق বলা হয়। যে-কোনও সন্তানের পক্ষে এটি অত্যন্ত মন্দ বিশেষণ। কোনও সন্তানের প্রতি যাতে এ বিশেষণ আরোপিত না হয়, তাই তার কর্তব্য সর্বাবস্থায় পিতা-মাতাকে খুশি রাখার চেষ্টা করা এবং শরীআতবিরোধী নয় এমন যাবতীয় বিষয়ে পিতা-মাতার অনুগত থাকা।

عقوق الوالدين(পিতা-মাতার অবাধ্যতা করা)। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগী করার পরই পিতা-মাতার আনুগত্য করার হুকুম দেওয়া হয়েছে। তা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে ওঠে আল্লাহ তাআলার ইবাদতের পর সর্বাপেক্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ফরয হলো পিতা-মাতার আনুগত্য করা। তা দ্বারা স্বাভাবিকভাবেই এটাও বোঝা যায় যে, আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগী না করা তথা কুফরীকর্ম করা সবচে' ভয়ংকর পাপ এবং তার পরপরই গুরুতর পাপ হলো পিতা-মাতার অবাধ্যতা। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীছে স্পষ্ট করে দিলেন যে, কবীরা গুনাহ হলো পিতা-মাতার অবাধ্যতা করা। অপর এক হাদীছে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন ثلاثة لا ينظر الله عز وجل إليهم يوم القيامة: العاق لوالديه، والمرأة المترجلة والديوث، وثلاثة لا يدخلون الجنة : العاق لوالديه، والمدمن على الخمر، والمنان بما أعطى 'তিন ব্যক্তি এমন, যাদের প্রতি আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন (রহমতের) দৃষ্টি দেবেন না- পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, পুরুষের বেশধারী নারী ও স্ত্রীকে বেপর্দায় ছেড়ে দেওয়া পুরুষ। এবং তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না- পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, মদ্যপায়ী ও দান করার পর তা নিয়ে খোটা দানকারী।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. পিতা-মাতার অবাধ্যতা সর্বাপেক্ষা বড় গুনাহগুলোর একটি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
সুনানে আবু দাউদ - হাদীস নং ২৮৬৫ | মুসলিম বাংলা