মা'আরিফুল হাদীস
সালাত অধ্যায়
হাদীস নং: ৫০
সালাত অধ্যায়
আযানের উত্তর এবং তার পরবর্তী দুআ
৫০. হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: যে ব্যক্তি আযান শুনে বলে, হে আল্লাহ্! এই পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠত সালাতের তুমিই প্রভু। হযরত মুহাম্মদ ﷺ কে দান কর সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মানিত স্থান এবং তাঁকে তোমার প্রতিশ্রুত প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত কর"- কিয়ামতের দিন তার জন্য আমার শাফা'আত অবধারিত হবে। (বুখারী)
کتاب الصلوٰۃ
عَنْ جَابِرٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ : اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ ، وَالصَّلاَةِ القَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الوَسِيلَةَ وَالفَضِيلَةَ ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ ، حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِي يَوْمَ القِيَامَةِ " (رواه البخارى)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
আলোচ্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্য তিনটি দু'আর বিষয় উল্লেখিত হয়েছে এবং বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি আযান শুনার পর উল্লিখিত তিনটি বিষয় রাসূলুল্লাহ ﷺ কে দান করার জন্য আল্লাহর কাছে দু'আ করবে সে নির্ঘাত কিয়ামতের দিন মুহাম্মদ ﷺ এর শাফা'আত লাভ করবে। তিনটি বিষয় হলো- (১) ওয়াসীলা (২) ফাযীলাহ এবং (৩) মাকামে মাহমুদ। সহীহ্ মুসলিমের এক হাদীসে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ সূত্রে ওয়াসীলার ব্যাখ্যা বর্ণিত হয়েছ। ওয়াসীলা হলো, আল্লাহর প্রেমের এক বিশেষ মাকাম ও মর্যাদার স্থান এবং জান্নাতের একটি অনন্য মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান। আর তা কেবল তাঁর একজন বান্দারই ভাগ্যে জুটবে। ফাযীলাহও একটি বিশেষ মাকাম। মাকামে মাহমূদ হচ্ছে এমন সম্মানজনক মাকাম যিনি এতে ধন্য হবেন, তিনি হবেন একজন প্রশংসিত ও সম্মানিত ব্যক্তি এবং সবাই তাঁর গুণ-কীর্তনে ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে সততঃ মশগুল থাকবে।
এ পর্যায়ে মা'আরিফুল হাদীসের প্রথম খণ্ডে শাফা'আতের বর্ণনায় সবিস্তার আলোচনা স্থান পেয়েছে। সে হাদীসে বলা হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন হবে এমনই একটি দিন যাতে আল্লাহ্ তাঁর মাহাত্ম্য ও শক্তিমত্তা নিয়ে প্রকাশিত করেন এবং বিশ্ব মানবতা নিজ নিজ আমল বিভিন্ন অবস্থা নিয়ে অস্থির থাকবে, এমনকি হযরত নূহ, ইব্রাহীম, মূসা, ঈসা (আ) প্রমুখ নবী-রাসূলগণও তখন কোন বিষয়ে আরযি পেশ করার সাহস পাবেন না। নবীগণের দলপতি হযরত মুহাম্মদ তখন বলবেন: হে মহান বিচারকদের শ্রেষ্ঠ বিচারক! আমি এর জন্য প্রস্তুত, বলে গোটা মানব জাতির জন্য হিসাব ও শাফা'আতের লক্ষ্যে এগিয়ে আসবেন। তিনি পাপীদের সুপারিশ করার এবং জাহান্নামীদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানানোর ক্ষেত্রে হবে পথিকৃৎ। তিনি নিজেই ইরশাদ করেন: "আমিই হব সর্বপ্রথম শাফা'আতকারী এবং আমার শাফা'আতই সর্বাগ্রে গ্রহণ করা হবে।" তিনি আরো বলেছেন: "কিয়ামতের দিন আমি হব প্রশংসার পতাকাবাহী। আদম (আ) থেকে শুরু করে সবাই আমার পতাকা (লেওয়াহে হামদের) নিচে সমবেত হবে, কিন্তু এতে আমার বিন্দুমাত্র গর্ব নেই।"
বলাবাহুল্য, এ-ই হচ্ছে মাকামে মাহমূদ যে বিষয় কুরআনে রাসূলুল্লাহ ﷺ সম্পকে ইরশাদ হয়েছে: عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا "আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রশংসিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।” (১৭, সূরা বানী ইসরাঈল: ৭৯)
হাদীসে এই একান্ত বিশেষ মর্যাদাকে ওয়াসীলা নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হাদীসে যাকে ওয়াসীলা ও ফাযীলাহ্ বলা হয়েছে, তাই কুরআন মজীদেও এই হাদীসে 'মাকামে মাহমূদ' বলা হয়েছে। একথা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এই মর্যাদায় ভূষিত হবেন এবং এ জন্য আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর মুবারক নাম তালিকাভুক্ত করে রেখেছেন। তবে তাঁর এই মর্যাদার পাশাপাশি হাদীসের ব্যাখ্যায় আমাদেরকে তার জন্য এই মর্যাদা দানের দু'আ করতে বলা হয়েছে যেন আল্লাহ্ তাঁকে এই মহান মর্যাদার স্থানে অধিষ্ঠিত করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ এই মর্মে বলেছেন: যে ব্যক্তি আমার জন্য এই দু'আ করবে তার জন্য আমার শাফা'আত নির্ধারিত।
জ্ঞাতব্য: পূর্বোল্লিখিত হাদীসের মর্মানুযায়ী আমল করার নিয়ম হচ্ছে এই যে, হযরত উমার (রা) বর্ণিত হাদীসে যেরূপ উদ্ধৃত হয়েছে তদ্রুপ মু'আযযিনের আযান দেওয়ার সাথে সাথে অনুরূপ বাক্য মুখে উচ্চারণ করা। এরপর হযরত সা'দ (রা) বর্ণিত হাদীসের আলোকে "আশহাদু আল্ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্" থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করা। এরপর আল্লাহর কাছে নিম্নবর্ণিত দু'আ করা- اَللّٰهُمَّ رَبَّ هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ اٰتِ مُحَمَّدَانِ الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُوْدَانِ الَّذِيْ وَعَدْتَّهٗ. اِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيْعَادَ
হাফিয ইবনে হাজার (র) "ফাতহুল বারী" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম বায়হাকীর বর্ণনায় এই দু'আর শেষ অংশে اِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيْعَادَ নিশ্চয়ই তুমি ভঙ্গ কর না অঙ্গীকার) রয়েছে। আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে উপরে বর্ণিত কাজসমূহের মর্ম উপলব্ধি করে কাজে পরিণত করার তাওফীক দিন।
এ পর্যায়ে মা'আরিফুল হাদীসের প্রথম খণ্ডে শাফা'আতের বর্ণনায় সবিস্তার আলোচনা স্থান পেয়েছে। সে হাদীসে বলা হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন হবে এমনই একটি দিন যাতে আল্লাহ্ তাঁর মাহাত্ম্য ও শক্তিমত্তা নিয়ে প্রকাশিত করেন এবং বিশ্ব মানবতা নিজ নিজ আমল বিভিন্ন অবস্থা নিয়ে অস্থির থাকবে, এমনকি হযরত নূহ, ইব্রাহীম, মূসা, ঈসা (আ) প্রমুখ নবী-রাসূলগণও তখন কোন বিষয়ে আরযি পেশ করার সাহস পাবেন না। নবীগণের দলপতি হযরত মুহাম্মদ তখন বলবেন: হে মহান বিচারকদের শ্রেষ্ঠ বিচারক! আমি এর জন্য প্রস্তুত, বলে গোটা মানব জাতির জন্য হিসাব ও শাফা'আতের লক্ষ্যে এগিয়ে আসবেন। তিনি পাপীদের সুপারিশ করার এবং জাহান্নামীদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানানোর ক্ষেত্রে হবে পথিকৃৎ। তিনি নিজেই ইরশাদ করেন: "আমিই হব সর্বপ্রথম শাফা'আতকারী এবং আমার শাফা'আতই সর্বাগ্রে গ্রহণ করা হবে।" তিনি আরো বলেছেন: "কিয়ামতের দিন আমি হব প্রশংসার পতাকাবাহী। আদম (আ) থেকে শুরু করে সবাই আমার পতাকা (লেওয়াহে হামদের) নিচে সমবেত হবে, কিন্তু এতে আমার বিন্দুমাত্র গর্ব নেই।"
বলাবাহুল্য, এ-ই হচ্ছে মাকামে মাহমূদ যে বিষয় কুরআনে রাসূলুল্লাহ ﷺ সম্পকে ইরশাদ হয়েছে: عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا "আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রশংসিত স্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।” (১৭, সূরা বানী ইসরাঈল: ৭৯)
হাদীসে এই একান্ত বিশেষ মর্যাদাকে ওয়াসীলা নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হাদীসে যাকে ওয়াসীলা ও ফাযীলাহ্ বলা হয়েছে, তাই কুরআন মজীদেও এই হাদীসে 'মাকামে মাহমূদ' বলা হয়েছে। একথা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এই মর্যাদায় ভূষিত হবেন এবং এ জন্য আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর মুবারক নাম তালিকাভুক্ত করে রেখেছেন। তবে তাঁর এই মর্যাদার পাশাপাশি হাদীসের ব্যাখ্যায় আমাদেরকে তার জন্য এই মর্যাদা দানের দু'আ করতে বলা হয়েছে যেন আল্লাহ্ তাঁকে এই মহান মর্যাদার স্থানে অধিষ্ঠিত করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ এই মর্মে বলেছেন: যে ব্যক্তি আমার জন্য এই দু'আ করবে তার জন্য আমার শাফা'আত নির্ধারিত।
জ্ঞাতব্য: পূর্বোল্লিখিত হাদীসের মর্মানুযায়ী আমল করার নিয়ম হচ্ছে এই যে, হযরত উমার (রা) বর্ণিত হাদীসে যেরূপ উদ্ধৃত হয়েছে তদ্রুপ মু'আযযিনের আযান দেওয়ার সাথে সাথে অনুরূপ বাক্য মুখে উচ্চারণ করা। এরপর হযরত সা'দ (রা) বর্ণিত হাদীসের আলোকে "আশহাদু আল্ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্" থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করা। এরপর আল্লাহর কাছে নিম্নবর্ণিত দু'আ করা- اَللّٰهُمَّ رَبَّ هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ اٰتِ مُحَمَّدَانِ الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُوْدَانِ الَّذِيْ وَعَدْتَّهٗ. اِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيْعَادَ
হাফিয ইবনে হাজার (র) "ফাতহুল বারী" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম বায়হাকীর বর্ণনায় এই দু'আর শেষ অংশে اِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيْعَادَ নিশ্চয়ই তুমি ভঙ্গ কর না অঙ্গীকার) রয়েছে। আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে উপরে বর্ণিত কাজসমূহের মর্ম উপলব্ধি করে কাজে পরিণত করার তাওফীক দিন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)