মা'আরিফুল হাদীস
রিকাক অধ্যায়
হাদীস নং: ১৯
রিকাক অধ্যায়
বাতাস প্রবলবেগে প্রবাহিত হলে নবী করীম ﷺ যা করতেন ও বলতেন
১৯. হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বাতাস প্রবলবেগে প্রবাহিত হলে নবী ﷺ বলতেন:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا فِيهَا، وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا فِيهَا، وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ
"হে আমার আল্লাহ! আমি তোমার কাছে সওয়াল করছি এর মঙ্গলের, এতে যে মঙ্গল রয়েছে তার এবং যে মঙ্গল পাঠান হয়েছে তার। আর তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এর (বাতাসের) অমঙ্গলের, এতে যে অমঙ্গল রয়েছে এবং এতে যে অমঙ্গল পাঠানো হয়েছে।" আকাশে মেঘ দেখা দিলে তাঁর [নবী ﷺ-এর] রঙ বদলে যেত। তিনি বের হতেন, ঘরে ঢুকতেন, সামনে অগ্রসর হতেন এবং কখনোও পিছনে সরে যেতেন। বৃষ্টি হওয়ার পর তাঁর চিন্তা দূর হতো। আয়েশা (রা) নবী ﷺ-এর এ অবস্থা দেখার পর তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে, নবী ﷺ বলেছেনঃ হে আয়েশা! যেরূপ আদ জাতি বলেছিল, সেরূপ হতে পারে (আদ জাতির কাছে প্রেরিত বাতাসের ন্যায় হতে পারে এবং সে সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:) “তারা যখন দেখল যে, মেঘ তাদের উপত্যকাসমূহের দিকে আসছে, তখন তারা বলল, এ মেঘ আমাদের জন্য বৃষ্টি বহনকারী।” (বুখারী ও মুসলিম)
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا فِيهَا، وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا فِيهَا، وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ
"হে আমার আল্লাহ! আমি তোমার কাছে সওয়াল করছি এর মঙ্গলের, এতে যে মঙ্গল রয়েছে তার এবং যে মঙ্গল পাঠান হয়েছে তার। আর তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এর (বাতাসের) অমঙ্গলের, এতে যে অমঙ্গল রয়েছে এবং এতে যে অমঙ্গল পাঠানো হয়েছে।" আকাশে মেঘ দেখা দিলে তাঁর [নবী ﷺ-এর] রঙ বদলে যেত। তিনি বের হতেন, ঘরে ঢুকতেন, সামনে অগ্রসর হতেন এবং কখনোও পিছনে সরে যেতেন। বৃষ্টি হওয়ার পর তাঁর চিন্তা দূর হতো। আয়েশা (রা) নবী ﷺ-এর এ অবস্থা দেখার পর তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে, নবী ﷺ বলেছেনঃ হে আয়েশা! যেরূপ আদ জাতি বলেছিল, সেরূপ হতে পারে (আদ জাতির কাছে প্রেরিত বাতাসের ন্যায় হতে পারে এবং সে সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:) “তারা যখন দেখল যে, মেঘ তাদের উপত্যকাসমূহের দিকে আসছে, তখন তারা বলল, এ মেঘ আমাদের জন্য বৃষ্টি বহনকারী।” (বুখারী ও মুসলিম)
کتاب الرقاق
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا عَصَفَتِ الرِّيحُ ، قَالَ : « اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا ، وَخَيْرَ مَا فِيهَا ، وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا ، وَشَرِّ مَا فِيهَا ، وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ » ، قَالَتْ : وَإِذَا تَخَيَّلَتِ السَّمَاءُ ، تَغَيَّرَ لَوْنُهُ ، وَخَرَجَ وَدَخَلَ ، وَأَقْبَلَ وَأَدْبَرَ ، فَإِذَا مَطَرَتْ ، سُرِّيَ عَنْهُ ، فَعَرَفْتُ ذَلِكَ فِي وَجْهِهِ ، قَالَتْ عَائِشَةُ : فَسَأَلْتُهُ ، فَقَالَ : " لَعَلَّهُ ، يَا عَائِشَةُ كَمَا قَالَ قَوْمُ عَادٍ : {فَلَمَّا رَأَوْهُ عَارِضًا مُسْتَقْبِلَ أَوْدِيَتِهِمْ قَالُوا هَذَا عَارِضٌ مُمْطِرُنَا} (رواه البخارى ومسلم)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
আল্লাহ-ভীতি নবী করীম ﷺ-এর মনে অত্যন্ত প্রবল ছিল। তিনি দিন-রাত আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতেন এবং আল্লাহর পয়গাম মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য যাবতীয় কষ্ট হাসিমুখে বরণ করতেন। মানব জাতির কল্যাণের জন্য তিনি তাদেরকে আল্লাহর পয়গাম কবুল করার আহ্বান জানাতেন। কিন্তু তারা তাঁর বাণীকে স্বাগতম জানানোর পরিবর্তে তাঁকে নানাবিধ কষ্টদান করত। অতীতের জাতিসমূহ তাদের পয়গম্বরগণের সাথে যেরূপ মন্দ আচরণ করত, তাঁর জাতিও তাঁর সঙ্গে সেরূপ আচরণ করেছে। তাঁর পয়গাম প্রত্যাখ্যান করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, তারা তাঁকে বিভিন্নভাবে কষ্ট দেয়ার চেষ্টা করেছে। শেয়াবে আবি তালিবে তাঁকে নযরবন্দী করে রেখেছে। বন্দী জীবনের অবসানের পর তিনি পার্শ্ববর্তী শহর তায়েফে গমন করেও কোন ফল পাননি। আল্লাহর দীন কবুল করার জন্য তিনি যে আহ্বান জানিয়েছেন তার জবাব দেশবাসী নির্মম প্রত্যাখ্যান ও অসহনীয় নির্যাতনের মাধ্যমে দিয়েছে। তাঁকে হত্যা করার জন্য তারা উদ্যত হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে তিনি স্বদেশ ত্যাগ করেছেন। দূরবর্তী মদীনায় গিয়েও তিনি শান্তি পাননি। মক্কার শাসকগণ তাঁর বিরুদ্ধে সুদীর্ঘ তের বছর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ অভিযান পরিচালনা করেছে। এ সত্ত্বেও নবী করীম ﷺ তাঁর কওমের মানুষকে ভালবাসতেন। তিনি আশঙ্কা করতেন যে, তাঁর জাতি আল্লাহর দীনকে প্রত্যাখ্যান করায় আল্লাহর গযব তাদের উপর নেমে আসতে পারে। তাই আসমান মেঘাচ্ছন্ন হলে তিনি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে আল্লাহর কাছে মুনাজাত করতেন তাদের মঙ্গলের জন্য। হাদীসে সূরা আল-আহকাফের ২৪ নং আয়াতের যে উল্লেখ রয়েছে, তাতে আদ জাতির ধ্বংসকালীন অবস্থার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। আল্লাহর আযাব মেঘের আকৃতি ধারণ করে তাদের উপর নাযিল হয়েছিল। আদ জাতির অবস্থা বর্ণনা করে প্রকারান্তরে নবী ﷺ-এর বিরুদ্ধবাদীদেরকে সতর্ক করা হয়েছে যে, যদি তারা নবী ﷺ-এর বিরোধিতা ত্যাগ না করে, তাহলে তাদের উপরও আল্লাহর আযাব যে কোন সময় নাযিল হতে পারে। পবিত্র কুরআনের একাধিক স্থানে এ ধরনের সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। তাই মেঘ দেখলে নবী করীম ﷺ খুব বেশি ভীত-সন্ত্রস্ত হতেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)