মা'আরিফুল হাদীস
রিকাক অধ্যায়
হাদীস নং: ৯৪
রিকাক অধ্যায়
অতি হাসি মানুষের কলবকে মেরে ফেলে
৯৪. হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন? কে আমার থেকে এ কথাগুলো শিখবে, নিজে আমল করার জন্য বা অন্য আমলকারীকে শেখানোর জন্য? বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি। আল্লাহর নবী ﷺ আমার হাত ধরে পাঁচটি জিনিস গুণলেন। অতঃপর তিনি বললেন: আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা ভয় কর, তাহলে তুমি শ্রেষ্ঠ আবিদ হবে; আল্লাহ যা তোমার কিসমতে রেখেছেন তাতে তুমি সন্তুষ্ট থাক, তাহলে তুমি শ্রেষ্ঠ ধনী হবে; প্রতিবেশীর সাথে সুন্দর আচরণ কর, তাহলে তুমি (কামিল) মু'মিন হবে; তুমি নিজের জন্য যা পসন্দ কর তা মানুষের জন্য পসন্দ কর, তাহলে তুমি (প্রকৃত) মুসলিম হবে এবং অধিক হাসবে না; কেননা অধিক হাসি কলবকে মেরে ফেলে। (মুসনাদে আহমদ ও তিরমিযী)
کتاب الرقاق
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنْ يَأْخُذُ عَنِّي هَؤُلاَءِ الكَلِمَاتِ فَيَعْمَلُ بِهِنَّ أَوْ يُعَلِّمُ مَنْ يَعْمَلُ بِهِنَّ؟ قُلْتُ : أَنَا يَا رَسُولَ اللهِ ، فَأَخَذَ بِيَدِي فَعَدَّ خَمْسًا فَقَالَ : اتَّقِ الْمَحَارِمَ تَكُنْ أَعْبَدَ النَّاسِ ، وَارْضَ بِمَا قَسَمَ اللَّهُ لَكَ تَكُنْ أَغْنَى النَّاسِ ، وَأَحْسِنْ إِلَى جَارِكَ تَكُنْ مُؤْمِنًا ، وَأَحِبَّ لِلنَّاسِ مَا تُحِبُّ لِنَفْسِكَ تَكُنْ مُسْلِمًا ، وَلاَ تُكْثِرِ الضَّحِكَ ، فَإِنَّ كَثْرَةَ الضَّحِكِ تُمِيتُ القَلْبَ . (رواه احمد والترمذى)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এই হাদীসে সাচ্চা মু'মিনের এক জীবন্ত নকশা অঙ্কন করা হয়েছে। যদি কেউ দুনিয়াতে কোন জান্নাতের অধিকারীকে দেখার আগ্রহ ও ঔৎসুক্য মনের মধ্যে পোষণ করে, তাহলে তার উচিত হবে এমন মু'মিনের সন্ধান করা যার মধ্যে এ পাঁচটি গুণ রয়েছে। শ্রেষ্ঠ ইবাদতকারীর মর্যাদা লাভের জন্য নবী করীম ﷺ অধিক নফল ইবাদত করার কথা বলেননি; বরং তিনি আল্লাহর নিষিদ্ধ জিনিস পরিহার করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। নিষিদ্ধ জিনিসের নিকটবর্তী হওয়া বা তার সীমালংঘন করা খুবই নিন্দনীয় কাজ এবং দীনি পরিভাষায় একে 'মাআসিয়াত' বা আল্লাহর অবাধ্যতা বলা হয়। মা'আসিয়াত বান্দাকে জান্নাত থেকে দূরবর্তী এবং জাহান্নামের নিকটবর্তী করে। নফসের হুকুমকে অমান্য করে, শয়তানের প্ররোচনা ও উস্কানীকে অস্বীকার করে এবং দুনিয়ার তথাকথিত স্বার্থ ও আকর্ষণকে উপেক্ষা করে বা পার্থিব লোকসান বরদাশত করে যে আল্লাহর নিষেধ থেকে দূরে থাকে, সে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ আবিদ। এক নিষিদ্ধ জিনিস থেকে দূরে থাকার মধ্যে যে সওয়াব রয়েছে, তার সমকক্ষতা অসংখ্য নফল ইবাদতের মাধ্যমেও পাওয়া যাবে না।
দৌলতের আধিক্যের নাম প্রাচুর্য নয়, বরং প্রকৃত প্রাচুর্য হল নিজের ভাগ্যের উপর সন্তুষ্ট থাকা, নিজের প্রয়োজন পূরণের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী না হওয়ার মধ্যেই দৌলতের প্রকৃত সার্থকতা রয়েছে। কিন্তু যে নিজের ভাগ্যের উপর সন্তুষ্ট নয়, সে দৌলতের অধিকারী হলেও বারবার অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে দৌলতের মর্যাদাহানি করবে। যে ব্যক্তি নিজের ভাগ্যের উপর সন্তুষ্ট এবং লোভী নয়, সে তার প্রয়োজন পূরণ করার জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হবে না, বরং নিজের অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যিন্দেগী যাপন করবে। তাই যে বান্দা সন্তুষ্ট, সেই ধনী ও দৌলতমন্দ। সে এমন এক প্রাচুর্যের অধিকারী যা সম্পদ দিয়ে কেনা যায় না।
প্রতিবেশীর সাথে সুন্দর আচরণ করা ঈমানের অন্যতম শিক্ষা। মু'মিন ব্যক্তির উপর প্রতিবেশীর হক রয়েছে। প্রতিবেশীর সুখে-দুঃখে অংশগ্রহণ, তার অভাব মোচন করা, বিপদে তাকে সাহায্য করা, প্রতিবেশীর পরিবার-পরিজন ও বিষয়-সম্পত্তির কোনরূপ লোকসান না করা, বরং সর্বাবস্থার প্রতিবেশীর স্বার্থের হিফাযত করা ও তার সাথে নরম ও ভদ্র আচরণ করা ঈমানদার ব্যক্তির কর্তব্য। নবী করীম ﷺ প্রতিবেশীদের সম্পর্কে ঈমানদারদের এত বেশি নসীহত করেছেন এবং সতর্ক থাকতে বলেছেন যে, সাহাবায়ে কিরাম মনে করেছিলেন হয়ত মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে সম্ভবত প্রতিবেশীর হকও ধার্য হবে। প্রতিবেশীর প্রতি রহম-দিল হওয়া কামিল ঈমানের লক্ষণ।
প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তির অন্যতম লক্ষণ হল নিজের জন্য যা পসন্দ করে তা মানুষের জন্যও পসন্দ করে। দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় ব্যাপারে মু'মিন ব্যক্তি সকল মানুষের জন্য এমন কল্যাণ কামনা করেন যা তার নফসের জন্য আকাঙ্ক্ষা করেন। মুসলিম ব্যক্তির প্রকৃত পরিচয় তার এ অনুভূতির তীব্রতার উপর নির্ভরশীল।
অধিক হাসিখুশি মু'মিন ব্যক্তির কাজ নয়। আখিরাতের যিন্দেগী সম্পর্কে যে গাফিল, সে এ ধরনের আচরণ করতে পারে। যারা অধিক হাসিখুশিতে লিপ্ত থাকে, তাদের কলব মরে যায় এবং মৃত কলবের দ্বারা কোনদিনও ইবাদত-বন্দেগী করা যায় না।
নবী করীম ﷺ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বর্ণনা করার পূর্বে তাঁর আসহাবে কিরামের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন এবং তাদেরকে হক কবুল করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন। দাওয়াত পেশ করার এ মহামূল্য হিকমত প্রত্যেক মুবাল্লিগের অবলম্বন করা উচিত। হাদীসে অন্য একটা বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। তা হল দীনের জ্ঞান যে হাসিল করবে, তার উপর দুটো হক রয়েছে। সে নিজে তার উপর আমল করবে এবং অন্যকে তার শিক্ষাদান করবে। যদি আমল করার ব্যাপারে তার কোন শরঈ ওজর-আপত্তি থাকে বা কোনরূপ সাময়িক দুর্বলতা থাকে, তাহলেও জ্ঞানের কথা গোপন করা বা নিজের মধ্যে সীমিত রাখা যাবে না; বরং অন্যকে তা বলতে হবে এবং এ ধরনের দাওয়াত প্রদানের মাধ্যমে নিজের ত্রুটি দূর হয়ে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে জ্ঞান গ্রহণকারী দানকারীর চেয়ে উত্তম আমল করে থাকেন।
