মা'আরিফুল হাদীস

সলাত অধ্যায়

হাদীস নং: ২৮৭
সলাত অধ্যায়
জানাযার সালাত এবং তার আগে ও পরে করণীয়
হাদীস বিশারদগণ সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী সালাত অধ্যায়ের শেষে জানাযা অধ্যায় সন্নিবেশিত করে তার অধীনে মৃত্যু, মৃত্যুশয্যার রোগ বরং সাধারণ রোগ ব্যাধি ও তখনকার করণীয় বিষয় আলোচনা করেন। এর পর মৃতর গোসল, দাফন-কাফন, জানাযার সালাত, শোকপ্রকাশ, কবর যিয়ারত ইত্যাদি বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত হাদীসসমূহ বর্ণনা করেন। এই নিয়মের অনুসরণে এখানে এ সকল বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর বাণী ও আমলসমূহ আলোচনা করা হয়েছে। এসব হাদীসের সারকথা হল, মৃত্যু অবশ্যাম্ভাবী এবং তার কোন নির্ধারিত সময় নেই। কাজেই মৃত্যুর ব্যাপারে কোন মুসলমানের অচেতন থাকা উচিত নয়, সর্বদা তা স্মরণ রাখা এবং আখিরাতের এই সফরের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। বিশেষতঃ যখন কেউ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে তার নিজ দীনী ও ঈমানী অবস্থা সংশোধন করে নেয়া উচিত। এবং আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের লক্ষ্যে অধিক মনোযোগী হওয়া উচিত। একজন রোগাক্রান্ত হলে অপরজনের সেবা শুশ্রূষা ও সমবেদনা প্রকাশ করে তার চিন্তা হালকা করা উচিত এবং তার মনোরজ্ঞনেরও সাধ্যমত চেষ্ট করা উচিত। রোগ মুক্তির লক্ষ্যে আল্লাহর নাম নিয়ে তার জন্য দু'আ করে তার দেহে ফুঁক দেওয়া উচিত, সাওয়াব লাভ করা যায় এমন কথা বলা এবং আল্লাহর শান ও রহমতের আলোচনা তার সামনে করা উচিত। তবে বিশ্বাস জন্মে যে, রোগী সুস্থ হবে না এবং মুত্যু অত্যাসন্ন এমতাবস্থায় তার অন্তর আল্লাহ্ অভিমুখী করা এবং ঈমানের কালেমা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার যথোচিত পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। তার পর মারা গেলে মৃতের নিকটাত্মীয়দের ধৈর্যধারণ করা উচিত, এবং মৃত্যু সহজাত ব্যাপার, একে আল্লাহর ফয়সালা মনে করে তাদের মাথা আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঝুঁকিয়ে দেয়া উচিত, এরূপ দুঃখ-কষ্টের বিনিময়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাওয়াব প্রাপ্তির আশা করা এবং মৃতের জন্য দু'আ করা উচিত। এরপর মৃতের গোসলের ব্যবস্থা করা কর্তব্য। তাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাফন পরানো এবং সুগন্ধি ব্যবহার করানো চাই। এরপর তার জানাযার সালাত আদায় করে নিতে হবে এবং তাতে আল্লাহর তাসবীহ্ ও প্রশংসা, তাঁর মাহাত্ম্যের স্বীকৃতি এবং উম্মাতের (মৃত ব্যক্তিসহ সকল মু'মিনের) পথ প্রদর্শনকারী আল্লাহর নবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর জন্য রহমতের দু'আ করতে হবে। এসবের পর মৃতের জন্য আল্লাহর দয়া অনুগ্রহ কামনা করে দু'আ করা উচিত। এরপর অত্যন্ত সম্মানের সাথে তাকে মাটির মধ্যে রেখে দিতে হবে, যে মাটির অংশ দ্বারা তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তারপর মৃতের শোক সন্তপ্ত নিকটাত্মীয়-স্বজনের সমবেদনা প্রকাশ করা উচিত এবং তাদের সান্ত্বনা দিয়ে দুশ্চিন্তা লাঘবের চেষ্টা করা উচিত।

উল্লিখিত বিষয়গুলোর রহস্য পরিষ্কার, অভিজ্ঞতার নিরিখে দেখা গেছে যে, সাধারণ রোগ-ব্যাধি এবং অপরাপর বিপদের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রদর্শিত কার্যক্রম অনুযায়ী কাজ করা হলে অন্তরে স্বস্তি ও শান্তি ফিরে আসে। তাঁর দেওয়া প্রতিটি শিক্ষা ও নির্দেশনা অন্তরে প্রভাব বিস্তার করে দুঃখ-কষ্ট দূরীকরণের ক্ষেত্রে ঔষধরূপে কাজ করে। মৃত্যু আল্লাহর সাক্ষাতের মাধ্যম হওয়ায় তা একজন বান্দার অভিপ্রেত ব্যাপার হয়ে যায়। এগুলো দুনিয়ারী বরকতের সাথে সংশ্লিষ্ট। আখিরাতের বিষয়সমূহ ইনশাআল্লাহ্ সামনে আসবে যা প্রাপ্তি অঙ্গীকার পরবর্তী হাদীসসমূহে করা হয়েছে। এই ভূমিকার পর এ পর্যায়ে কতিপয় হাদীস পাঠ করা যেতে পারে।

মৃত্যুর স্মরণ এবং তার আকাঙক্ষা
২৮৭. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: সকল সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিধ্বংসী মৃত্যুর কথা তোমরা বেশি বেশি স্মরণ করবে। (তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَكْثِرُوا مِنْ ذِكْرِ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ المَوْتِ. (رواه الترمذى والنسائى وابن ماجه)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান