মা'আরিফুল হাদীস
রিকাক অধ্যায়
হাদীস নং: ৫৪
রিকাক অধ্যায়
আল্লাহ ও মানুষের মহব্বত লাভের পথ: আখিরাতের মহব্বতে দুনিয়ার আরাম ত্যাগ করা
৫৪. হযরত সাহল ইবন সা'দ (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী ﷺ-এর নিকট হাযির হয়ে বলল: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে এমন আমল বাতলে দিন যে আমল করলে আল্লাহ এবং মানুষ আমাকে মহব্বত করবে। নবী ﷺ বললেন: আখিরাতের মহব্বতে দুনিয়ার আরাম-আয়েশ ত্যাগ কর। আল্লাহ তোমাকে মহব্বত করবেন এবং মানুষের কাছে যা আছে তার প্রতি নির্লিপ্ত হও, মানুষ তোমাকে ভালবাসবে। (তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ)
کتاب الرقاق
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ ، قَالَ : جَاءَ رَجُلٌ فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ إِذَا أَنَا عَمِلْتُهُ أَحَبَّنِي اللَّهُ وَأَحَبَّنِي النَّاسُ؟ قَالَ « ازْهَدْ فِي الدُّنْيَا يُحِبَّكَ اللَّهُ ، وَازْهَدْ فِيمَا فِي أَيْدِي النَّاسِ يُحِبُّكَ النَّاسُ » (رواه الترمذى وابن ماجه)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
আল্লাহ ও দুনিয়ার মহব্বত এক অন্তরে এক সাথে অবস্থান করতে পারে না। আল্লাহর মহব্বত অন্তরে সৃষ্টির অর্থ হ'ল বাস্তব জীবনে তাঁর ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতিফলন করা। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ও ক্ষেত্রে নিষ্ঠাসহকারে আল্লাহর আনুগত্য যিনি করতে পারেন, তিনি আল্লাহর প্রেমিক। আল্লাহর দীনের দাবি পূরণে আল্লাহ-প্রেমিক তার শ্রম-সম্পদ ও সর্বাধিক প্রিয় প্রাণ অকাতরে কুরবান করেন। দুনিয়ার আরাম-আয়েশ যার অন্তরে আস্তানা গেড়েছে, সে কখনো আল্লাহ-প্রেমিক হতে পারে না। দুনিয়ার চাকচিক্য ও আকর্ষণ তাকে সর্বদা আল্লাহর মহব্বত থেকে দূরে রাখে। তাই যে দুনিয়ার মহব্বত ত্যাগ করতে পারবে, সে ইশকে ইলাহীর বুলন্দ মরতবা হাসিল করতে পারবে। যে আল্লাহকে ভালবাসবে, আল্লাহ তাকে ভালবাসবেন। আর আল্লাহ যাকে ভালবাসবেন সে দুনিয়া ও আখিরাতের সৌভাগ্য ও সাফল্যের সুউচ্চ মর্যাদায় অবস্থান করবে। আল্লাহকে ভালবেসে দুনিয়া ত্যাগ করার অর্থ এ নয় যে, সংসার বিরাগী হয়ে যেতে হবে; বরং এর অর্থ হল একজন মুসাফির যে ধরনের নির্লিপ্ততা সহকারে পথ চলেন, ঠিক সে ধরনের নির্লিপ্ততা সহকারে সংসার ধর্ম পালন করতে হবে এবং মু'মিন ব্যক্তি যখন আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য সংসার ধর্ম পালন করেন, তখন তার প্রত্যেকটি পার্থিব কাজে সওয়াব হয়। আল্লাহর নিকট মু'মিনের মর্যাদা ও মরতবা অতুলনীয়। এ সম্পর্কিত অন্য এক হাদীসের সারকথা হল, মু'মিন ব্যক্তি নিজে যা খায় তা সদকা, সে পরিবার-পরিজনকে যা খেতে দেয় তা সদকা। মু'মিনের প্রত্যেকটি পার্থিব কাজ সদকার সমতুল্য; অর্থাৎ সওয়াব হাসিলকারী। যিনি আল্লাহর রাহের মুসাফির তিনি মানুষের সম্পদের প্রতি নির্লিপ্ত। তিনি সম্পদের জন্য মানুষের সাথে প্রতিযোগিতা করেন না। মনে কোন ঈর্ষা পোষণ করেন না। তিনি মানুষকে হক ও ইনসাফের পথে যে আহবান করেন, তার জন্য তাদের কাছে কোন প্রতিদান দাবি করেন না। এ ধরনের মুজাহিদকে মানুষ ভালবাসে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)