মা'আরিফুল হাদীস

সলাত অধ্যায়

হাদীস নং: ১১১
সলাত অধ্যায়
সালাতে কিরা'আত পাঠ
কিয়াম, রুকু ও সিজদার ন্যায় কিরা'আত পাঠও সালাতের অপরিহার্য মৌলিক বিষয়। আর তা কিয়াম অবস্থায় পাঠ করা হয়। একথা সর্বজন বিদিত যে, কিরা'আতের বিন্যাস হচ্ছে এরূপ: তাকবীরে তাহরীমা বলার পর হামদ-সানা, আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা এবং নিজ দাসত্ব প্রকাশের কোন বিশেষ পূর্বোল্লিখিত তিন মাসূরা দু'আর কোন একাটি দু'আ করে আল্লাহর সমীপে নিজকে পেশ করতে হবে। এর পর কুরআন মাজীদের সর্বপ্রথম সূরা আল-ফাতিহা পাঠ করতে হবে যাতে আল্লাহর গুণ কীর্তন বর্ণনার পাশাপাশি তাঁর গুণবাচক নাম এবং বিশেষ অর্থবোধক বাক্যমালা স্থান পেয়েছে। এতে সর্ববিধ শিরক অস্বীকার করে তাওহীদের স্বীকৃতি রয়েছে। সিরাতে মুস্তাকীম তথা সরল প্রতিষ্ঠিত পথ প্রাপ্তির লক্ষ্যে বিনয় ও নম্রভাব প্রকাশ করে আবেদন করা হয়েছে। মোটকথা, সালাতে সর্বদা এ সূরা (আল-ফাতিহা) পাঠ করা হয়। এ সূরায় আল্লাহর বিশেষ মাহাত্ম্য ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থান পাওয়ায় এ সূরার পাঠ আবশ্যিক করা হয়েছে। এও বলা হয়েছে যে, এ সূরা ব্যতীত সালাত (পূর্ণাঙ্গ) হয় না। এ সূরা পাঠের পর মুসল্লীকে এমর্মে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সে যেন এ সূরার সাথে অন্য কোন সূরা কিংবা কুরআন মাজীদের কয়েকটি আয়াত পাঠ করে নেয়। কেননা তাতে তার হিদায়াতের কোন না কোন দিক নির্দেশনা অবশ্যই থাকবে। হয়ত বা তাতে আল্লাহর তাওহীদ ও তাঁর গুণাবলীর বর্ণনা স্থান পাবে অথবা আখিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম, সৎকাজ ও অসৎকাজের পুরষ্কার ও শাস্তির বিষয় স্থান পাব অথবা বাস্তব জীবনের সাথে সম্পৃক্ত কোন বিষয়ের আলোচনা থাকবে অথবা কোন শিক্ষণীয় বিষয় স্থান পাবে। মোদ্দাকথা, পাঠকের জন্য কোন না কোন নির্দেশনা অবশ্যই থাকবে। এ যেন আল্লাহর পক্ষ থেকে হিদায়ত প্রাপ্তির দু'আর اهدنا الصراط المستقيم তাৎক্ষণিক জবাব যা তার মুখ থেকে বেরুচ্ছে। অনুরূপভাবে দ্বিতীয় রাকা'আতে সূরা ফাতিহা পাঠের পর কোন না কোন সূরা অথবা আয়াত পাঠ করা হবে। সালাত যদি তিন অথবা চার রাক'আত বিশিষ্ট হয় তবে তৃতীয় ও চতুর্থ রাক'আতে অবশ্যই সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে। কিন্তু এর সাথে অন্য কোন সূরা মিলানোর কোন প্রয়োজন নেই এ কেবল ফরয সালাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সুন্নাত বা নফল সালাতের সকল রাক'আতে সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা কিংবা আয়াত পাঠ করা জরুরী।

এ ভূমিকা পাঠের পর নিম্নোক্ত হাদীসসমূহ পাঠ করা যাক, যার মধ্যে কতিপয় হাদীসে সালাতে কিরা'আত সম্পর্কিত বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বাণী স্থান পেয়েছে। এর চাইতে বড় কথা হল, সালাতে কিরা'আত পাঠের বিষয়ে তাঁর আমলের বর্ণনা স্থান পেয়েছে, কোন্ সালাতে তিনি কী পরিমাণ কিরা'আত পাঠ করতেন এবং কোন্ কোন্ সূরা তিনি বেশি বেশি পাঠ করতেন তাও স্থান পেয়েছে।
১১১. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: কিরা'আত ছাড়া সালাত আদায় হয় না। আবূ হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যে সালাতে জোরে কিরা'আত পাঠ করেছেন, তোমাদের জন্য আমরা তা জোরে আদায় করি এবং যে সালাতে চুপিচুপি কিরা'আত পাঠ করেছেন আমরাও তোমাদের জন্য তা চুপিচুপি আদায় করি। (মুসলিম)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : « لَا صَلَاةَ إِلَّا بِقِرَاءَةٍ » قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ : « فَمَا أَعْلَنَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَعْلَنَّاهُ لَكُمْ ، وَمَا أَخْفَاهُ أَخْفَيْنَاهُ لَكُمْ » (رواه مسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এই হাদীসে সালাতে কোন নির্দিষ্ট সূরা পাঠের বিষয় উল্লিখিত হয়নি বরং সাধারণভাবে কিরা'আত পাঠকে সালাতের রুকন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। হাদীসের বর্ণনাকারী হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যে সব সালাতে এবং যে সব রাক'আতে জোরে কিরা'আত পাঠ করতেন, আমরাও সে সব সালাতে ও রাক'আতে জোরে কিরা'আত পাঠ করি এবং যেসব সালাতে ও রাক'আতে তিনি চুপিচুপি কিরা'আত পাঠ করতেন, আমরাও সেসব সালাতে ও রাক'আতে চুপিচুপি কিরা'আত পাঠ করি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান