মা'আরিফুল হাদীস

আখলাক অধ্যায়

হাদীস নং: ২২১
আখলাক অধ্যায়
জান্নাতী ও জাহান্নামী ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য
২২১. হযরত হারিস ইবন ওহাব (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতবাসী সম্পর্কে খবর দিব না? প্রত্যেক নরম ও দুর্বল ব্যক্তি, যে আল্লাহর নামে কোন শপথ করলে আল্লাহ তা পূরণ করেন। আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামবাসী সম্পর্কে খবর দিব না? প্রত্যেক কর্কশ মেযাজ, সংকীর্ণমনা, অধৈর্য ও অহঙ্কারী। (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الاخلاق
عَنْ حَارِثَةَ بْنِ وَهْبٍ الخُزَاعِيِّ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ الجَنَّةِ؟ كُلُّ ضَعِيفٍ مُتَضَاعِفٍ ، لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللَّهِ لَأَبَرَّهُ . أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ؟ كُلُّ عُتُلٍّ جَوَّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ . (رواه البخارى ومسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

নরম ও দুর্বলের দুটো অর্থ রয়েছে-
এক: প্রভাব-প্রতিপত্তি ও শান-শওকতের অধিকারী না হওয়া। প্রভাব-প্রতিপত্তি, ধন-দৌলত অনেক ক্ষেত্রে জান্নাতের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে। গরীব ও মিসকীন বিশ্বাসিগণ জান্নাতে অগ্রাধিকার লাভ করবেন। নবী করীম ﷺ গরীব-মিসকীনদেরকে ভালবাসতেন এবং তাদের সাথে হাশর হওয়ার জন্য দু'আ করতেন। সহীহ মুসলিমের এক হাদীসে বলা হয়েছে: দুর্বল মু'মিনের চেয়ে শক্তিশালী মু'মিন আল্লাহর কাছে উত্তম ও অধিক প্রিয়। আপাত দৃষ্টিতে দুটো হাদীস পরস্পর বিরোধী মনে হলেও মূলত দুটোর মধ্যে কোনরূপ বিরোধ নেই।

প্রথম হাদীসে এক বাস্তব অবস্থার বর্ণনা করা হয়েছে। দীন ইসলামের উপর দৃঢ়পদ থাকার কারণে গরীব-মিসকীন মানুষ জান্নাতের হকদার হবেন। বস্তুত জান্নাতে গরীবদের সংখ্যাধিক্য থাকবে।

দ্বিতীয় হাদীসে প্রভাবশালী বিশ্বাসী বান্দাদের কথা বলা হয়েছে। যদি কোন মু'মিন ব্যক্তি শক্তিশালী ও প্রভাবশালী হয়, তাহলে সে তার প্রভাব ও যোগ্যতার দ্বারা আল্লাহর দীনের বেশি খেদমত করতে পারবে এবং আল্লাহর বান্দাগণ তার দ্বারা বেশি উপকৃত হবে। তাই আল্লাহ শক্তিশালী মু'মিনকে তার গুরুত্বপূর্ণ খিদমতের জন্য ভালবাসেন।

দুই: নরম ও দুর্বলের অর্থ ভদ্র, শরীফ ও বিনয়ী। বস্তুত মু'মিন ব্যক্তি কখনো অভদ্র, অসহিষ্ণু ও অহঙ্কারী হন না। অপর হাদীসের বিনয়ী ব্যক্তিদের ইনাম-নিয়ামত ভরা জান্নাতের সুসংবাদ দান করা হয়েছে। জাহান্নামের আগুন তাদের জন্য হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। তাই উভয় অর্থে দুর্বল ও নরম মানুষ জান্নাতের অধিকারী।

দোযখের হকদারদের মন্দ আচরণের বর্ণনা দান করার জন্য যে তিনটি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তা প্রায় সমার্থবোধক। 'উতুল' শব্দের অর্থ তরজমাতে কর্কশ মেযাজ ব্যবহার করা হয়েছে। কঠিন, শক্ত ও বিদ্রোহী অর্থেও তা ব্যবহার করা যায়। অনুরূপভাবে 'জাওয়াযের' অর্থ সংকীর্ণমনা, অধৈর্য বা অহঙ্কারের সাথে চলাফেরাকারী। অহঙ্কারীর মধ্যে বর্ণিত সব দোষের সমাবেশ থাকে। আল্লাহ অভদ্র, কর্কশ ও অহঙ্কারী ব্যক্তিকে অপসন্দ করেন। তিনি তাকে দুনিয়াতে অপমানিত করেন এবং আখিরাতেও তাকে আগুনের আযাব দিবেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান