কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

৬. বিবাহ-শাদীর অধ্যায়

হাদীস নং: ২১৪৩
আন্তর্জাতিক নং: ২১৪৬
১৩৭. স্ত্রীদের মারধর করা।
২১৪৩. ইবনে আবু খালফ ও আহমাদ ইবনে আমর ইবনে সারহ্ .... ইয়াস ইবনে আব্দুল্লাহ্ ইবনে আবু যুবাব হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, তোমরা আল্লাহর দাসীদেরকে প্রহার করবে না। তখন উমর (রাযিঃ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে বলেন, স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের সাথে অবাধ্যতা করছে। তখন তিনি তাদেরকে হালকা মারধর করতে অনুমতি প্রদান করেন।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর পরিবারের নিকট অনেক মহিলা এসে তাদের স্বামীদের সম্পর্কে অভিযোগ পেশ করে। তখন নবী করীম (ﷺ) ইরশাদ করেনঃ মুহাম্মাদের পরিবারের নিকট অসংখ্য মহিলা এসে তাদের স্বামীদের ব্যাপারে অভিযোগ পেশ করছে। যারা তাদের স্ত্রীদের মেরেছে তারা তোমাদের মধ্যে উত্তম নয়।
باب فِي ضَرْبِ النِّسَاءِ
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ أَبِي خَلَفٍ، وَأَحْمَدُ بْنُ عَمْرِو بْنِ السَّرْحِ، قَالاَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، - قَالَ ابْنُ السَّرْحِ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ - عَنْ إِيَاسِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي ذُبَابٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ تَضْرِبُوا إِمَاءَ اللَّهِ " . فَجَاءَ عُمَرُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ذَئِرْنَ النِّسَاءُ عَلَى أَزْوَاجِهِنَّ . فَرَخَّصَ فِي ضَرْبِهِنَّ فَأَطَافَ بِآلِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نِسَاءٌ كَثِيرٌ يَشْكُونَ أَزْوَاجَهُنَّ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " لَقَدْ طَافَ بِآلِ مُحَمَّدٍ نِسَاءٌ كَثِيرٌ يَشْكُونَ أَزْوَاجَهُنَّ لَيْسَ أُولَئِكَ بِخِيَارِكُمْ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে স্ত্রীকে মারপিট করার বিধান সম্পর্কে তিনটি পর্যায় বর্ণিত হয়েছে। প্রথমে মারপিট করতে সম্পূর্ণ নিষেধ করা হয়েছে।
বলা হয়েছে—
(তোমরা আল্লাহর বান্দীদেরকে মারপিট করো না)। জাহিলী যুগে স্ত্রীদেরকে তো মানুষই গণ্য করা হত না। তাদেরকে মারপিট করা ছিল মামুলী ব্যাপার। ইসলাম ধীরে ধীরে তার অনুসারীদেরকে সর্বপ্রকার অন্যায় ও অসৎকর্ম হতে মুক্ত করে ন্যায় ও সৎকর্মের চর্চায় অনুপ্রাণিত করেছে। নারী ও পুরুষের সম্মিলনেই জীবনের পূর্ণতা। জুলুম-অবিচার দ্বারা সে পূর্ণতা ব্যহত হয়। তাই এর অবসান জরুরি। তা জরুরি যেমন জীবনের সাধারণ সব ক্ষেত্রে, তেমনি দাম্পত্য ক্ষেত্রেও। ইসলাম অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন জুলুম নিষিদ্ধ করেছে, তেমনি করেছে দাম্পত্য ক্ষেত্রেও। জুলুম-নিপীড়নের একটা বড় দিক হল শারীরিক নির্যাতন। এ হাদীছ ঘোষণা করছে- তোমরা আল্লাহর বান্দীদেরকে মারপিট করবে না অর্থাৎ তাদেরকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করবে না।
সাহাবায়ে কেরাম নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিটি আদেশ শতভাগ মেনে চলার চেষ্টা করতেন। এ ক্ষেত্রেও তাই করলেন। আগে যারা স্ত্রীকে মারধর করতেন, তারা তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিলেন। এতদিন যারা মার খেয়ে অভ্যস্ত ছিল, তারা হঠাৎ করে সে অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়ায় একটা উল্টো ফলও ফলল। তাদের কেউ কেউ স্বামীদের প্রতি ধৃষ্টতা দেখাতে শুরু করল। তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা উচিত নয় তাও করতে লাগল।
সুতরাং সাহাবায়ে কেরাম রাযি. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে এ ব্যাপারে অভিযোগ করলেন-
(স্ত্রীরা তাদের স্বামীদের উপর অবাধ্য হয়ে উঠেছে)। অর্থাৎ তারা যখন মারপিটের নিষেধাজ্ঞা শুনল এবং এ জুলুম থেকে রেহাই পেল, তখন দেখা গেল কেউ কেউ স্বামীর অবাধ্য হয়ে উঠেছে এবং তার সঙ্গে ধৃষ্টতামূলক আচরণ করছে। এভাবে চললে পারিবারিক শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে না। একদিকে তাদেরকে মারতে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে তারা এরকম বেপরোয়া হয়ে গেছে। এতে করে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক জটিল হয়ে যেতে পারে। এমনকি তা বিবাহবিচ্ছেদেও গড়াতে পারে। এর প্রতিকার কী?
এবার আসল দ্বিতীয় পর্যায়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীদেরকে মারার অবকাশ দিলেন। অর্থাৎ মূল বিধান তো না মারাই, তবে তারা যে অবাধ্য হয়ে উঠেছে এই ওজরের কারণে বিধান কিছুটা শিথিল করে দেওয়া হল, যাতে করে তাদের অবাধ্যতা দূর হয় এবং দাম্পত্যজীবনের স্থিতি বজায় থাকে।
এবার অভিযোগ আসতে থাকল স্ত্রীদের পক্ষ থেকে। বহু স্বামী ওই শিথিলতার সুযোগে স্ত্রীদেরকে মারপিট করা শুরু করল। তারা তো জানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মারতে নিষেধ করেছেন। তাই তারা উম্মাহাতুল মুমিনীনের কাছে এসে স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে থাকল যে, তারা ব্যাপকভাবে তাদেরকে মারপিট করছে।
উল্লেখ্য, মারপিটের বিধানে যে শিথিলতা দেওয়া হয়েছিল তাও ছিল লঘু মার, অর্থাৎ প্রয়োজনে তাদেরকে এতটুকু মারা যেতে পারে, যাতে কোনও অঙ্গহানি না হয়, জখম না হয়, শরীরে দাগ না পড়ে এবং বেশি কষ্টদায়ক না হয়। আর চেহারায় মারা তো সম্পূর্ণ নিষেধ। সুতরাং যারা মারছিলেন, বলাবাহুল্য তারা এসব নিয়ম-কানুন রক্ষা করেই মারছিলেন। কিন্তু তারপরও স্ত্রীকে মারাটা কিছু সুশ্রাব্য আচরণ নয় এবং স্ত্রীদের পক্ষেও নয় তা মর্যাদাকর। তাই যারা মার খাচ্ছিলেন, তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ আসা স্বাভাবিকই ছিল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সে অভিযোগের মূল্যও দিলেন।

অতএব তৃতীয় পর্যায়ে তিনি অতটুকু মারের প্রতিও নিরুৎসাহিত করলেন। তিনি ইরশাদ করলেন-
(এরা কিছুতেই উত্তম লোক নয়)। অর্থাৎ যারা স্ত্রীদেরকে মারপিট করে, তারা উত্তম লোক নয়। এর দ্বারা বোঝা যায় তাদের মন সংকীর্ণ। মেজায কড়া। তাদের সবর নেই। একটুতেই ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে যায়। এসব উত্তম চরিত্রের পরিপন্থী। আর কেউ লোক হিসেবে উত্তম তখনই হতে পারে, যখন তার আখলাক-চরিত্রও উত্তম হবে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

এ হাদীছের শিক্ষা হচ্ছে, স্ত্রীকে কঠোর মারপিট তো নয়ই, এমনকি লঘু পর্যায়েও মারা বাঞ্ছনীয় নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
সুনানে আবু দাউদ - হাদীস নং ২১৪৩ | মুসলিম বাংলা