মা'আরিফুল হাদীস

আখলাক অধ্যায়

হাদীস নং: ২৩০
আখলাক অধ্যায়
আল্লাহকে হায়া করার অর্থ
২৩০. হযরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: হায়ার যে হক আল্লাহর রয়েছে, সে মোতাবিক তাঁকে হায়া কর। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর তামাম প্রশংসা, আমরা আল্লাহকে হায়া করি। তিনি বললেন: এভাবে যে, বরং আল্লাহকে হায়া করার যে হক রয়েছে সেভাবে হায়া করার অর্থ হল, মাথা ও তার মধ্যে যা তার এবং পেট ও তার ভিতরে যা জমা করা হয়, তার হিফাযত করা। যে আখিরাতের যিন্দেগী চায়, সে দুনিয়ার আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে এবং দুনিয়ার পরিবর্তে আখিরাতকে পসন্দ করে। বস্তুত এটা হল হায়ার যে হক আল্লাহর রয়েছে, সে মোতাবিক তাঁকে হায়া করা। (তিরমিযী)
کتاب الاخلاق
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : اسْتَحْيُوا مِنَ اللهِ حَقَّ الحَيَاءِ . قَالَ : قُلْنَا : يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّا نَسْتَحْيِي مِنَ اللهِ وَالحَمْدُ لِلَّهِ ، قَالَ : لَيْسَ ذَالِكَ ، وَلَكِنَّ الاِسْتِحْيَاءَ مِنَ اللهِ حَقَّ الحَيَاءِ أَنْ تَحْفَظَ الرَّأْسَ وَمَا وَعَى ، وَالبَطْنَ وَمَا حَوَى ، وَتَذْكُرَ الْمَوْتَ وَالبَلَى ، وَمَنْ أَرَادَ الآخِرَةَ تَرَكَ زِينَةَ الدُّنْيَا ، وَآثَرَ عَلَى الْاُوْلَى فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَقَدْ اسْتَحْيَا مِنَ اللهِ حَقَّ الحَيَاءِ . (رواه الترمذى)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আল্লাহকে কিভাবে হায়া করা উচিত তার এক পরিপূর্ণ নকশা আল্লাহর রাসূল ﷺ আলোচ্য হাদীসে অংকন করেছেন। মাথা ও তার মধ্যে যা রয়েছে তার হিফাযত করার অর্থ হল চিন্তাকে গলদ খাতে প্রবাহিত হতে না দেয়া। সহীহ ও গলদ রাস্তার পার্থক্য অনুধাবন করা, হালাল-হারাম সম্পর্কে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ না করা, দীন ইসলামকে একমাত্র দীন হিসেবে চিন্তা করা, যাবতীয় বাতিল মতাদর্শকে চিন্তার বহির্ভূত রাখা এবং মানুষের গড়া তামাম মতাদর্শকে সর্বদা বাতিল মনে করা। এ ছাড়াও কোনরূপ অশ্লীল কাজ করা বা মানুষের অনিষ্ট করার চিন্তা না করা। কোন কোন ক্ষেত্রে মন্দ চিন্তাধারা মানুষের ঈমান বিনষ্ট করে।

পেটের এবং পেটের ভিতরে যা জমা করা হয়, তার অর্থ হল হারাম রোযগার বা হারাম জিনিসের দ্বারা পেট না ভরা। হালাল বস্তু ও হালাল রোযগারের মাধ্যমে উপার্জিত বস্তুর দ্বারা ক্ষুধা-পিপাসা দূর না করলে বান্দার ইবাদত কবুল হয় না।

আল্লাহকে হায়া করার অর্থ হল দুনিয়ার যিন্দেগীর পরিবর্তে আখিরাতের যিন্দেগীকে প্রাধান্য দান করা এবং দুনিয়ার তথাকথিত কোন মূল্যবান জিনিসের লোভে আখিরাতের সামান্যতম লোকসান না করা। আখিরাতের স্থায়ী গৃহ ও তার অমূল্য নিয়ামত লাভ করার জন্য প্রয়োজনবোধে দুনিয়ার আরাম-আয়েশ কুরবান করা। আখিরাতের যিন্দেগীতে শুধু সুখ-শান্তি নয়, বরং দুঃখ-অশান্তিও রয়েছে। বান্দা মৃত্যুর কঠিন দরজা পার হয়ে আখিরাতের যিন্দেগীতে কদম রাখে। মৃত্যু তার যাবতীয় ভয়াবহতা নিয়ে আখিরাতের যাত্রীর সামনে উপস্থিত হয়। বান্দার ঈমান ও আমল মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে আখিরাতের প্রত্যেক মনযিলে বান্দাকে সাহায্য করে। বান্দা দুনিয়াতে মন্দ আমল করলে তামাম মন্দ আমল কিম্ভুতকিমাকার মূর্তি নিয়ে তার সামনে হাযির হবে এবং তার মনের যাবতীয় শান্তি অপহরণ করবে। মন্দ মানুষের জন্য আখিরাতের প্রত্যেকটি মনযিল খুবই কঠিন হবে।

যে ব্যক্তি নিজের চিন্তাধারাকে গলদ রাস্তায় প্রবাহিত করে না, গলদ জিনিসের দ্বারা ক্ষুধা নিবারণ করে না, মৃত্যু ও তার পরবর্তী মনযিলসমূহের কথা চিন্তা করে এবং আখিরাতের জন্য দুনিয়াকে কুরবান করে, সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকে হায়া করার হক আদায় করে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান