মা'আরিফুল হাদীস

কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়

হাদীস নং: ২৯
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
আসমাউল হুসনা: আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ

সত্যিকার অর্থে আল্লাহ পাকের নাম বা তাঁর ইসমে যাত কেবল একটি আর তা হচ্ছে 'আল্লাহ'। অবশ্য তাঁর সিফাতী বা গুণবাচক নাম শত শত যা কুরআন শরীফ ও হাদীসসমূহে পাওয়া যায়। এগুলোকেই 'আসমাউল হুসনা' বলা হয়ে থাকে।

হাফিয ইব্‌ন হাজর আসকালানী সহীহ্ বুখারীর শরাহ বা ভাষ্যগ্রন্থ 'ফৎহুল বারী'তে ইমাম মুহাম্মদ জা'ফার সাদিক এবং সুফিয়ান ইব্‌ন উয়ায়না প্রমুখ উম্মতের শ্রেষ্ঠস্থানীয় কতিপয় বুযুর্গের প্রমুখাৎ বর্ণনা করেন, আল্লাহ তা'আলার নিরান্নব্বইটি নাম তো কেবল কুরআন মজীদেই উল্লেখিত হয়েছে। তাঁরা এর বিস্তারিত ও সুনির্দিষ্ট বিবরণও দিয়েছেন। তারপর হাফিয ইব্‌ন হাজর (র) তার মধ্য থেকে কিছু নাম সম্পর্কে পর্যালোচনা করে বলেন: এগুলো হুবহু কুরআন মজীদে ঐ সব শব্দে নেই, তবে বিভিন্ন ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হিসাবে সেগুলো সাজিয়ে নেয়া হয়েছে। এগুলো ছাড়াই নিরান্নব্বইটি নাম হুবহু কুরআন মজীদে রয়েছে। তিনি এগুলোর পূর্ণ তালিকাও দিয়েছেন, যা এ আলোচনার একটু পরেই পাঠক জানতে পারবেন।

আমাদের এ যুগেরই কোন কোন আলেম আল্লাহ তা'আলার আসমায়ে সিফাতী বা গুণবাচক নামসমূহ খুঁজে দুই শতাধিক নাম পেয়েছেন। এসব গুণবাচক নামে তাঁর বিভিন্ন বিশেষণেরই অভিব্যক্তি ঘটেছে। এগুলো তাঁর মা'রিফতের প্রবেশদ্বার স্বরূপ। সুতরাং আল্লাহ তা'আলার যিকিরের এও একটি বিশেষ বিশদ সূরত, বান্দা অত্যন্ত ভক্তি ও মহব্বতের সাথে এগুলোর মাধ্যমে যিকির করবে বা আল্লাহ তা'আলাকে স্মরণ করবে এবং এগুলোকে তার ওযীফা বা জপমালা বানিয়ে নেবে।
এ ভূমিকার পর এ সংক্রান্ত কয়েকখানা হাদীস নিম্নে প্রদত্ত হলো:
২৯. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: আল্লাহ তা'আলার নিরান্নব্বই অর্থাৎ এক কম একশ' নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি তা সংরক্ষিত বা কণ্ঠস্থ করলো এবং এগুলোর খেয়াল রাখলো, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -(সহীহ্ বুখারী ও সহীহ্ মুসলিম)
کتاب الاذکار والدعوات
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ لِلَّهِ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مِائَةً إِلَّا وَاحِدًا، مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الجَنَّةَ. (رواه البخارى ومسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বুখারী ও মুসলিম শরীফের রিওয়ায়াতে এতটুকুই আছে, এর কোন বিস্তারিত বিবরণ বা সুনির্দিষ্ট বয়ান নেই। অচিরেই ইনশাআল্লাহ তিরমিযী প্রমুখের রিওয়ায়াত উল্লেখ করা হবে যাতে বিশদভাবে নিরান্নব্বইটি নামের উল্লেখ থাকবে। হাদীসের ভাষ্যকার ও উলামাগণ এ ব্যাপারে প্রায় সর্ববাদী সম্মত মত পোষণ করেন যে, আল্লাহ তা'আলার পূত নামসমূহ এ নিরান্নব্বই সংখ্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। আর এগুলো তাঁর নামসমূহের পূর্ণাঙ্গ ফিরিস্তিও নয়। কেননা, খোঁজাখুঁজি ঘাটাঘাটি করলে এর চাইতে অনেক বেশি নামের সন্ধান পাওয়া যায়। এজন্যে হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বর্ণিত এ হাদীসের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, এর অর্থ ও মর্ম কেবল এতটুকুই যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার নিরানব্বই নাম কণ্ঠস্থ করবে এবং এগুলো খেয়াল রাখবে, সে জান্নাতে যাবে। অর্থাৎ কেবল নিরানব্বই নাম ধারণ করে রাখতে পারলেই সে এ সুসংবাদের যোগ্যপাত্র বলে বিবেচিত হবে।

হাদীসে পাকে مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ এর ব্যাখ্যা উলামা ও ভাষ্যকারগণ বিভিন্নরূপ বক্তব্য লিখেছেন।

একটি অর্থ এর এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, যে বান্দা আল্লাহর এ নামগুলোর মর্ম জেনে এবং তাঁর মা'রিফত হাসিল করে আল্লাহ তা'আলার এ গুণাবলীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলো, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, যে বান্দা এ পবিত্র নামগুলোর দাবি অনুযায়ী আমল করবে, সে জান্নাতে যাবে।

তৃতীয় একটি অর্থ বলা হয়ে থাকে এই যে, যে ব্যক্তি নিরান্নব্বই নামে আল্লাহকে স্মরণ করবে এবং এগুলোর সাহায্যে তাঁকে ডাকবে ও তাঁর কাছে দু'আ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
ইমাম বুখারী (র) مَنْ أَحْصَاهَا এর ব্যাখ্যা مَنْ حَفِظَهَا (যে তা কণ্ঠস্থ করলো) করেছেন। বরং এই হাদীসের কোন কোন রিওয়ায়াতে مَنْ أَحْصَاهَا -এর স্থলে مَنْ حفظها -ই বর্ণিত হয়েছে। এ জন্যে এ ব্যাখ্যাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ঐ একই কারণে এ অধম তর্জমাকালে এ অর্থ করেছে। এ হিসাবে হাদীসের অর্থ দাঁড়ায় এই যে, যে বান্দা বিশ্বাস ও ভক্তি সহকারে আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তাঁর নিরানব্বইটি পবিত্র নাম মুখস্থ করবে সে জান্নাতে যাবে। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান