মা'আরিফুল হাদীস

আখলাক অধ্যায়

হাদীস নং: ১৩৯
আখলাক অধ্যায়
মুসলিম ভাইয়ের মুলাকাতের পথে ফেরেশতার সংলাপ
১৩৯. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন: এক ব্যক্তি অন্য এক গ্রামে তার ভাইয়ের সাথে মুলাকাত করার জন্য রওনা হল। আল্লাহ তার রাস্তায় এক ফেরেশতা মোতায়েন করে রাখলেন। ফেরেশতা তাকে বললেন, তুমি কোথায় যেতে চাও? সে বলল, আমি এ গ্রামে আমার ভাইয়ের সাথে মুলাকাত করতে চাই। ফেরেশতা বললেন, সেখানে কি তোমার কোন সম্পদ রয়েছে যা বৃদ্ধি করার জন্য তুমি যাচ্ছ? সে বলল, না। আমি আল্লাহর খাতিরে তাকে ভালবাসি। ফেরেশতা বললেন, আল্লাহ আমাকে তোমার কাছে পাঠিয়েছেন খবর দেয়ার জন্য যে, আল্লাহ তোমাকে সেরূপ ভালবাসেন যেরূপ তুমি আল্লাহর খাতিরে তাকে ভালবাস। (মুসলিম)
کتاب الاخلاق
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، " أَنَّ رَجُلًا زَارَ أَخًا لَهُ فِي قَرْيَةٍ أُخْرَى ، فَأَرْصَدَ اللهُ لَهُ ، عَلَى مَدْرَجَتِهِ ، مَلَكًا ، قَالَ : أَيْنَ تُرِيدُ؟ قَالَ : أُرِيدُ أَخًا لِي فِي هَذِهِ الْقَرْيَةِ ، قَالَ : هَلْ لَكَ مِنْ نِعْمَةٍ تَرُبُّهَا؟ قَالَ : لَا ، غَيْرَ أَنِّي أَحْبَبْتُهُ فِي اللهِ ، قَالَ : فَإِنِّي رَسُولُ اللهِ إِلَيْكَ ، بِأَنَّ اللهَ قَدْ أَحَبَّكَ كَمَا أَحْبَبْتَهُ فِيهِ " (رواه مسلم)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

আল্লাহকে মহব্বত করা, তাঁর উপর সন্তুষ্ট থাকা এবং সর্বদা তাঁর আনুগত্য করা বান্দার কর্তব্য। কিন্তু আল্লাহ কোন বান্দাকে কতটুকু মহব্বত করবেন তা নির্ভর করে বান্দার নিয়্যত এবং আমলের উপর। যে কয়েকটি উপায়ে আল্লাহর মহব্বত লাভ করা যায়, তার মধ্যে অন্যতম হলো আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য বান্দাকে ভালবাসা এবং তার খিদমত করা। আল্লাহর রাস্তায় যুহদ এবং জিহাদ করা খুব কঠিন কাজ। তাই আল্লাহ যুহদকারী এবং জিহাদকারীকে মহান প্রতিদানের আশ্বাস দিয়েছেন। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারিগণ আল্লাহর মহব্বতের মর্যাদা হাসিল করেন। আল্লাহর মহব্বতের এ মাকাম এত বুলন্দ এবং সুউচ্চ যে, তা হাসিল করার জন্য আল্লাহর কোন কোন বান্দা সারারাত জেগে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ইবাদত করেন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বান্দা অবিরাম রোযা পালন করেন। সারারাত জেগে ইবাদতকারী এবং অবিরাম রোযা পালনকারী আল্লাহর মহব্বতের যে স্তর হাসিল করেন, সে স্তর আল্লাহর অনেক সৌভাগ্যবান বান্দা অতি অল্প পরিশ্রমে আল্লাহর বান্দাদেরকে ভালবেসে এবং তাদের খিদমত করে হাসিল করে থাকেন। এ ধরনের হাদীসের দ্বারা একটা কথা খুব স্পষ্ট হল যে, নফল ইবাদতের মধ্যে আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য আল্লাহর বান্দাকে ভালবাসা এবং এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় আমল। খিদমতে খালক বা জনসেবার মাধ্যমে সমাজে ভালবাসা ও হৃদ্যতার সৃষ্টি হয় এবং হৃদ্যতা ও ভালবাসার দ্বারা আল্লাহর দীনকে মানুষের কাছে পেশ করার সবচেয়ে বেশি সুযোগ রয়েছে। ইসলামের দাওয়াত পেশকারিগণ প্রকৃতপক্ষে মানুষের প্রতি মহব্বত পোষণ করলে এবং তাদের সমস্যাকে নিজের সমস্যা হিসেবে গ্রহণ করলে আল্লাহর দীনের প্রভাব মানুষের উপর পড়বে। ইসলামের ভ্রাতৃত্ব ও সাম্যের বাণীর সহস্র ওয়াযের চেয়ে সাম্য, মহব্বত ও ভ্রাতৃত্বভাব প্রকাশের মাধ্যমে মানুষের অন্তর সহজে জয় করা যায়। তাই আল্লাহ যাদেরকে মহব্বত করেন তাদেরকে মহব্বত করে মাহবুব আল্লাহর মহব্বত হাসিল করতে হবে।

কোন কোন ক্ষেত্রে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উল্লেখযোগ্য কাজের স্বীকৃতি অবহিত করার জন্য তাদের কাছে ফেরেশতা প্রেরণ করে থাকেন। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়, আল্লাহ যখন ইচ্ছা মানুষের সমাজে ফেরেশতা প্রেরণ করতে পারেন। আমাদের অজান্তে হয় তো কত ফেরেশতা আমাদেরকে সাহায্য করেন বা আমাদের ঈমানের পরীক্ষা নিয়ে থাকেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান