মা'আরিফুল হাদীস

সলাত অধ্যায়

হাদীস নং: ২৮৯
সলাত অধ্যায়
মৃত্যুর স্মরণ এবং তার আকাঙক্ষা
২৮৯. হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ কামনা করে, আল্লাহ্ও তাঁর সাক্ষাৎ কামনা করেন। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ অপ্রিয় মনে করে, আল্লাহ্ও তাঁর সাক্ষাৎ অপ্রিয় মনে করেন। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « مَنْ أَحَبَّ لِقَاءَ اللَّهِ أَحَبَّ اللَّهُ لِقَاءَهُ ، وَمَنْ كَرِهَ لِقَاءَ اللَّهِ كَرِهَ اللَّهُ لِقَاءَهُ » (رواه البخارى ومسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রা.) বর্ণিত হাদীসখানা রাসূলূল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করলে উম্মুল মু'মিনীন হযরত আয়েশা (রা.) অথবা নবী ﷺ সহ ধর্মিনীদের অন্য কেউ বলেন, হে আল্লাহর নবী! আমাদের অবস্থান হল এই আমরা তো মৃত্যু অপসন্দ করি।

নবী কারীম ﷺ এর জবাবে যা বলেছেন তার সারমর্ম হল, আমার কথার উদ্দেশ্য এই নয় যে, মানুষ মৃত্যু কামনা করুক, কেননা মৃত্যু অপ্রিয় হওয়া মানুষের সহজাত ব্যাপার। বরং আমার কথার উদ্দেশ্য হল, মৃত্যুর পর মু'মিন ব্যক্তির উপর আল্লাহর যে দয়া অনুগ্রহ লাভ উদ্দেশ্য যা মৃত্যুর সময় তার কাছে প্রকাশিত হয়ে পড়ে তা যেন সে প্রিয় মনে করে এবং তা পাওয়ার জন্য আগ্রহী হয়। যার অবস্থা এরূপ আল্লাহ্ তাকে পসন্দ করেন এবং তার সাক্ষাৎ কামনা করেন। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি মন্দকাজসমূহ আঞ্জাম দেওয়ায় আল্লাহর ক্রোধ ও শাস্তির উপযুক্ত, মৃত্যুর সময় তাকে তার পরিণাম সম্পর্কে অবহিত করা হয়। তাই যে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হওয়াকে অপ্রিয় মনে করে এবং নিজের জন্য কঠিন বিপদ মনে করে। এরূপ ব্যক্তির সাক্ষাৎ আল্লাহ্ চান না, বরং তাকে অপসন্দ করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বাণী لقاء الله দ্বারা মৃত্যু উদ্দেশ্য নয় বরং মৃত্যু পরবর্তী সময়ে বান্দার সাথে আল্লাহর যে আচরণ হবে তা-ই বুঝানো হয়েছে। একই বিষয়ের উপর বর্ণিত আয়েশা (রা.) এর হাদীসের শেষাংশে উল্লিখিত হয়েছে যে, الْمَوْتُ قَبْلَ لقاء الله "মৃত্যু হল আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের পূর্ব ঘটনা।"

হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ (র.) এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, যখন মানুষের এই দুনিয়া ছেড়ে আখিরাতের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাবার সময় কাছাকাছি এসে পড়ে তখন পাশবিকতা ও জড় জগতের গাঢ় পর্দা ছিন্ন হয়ে যায় এবং আত্মার কাছে আখিরাত স্পষ্ট হয়ে উঠে। ঐ সময় নবী-রাসূলগণ বর্ণিত আখিরাতের হাকীকত ও অদৃশ্য জগতের বিষয়াবলী তার সামনে ফুটে উঠে। এসময় মু'মিন ব্যক্তির আত্মা যা সর্বদা পাশবিকতার দাবি নিয়ন্ত্রণ করে ফিরিশতাসুলভ গুর্ণাবলী অর্জনে সচেষ্ট থাকত, সে আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া দেখে তাড়াতাড়ি আখিরাতের জগতে প্রবেশের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আত্মপূজায় এবং পাশবিকতার মাঝে আকণ্ঠ নিয়জ্জিত থেকে দুনিয়ার স্বাদ আস্বাদনে ব্যস্ত ছিল, সে মৃত্যুর সময় তার মৃত্যু পরবর্তী জীবনের অবস্থা প্রত্যক্ষ করে। ফলে সে কোনভাবে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে চায় না। শাহওয়ালী উল্লাহ্ (র.) বলেন, এই দুই ব্যক্তির অবস্থাকেই أحب لقاء الله এবং كره لقاء الله বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আব أحب لقائه এবং كره لقائه দ্বারা উদ্দেশ্য হল যথাক্রমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অসন্তুষ্টি, পুরস্কার ও তিরস্কার, সাওয়াব ও আযাব।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান