মা'আরিফুল হাদীস

কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়

হাদীস নং: ১৪
কিতাবুল আযকার ওয়াদ-দাওয়াত অধ্যায়
যিকিরের কালেমাসমূহ: সেগুলোর বরকত-ফযীলত

রাসূলুল্লাহ ﷺ যেভাবে যিকিরের উৎসাহ ও তাগিদ দিয়েছেন, ঠিক তেমনিভাবে তিনি তার বিশেষ বিশেষ কালিমাও শিক্ষা দিয়েছেন। তা না হলে এ আশঙ্কা পুরো মাত্রায় বিদ্যমান থাকতো যে, ইলম ও মা'রিফতের অভাবে অনেকে আল্লাহর যিকির এমনভাবে করতো, যা তাঁর শানের সাথে সামঞ্জস্যশীল হতো না। অথবা তাতে তাঁর স্তুতিবাদ না হয়ে বরং তাঁর অমর্যাদাই হতো। আরিফ রুমী তাঁর মছনবীতে হযরত মূসা (আ) ও জনৈক রাখালের যে কাহিনী বর্ণনা করেছেন, তাই এর একটি উদাহরণ।

রাসূলুল্লাহ ﷺ যিকিরের যে সব কালিমা শিক্ষা দিয়েছেন, তা অর্থের দিক থেকে নিম্নে বর্ণিত কোন না কোন প্রকারের:

১. আল্লাহ তা'আলার পবিত্রতার বর্ণনামূলক কালিমা- অর্থাৎ যে কালিমাসমূহের দ্বারা সমস্ত দোষ ও অপূর্ণতা থেকে আল্লাহ তা'আলার পবিত্র থাকার কথা বুঝানো হয়েছে। سُبْحَانَ اللّٰهِ (সুবহানাল্লাহ) বলতে ঠিক এ অর্থটিই বুঝানো হয়েছে। (অর্থাৎ এর মর্মার্থ হচ্ছে সমস্ত পূর্ণতা ও কৃতিত্ব আল্লাহ তা'আলার)।

২. তাতে আল্লাহ তা'আলার হামদ বা স্তুতিবাদ থাকবে (অর্থাৎ হামদ ও ছানা তথা স্তুতিবাদ তাঁরই জন্যে শোভা পায়।) اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদুলিল্লাহ)-এরও ঐ একই বৈশিষ্ট্য।

৩. তাতে আল্লাহ তা'আলার তাওহীদ বা একত্ববাদের শানের বর্ণনা থাকবে। لَا اِلٰهَ اِلَّا اللّٰهُ এর শান তাই।

৪. আল্লাহ তা'আলার সেই উচ্চ মর্যাদার বর্ণনা তাতে থাকবে যে, আমরা ইতিবাচক ও নেতিবাচকভাবে তাঁর সম্পর্কে যা কিছু জেনেছি বুঝেছি, তিনি তারও অনেক ঊর্ধ্বে। اللّٰهُ أَكْبَرُ (আল্লাহু আকবার)-এর মর্মার্থ এটাই।

৫. সে সব কালিমার মধ্যে এ সত্যের বহিঃপ্রকাশ থাকব যে, সবকিছু করার মালিক একমাত্র আল্লাহ তা'আলা। তাঁর হাতেই নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। তিনি ছাড়া আর কারো হাতে কোন ক্ষমতা নেই। সুতরাং তিনিই একথার হকদার যে, আমরা সর্বাবস্থায় তারই সাহায্য প্রার্থনা করি এবং তাঁরই উপর ভরসা করি। لَاَ حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ এর তাৎপর্য ও বৈশিষ্ট্য তা-ই।

এ জাতীয় যিকিরের কালিমাসমূহ ছাড়াও বিভিন্ন সময় ও বিভিন্ন প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন দু'আ নবী করীম ﷺ শিক্ষা দিয়েছেন। পরবর্তীতে এ সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা হবে ইনশাআল্লাহ।

পরবর্তী পৃষ্ঠাসমূহে উক্ত হাদীসসমূহে যিকিরের যে সমস্ত কালিমা রাসূলুল্লাহ ﷺ শিক্ষা দিয়েছেন, অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তা'আলার পবিত্রতা বর্ণনা ও মাহাত্ম্য ঘোষণার প্রেক্ষিতে এগুলো অবশ্য মু'জেযা স্থানীয়। এগুলোতে আল্লাহ তা'আলার পবিত্রতা, প্রশংসা, একত্ববাদ এবং তাঁর কিবরিয়াই ও সমদিয়তের এমন চমৎকার বর্ণনা রয়েছে যে, এগুলো যেন তাঁর মা'রিফতের তোরণদ্বার স্বরূপ।

এ সংক্ষিপ্ত ভূমিকা বর্ণনার পর এ সংক্রান্ত রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর কতিপয় বাণী নিম্নে পাঠ করুন।
১৪. হযরত সামুরা ইব্‌ন জুনদুব (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
চারটি কালিমা সর্বোত্তম:
১. সুবহানাল্লাহ ২. আলহামদুলিল্লাহ ৩. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ৪. আল্লাহু আকবর। (সহীহ্ মুসলিম)
کتاب الاذکار والدعوات
عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَفْضَلُ الْكَلَامِ أَرْبَعٌ سُبْحَانَ اللَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ. (رواه مسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীসের অপর এক বর্ণনায় افضل الكلام اربع স্থলে أحب الكلام إلى اللّٰه أربع রয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে সমস্ত কালিমার মধ্যে আল্লাহর নিকট প্রিয়তম কালিমা হচ্ছে এ চারটি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান