কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

৯. জিহাদের বিধানাবলী

হাদীস নং: ২৫৭৮
আন্তর্জাতিক নং: ২৫৮৬
৩৪২. তীরসহ মসজিদে প্রবেশ।
২৫৭৮. কুতায়বা ইবনে সাঈদ ..... জাবির (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যে মসজিদের মধ্যে তীর বিতরণ করছিল, সে যেন লোকজনের মধ্য দিয়ে চলার সময় তীরের অগ্রভাগ ধরে রাখতে (যাতে কারো গায়ে না লাগে)।
باب فِي النَّبْلِ يُدْخَلُ بِهِ الْمَسْجِدُ
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ أَمَرَ رَجُلاً كَانَ يَتَصَدَّقُ بِالنَّبْلِ فِي الْمَسْجِدِ أَنْ لاَ يَمُرَّ بِهَا إِلاَّ وَهُوَ آخِذٌ بِنُصُولِهَا .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তীরের ফলা ধরে রাখতে বলেছেন। কেননা কোনও মুসলিমের গায়ে ফলার খোঁচা লেগে জখম হয়ে যেতে পারে। এতে করে অহেতুক একজন মুসলিমকে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়। এ ক্ষতি তার জানের হক সম্পর্কিত। জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তালাভ প্রত্যেক মুসলিমের হক। এ হক নষ্ট করা সম্পূর্ণ হারাম। এ হারামে লিপ্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকার কারণেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তীরের উন্মুক্ত ফলা নিয়ে চলতে নিষেধ করেছেন।
যেসকল স্থানে লোকসমাগম হয়ে থাকে, সেখানে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে। যেমন যানবাহনের স্টেশন, সভা-সমাবেশ ইত্যাদি।
তরবারি, বর্শা ইত্যাদি অস্ত্রও সতর্কতার সাথে বহন করা জরুরি। তরবারি সম্পর্কে হযরত জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ- نهى رسول الله ﷺ أن يتعاطى السيف مسلولا 'রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাপমুক্ত অবস্থায় তরবারি প্রদান-গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।
বর্তমানকালে যেসব অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি ব্যবহৃত হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রেও এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে। যেমন বন্দুক, পিস্তল ইত্যাদি। যে-কোনও সমাবেশস্থলে এসব আগ্নেয়াস্ত্র অতি সাবধানতার সাথে বহন করা চাই, যাতে অনিচ্ছাকৃতভাবেও তা দ্বারা মানুষের জান-মালের কোনও ক্ষতি না হয়ে যায়। এমনিভাবে দা, কাঁচি প্রভৃতি ধারালো বস্তু, আগুন, গরম পানি ইত্যাদি বিপজ্জনক জিনিস নিয়ে চলাফেরাকালেও সাবধানতা অবলম্বন অতীব জরুরি। মোটকথা কারও পক্ষ হতে কোনওভাবেই যাতে অন্য কেউ আঘাত না পায় বা কোনওরকম ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখে চলাফেরা করা একান্ত কর্তব্য।
এ হাদীছ অনিচ্ছাকৃত কষ্টদানের ব্যাপারে যখন এরূপ সতর্কতা অবলম্বনের হুকুম দিয়েছে, তখন ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে জখম করা, আঘাত করা বা অন্য কোনওরকম কষ্ট দেওয়া থেকে আমাদের কতটা গুরুত্বের সঙ্গে বিরত থাকতে হবে তা সহজেই অনুমেয়।
হাদীছটির প্রতি লক্ষ করলে উম্মতের প্রতি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অপরিসীম দরদ ও মমত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। উম্মত যাতে কোনওভাবেই কষ্ট ও ক্ষতির সম্মুখীন না হয় এবং একজন দ্বারা অন্যজন যাতে কোনওভাবেই আঘাতপ্রাপ্ত না হয় সেজন্য তিনি কত সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিষয়েও শিক্ষাদান করেছেন! এটা উম্মতের ঐক্য ও সংহতি রক্ষায় তাঁর গৃহীত পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থারও একটা অংশ। কেননা অসাবধানতাবশত কারও বহন করা অস্ত্র দ্বারা যদি কোনওরকম দুর্ঘটনা ঘটে যায় বা মানুষের জান-মালের কোনও ক্ষতি হয়ে যায়, তবে তার পরিণামে সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, এমনকি তাতে বড় রকমের আত্মকলহ ও দাঙ্গা লেগে যাওয়াও অসম্ভব নয়। একটুখানি ভুলের তরে অনেক বিপদ তো ঘটেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদীছটির অনুসরণ সেরকম বিপদ থেকে। আত্মরক্ষার এক মোক্ষম উপায়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. জনসমাবেশের মধ্যে ধারালো অস্ত্র ও ধারালো বস্তু বহনে সর্বোচ্চ সতর্কতা জরুরি।

খ. রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময়ও নিজের বহন করা কোনও বস্তু দ্বারা কেউ যাতে জখম বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা চাই।

গ. যেসকল কাজকর্ম ও আচার-আচরণ জাতীয় ঐক্য ও সংহতি বিনষ্টের কারণ হতে পারে, তা থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়।

ঘ. এ হাদীছ উম্মতের প্রতি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অপরিসীম দরদ ও মমত্বের পরিচায়ক। আমাদেরও কর্তব্য এ গুণের অধিকারী হতে সচেষ্ট থাকা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
সুনানে আবু দাউদ - হাদীস নং ২৫৭৮ | মুসলিম বাংলা