মা'আরিফুল হাদীস
আখলাক অধ্যায়
হাদীস নং: ২৬১
আখলাক অধ্যায়
রিয়ার জন্য তিন ব্যক্তিকে দোযখে ফেলা হবে
২৬১. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন সবচেয়ে প্রথম যার ফয়সালা করা হবে, সে হবে একজন শহীদ। তাকে আল্লাহর সামনে হাযির করা হবে। আল্লাহ তাকে (দুনিয়াতে যা দান করেছিলেন) তাঁর নিয়ামতের কথা বলবেন। সে তা স্বীকার করবে। আল্লাহ বলবেন, এসব নিয়ামতের দ্বারা কি কাজ করেছ? সে বলবে, তোমার রাস্তায় জিহাদ করে শাহাদাত বরণ করেছি। আল্লাহ বলবেন, মিথ্যা বলছ। তুমি এজন্য জিহাদ করেছিলে যে, লোক তোমাকে বাহাদুর বলবে। আর তোমার বাহাদুরীর চর্চা হয়েছে। অতঃপর তার বিরুদ্ধে আদেশ দেয়া হবে এবং তাকে অধোমুখ করে টেনে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর অন্য এক লোককে আল্লাহর সামনে হাযির করা হবে, যে ইলম শিখেছিল, জ্ঞান মানুষকে শিক্ষা দিয়েছিল এবং কুরআন তিলাওয়াত করেছিল। আল্লাহ তাকে যে সব নিয়ামত দিয়েছিলেন তার কথা বলবেন। সে তা স্বীকার করবে। আল্লাহ বলবেন, তার দ্বারা তুমি কি কাজ করেছ? সে বলবে, জ্ঞান শিখেছি, মানুষকে তা শিখিয়েছি এবং তোমার সন্তুষ্টির জন্য কুরআন তিলাওয়াত করেছি। আল্লাহ বলবেন, মিথ্যা বলছ। তুমি ইলম এজন্য শিখেছিলে যে, লোক তোমাকে আলিম বলবে এবং কুরআন তিলাওয়াত করেছিলে এজন্য যে, লোক বলবে সে ক্কারী। আর তোমার চর্চা হয়েছে। অতঃপর তার সম্পর্কে আদেশ করা হবে এবং তাকে অধোমুখ টেনে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর এমন এক ব্যক্তিকে হাযির করা হবে যাকে আল্লাহ প্রাচুর্য ও সকল প্রকার দৌলত দিয়েছিলেন। আল্লাহ তাকে যে নিয়ামত দিয়েছিলেন তার বর্ণনা তাকে বললে সে তা স্বীকার করবে। আল্লাহ বলবেন, তার দ্বারা তুমি কি করেছ? সে বলবে, তোমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমার পসন্দনীয় এমন কোন খাত নেই যেখানে আমি সম্পদ ব্যয় করিনি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। তুমি এজন্য তা করেছিলে যে, লোক তোমাকে দাতা বলবে। আর তোমার চর্চা হয়েছে। অতঃপর তার সম্পর্কে আদেশ করা হবে এবং তাকেও অধোমুখ করে টেনে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে। (মুসলিম)
کتاب الاخلاق
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِنَّ أَوَّلَ النَّاسِ يُقْضَى عَلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ رَجُلٌ اسْتُشْهِدَ ، فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ ، فَعَرَفَهَا ، فَقَالَ : فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ : قَاتَلْتُ فِيكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُّ . قَالَ : كَذَبْتَ ، وَلَكِنَّكَ قَاتَلْتَ لِاَنْ يُّقَالَ : جَرِيءٌ ، فَقَدْ قِيلَ . ثُمَّ أَمَرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ . وَرَجُلٌ تَعَلَّمَ الْعِلْمَ وَعَلَّمَهُ وَقَرَأَ الْقُرْآنَ ، فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ ، فَعَرَفَهَا ، قَالَ : فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ : تَعَلَّمْتُ الْعِلْمَ وَعَلَّمْتُهُ ، وَقَرَأْتُ فِيكَ الْقُرْآنَ . قَالَ : كَذَبْتَ ، وَلَكِنَّكَ تَعَلَّمْتَ الْعِلْمَ لِيُقَالَ : اَنَّكَ عَالِمٌ ، وَقَرَأْتَ الْقُرْآنَ لِيُقَالَ : هُوَ قَارِئٌ ، فَقَدْ قِيلَ . ثُمَّ أَمَرَ بِهِ ، فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ . وَرَجُلٌ وَسَّعَ اللهُ عَلَيْهِ وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ كُلِّهِ ، فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا ، قَالَ : فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ : مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبِيلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيهَا إِلَّا أَنْفَقْتُ فِيهَا لَكَ . قَالَ : كَذَبْتَ ، وَلَكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ : هُوَ جَوَّادٌ ، فَقَدْ قِيلَ . ثُمَّ أَمَرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ ثُمَّ أُلْقِيَ فِي النَّارِ " (رواه مسلم)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
আল্লাহর পথে জিহাদ করে শাহাদাত বরণ করা, আল্লাহর দীনের ইলম হাসিল করা ও তা মানুষকে শিক্ষা দান করা এবং আল্লাহর দেয়া সম্পদ মুক্তহস্তে আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দেয়া মহান ইবাদত। এ গুরুত্বপূর্ণ কুরবানীর প্রতিদানও মহান। আল্লাহ কিয়ামতের দিন শহীদ, আলিম এবং দাতাকে খুব সম্মানিত করবেন। তিনি তাদেরকে জান্নাতের বুলন্দ মাকাম দান করবেন। কিন্তু দুনিয়ার যিন্দেগীতে উল্লিখিত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আমলের জন্য বিরাট কুরবানী দান করা সত্ত্বেও কোন কোন লোক কিয়ামতের দিন দোযখে নিক্ষিপ্ত হবে। নেক কাজ করার পেছনে দুনিয়ার যশ ও সুখ্যাতির মোহ থাকার কারণে তারা কোন সওয়াব লাভ করা তো দূরের কথা, আল্লাহর ক্রোধ ও আযাব ভোগ করবে। বস্তুত রিয়া মানুষের মহান ইবাদতকে ধ্বংসে ও বরবাদ করে দেয়।
আল্লাহ রিয়াকারীদের প্রতি এতবেশি নারায ও রাগান্বিত যে, তিনি কিয়ামতের দিন কাফির, ফাজির, মুশরিক, চোর, বদমায়েশ, ব্যভিচারী প্রভৃতি মারাত্মক অপরাধীদের বিচার করার পূর্বে রিয়াকারীদের বিচার করবেন। আল্লাহ আমাদেরকে রিয়া থেকে রক্ষা করুন। আমীন-সুম্মা আমীন।
আল্লাহ রিয়াকারীদের প্রতি এতবেশি নারায ও রাগান্বিত যে, তিনি কিয়ামতের দিন কাফির, ফাজির, মুশরিক, চোর, বদমায়েশ, ব্যভিচারী প্রভৃতি মারাত্মক অপরাধীদের বিচার করার পূর্বে রিয়াকারীদের বিচার করবেন। আল্লাহ আমাদেরকে রিয়া থেকে রক্ষা করুন। আমীন-সুম্মা আমীন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)