মা'আরিফুল হাদীস

সলাত অধ্যায়

হাদীস নং: ২১৯
সলাত অধ্যায়
চাশত অথবা ইশরাকের সালাত

এশা থেকে ফজর পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়ে কোন ফরয সালাত নেই। তাই নবী কারীম ﷺ এই সময়ের মধ্যে কয়েক রাক'আত তাহাজ্জুদ সালাত আদায়ের জন্য উৎসাহ দান করেছেন। একইভাবে ফজর থেকে শুরু করে যুহর পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময়ে কোন ফরয সালাত নেই। কাজেই এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে কমপক্ষে দুই কিংবা তাতোধিক রাক'আত সালাতুদ-দুহা বা চাশতের সালাত আদায় করার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। যদি সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ পরেই এই সালাত আদায় করা হয়, তবে তাকে ইশরাক এবং সূর্যের আলো খানিকটা উপরে উঠার পর আদায় করা হলে তাকে 'চাশত' বলা হয়।

হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ্ (র) এ সালাতের হিকমত বর্ণনা প্রসঙ্গে যা লিখেছেন তার সারমর্ম নিম্নরূপ "আরবদের নিকট ফজর থেকে দিনের সূচনা হয় এবং তাকে তারা চার প্রহরের প্রথম প্রহর বলে। আল্লাহর হিকমতের দাবী হচ্ছে, এই প্রহরের কোন প্রহর যেন সালাতবিহীন না কাটে এই জন্যই প্রথম প্রহরের শুরুতে ফজর সালাত ফরয করা হয়েছে এবং তৃতীয় ও চতুর্থ প্রহরে যথাক্রমে যুহর ও আসরের সালাত আদায় করা হয় এবং দ্বিতীয় প্রহরে মানুষ যেহেতু জীবিকা অন্বেষণে ব্যাপৃত থাকে তাই সে সময়কে ফরয সালাত মুক্ত রাখা হয়েছে। এসময়ের মধ্যে নফল ও মুস্তাহাবরূপে চার সালাত রাখা হয়েছে। এর ফযীলাত ও বরকত বর্ণনা করে তা আদায়ের ব্যাপারে সবিশেষ অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। যে ব্যক্তি তার প্রচণ্ড ব্যস্ততার নিগড় থেকে বেরিয়ে এসে ঐ সময়ে কয়েক রাক'আত সালাত আদায় করবে তার জন্য সফলতা অনিবার্য।

চাশতের সালাত কমপক্ষে দুই রাক'আত আদায় করা চাই। তবে চার কিংবা আট রাক'আত আদায় করা আরো উত্তম। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা)
এই ভূমিকার পর চাশতের সালাত সম্পর্কীয় নিম্নোক্ত হাদীসসমূহ পাঠ করা যেতে পারে।
২১৯. হযরত আবূ যার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: ভোর হওয়া মাত্র তোমাদের প্রত্যেকের প্রতিটি গ্রন্থির জন্য (সুস্থভাবে উঠা আল্লাহর শুকুর স্বরূপ) একটি করে সাদাকা (সাওয়াবের কাজ করা আবশ্যক। সাওয়াবের তালিকা দীর্ঘ) তোমাদের প্রত্যেক 'সুবহানাল্লাহ্' বলাই একটি সাদাকা, প্রত্যেক 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু' বলাই একটি সাদাকা, প্রত্যেক 'আল্লাহু আকবার' বলাই একটি সাদাকা, সৎকাজের আদেশ দান একটি সাদাকা এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করাও একটি সাদাকা। তবে চাশতের সময় দুই রাক'আত সালাত আদায় করা ঐ শোকর আদায়ের জন্য যথেষ্ট। (মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « يُصْبِحُ عَلَى كُلِّ سُلَامَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ ، فَكُلُّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةٌ ، وَكُلُّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ ، وَكُلُّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ ، وَكُلُّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ ، وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ ، وَنَهْيٌ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ ، وَيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى » (رواه مسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

প্রত্যেকের প্রতিটি গ্রন্থির পক্ষে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য একটি করে দান সাদাকা করা আবশ্যক। তবে চাশতের দুই রাক'আত সালাত এ সবের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হতে পারে। আল্লাহ্ তা'আলা এই সাধারণ শোকরকে প্রত্যেক গ্রন্থির পক্ষ থেকে কবুল করে নিবেন। সম্ভবত এর কারণ এই যে, সালাত এমন একটি ইবাদাত যা আদায় করতে মানুষের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও গ্রন্থিসমূহ বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ দিক থেকে অংশগ্রহণ করে থাকে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান