মা'আরিফুল হাদীস

রিকাক অধ্যায়

হাদীস নং: ৮৪
রিকাক অধ্যায়
দীর্ঘ জীবন ইসলামী যিন্দেগীর উপর থাকার ফযীলত
৮৪. হযরত আবদুল্লাহ ইবন শাদ্দাদ (রা) থেকে বর্ণিত, বনু উযরা গোত্রের তিন ব্যক্তি আল্লাহর নবীর কাছে আসলেন এবং ইসলাম কবুল করলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, কে তাদের যিম্মাদারী নেবে? তালহা বললেন, আমি। অতঃপর তাঁরা তাঁর সাথে অবস্থান করলেন। অতঃপর নবী ﷺ একদল মুজাহিদ (কোন স্থানে) প্রেরণ করলেন। তাদের একজন মুজাহিদ দলের সাথে বেরিয়ে শাহাদাত বরণ করলেন। অতঃপর নবী ﷺ আরও একদল মুজাহিদ পাঠালেন। দ্বিতীয় ব্যক্তি এই দলের সাথে বের হলেন এবং শাহাদাত বরণ করলেন। অতঃপর তৃতীয় ব্যক্তি বিছানায় মৃত্যুবরণ করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তালহা (রা) বলেছেন, আমি ঐ তিন ব্যক্তিকে জান্নাতের মধ্যে দেখতে পেলাম। শয্যায় মৃত্যুবরণকারীকে তাদের অগ্রে দেখলাম, শেষে শাহাদাত বরণকারী তার নিকটে রয়েছে এবং তাদের মধ্যে যিনি প্রথম শহীদ হয়েছিলেন। তিনিও তার নিকট রয়েছেন। এটা আমার মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করল। আমি নবী ﷺ-কে বললাম। তিনি বললেন: তাতে তুমি কি জিনিস ইনকার কর (সঠিক নয় মনে কর)? আল্লাহর কাছে সেই মুমিনের চেয়ে কেউ শ্রেষ্ঠ নয়, যে দীর্ঘ জীবন ইসলামের মধ্যে তাসবীহ, তাকবীর ও তাহলীল করে অতিবাহিত করে।
کتاب الرقاق
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ شَدَّادٍ ، أَنَّ نَفَرًا مِنْ بَنِي عُذْرَةَ ثََلَاثَةً ، أَتَوْا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَسْلَمُوا ، قَالَ : فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : « مَنْ يَكْفِينِِيهِمْ؟ » قَالَ طَلْحَةُ : أَنَا . قَالَ : فَكَانُوا عِنْدَ طَلْحَةَ ، فَبَعَثَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْثًا فَخَرَجَ فيه أَحَدُهُمْ فَاسْتُشْهِدَ ، ثُمَّ بَعَثَ بَعْثًا فَخَرَجَ فِيهِ الْآخَرُ فَاسْتُشْهِدَ ، ثُمَّ مَاتَ الثَّالِثُ عَلَى فِرَاشِهِ ، قَالَ قَالَ طَلْحَةُ : فَرَأَيْتُ هَؤُلاءِ الثَّلاثَةَ فِي الْجَنَّةِ ، وَرَأَيْتُ الْمَيِّتَ عَلَى فِرَاشِهِ أَمَامَهُمْ ، وَالَّذِي اسْتُشْهِدَ اٰخَراً يَلِيهِ ، وَأَوَّلُهُمْ يَلِيْهِ فَدَخَلَنِي مِنْ ذَلِكَ ، فَذَكَرْتُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَلِكَ فَقَالَ : « وَمَا أَنْكَرْتَ مِنْ ذَلِكَ لَيْسَ أَحَدٌ أَفْضَلَ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ مُؤْمِنٍ يُعَمَّرُ فِي الْإِسْلامِ لِتَسْبِيحِهِ وَتَكْبِيرِهِ وَتَهْلِيلِهِ » (رواه احمد)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ সর্বোচ্চ ইবাদত। যিনি এ ইবাদাতে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন তিনি খোশ নসীব। তার চেয়েও তিনি বেশি খোশ নসীব যিনি জিহাদে অংশ নিলেন এবং শত্রুর হাতে শাহাদাত বরণ করলেন। নবুওয়তের তরীকা ও পদ্ধতিতে আল্লাহর যমীনে আল্লাহর বিধান কায়েমের মহান উদ্দেশ্যে ঈমানদারগণকে জিহাদের জন্য প্রস্তুত করা রাসূলের মিশনের অন্যতম লক্ষ্য। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে তিনি তাঁর অনুসারীদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এবং জিহাদের বাস্তব ময়দানে নিয়োজিত করেছেন। তাই সাহাবী তালহা শাহাদাত ও জিহাদের সুমহান মর্যাদা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল থাকার কারণে স্বপ্নের বর্ণিত ঘটনার সাথে একমত হতে পারছিলেন না। তাঁর অবস্থা টের পেয়ে নবী করীম ﷺ তাঁর সামনে ইসলামের গোটা ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য তিনটি শব্দের মাধ্যমে-তসবীহ, তাকবীর ও তাহলীল পেশ করেছেন। যে ব্যক্তি জিহাদে অংশ নেয়ার জন্য মানসিক দিক দিয়ে সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও অংশগ্রহণের সুযোগ পেল না কিন্তু সে নিজের জীবনকে ইসলামের অধীন রাখল, সর্বদা আল্লাহর হামদ ও সানা করল, আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করল অর্থাৎ আল্লাহ শ্রেষ্ঠ এবং আসমান-যমীনে একমাত্র তাঁরই কর্তৃত্ব ও সার্বভৌমত্ব রয়েছে, মনে-প্রাণে 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' কালেমায় বিশ্বাস করল এবং কলেমার দাবি অনুযায়ী জীবনের সকল দিক ও বিভাগকে তাগুত ও বাতিলের বন্ধন থেকে মুক্ত করে প্রকৃত ও একমাত্র আল্লাহর অধীন করল, সে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী। তার সঙ্গীদের মধ্যে যারা আগে শাহাদাত বরণ করে জান্নাতবাসী হয়েছেন, তারা তার চেয়ে কম সময় আমলের সুযোগ পেয়েছেন। তাই তাদের চেয়ে তার মর্যাদা বেশি হবে। আলোচ্য হাদীসে এই কথার প্রতিই ইংগিত করা হয়েছে।

মানুষকে কল্যাণের প্রতি আহবান এবং তাদেরকে অন্যায় থেকে বিরত রাখা, যাকে ইসলামী পরিভাষায় 'আমর বিল মা'রূফ ও নাহি আনিল মুনকার বলা হয়, এটা এক মহান যিম্মাদারী, এ যিম্মাদারী পালন করার জন্য মু'মিন ব্যক্তিকে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হয় এবং প্রয়োজনবোধে এ উদ্দেশ্যে নিজের প্রিয় জীবন এবং সম্পদ কুরবান করে দিতে হয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান