কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ

৬. বিবাহ-শাদীর অধ্যায়

হাদীস নং: ২১৪০
আন্তর্জাতিক নং: ২১৪৩
১৩৬. স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার।
২১৪০. ইবনে বাশশার ......... হাকীম ইবনে মুআবিয়া (রাহঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি বলি, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আমাদের স্ত্রীদের সাথে কোথায় কিরূপে সহবাস করব এবং কোথায় করব না? তিনি বলেন, তুমি তোমার ক্ষেত্রে যেরূপে ইচ্ছা গমন করত পার। আর যখন তুমি খাবে, তখন তাকেও খেতে দিবে। আর যখন তুমি যা পরিধান করবে, তখন তাকেও তা পরিধান করাবে এবং তাকে গালমন্দ করবে না ও মারধর করবে না।
باب فِي حَقِّ الْمَرْأَةِ عَلَى زَوْجِهَا
حَدَّثَنَا ابْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا بَهْزُ بْنُ حَكِيمٍ، حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ جَدِّي، قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ نِسَاؤُنَا مَا نَأْتِي مِنْهُنَّ وَمَا نَذَرُ قَالَ " ائْتِ حَرْثَكَ أَنَّى شِئْتَ وَأَطْعِمْهَا إِذَا طَعِمْتَ وَاكْسُهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ وَلاَ تُقَبِّحِ الْوَجْهَ وَلاَ تَضْرِبْ " . قَالَ أَبُو دَاوُدَ رَوَى شُعْبَةُ " تُطْعِمُهَا إِذَا طَعِمْتَ وَتَكْسُوهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ " .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রীর কয়েকটি হক উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে একটি হচ্ছে সামর্থ্য অনুযায়ী খোরপোশ দেওয়া। সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতাভেদে আপন আপন সামর্থ্য অনুযায়ী স্ত্রীদেরকে খোরপোশ দেবে। ধনী দেবে তার অবস্থা অনুযায়ী এবং গরীবও তার অবস্থা অনুযায়ী। ধনী ব্যক্তি যদি স্ত্রীকে খোরপোশ দিতে কার্পণ্য করে এবং তাকে গরীবদের হালে রাখে, তবে এটা একরকম জুলুম গণ্য হবে। আবার স্ত্রীও যদি স্বামীর কাছে তার সামর্থ্যের ঊর্ধ্বে খোরপোশ দাবি করে, তাও তার উপর জুলুমই বটে। উভয়ের কর্তব্য উভয়ের সামর্থ্য বিবেচনায় রাখা। খাবার দেওয়ার ক্ষেত্রে এটাও লক্ষণীয় যে, স্ত্রীর পিতৃগৃহে যদি মেয়েদের রান্নাবান্না করার রেওয়াজ না থাকে, তবে এরকম স্ত্রীকে রান্নাবান্নার কষ্টে ফেলা জায়েয হবে না। সে ক্ষেত্রে স্বামীর কর্তব্য হবে রান্নাবান্নার আলাদা ব্যবস্থা করা।

আরেকটি হক বলেছেন তাকে না মারা। কোনও কোনও স্বামী রাগের বশে স্ত্রীর মুখে চড় মারে। এটা নিতান্তই গর্হিত কাজ। রাগ মেটানোর জন্য স্ত্রী কেন, কাউকেই মারা জায়েয নয়। মারের উদ্দেশ্য হতে হবে কেবলই ভুলত্রুটির সংশোধন। আর সেটাও হতে হবে মাত্রাজ্ঞানের সঙ্গে এবং শরীআতের সীমারেখার ভেতর। সে সীমারেখার একটা এইও যে, চেহারায় মারা যাবে না। চেহারায় মারার দ্বারা যেমন সৌন্দর্যের অবমূল্যায়ন করা হয়, তেমনি ব্যক্তিকেও অসম্মান করা হয়। সেইসঙ্গে চোখ, নাক, দাঁত ইত্যাদির বড় রকম ক্ষতিরও আশঙ্কা থাকে। অনেক সময় সে মারের চিহ্ন স্থায়ী হয়ে যায়, যা সকলেরই চোখে পড়ে। এসবই মারার উদ্দেশ্যেরও পরিপন্থী। উদ্দেশ্য সংশোধন করা, ক্ষতিগ্রস্ত করা ও অসম্মান করা নয়।
যে-কাওকে মারার ক্ষেত্রে যখন চেহারা এড়ানো জরুরি, তখন স্ত্রীর ক্ষেত্রে তো এটা আরও বেশি জরুরি হয়ে যায়। স্ত্রী প্রেম-ভালোবাসার পাত্র। মারের বিষয়টি তার সঙ্গে যায় না। এটা নিতান্তই ঠ্যাকার কাজ। তাই মার যেমন লঘু হতে হবে, তেমনি চেহারাও এড়াতে হবে।

স্ত্রীর আরেকটি অধিকার হচ্ছে তাকে গালমন্দ না করা। কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ স্ত্রীকে লক্ষ্য করে এ কথা বলা যে, আল্লাহ তোমার মন্দ করুন। এটা একটি বদদুআ ও অভিশাপ। অভিশাপ দেওয়া ইসলামী আখলাকের পরিপন্থী। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনওই এটা করতেন না।
এর অর্থ আরও ব্যাপক। মন্দ বলার এক অর্থ গাল দেওয়া, যেমন ছোটলোক বলা, অভদ্র বলা, কোনও পশু-পাখির সঙ্গে তুলনা করা, বিশেষ কোনও পশু-পাখির বাচ্চা বলা ইত্যাদি। এমনিভাবে তার চেহারা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, বংশ বা কোনও অভ্যাস নিয়ে খোঁটা দেওয়াও একরকম মন্দ বলাই বটে। তোমার চেহারা ভালো নয়, তুমি দেখতে আকর্ষণীয় নও, তোমার নাকটা বোঁচা, তোমার বাপ এই-ওই করত, তুমি নীচ বংশের মেয়ে, তুমি কেমন করে যেন হাঁট- এ সবই মন্দ বলার মধ্যে পড়ে।
বিষয়টা একটু খুলেই বলা হল। এর কারণ অনেক স্বামীই স্ত্রীকে লক্ষ্য করে এ জাতীয় কথাবার্তা বলে। এটা খুবই ন্যাক্কারজনক। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক অত্যন্ত পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ। এ জাতীয় কথাবার্তা সে সম্পর্কের সঙ্গে মোটেই খাপ খায় না। এরকম অভ্যাস পরিত্যাগ করা খুবই জরুরি।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের সচেতনতা অনুভব করা যায়।

খ. স্বামীর কর্তব্য নিজ সঙ্গতি অনুযায়ী স্ত্রীর খোরপোশ দেওয়া।

গ. স্ত্রীর বা অন্য কারও চেহারায় মারা উচিত নয়।

ঘ. স্ত্রীকে গালমন্দ করা, অভিশাপ দেওয়া বা তার কোনওকিছু নিয়ে খোঁটা দেওয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান