মা'আরিফুল হাদীস

কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়

হাদীস নং: ৩১
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
ইসমে আ'যম

হাদীস সমূহ পাঠে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তা'আলার পবিত্র নাম সমূহের কোন কোনটিতে এমন বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে রয়েছে যে, যখন সেগুলির মাধ্যমে দু'আ করা হয় তখন তা কবুল হওয়ার বেশি আশা করা যায়।

এ সমস্ত পবিত্র নামকে 'ইসমে আযম' নামে অভিহিত করা হয়েছে। কিন্তু সুস্পষ্টভাবে এগুলোকে চিহ্নিত করা হয়নি, অনেকটা অস্পষ্ট ও আড়ালে আবডালে রাখা হয়েছে। এটা অনেকটা লাইলাতুল কদর ও জুমার দিনের দু'আ কবুলের বিশেষ সময়টিকে অস্পষ্ট বা অচিহ্নিত রাখার মত ব্যাপার। হাদীস সমূহ থেকে এটাও জানা যায় যে, ইসমে আ'যম কোন বিশেষ একটি নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, যেমনটি অনেক লোকে ধারণা করে থাকেন; বরং একাধিক নামকে ইসমে আ'যম বলে অভিহিত করা হয়েছে। ঐ সমস্ত হাদীস থেকে এটাও সুস্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, সাধারণ্যে ইসমে আ'যম সম্পর্কে যে ধারণা চালু রয়েছে এবং এ সম্পর্কে যে সব কথা প্রচলিত রয়েছে, তা একান্তই অলীক ও ভিত্তিহীন। আসল ব্যাপার তা'ই যা উপরে উক্ত হয়েছে। তারপর এ সংক্ষিপ্ত কয়েকটি হাদীস পাঠ করুন।
৩১. হযরত বুবায়দা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ একদা এক ব্যক্তিকে এরূপ দু'আ করতে শুনলেন: “হে আল্লাহ! আমি আমার ফরিয়াদ তোমার কাছে এ অসিলায় পেশ করছি যে, তুমি আল্লাহ, তুমি ব্যতীত কোন মালিক ও উপাস্য নেই, তুমি একক, তুমি অনন্য, তুমি অমুখাপেক্ষী, সকলেই তোমার মুখাপেক্ষী। না তুমি কারো সন্তান আর না কেউ তোমার সন্তান আর না কেউ তোমার সমকক্ষ আছে।"

তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ লোকটিকে এ দু'আ করতে শুনে বলে উঠলেন, লোকটি আল্লাহকে তাঁর ইসমে আ'যমের মাধ্যমে ফরিয়াদ জানালো! ঐ নামে যখন কেউ দু'আ করে তখন তার দু'আ কবুল করা হয়ে থাকে। -(জামে তিরমিযী ও সুনানে আবূ দাউদ)
کتاب الاذکار والدعوات
عَنْ بُرَيْدَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَمِعَ رَجُلًا يَقُولُ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ الْأَحَدُ الصَّمَدُ، الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ، وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَقَدْ سَأَلَ اللَّهَ بِاسْمِهِ الْأَعْظَمِ، الَّذِي إِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى، وَإِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَ» (رواه الترمذى وابوداؤد)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীসে গভীর মনোনিবেশ সহকারে পাঠ করলে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তা'আলার বিশেষ কোন নামকে ইসমে আ'যম বলা হয়নি; বরং এ কথাই অধিকতর যুক্তিসঙ্গত মনে হয় যে, শেষ হাদীসে যে দু'খানা আয়াতের বরাত দেওয়া হয়েছে এবং এর আগের দু'টি হাদীসে দু'ব্যক্তির যে দু'আ উদ্ধৃত করা হয়েছে এর প্রত্যেকটিকে আল্লাহর বিভিন্ন নামের যে বিশেষ ভঙ্গিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে তাঁর যে ব্যাপক মর্ম বুঝে আসে, তাকেই ইসমে আ'যম বলে অভিহিত করা হয়েছে।

হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ্ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ)-কে আল্লাহ তা'আলা এ জাতীয় ইলম ও মা'রিফত বিশেষ দান করেছেন। তিনি এসব হাদীস পাঠে এ সিদ্ধান্তেই উপনীত হয়েছেন।১ আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

টিকা ১. শাহ সাহেব হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগায় বলেনঃ (পৃ ৭৭, জিলদ ২)

اعلم أن الاسم الاعظم الذي اذا سئل به اعطى واذا دعي به أجاب هو الاسم الذي يدل على اجمع تدل من تدليات الحق والذى تداوله الملأ الأعلى اكثر تداول ونطقت به التراجمة في كل عصر وهذا معنى يصدق على انت اللّٰه لا اله الا انت الاحد الصمد الذي لم يلد ولم يولد ولم يكن له كفوا أحد وعلى لك الحمد لا اله الا انت الحنان المنان بديع السموات والارض يا ذا الجلال والإكرام يا حي يا قيوم ويصدق على اسماء تضاهي ذلك (حجة اللّٰه البالغة ص ٧٧ جلد (٦)

স্মরণ রাখতে হবে যে, ইসমে আ'যম এমন নাম, যে নামের সাহায্যে যাচ্ঞা করা হলে দেয়া হয়, দু'আ করা হলে তা কবুল হয়। তা এমন নাম যা আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য লাভের সবচেয়ে ব্যাপক উপায় বুঝায় এবং ঊর্ধ্ব মন্ডলে এ নামকে সবচেয়ে বেশি স্মরণ করা হয় এবং সকল যুগে (অদৃশ্য লোকের) বার্তা বাহকরা তা উচ্চারণ করে এসেছে।
أنْتَ اللّٰهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
-তুমি আল্লাহ, তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তুমি একক ও অমুখাপেক্ষী, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও কেউ জন্ম দেয়নি এবং কেউ তাঁর সমকক্ষও নেই-এ অর্থ ইসমে আযম সম্পর্কে প্রযোজ্য হয়।
لَكَ الْحَمْدُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْحَنَّانُ الْمَنَّانُ بَدِيعُ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ يَا ذَا الْجَلالِ وَالْإِكْرَامِ يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ.
সমস্ত প্রশংসা তোমারই প্রাপ্য, তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমিই তো হান্নান, মান্নান, তুমিই দয়াময় ও অনুগ্রহশীল, আসমান-যমীনের সৃষ্টিকর্তা, হে জালাল ও ইকরামের অধিকারী, হে হাই ও কাইয়্যুম হে চিরঞ্জীব ও সবকিছুর রক্ষক। এ সব নামের সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল অন্যান্য নামের ক্ষেত্রেও আসমাউল হুসনা প্রযোজ্য। -(হুজ্জাতুল্লাহ আল-বালিগাহ, দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ৭৭)
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান