কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

৯. জিহাদের বিধানাবলী

হাদীস নং: ২৬৩৯
আন্তর্জাতিক নং: ২৬৪৭
৩৭৪. যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়ন।
২৬৩৯. আহমদ ইবনে ইউনুস .... আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর (রাযিঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) কর্তৃক প্রেরিত খণ্ড যুদ্ধসমূহের মধ্যে কোন এক যুদ্ধের সেনাদলে শামিল ছিলেন। তিনি বলেন, লোকজন সে যুদ্ধক্ষেত্র হতে কৌশলে পলায়ন করতে লাগল। আমিও আত্মগোপনকারীদের মধ্যে ছিলাম। বিপদ কাটার পর যখন আমরা বাইরে এলাম তখন আমরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলাম, আমরা তো যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়ন করার অপরাধে আল্লাহর গযবের উপযুক্ত হয়েছি। এখন কী করে আত্মরক্ষা করব এবং লজ্জার হাত হতে রক্ষা পাব? আমরা আলোচনার মাধ্যমে সাব্যস্ত করলাম, রাতের বেলায় মদীনায় ফিরে গিয়ে তথায় চুপে চুপে রাতযাপন করব, যাতে কেউ আমাদেরকে দেখতে না পায়। তথা হতে পুনরায় যেন যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে পারি।

মদীনায় প্রবেশের পর খেয়াল হল আমরা যদি রাসূলূল্লাহ্ (ﷺ) এর নিকট নিজেরাই উপস্থিত হই এবং আমাদের তাওবা গৃহীত হয়, তাতে তো ভালই, তথায় থেকে গেলাম। অন্যথায় অন্যত্র চলে যাব। তিনি বলেন, এহেন চিন্তাভাবনা করে আমরা ফজরের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর প্রতীক্ষায় বসে রইলাম। তিনি যখন নামাযের জন্য ঘর থেকে বের হলেন, আমরা তাঁর দিকে ছুঁটে গিয়ে অপরাধীর স্বরে বললাম, আমরা যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়নকারী। তিনি আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেন, না তোমরা পলায়নকারী নও, বরং রণকৌশলে আপন দলের আশ্রয় গ্রহণকারী। একথা শুনে আমাদের ভয় কেটে গেল এবং আমরা তাঁর নিকট গিয়ে তাঁর হাত মুবারক চুম্বন করলাম। তিনি বললেন, আমি মুসলমানদের আশ্রয়স্থল।
باب فِي التَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ، حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ أَبِي زِيَادٍ، أَنَّ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ أَبِي لَيْلَى، حَدَّثَهُ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ حَدَّثَهُ أَنَّهُ، كَانَ فِي سَرِيَّةٍ مِنْ سَرَايَا رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ فَحَاصَ النَّاسُ حَيْصَةً فَكُنْتُ فِيمَنْ حَاصَ - قَالَ - فَلَمَّا بَرَزْنَا قُلْنَا كَيْفَ نَصْنَعُ وَقَدْ فَرَرْنَا مِنَ الزَّحْفِ وَبُؤْنَا بِالْغَضَبِ فَقُلْنَا نَدْخُلُ الْمَدِينَةَ فَنَتَثَبَّتُ فِيهَا وَنَذْهَبُ وَلاَ يَرَانَا أَحَدٌ - قَالَ - فَدَخَلْنَا فَقُلْنَا لَوْ عَرَضْنَا أَنْفُسَنَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَإِنْ كَانَتْ لَنَا تَوْبَةٌ أَقَمْنَا وَإِنْ كَانَ غَيْرَ ذَلِكَ ذَهَبْنَا - قَالَ - فَجَلَسْنَا لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَبْلَ صَلاَةِ الْفَجْرِ فَلَمَّا خَرَجَ قُمْنَا إِلَيْهِ فَقُلْنَا نَحْنُ الْفَرَّارُونَ فَأَقْبَلَ إِلَيْنَا فَقَالَ " لاَ بَلْ أَنْتُمُ الْعَكَّارُونَ " . قَالَ فَدَنَوْنَا فَقَبَّلْنَا يَدَهُ فَقَالَ " أَنَا فِئَةُ الْمُسْلِمِينَ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ ঘটনা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সাহাবায়ে কেরাম নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে চুম্বন করেছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন হযরত উসামা ইবন শারীক রাযি. বলেন, আমরা উঠে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলাম এবং তাঁর হাতে চুম্বন করলাম।

হযরত জাবির রাযি. বর্ণিত এক হাদীছে আছে, উমর রাযি. উঠে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গেলেন এবং তাঁর হাতে চুম্বন করলেন। (ফাতহুল বারী, ১১ খণ্ড, ৫৭ পৃষ্ঠা।)

আব্দুর রহমান ইবন রাযীন রহ. বলেন, সালামা ইবনুল আকওয়া' রাযি. আমাদের সামনে তাঁর বৃহৎ পাঞ্জা বের করলেন। আমরা উঠে গিয়ে তাতে চুম্বন করলাম। (বুখারী, আল আদাবুল মুফরাদ: ৯৭৩)

বিখ্যাত তাবি'ঈ ছাবিত রহ. একবার হযরত আনাস ইবন মালিক রাযি.-কে বললেন, আপনি কি আপনার এ হাত দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কে চুম্বন করেছেন? তিনি বললেন, হাঁ। তখন ছাবিত তাঁর হাতে চুম্বন করলেন। (বুখারী, আল আদাবুল মুফরাদ: ৯৭৪)

একবার তাবি'ঈ আবূ মালিক আশজা'ঈ রহ. হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আবী আওফা রাযি.-কে বললেন, আপনি যে হাত দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে বায়'আত গ্রহণ করেছিলেন, সেই হাত আমাকে দিন। তিনি হাত বাড়িয়ে দিলে আবূ মালিক তাতে চুম্বন করলেন। (ফাতহুল বারী, ১১ খণ্ড, ৫৭ পৃষ্ঠা।)

হযরত উমর রাযি. সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, যখনই তিনি শামে আসতেন, হযরত আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ রাযি. সামনে অগ্রসর হয়ে তাঁকে সংবর্ধনা জানাতেন এবং তাঁর হাতে চুম্বন করতেন। (বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ৮৫৫৯)

ইমাম নববী রহ. বলেন, কোনও ব্যক্তির যুহ্‌দ, পরহেযগারী, ইলম, দীনী মর্যাদা এবং এ জাতীয় দীনী কোনও বিশেষত্বের কারণে তার হাতে চুমু খাওয়া মাকরূহ নয়: বরং মুস্তাহাব। যদি কারও ধন-দৌলত কিংবা দুনিয়াদারদের কাছে তার প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে চুম্বন করা হয়, তবে তা অবশ্যই কঠিন মাকরূহ কাজ বলে গণ্য হবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ভক্তি-ভালোবাসার প্রকাশস্বরূপ পিতা-মাতা এবং মুত্তাকী-পরহেযগার ব্যক্তির হাতে চুম্বন করা জায়েয।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
সুনানে আবু দাউদ - হাদীস নং ২৬৩৯ | মুসলিম বাংলা