মা'আরিফুল হাদীস
সলাত অধ্যায়
হাদীস নং: ১৭৯
সলাত অধ্যায়
সালামের পর যিকর ও দু'আ
১৭৯. হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতে সালাম ফিরিয়ে এই দু'আ: اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلامُ وَمِنْكَ السَّلَامَ تَبَارَكْتَ يَا ذَالْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ পাঠ করতে যে টুকু সময় লাগত তার চাইতে বেশি সময় বসতেন না। (মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا ، قَالَتْ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِذَا سَلَّمَ لَمْ يَقْعُدْ إِلَّا مِقْدَارَ مَا يَقُولُ : « اللهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ » (رواه مسلم)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হযরত আয়েশা (রা) এর বর্ণিত হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাম ফিরানোর পর কেবল اللَّهُمَّ أَنْتَ……. الخ এই সংক্ষিপ্ত দু'আ পাঠ করার সময় পর্যন্ত বসতেন। তার পর তাড়াতাড়ি উঠে যেতেন। কিন্তু উপরে যে সব হাদীস বর্ণিত হয়েছে তা থেকে বুঝা যায় যে, তিনি সালাম ফিরানোর পর উক্ত সংক্ষিপ্ত দু'আ পাঠ করার পরে আরো বিভিন্ন শব্দগুচ্ছ সম্বলিত দু'আ পাঠ করতেন এবং অন্যান্যদেরকে উৎসাহিত করতেন।
কোন কোন মনীষী এই প্রশ্নের সমাধান এভাবে দিয়েছেন যে, পূর্বোক্ত হাদীস اللَّهُمَّ أَنْتَ……. الخ ব্যতীত আল্লাহ্ তা'আলার প্রশংসা গুণকীর্তন তাওহীদ ও বড়ত্ব সম্বলিত যেসব দু'আর কথা উল্লিখিত হয়েছে সে সম্পর্কে তারা বলেছেন, নবী কারীম ﷺ সালাম ফিরানোর সাথে সাথে এগুলো পাঠ করতেন না, বরং সুন্নাত ও অপরাপর সালাত আদায়ের পর সব দু'আ পাঠ করতেন এবং অন্যান্যদেরকে এসময়ে পাঠ করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন।
তবে প্রকৃত ব্যাপার হল এই যে, উপরে যে সব হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলোর বাহ্যিক অর্থ দাড়ায় যে, নবী কারীম ﷺ সালাম ফিরানোর সাথে সাথে এই দু'আ ও যিকর করতেন এবং অন্যান্যদেরকেও এরূপ করার শিক্ষা দিয়েছেন। এপর্যায়ে এই অধমের নিকট সঠিক দিক নির্দেশনা হল তা-ই যা হযরত শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ (র) 'হুজুতুল্লাহিল বালিগা' গ্রন্থে বিবৃত করেছেন। তিনি সালামের পর উপরে বর্ণিত যাবতীয় দু'আর বরাত দান শেষে হাদীসের কিতাব সমূহের সূত্র ধরে বলেছেন: এ সকল দু'আ ও যিকর আযকার সালাম ফিরানোর পর সাথে সাথে সুন্নাত সালাতের পূর্বেই পাঠ করা উচিত। কেননা এ বিষয় হাদীসসমূহে প্রকাশ্য বর্ণনা রয়েছে এবং কোন কোন শব্দগুচ্ছের দাবীত্ত এটাই।
হযরত আয়েশা (রা) বর্ণিত হাদীস থেকে জানা যায় যে اللَّهُمَّ أَنْتَ….. الخ পাঠ করতে যতটুকু সময় লাগে নবী কারীম ﷺ কেবল ততটুকু সময় বসতেন। একথার কয়েকটি ব্যাখ্যার সম্ভাবনা রাখে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে হযরত আয়েশা (রা) বর্ণিত হাদীসের তাৎপর্য হল, সালাম ফিরানোর পর তিনি সালাতরত অবস্থায় বসে থাকা পর্যন্ত কেবল উক্ত দু'আ পাঠ করার সময় পর্যন্ত বসতেন। তারপর তিনি ডান কিংবা বাম দিক কিংবা মুক্তাদীদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেন। এও বলা যেতে পারে যে, হযরত আয়েশা (রা) বর্ণিত হাদীসে যে তথ্য পরিবেশিত হয়েছে তা তাঁর সব সময়ের আমল ছিলনা বরং কখনো এরূপ হতো যে, তিনি সালাম ফিরানোর পর لا إِلهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ পাঠ করে উঠে যেতেন। তিনি সম্ভবত এরূপ এজন্য করতেন যেন লোকেরা তাঁর আমল সম্পর্কে জানতে পারে যে, সালামের পর এসব বাক্য পাঠ করা ফরয ওয়াজিব কিছু নয়। বরং তা মুস্তাহাব কিংবা নফল পর্যায়ের ইবাদত।
জ্ঞাতব্য: সালামের পর যিকর ও দু'আ সম্পর্কিত যে সব হাদীস পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে তা থেকে জানা যায় যে সালামের পর যিকর ও দু'আর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজেও আমল করতেন এবং অন্যদেরও উৎসাহিত করতেন। এটা অস্বীকার করার অবকাশ নেই। তবে সালামের পর মুক্তাদীগণও যে ইমামের অনুসরণে বাধ্য থাকার যে প্রথা চালু হয়েছে, যার ফলে কোন প্রয়োজনেও ইমামের পূর্বে কারো উঠে চলে যাওয়াকে খারাপ মনে করা হয়, এটা একটা ভিত্তিহীন প্রথা এবং এটা সংশোধনযোগ্য বিষয়। সালাম ফেরানোর সাথে সাথে ইমামের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়, তাই সালামের পরের দু'আতে ইমামের অনুসরণ করা আবশ্যকীয় নয়। ইচ্ছা করলে কেউ সংক্ষিপ্ত দু'আ করে ইমামের পূর্বেই উঠে চলে যেতে পারে অথবা ইচ্ছা করলে নিজের আবেগ অনুভুতি অনুযায়ী দীর্ঘক্ষণ দু'আ করতে পারে। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ১২)
কোন কোন মনীষী এই প্রশ্নের সমাধান এভাবে দিয়েছেন যে, পূর্বোক্ত হাদীস اللَّهُمَّ أَنْتَ……. الخ ব্যতীত আল্লাহ্ তা'আলার প্রশংসা গুণকীর্তন তাওহীদ ও বড়ত্ব সম্বলিত যেসব দু'আর কথা উল্লিখিত হয়েছে সে সম্পর্কে তারা বলেছেন, নবী কারীম ﷺ সালাম ফিরানোর সাথে সাথে এগুলো পাঠ করতেন না, বরং সুন্নাত ও অপরাপর সালাত আদায়ের পর সব দু'আ পাঠ করতেন এবং অন্যান্যদেরকে এসময়ে পাঠ করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন।
তবে প্রকৃত ব্যাপার হল এই যে, উপরে যে সব হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলোর বাহ্যিক অর্থ দাড়ায় যে, নবী কারীম ﷺ সালাম ফিরানোর সাথে সাথে এই দু'আ ও যিকর করতেন এবং অন্যান্যদেরকেও এরূপ করার শিক্ষা দিয়েছেন। এপর্যায়ে এই অধমের নিকট সঠিক দিক নির্দেশনা হল তা-ই যা হযরত শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ (র) 'হুজুতুল্লাহিল বালিগা' গ্রন্থে বিবৃত করেছেন। তিনি সালামের পর উপরে বর্ণিত যাবতীয় দু'আর বরাত দান শেষে হাদীসের কিতাব সমূহের সূত্র ধরে বলেছেন: এ সকল দু'আ ও যিকর আযকার সালাম ফিরানোর পর সাথে সাথে সুন্নাত সালাতের পূর্বেই পাঠ করা উচিত। কেননা এ বিষয় হাদীসসমূহে প্রকাশ্য বর্ণনা রয়েছে এবং কোন কোন শব্দগুচ্ছের দাবীত্ত এটাই।
হযরত আয়েশা (রা) বর্ণিত হাদীস থেকে জানা যায় যে اللَّهُمَّ أَنْتَ….. الخ পাঠ করতে যতটুকু সময় লাগে নবী কারীম ﷺ কেবল ততটুকু সময় বসতেন। একথার কয়েকটি ব্যাখ্যার সম্ভাবনা রাখে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে হযরত আয়েশা (রা) বর্ণিত হাদীসের তাৎপর্য হল, সালাম ফিরানোর পর তিনি সালাতরত অবস্থায় বসে থাকা পর্যন্ত কেবল উক্ত দু'আ পাঠ করার সময় পর্যন্ত বসতেন। তারপর তিনি ডান কিংবা বাম দিক কিংবা মুক্তাদীদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেন। এও বলা যেতে পারে যে, হযরত আয়েশা (রা) বর্ণিত হাদীসে যে তথ্য পরিবেশিত হয়েছে তা তাঁর সব সময়ের আমল ছিলনা বরং কখনো এরূপ হতো যে, তিনি সালাম ফিরানোর পর لا إِلهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ পাঠ করে উঠে যেতেন। তিনি সম্ভবত এরূপ এজন্য করতেন যেন লোকেরা তাঁর আমল সম্পর্কে জানতে পারে যে, সালামের পর এসব বাক্য পাঠ করা ফরয ওয়াজিব কিছু নয়। বরং তা মুস্তাহাব কিংবা নফল পর্যায়ের ইবাদত।
জ্ঞাতব্য: সালামের পর যিকর ও দু'আ সম্পর্কিত যে সব হাদীস পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে তা থেকে জানা যায় যে সালামের পর যিকর ও দু'আর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজেও আমল করতেন এবং অন্যদেরও উৎসাহিত করতেন। এটা অস্বীকার করার অবকাশ নেই। তবে সালামের পর মুক্তাদীগণও যে ইমামের অনুসরণে বাধ্য থাকার যে প্রথা চালু হয়েছে, যার ফলে কোন প্রয়োজনেও ইমামের পূর্বে কারো উঠে চলে যাওয়াকে খারাপ মনে করা হয়, এটা একটা ভিত্তিহীন প্রথা এবং এটা সংশোধনযোগ্য বিষয়। সালাম ফেরানোর সাথে সাথে ইমামের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়, তাই সালামের পরের দু'আতে ইমামের অনুসরণ করা আবশ্যকীয় নয়। ইচ্ছা করলে কেউ সংক্ষিপ্ত দু'আ করে ইমামের পূর্বেই উঠে চলে যেতে পারে অথবা ইচ্ছা করলে নিজের আবেগ অনুভুতি অনুযায়ী দীর্ঘক্ষণ দু'আ করতে পারে। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ১২)
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)