আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

২২- ওমরার অধ্যায়

হাদীস নং:
আন্তর্জাতিক নং: ১৮৪০
১১৫৬. মুহরিম ব্যক্তির গোসল করা।
ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেছেন, মুহরিম ব্যক্তি গোসলখানায় প্রবেশ করতে পারবে।
ইবনে উমর এবং আয়িশা (রাযিঃ) মুহরিম ব্যক্তি কর্তৃক শরীর চুলকানোতে কোন দোষ আছে বলে মনে করেন না।
১৭২১। আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ (রাহঃ) ......... আব্দুল্লাহ ইবনে হুনায়ন (রাহঃ) সূত্রে তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবওয়া নামক স্থানে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) এবং মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (রাযিঃ) এর মধ্যে মতানৈক্য হল। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বললেন, মুহরিম ব্যক্তি তার মাথা ধৌত করতে পারবে আর মিসওয়ার (রাযিঃ) বললেন, মুহরিম তাঁর মাথা ধৌত করতে পারবে না। এরপর আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) আমাকে আবু আইয়ুব আনসারী (রাযিঃ) এর নিকট পাঠালেন। আমি তাঁকে কূপ থেকে পানি উঠানো চরকার দু’খুটির মাঝে কাপড়ঘেরা অবস্থায় গোসল করতে দেখতে পেলাম। আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি বললেন, কে? বললাম, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে হুনায়ন। মুহরিম অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কীভাবে তাঁর মাথা ধৌত করতেন, এ বিষয়টি জিজ্ঞাসা করার জন্য আমাকে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) আপনার নিকট পাঠিয়েছেন। এ কথা শুনে আবু আইয়ুব (রাযিঃ) তাঁর হাতটি কাপড়ের উপর রাখলেন এবং কাপড়টি নিচু করে দিলেন। ফলে তাঁর মাথাটি আমি পরিষ্কার দেখতে পেলাম। তারপর তিনি এক ব্যক্তিকে, যে তাঁর মাথায় পানি ঢালছিল, বললেন, পানি ঢাল। সে তাঁর মাথায় পানি ঢালতে থাকল। তারপর তিনি দু’হাত দ্বারা মাথা নাড়া দিয়ে হাত দুখানা একবার সামনে আনলেন আবার পেছনের দিকে টেনে নিলেন। এরপর বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে এরূপ করতে দেখেছি।

হাদীসের ব্যাখ্যা:

মক্কাবিজয়ের দিন হযরত উম্মু হানী রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন অমুসলিম এক বা দুই ব্যক্তিকে আশ্রয় দেওয়া উপলক্ষ্যে। তিনি এসে দেখেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোসল করছেন এবং হযরত ফাতিমা রাযি. একটি কাপড় দিয়ে তাঁকে আড়াল করে রেখেছেন। এটা গোসলের আদব। প্রকাশ্যে লোকচক্ষুর সামনে গোসল না করে আড়ালে করা শ্রেয়। যদি সতর খোলার কোনও ব্যাপার থাকে, তবে তো আড়াল করা ফরয। অন্যের সামনে সতর খোলা জায়েয নয়।

হযরত উম্মু হানী রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিলেন। তিনি গোসলরত ছিলেন। এরূপ ব্যস্ততার অবস্থায় সালাম না দেওয়াই আদব। তবে বিশেষ প্রয়োজন থাকলে ভিন্ন কথা। এখানে বিশেষ প্রয়োজন ছিল।

হযরত উম্মু হানী রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাহরাম নন। তা সত্ত্বেও হযরত উম্মু হানী রাযি. সালাম দিয়েছেন। ফিতনার আশঙ্কা না থাকলে গায়রে মাহরামকেও সালাম দেওয়া যায়। এখানে কোনও আশঙ্কা ছিল না।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. গোসলরত ব্যক্তিকে প্রয়োজনে সালাম দেওয়া যেতে পারে।

খ. লোকচক্ষুর আড়ালে গোসল করা উত্তম। অবশ্য সতর খোলার কোনও ব্যাপার থাকলে আড়ালেই গোসল করা জরুরি।

গ. ফিতনার আশঙ্কা না থাকলে নারী গায়রে মাহরাম পুরুষকে সালাম দিতে পারে।