দৌলতের আধিক্যের নাম প্রাচুর্য নয়, বরং প্রকৃত প্রাচুর্য হল নিজের ভাগ্যের উপর সন্তুষ্ট থাকা, নিজের প্রয়োজন পূরণের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী না হওয়ার মধ্যেই দৌলতের প্রকৃত সার্থকতা রয়েছে। কিন্তু যে নিজের ভাগ্যের উপর সন্তুষ্ট নয়, সে দৌলতের অধিকারী হলেও বারবার অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে দৌলতের মর্যাদাহানি করবে। যে ব্যক্তি নিজের ভাগ্যের উপর সন্তুষ্ট এবং লোভী নয়, সে তার প্রয়োজন পূরণ করার জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হবে না, বরং নিজের অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যিন্দেগী যাপন করবে। তাই যে বান্দা সন্তুষ্ট, সেই ধনী ও দৌলতমন্দ। সে এমন এক প্রাচুর্যের অধিকারী যা সম্পদ দিয়ে কেনা যায় না।
প্রতিবেশীর সাথে সুন্দর আচরণ করা ঈমানের অন্যতম শিক্ষা। মু'মিন ব্যক্তির উপর প্রতিবেশীর হক রয়েছে। প্রতিবেশীর সুখে-দুঃখে অংশগ্রহণ, তার অভাব মোচন করা, বিপদে তাকে সাহায্য করা, প্রতিবেশীর পরিবার-পরিজন ও বিষয়-সম্পত্তির কোনরূপ লোকসান না করা, বরং সর্বাবস্থার প্রতিবেশীর স্বার্থের হিফাযত করা ও তার সাথে নরম ও ভদ্র আচরণ করা ঈমানদার ব্যক্তির কর্তব্য। নবী করীম ﷺ প্রতিবেশীদের সম্পর্কে ঈমানদারদের এত বেশি নসীহত করেছেন এবং সতর্ক থাকতে বলেছেন যে, সাহাবায়ে কিরাম মনে করেছিলেন হয়ত মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে সম্ভবত প্রতিবেশীর হকও ধার্য হবে। প্রতিবেশীর প্রতি রহম-দিল হওয়া কামিল ঈমানের লক্ষণ।
প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তির অন্যতম লক্ষণ হল নিজের জন্য যা পসন্দ করে তা মানুষের জন্যও পসন্দ করে। দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় ব্যাপারে মু'মিন ব্যক্তি সকল মানুষের জন্য এমন কল্যাণ কামনা করেন যা তার নফসের জন্য আকাঙ্ক্ষা করেন। মুসলিম ব্যক্তির প্রকৃত পরিচয় তার এ অনুভূতির তীব্রতার উপর নির্ভরশীল।
অধিক হাসিখুশি মু'মিন ব্যক্তির কাজ নয়। আখিরাতের যিন্দেগী সম্পর্কে যে গাফিল, সে এ ধরনের আচরণ করতে পারে। যারা অধিক হাসিখুশিতে লিপ্ত থাকে, তাদের কলব মরে যায় এবং মৃত কলবের দ্বারা কোনদিনও ইবাদত-বন্দেগী করা যায় না।
নবী করীম ﷺ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বর্ণনা করার পূর্বে তাঁর আসহাবে কিরামের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন এবং তাদেরকে হক কবুল করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন। দাওয়াত পেশ করার এ মহামূল্য হিকমত প্রত্যেক মুবাল্লিগের অবলম্বন করা উচিত। হাদীসে অন্য একটা বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। তা হল দীনের জ্ঞান যে হাসিল করবে, তার উপর দুটো হক রয়েছে। সে নিজে তার উপর আমল করবে এবং অন্যকে তার শিক্ষাদান করবে। যদি আমল করার ব্যাপারে তার কোন শরঈ ওজর-আপত্তি থাকে বা কোনরূপ সাময়িক দুর্বলতা থাকে, তাহলেও জ্ঞানের কথা গোপন করা বা নিজের মধ্যে সীমিত রাখা যাবে না; বরং অন্যকে তা বলতে হবে এবং এ ধরনের দাওয়াত প্রদানের মাধ্যমে নিজের ত্রুটি দূর হয়ে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে জ্ঞান গ্রহণকারী দানকারীর চেয়ে উত্তম আমল করে থাকেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)