মা'আরিফুল হাদীস

সলাত অধ্যায়

হাদীস নং: ৩১৯
সলাত অধ্যায়
চোখের পানি বের হওয়া এবং অন্তরে ব্যথা অনুভব করা
৩১৯. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে আবু সাঈফ কর্মকারের কাছে গেলাম। তিনি নবী নন্দন হযরত ইব্রাহীম (রা)-এর ধাত্রী (মাওলা বিনত মুনযির)-এর স্বামী ছিলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ ইব্রাহীমকে (কোলে) নিলেন এবং চুম্বন করলেন ও ঘ্রাণ নিলেন। এরপর আরেকবার আমরা তাঁর নিকট গেলাম আর তখন ইব্রাহীম (রা)-এর ইন্তিকাল আসন্ন ছিল। এ সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দু'চোখ বেয়ে পানি ঝরছিল। তা দেখে আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা) (না বুঝে আশ্চর্য হয়ে) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনিও (কাঁদছেন)? তখন তিনি বললেন হে ইবনে আওফ! (এটা তো দোষের কিছু নয়) এটাতো দয়া। এরপর আবার তাঁর চোখ বেয়ে পানি ঝরছিল। এ সময় তিনি বললেন: চোখ পানি ঝরাচ্ছে এবং অন্তর দুঃখিত হচ্ছে। তথাপি আমি তাই প্রকাশ করছি যাতে আমরা প্রতিপালক সন্তুষ্ট থাকেন। তারপর তিনি বললেনঃ হে ইব্রাহীম! তোমার বিয়োগে আমরা শোকাভিভূত। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَنَسِ قَالَ : دَخَلْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أَبِي سَيْفٍ القَيْنِ ، وَكَانَ ظِئْرًا لِإِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ ، فَأَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِبْرَاهِيمَ ، فَقَبَّلَهُ ، وَشَمَّهُ ، ثُمَّ دَخَلْنَا عَلَيْهِ بَعْدَ ذَلِكَ وَإِبْرَاهِيمُ يَجُودُ بِنَفْسِهِ ، فَجَعَلَتْ عَيْنَا رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَذْرِفَانِ ، فَقَالَ لَهُ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : وَأَنْتَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ فَقَالَ : « يَا ابْنَ عَوْفٍ إِنَّهَا رَحْمَةٌ » ، ثُمَّ أَتْبَعَهَا بِأُخْرَى ، فَقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « إِنَّ العَيْنَ تَدْمَعُ ، وَالقَلْبَ يَحْزَنُ ، وَلاَ نَقُولُ إِلَّا مَا يَرْضَى رَبُّنَا ، وَإِنَّا بِفِرَاقِكَ يَا إِبْرَاهِيمُ لَمَحْزُونُونَ » (رواه البخارى ومسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আলোচ্য হাদীস থেকে পরিষ্কার জানা গেল যে, বৈষয়ক বিপদাপদ ও দুঃখ-কষ্টে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়তেন এবং দু'চোখ বেয়ে পানি ঝরত। নিঃসন্দেহে মানবসূলভগুণের পূর্ণরূপের অনিবার্য দাবি হচ্ছে, আনন্দ-খুশীর ব্যাপারে আনন্দিত হওয়া এবং দুশ্চিন্তা ও কষ্টদায়ক ব্যাপারে চিন্তিত ও বিষন্ন হয়ে পড়া। যদি কারো অবস্থান না হয়, তবে তা অপূর্ণতা, পূর্ণতা নয়।

হযরত মুজাদ্দিদ আলফসানী (র) মাকতুবাতের একস্থানে লিখেছেন: আমার জীবনে এমন একটি সময় অতিবাহিত হয় যে, আনন্দদায়ক বস্তুও আমাকে আনন্দ দিত না এবং কষ্টদায়ক বিষয়ও আমাকে ভাবিয়ে তুলত না। এ সময় আমি নবী করীম ﷺ এর সুন্নাতের অনুসরণের নিয়তে চেষ্টা করে আনন্দের ঘটনায় আনন্দ এবং কষ্টের ঘটনায় চিন্তিত হতে থাকলাম। এরপর আল্লাহর অসীম মেহেরবানীতে আমার পূর্বোক্ত অবস্থা কেটে যায়। তারপর আমার অবস্থা এরূপ হয়ে যায় যে, দুঃখ কষ্টের শিকার হলেই দুশ্চিন্তা আমাকে স্পর্শ করে, একইভাবে আনন্দের কোন বিষয়ের উদ্ভব হলে স্বাভাবিকভাবেই আমি আনন্দোৎফুল্ল হয়ে উঠি।

বিপদগ্রস্তের জন্য শোক ও সমবেদনা প্রকাশ মৃত্যু কিংবা এমনি ধরনের কোন ভয়াবহ বিপদের সময় কোন ব্যক্তি সান্ত্বনা দেওয়া, সমবেদনা প্রকাশ করা এবং তার দুশ্চিন্তা হালকা করার চেষ্টা করা মূলত মহোত্তম চরিত্রের অনিবার্য দাবি। রাসূলুল্লাহ ﷺ স্বয়ং এ বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দানের নির্দেশ দিয়েছেন এবং অন্যান্যদেরকেও অনুপ্রাণিত করেছেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান