মা'আরিফুল হাদীস

কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়

হাদীস নং: ২০
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
যিকিরের কালেমাসমূহ: সেগুলোর বরকত-ফযীলত
২০. উম্মুল মু'মিনীন হযরত জুয়াইরিয়া (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ একদা ফজরের সালাতান্তে তাঁর নিকট থেকে বেরিয়ে যান। তিনি তখন তাঁর সালাতের স্থানে বসে কিছু পড়ছিলেন। তারপর দীর্ঘক্ষণ পর চাশতের সময় হলে তিনি ফিরে আসলেন, তখনো তিনি পূর্ববৎ ওযীফা পাঠরত ছিলেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন: আমি যখন তোমার নিকট থেকে উঠে গিয়েছি তখন থেকেই কি একই অবস্থায় এক নাগাড়ে তুমি বসে রয়েছ? জবাবে তিনি বললেন: জ্বী হাঁ।

তখন নবী করীম ﷺ বললেন: তোমার নিকট থেকে যাওয়ার পর আমি তিনটি কালিমা চারবার পড়েছি। তুমি দিন ভর যা পড়েছো, তার সাথে এর ওজন করলে তার ওজন তা থেকে ভারী হবে।

সে কালিমাগুলো হচ্ছে:
১. সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী ২. আদাদা খালকিহী ৩. ও যিনাতা আরশিহী ৪. ও রিযা নাফসিহী ৫. ও মিদাদা কালিমাতিহী।
অর্থাৎ ১. আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা ও প্রশংসা করছি তাঁর সৃষ্টির সংখ্যা অনুপাতে ২. তাঁর আরশের ওজন অনুপাতে ৩. তাঁর সত্তার সন্তুষ্টি অনুযায়ী এবং তাঁর কালিমার সংখ্যা অনুপাতে।" (মুসলিম)
کتاب الاذکار والدعوات
عَنْ جُوَيْرِيَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ مِنْ عِنْدِهَا بُكْرَةً حِينَ صَلَّى الصُّبْحَ، وَهِيَ فِي مَسْجِدِهَا، ثُمَّ رَجَعَ بَعْدَ أَنْ أَضْحَى، وَهِيَ جَالِسَةٌ، فَقَالَ: «مَا زِلْتِ عَلَى الْحَالِ الَّتِي فَارَقْتُكِ عَلَيْهَا؟» قَالَتْ: نَعَمْ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " لَقَدْ قُلْتُ بَعْدَكِ أَرْبَعَ كَلِمَاتٍ، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، لَوْ وُزِنَتْ بِمَا قُلْتِ مُنْذُ الْيَوْمِ لَوَزَنَتْهُنَّ: سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ، عَدَدَ خَلْقِهِ وَرِضَا نَفْسِهِ وَزِنَةَ عَرْشِهِ وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ " (رواه مسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীসের দ্বারা জানা গেল যে, অধিক যিকির এর দ্বারা যেমন অধিক ছওয়াব হাসিল করা যায়, তেমনি তার একটি সহজ তরীকা বা পন্থা হলো তার সাথে এমন শব্দসমূহ জুড়ে দেয়া, যার দ্বারা সংখ্যার আধিক্য বুঝায়। যেমনটা উপরোক্ত দু'টি হাদীসে রাসূল ﷺ শিক্ষা দিয়েছেন।

এখানে একথা লক্ষ্যণীয় যে, কোন কোন হাদীসে স্বয়ং নবী করীম ﷺ বহুলভাবে যিকির করার প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন এবং সেই হাদীসও সামান্য আগে আমরা পড়ে এসেছি, যাতে তিনি দৈনিক একশবার সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী পাঠকারী তার পাপরাশি মোচনের সুসংবাদ শুনিয়েছেন। এজন্যে হযরত জুয়ায়রিয়া (রা)-এর বর্ণিত এ হাদীস এবং আরেক হাদীসের দ্বারা যিকিরের আধিক্যের ব্যাপারে তা নিষিদ্ধ হওয়া বা অপসন্দনীয় হওয়া বুঝে নেওয়া মোটেই ঠিক হবে না। উক্ত হাদীসের মর্ম হচ্ছে, যিকিরের দ্বারা অধিক ছওয়াব লাভের একটি সহজতর তরীকা হচ্ছে এটাও, বিশেষত যারা অধিক ব্যস্ততার কারণে আল্লাহর যিকিরের জন্যে বেশি সময় ব্যয় করতে পারেন না, তারা এ পদ্ধতিতেও অনেক ছওয়াব হাসিল করে নিতে পারেন।

হযরত শাহ্ ওলী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (র) এ ব্যাপারে বলেন, যে ব্যক্তি তাঁর বাতিনকে এবং তার জীবনকে যিকিরের রঙে অনুরঞ্জিত করতে আগ্রহী, বহুল পরিমাণে যিকির করা তার জন্যে অপরিহার্য। আর যিকির এর দ্বারা কেবল পারলৌকিক ছওয়াব হাসিল করাই যার উদ্দিষ্ট, তার উচিত এমন সব কালিমা যিকিরের জন্যে বেছে নেয়া, যা অর্থগত দিক থেকে উন্নততর ও প্রশস্ততর যেমনটি উপরের দু'টি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

অন্য এক হাদীসের দ্বারা একথাও জানা গেল যে, নবী করীম ﷺ-এর যুগে তসবীহ ব্যবহারের রেওয়াজ ছিল না ঠিক, তবে এ উদ্দেশ্যে কেউ কেউ খেজুর বীচি বা পাথর কণা ইত্যাদি ব্যবহার করেছেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁদেরকে তা করতে বারণ করেননি। বলাবাহুল্য, তাসবীহ এবং এ পন্থার মধ্যে কোনই প্রভেদ নেই। বরং তাসবীহ তারই উন্নততর সংস্করণ। যারা তাসবীহকে বেদ'আত বলে অভিহিত করেছেন, তাঁরা আসলে অহেতুক বাড়াবাড়ি করেছেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান