কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

৯. জিহাদের বিধানাবলী

হাদীস নং: ২৫২৪
আন্তর্জাতিক নং: ২৫৩২
জিহাদের বিধানাবলী
৩০৬. অত্যাচারী শাসকের সঙ্গে যুদ্ধ।
২৫২৪. সাঈদ ইবনে মনসুর ..... আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ঈমানের মূল হল তিনটি বিষয়ঃ ১. যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কালেমা পাঠ করে মুসলমান হয়েছে, তাকে হত্যা ও কষ্ট দেয়া হতে বিরত থাকা ২. কোন পাপের কারণে তাকে কাফির না বলা এবং ৩. শির্‌ক ও কুফরী কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজের জন্য তাকে ইসলাম হতে বহিষ্কার না করা। যখন থেকে আমাকে আল্লাহ্ নবী করেছেন তখন থেকেই জিহাদ চালু রয়েছে এবং চিরকাল থাকবে। শেষ পর্যন্ত আমার উম্মতের শেষ দলটি দাজ্জালের সাথে যুদ্ধ করবে। কোন অত্যাচারী এবং কোন বিচারকের বিচারে যুদ্ধ বাতিল হবে না এবং ভালমন্দ সব কিছু আল্লাহর পক্ষ হতে হয় বলে বিশ্বাস করাও প্রকৃত ঈমান।
كتاب الجهاد
باب فِي الْغَزْوِ مَعَ أَئِمَّةِ الْجَوْرِ
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ مَنْصُورٍ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ بُرْقَانَ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي نُشْبَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : " ثَلاَثَةٌ مِنْ أَصْلِ الإِيمَانِ : الْكَفُّ عَمَّنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَلاَ تُكَفِّرْهُ بِذَنْبٍ وَلاَ تُخْرِجْهُ مِنَ الإِسْلاَمِ بِعَمَلٍ، وَالْجِهَادُ مَاضٍ مُنْذُ بَعَثَنِيَ اللَّهُ إِلَى أَنْ يُقَاتِلَ آخِرُ أُمَّتِي الدَّجَّالَ لاَ يُبْطِلُهُ جَوْرُ جَائِرٍ وَلاَ عَدْلُ عَادِلٍ، وَالإِيمَانُ بِالأَقْدَارِ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আলোচ্য হাদীসে তিনটি জিনিসকে ইসলামের বুনিয়াদী নীতি হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। প্রথম কোন গুনাহের কারণে কালেমা উচ্চারণকারী ব্যক্তিকে কাফের আখ্যায়িত করা বা তাকে ইসলাম থেকে খারিজ ঘোষণা করার ফতোয়া প্রদান করতে নিষেধ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে এটা উল্লেখ্যযোগ্য যে, 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্' উচ্চারণ করার অর্থ পূর্বে যা আলোচনা করা হয়েছে, এ হাদীসের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। নবী করীম (ﷺ)-এর যুগে 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ' উচ্চারণ করার অর্থ ছিল নবী করীম (ﷺ)-এর দীনি দাওয়াত কবুল করে মুসলমান হওয়া বা ইসলাম কবুল করা।

অপর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল গুনাহ ও বদ আমলের জন্য কোন কালেমা উচ্চারণকারীকে কাফের আখ্যায়িত করতে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) নিষেধ করেছেন।

আল্লাহর রাসূল (ﷺ) যেন তাঁর এ ইরশাদের মাধ্যমে তাঁর উম্মতকে এমন এক ভ্রান্তি ও গোমরাহী থেকে বাঁচানোর কোশেশ করেছেন যাতে মু'তাজিলা এবং খারেজী সম্প্রদায় জড়িত রয়েছে। এ দু'টি সম্প্রদায় পাপ ও বদ আমলের ভিত্তিতে মানুষকে কাফির আখ্যায়িত করে থাকে। আহলে সুন্নাতের দৃষ্টিকোণ হাদীসের সাথে পরিপূর্ণভাবে সামঞ্জস্যশীল। অর্থাৎ পাপ ও বদ আমলের কারণে কোন মুসলমান কাফির হয় না বা দীন ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় না।

যদি কোন ব্যক্তি কালেমা উচ্চারণ করার এবং নিজকে মুসলমান আখ্যায়িত করার পর কুরআন শরীফকে আল্লাহর কিতাব হিসেবে মানতে অস্বীকার করে বা কিয়ামত ও আখিরাত স্বীকার না করে, খোদায়ী বা নবুওয়াতের দাবী করে, তাহলে সে মুসলমান হিসেবে গণ্য হবে না।

মোটকথা উপরে আলোচিত দু'অবস্থার পার্থক্য ভালভাবে অনুধাবন করা উচিৎ। এ পার্থক্য সম্পর্কে ওয়াকিফহাল না থাকার কারণে কোন কোন ব্যক্তি এ হাদীসকে খুব ভালভাবে প্রয়োগ করে থাকেন।

আলোচ্য হাদীসে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) জিহাদ সম্পর্কে বলেছেন যে, তাঁর সময় থেকে শুরু করে দাজ্জালের বিরুদ্ধে তাঁর উম্মতের সর্বশেষ দলের লড়াই করা পর্যন্ত জিহাদ চালু থাকবে। কোন যালিম বা ন্যায়পরায়ণ শাসকের অজুহাত প্রদান করে জিহাদ বন্ধ করা যাবে না। যদি কোন সময় মুসলমানদের শাসন ক্ষমতা কোন যালিম গোমরাহ ব্যক্তির হাতে ন্যস্ত হয়, তাহলে তার যুলুমের বা গোমরাহীর কারণে জিহাদ বন্ধ করা যাবে না। গোমরাহ ব্যক্তির অধীনে জিহাদ না করার কোন অজুহাত কেহ প্রদর্শন করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। ভাল বা মন্দ নির্বিশেষে শাসন ক্ষমতা যার হাতে ন্যস্ত হোক না কেন, শাসকের পক্ষ থেকে জিহাদের ঘোষণা প্রদান করা হলে (জিহাদের নামে ফাসাদ করা স্বতন্ত্র ব্যাপার) জিহাদে অংশ গ্রহণ করা অবশ্য কর্তব্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান