কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

৮. রোযার অধ্যায়

হাদীস নং: ২৪৫১
আন্তর্জাতিক নং: ২৪৫৯
২৬৫. স্বামীর অনুমতি ব্যতীত স্ত্রীর (নফল) রোযা রাখা।
২৪৫১. উসমান ইবনে আবি শাঈবা ..... আবু সাঈদ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈকা মহিলা নবী করীম (ﷺ) এর খিদমতে আগমন করে এবং এ সময় আমরাও তাঁর নিকট উপস্থিত ছিলাম। সে মহিলা বলে, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমার স্বামী সাফ্ওয়ান ইবনে মুআত্তাল, যখন আমি নামায পড়ি, তখন আমাকে মারধর করে। আর আমি রোযা রাখলে সে আমাকে রোযা ভাঙ্গতে বলে। অথচ সে সূর্যোদয়ের পূর্বে কখনও ফযরের নামায পড়ে না। রাবী বলেন, সাফওয়ানও তাঁর নিকট উপস্থিত ছিল।

রাবী বলেন, তিনি তার নিকট উক্ত মহিলার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তার বক্তব্য, ‘আমাকে মারধর করে, যখন আমি নামায আদায় করি।’’ প্রকৃত ব্যাপার এই যে, সে এমন (দীর্ঘ) দু‘টি সূরা (নামাযের মধ্যে) পড়ে, যা পড়তে তাকে আমি নিষেধ করি। রাবী বলেন, তিনি ইরশাদ করেন, যদি কেউ (ছোট) একটি সূরা পড়ে, তবে তা তার জন্য যথেষ্ট হবে। আর তার বক্তব্য, ‘আমি রোযা রাখলে সে আমাকে ইফতার করতে বলে।’’ ব্যাপার এই যে, সে সব সময়ই (নফল) রোযা রাখে। আর আমি যুবক হওয়ার কারণে (স্ত্রী সহবাস ব্যতীত) থাকতে পারি না।

রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন, আজ হতে কোন স্ত্রীলোক স্বামীর অনুমতি ব্যতীত (নফল) রোযা রাখতে পারবে না। আর তার বক্তব্য যে, আমি সূর্যোদয়ের পূর্বে (ফজরের) নামায আদায় করি না। এ সম্পর্কে আমার বক্তব্য এই যে, আমরা পানি সরবরাহকারী পরিবারের লোক। রাতের প্রথমভাগে কাজ করি, শেষ রাতে নিদ্রা যাই এবং এটাই আমাদের অভ্যাস। এজন্য আমরা সূর্যোদয় হওয়া ব্যতীত নিদ্রা হতে জাগতে পারি না। তিনি বলেন, তুমি যখনই নিদ্রা হতে জাগ্রত হবে, তখনই নামায পড়ে নিবে।
باب الْمَرْأَةِ تَصُومُ بِغَيْرِ إِذْنِ زَوْجِهَا
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَنَحْنُ عِنْدَهُ فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ زَوْجِي صَفْوَانَ بْنَ الْمُعَطَّلِ يَضْرِبُنِي إِذَا صَلَّيْتُ وَيُفَطِّرُنِي إِذَا صُمْتُ وَلاَ يُصَلِّي صَلاَةَ الْفَجْرِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ . قَالَ وَصَفْوَانُ عِنْدَهُ . قَالَ فَسَأَلَهُ عَمَّا قَالَتْ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَمَّا قَوْلُهَا يَضْرِبُنِي إِذَا صَلَّيْتُ فَإِنَّهَا تَقْرَأُ بِسُورَتَيْنِ وَقَدْ نَهَيْتُهَا . قَالَ فَقَالَ " لَوْ كَانَتْ سُورَةً وَاحِدَةً لَكَفَتِ النَّاسَ " . وَأَمَّا قَوْلُهَا يُفَطِّرُنِي فَإِنَّهَا تَنْطَلِقُ فَتَصُومُ وَأَنَا رَجُلٌ شَابٌّ فَلاَ أَصْبِرُ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَوْمَئِذٍ " لاَ تَصُومُ امْرَأَةٌ إِلاَّ بِإِذْنِ زَوْجِهَا " . وَأَمَّا قَوْلُهَا إِنِّي لاَ أُصَلِّي حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ فَإِنَّا أَهْلُ بَيْتٍ قَدْ عُرِفَ لَنَا ذَاكَ لاَ نَكَادُ نَسْتَيْقِظُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ . قَالَ " فَإِذَا اسْتَيْقَظْتَ فَصَلِّ " . قَالَ أَبُو دَاوُدَ رَوَاهُ حَمَّادٌ - يَعْنِي ابْنَ سَلَمَةَ - عَنْ حُمَيْدٍ أَوْ ثَابِتٍ عَنْ أَبِي الْمُتَوَكِّلِ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রীর জন্য নফল রোযা রাখা অবৈধ করা হয়েছে। স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল রোযা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে এ কারণে যে, তাতে করে স্বামীর হক আদায় বিঘ্নিত হতে পারে।
যে-কোনও ইবাদত নফল শুরু করলে তা পূরণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। কাজেই স্ত্রী যদি নফল রোযা রাখে, তার তা অবশ্যই পূরণ করতে হবে। এখন স্বামীর যদি এমন কোনও প্রয়োজন দেখা দেয়, যা মেটাতে গেলে তার রোযা ভাঙতে হবে, তবে পরে তা কাযা করা জরুরি হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে এক তো ইবাদত শুরুর পর তা ভাঙতে হচ্ছে, যা পসন্দনীয় নয়। আবার পরে কাযা করাটাও সম্ভব নাও হতে পারে। যদি আগেই মৃত্যু হয়ে যায়, তবে একটা ওয়াজিব আমলের দায় নিয়েই মৃত্যু হল। আর যদি স্থায়ীভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে, যদ্দরুন রোযা রাখা সম্ভব না হয়, তবে ফিদয়া দিতে হবে। মোটকথা কোনও-না কোনও বিপত্তি থেকেই যায়। এর থেকে বাঁচার উপায় হল স্বামী উপস্থিত থাকাকালে তার অনুমতি ছাড়া রোযা রাখা হতে বিরত থাকা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

এ হাদীছটির শিক্ষা সুস্পষ্ট। স্বামীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অনুমতি ছাড়া স্ত্রী নফল রোযা রাখবে না।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান