মা'আরিফুল হাদীস

ঈমান অধ্যায়

হাদীস নং: ৭১
ঈমান অধ্যায়
মৃত্যুর পর আলমে বারযাখ, কিয়ামত

কয়েকটি নীতিগত কথা:
মৃত্যুর পরবর্তী অবস্থা সংক্রান্ত হাদীস অধ্যয়ন এবং তার অর্থ অনুধাবন করার জন্য কয়েকটি নীতিগত কথা স্মরণ রাখার প্রয়োজন রয়েছে। এসব কথা ভালভাবে উপলব্ধি করা হলে মরণোত্তর অবস্থা সংক্রান্ত হাদীসের বিষয়বস্তু সম্পর্কে এমন কোন সন্দেহ ও ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি হবে না যা বর্তমান কালে অজ্ঞতার কারণে অনেকের অন্তরে সৃষ্ট হয়ে থাকে।

(১) আম্বিয়া আলাইহিমুসসালাম যে বিশেষ দায়িত্ব সম্পাদন করার জন্য দুনিয়ায় প্রেরিত হয়েছেন সে সম্পর্কে আমাদেরকে অবহিত করা একান্ত আবশ্যক। এসব বিষয় আমাদের জন্য খুব জরুরী হলেও আমরা তা আমাদের বুদ্ধি এবং জ্ঞানের দ্বারা অবগত হতে পারি না। অর্থাৎ আমাদের বুদ্ধি এবং জ্ঞান বহির্ভূত।

(২) আম্বিয়ায়ে কিরামের জন্য নির্ভুল এবং অকাট্য জ্ঞানের এমন এক উৎস রয়েছে যা সাধারণ মানুষের নিকট নেই। ওহীর মারফত তাঁরা এমন জ্ঞান হাসিল করে থাকেন যা আমরা আমাদের দৃষ্টি, শ্রুতি, বুদ্ধি এবং চেতনার দ্বারা লাভ করতে পারি না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, দূরবিক্ষণযন্ত্রের দ্বারা যা দেখা যায় খালি চোখে তা দেখা যায় না।

(৩) কোন নবীকে নবী হিসেবে মেনে নেয়া এবং তাঁর উপর ঈমান আনার অর্থ হল, আমরা পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে একথা কবুল করে নিয়েছি যে, তিনি ওহীর মারফত আমাদেরকে যে জিনিস জ্ঞাত করেন এবং যার কোন জ্ঞান আমাদের নেই তার প্রতিটি অক্ষর সত্য এবং তাতে সামান্যতম সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।

(৪) আম্বিয়ায়ে কিরাম এমন কোন কথা বলেন না যা বুদ্ধির দিক থেকে অসম্ভব। অবশ্য কোন কোন বিষয় কোন কোন ব্যক্তির বোধগম্য নাও হতে পারে। এ ধরনের হওয়াটাই স্বাভাবিক। যদি আম্বিয়ায়ে কিরাম শুধু এমন সব কথা বলবেন যা আমরা নিজেরা চিন্তাভাবনা করে সহজে খুঁজে নিতে পারি, তাহলে তাদের প্রয়োজনীয়তা কোথায় বাকী থাকে।

(৫) আম্বিয়ায়ে কিরাম মরণোত্তর জীবন-আলমে বরযখ এবং আলমে আখিরাত সম্পর্কে যা বলেছেন তা আমাদের বুদ্ধি বিবেচনার নিকট অসম্ভব অনুমিত হয় না। অবশ্য আমরা নিজেরা বুদ্ধি-বিবেচনা করে তা জ্ঞাত হতে সক্ষম নই এবং পার্থিব দুনিয়াতে সে সব জিনিসের অস্তিত্ব বিদ্যমান না থাকার কারণে আমরা তা এমনভাবে জানতে পারি না যেভাবে অস্তিত্ব বিদ্যমান জিনিস সম্পর্কে জানতে পারি।

(৬) চোখ, কান, নাক, বুদ্ধি, অনুভূতি প্রভৃতি জ্ঞান অর্জন করার প্রত্যক্ষ মাধ্যম হলেও এসবের শক্তি সীমিত এবং ক্ষেত্রও সীমাবদ্ধ। আধুনিক যন্ত্রপাতির বাহ্যিক প্রয়োগের মাধ্যমে এসবের শক্তি বৃদ্ধি করা যায়। যেমন পানি বা রক্তের মধ্যে যে জীবাণু রয়েছে তা অনুবিক্ষণ যন্ত্রের দ্বারা আমরা দেখতে পারি, অথচ খালি চোখে তা আমরা দেখতে পারি না। বেতারের মাধ্যমে সহস্র মাইল দূরবর্তী শব্দ আমাদের কান শুনতে পায়। অনুরূপভাবে চোখ কানের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানের দ্বারা যতটুকু চিন্তা করা যায় তার চেয়ে ঢের বেশী একজন শিক্ষিত লোক পুথিগত তথ্যের সাহায্যে চিন্তাভাবনা করতে সক্ষম। এসব উপমা থেকে আমরা একথা বুঝতে পারলাম যে, আমরা দেখতে পাইনি বা আমরা শুনতে পাইনি, বা আমরা বুঝতে অক্ষম বিধায় কোন জিনিসের অস্তিত্ব এবং হাকীকত অস্বীকার করা চরম মূর্খতা।

আল্লাহ সুবহানাহু বলেন,

وَمَاۤ اُوۡتِيۡتُمۡ مِّنَ الۡعِلۡمِ اِلَّا قَلِيۡلًا

"আমি তোমাদেরকে অতি অল্প জ্ঞানই দান করেছি।" (সূরা বনী ইসরাঈল - ৮৫)

(৭) দুটো জিনিসের সমন্বয় রয়েছে মানুষের মধ্যে অর্থাৎ শরীর এবং রূহ। আমরা চোখের দ্বারা শরীরের অস্তিত্ব দেখতে পাই। কিন্তু চোখের দ্বারা রূহ না দেখতে পেলেও তার অস্তিত্ব সম্পর্কে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে। মানুষের দেহ এবং রূহের পারস্পরিক সম্পর্ক এরূপ যে, দুনিয়ার যাবতীয় বিপদ-মুসিবত, আরাম-আয়েশ, স্বাদ প্রভৃতি সরাসরি শরীরের উপর প্রভাব বিস্তার করে কিন্তু রূহ প্রভাবিত হতে বাধ্য হয়। শরীর আঘাতের দ্বারা আহত বা আগুনের দ্বারা দগ্ধ হলে শরীর প্রত্যক্ষভাবে আক্রান্ত এবং ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাতে রূহও কষ্ট পেয়ে থাকে। অনুরূপভাবে খানাপিনার মাধ্যমে দেহ সরাসরি স্বাদ গ্রহণ করে থাকলে রূহ তারও আস্বাদন পেয়ে থাকে।

মোটকথা আমাদের এ পৃথিবীতে দেহ যেন কার্যসম্পাদনকারী এবং রুহ তার অধীন। কিন্তু আলমে বারযাখ সম্পর্কে কুরআন এবং হাদীসে যা বর্ণনা পাওয়া যায় তা সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করলে এটা অনুমিত হয় যে সেখানে ব্যাপারটি সম্পূর্ণ বিপরীত। আলমে বারযাখে যা ঘটবে তা রূহের উপর ঘটবে এবং শরীর তা সহ্য করতে বাধ্য হবে। সম্ভবতঃ এ বিষয়টি সহজে উপলব্ধি করানোর জন্য আল্লাহ আমাদের জন্য স্বপ্নের ব্যবস্থা করেছেন। বুদ্ধি বিবেচনা সম্পন্ন মানুষ এ ধরনের স্বপ্ন জীবনে অনেক বার দেখে থাকে যাতে সে আরাম বোধ করে বা কষ্ট পেয়ে থাকে। কিন্তু এ কষ্ট বা আরাম প্রত্যক্ষভাবে রূহ লাভ করে থাকে। শরীরের উপর শুধুমাত্র প্রভাব পড়ে থাকে। যখন কোন ব্যক্তি স্বপ্ন দেখে যে কোন আহার্যবস্তু খাচ্ছে তখন সে এরূপ দেখে না যে খাদ্য তার রূহ খাচ্ছে বরং সে দেখে যে মুখের দ্বারা সর্বদা খানাপিনা করে থাকে সেইমুখের দ্বারাই খাদ্য গ্রহণ করছে অনুরূপ ভাবে সে যদি দেখে যে তাকে আঘাত করা হয়েছে, তাহলে সে এরূপ অনুভব করে না যে তার রূহের উপর আঘাত করা হয়েছে বরং সে অনুভব করে যে তার শরীরের উপর আঘাত করা হয়েছে। অথচ স্বপ্নে যা ঘটে তা শরীরের উপর ঘটেনা বরং কহের উপর ঘটে থাকে। শরীরের উপর প্রভাব পড়ে থাকে।

অবশ্য কোন কোন সময় স্বপ্নে দৃষ্ট ঘটনা শরীরের উপর এমন প্রভাব ও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে যে, স্বপ্ন দর্শনকারী ব্যক্তি জাগ্রত হওয়ার পরও শরীরের উপর তার প্রভাব অনুভব করে থাকে। স্বপ্ন দর্শনকারীর উপর যা ঘটে থাকে তা তার পাশের লোকও টের পায় না। কারণ সরাসরি নিজের শরীরের উপর যা ঘটে থাকে তাই মানুষ টের পেতে পারে। মোটকথা মৃত্যুর পর কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের উপর যা ঘটবে তা রূহের উপর সংঘটিত হবে এবং শরীর বাধ্য হয়ে তাতে শরীক থাকবে। স্বপ্নের উদাহরণের দ্বারা 'আলমে বারযাখ' সম্পর্কে ধারণা করা কোন জ্ঞানী ব্যক্তির পক্ষে মোটেই কঠিন নয়।

আশা করা যায় যে, দুনিয়া এবং আলমে বারযাখের এ পার্থক্য অনুধাবন করার পর কবরের সাওয়াল-জাওয়াব এবং আযাব সম্পর্কিত হাদীস দুর্বল ঈমানদার এবং অল্প জ্ঞানের অধিকারীদের মনে যে ধরনের সন্দেহ ও ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করে থাকে তা সৃষ্ট হবে না।

মৃত্যুর পর আলমে বারযাখ: কবরে মৃত ব্যক্তির সওয়াল-জওয়াব
৭১. হযরত বারাআ ইবনে আযিব (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ দু'জন ফিরিশেতা তার (মৃত ব্যক্তির) কাছে আসেন এবং তাকে উপবেশন করান, অতঃপর তাকে সাওয়াল করেন। তোমার রব কে? সে (মুমিন ব্যক্তি) জবাব দেয়, আল্লাহ আমার রব। তাঁরা তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার দীন কি? সে জবাব দান করে: আমার দীন ইসলাম। অতঃপর তাঁরা তাকে প্রশ্ন করেন: তোমাদের মধ্যে যাকে প্রেরণ করা হয়েছিল তাঁর সম্পর্কে তোমার ধারণা কি? সে জবাব দেয়। তিনি আল্লাহর রাসূল। তাঁরা তাকে জিজ্ঞাসা করেন। কে তোমাকে বলেছে? সে জবাব দেয়: আল্লাহর কিতাব পড়েছি, অতঃপর ঈমান এনেছি এবং তার সত্যতা স্বীকার করেছি। আল্লাহর রাসূল বলেনঃ ইহা মুমিন ব্যক্তির বক্তব্য। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন, "আল্লাহ মুমিন ব্যক্তিদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে সত্য কথার উপর অবিচল রাখবেন।" -সূরা ইবরাহীম - ২৭

রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন: অতঃপর আসমান থেকে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করেন: আমার বান্দাহ সত্য বলেছে, তার জন্য জান্নাতের ফরাশ বিছিয়ে দাও, জান্নাতের বস্ত্রে তাকে আচ্ছাদিত কর এবং জান্নাতের একটি দরজা তার দিকে খুলে দাও। অতঃপর তার জন্য দরজা খুলে দেয়া হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ তাতে তার কাছে (জান্নাত থেকে) হাওয়া ও সুগন্ধি আসে এবং জান্নাতের দিকে তার দৃষ্টিশক্তি সম্প্রসারিত করা হয়।

অতঃপর কাফেরের মৃত্যুর উল্লেখ করে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন: তার রূহ তার শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয়। দু'জন ফিরিশতা তার কাছে আসেন এবং তাকে বসান। অতঃপর তাঁরা তাকে প্রশ্ন করেন: তোমার রব কে? সে জবাব দেয়: হায়! হায়! আমি কিছু জানি না। ফিরিশেতা জিজ্ঞাসা করেন, তোমার দীন কি? সে জবাব দেয়, হায়! হায়! আমি কিছু জানি না। অতঃপর তাঁরা তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের মধ্যে যাকে প্রেরণ করা হয়েছিল তাঁর সম্পর্কে তোমার ধারণা কি? সে বলে, হায়! হায়! আমি কিছু জানি না। অতঃপর আসমান থেকে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করেন: সে মিথ্যা বলছে। তার জন্য দোযখের ফরাশ বিছাও, তাকে দোযখের বস্ত্রে আচ্ছাদিত কর এবং তার জন্য দোযখের দিকে দরজা খুলে দাও। অতঃপর তার কাছে দোযখের গরম হাওয়া আসতে থাকে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন: তার জন্য করব এমন সংকীর্ণ করা হবে যে, বুকের এক পাঁজর অপর পাঁজরের সাথে মিশে যাবে। আর তার জন্য এমন এক ফিরিশতা নিয়োগ করা হবে, যে কিছু দেখবেনা ও শুনবেনা এবং তার কাছে লোহার এমন এক মুগুর থাকবে যা দিয়ে পাহাড়ে আঘাত করলে তা বিচূর্ণ হয়ে যাবে। ফিরিশতা তাকে লোহার মুগুর দিয়ে আঘাত করবেন এবং সে এমন চিৎকার করবে যে, মানুষ ও জিন ব্যতীত পূর্ব পশ্চিমের মধ্যবর্তী সকল প্রাণী তা শুনতে পাবে। সে মাটি হয়ে যাবে অতঃপর তাতে রূহ ফিরিয়ে দেয়া হবে। -মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ
کتاب الایمان
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: يَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولَانِ لَهُ: مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ: رَبِّيَ اللَّهُ، فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ: دِينِيَ الْإِسْلَامُ، فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟ " قَالَ: " فَيَقُولُ: هُوَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَقُولَانِ: وَمَا يُدْرِيكَ؟ فَيَقُولُ: قَرَأْتُ كِتَابَ اللَّهِ فَآمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ «زَادَ فِي حَدِيثِ جَرِيرٍ» فَذَلِكَ قَوْلُ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ {يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا} الْآيَةُ قَالَ: " فَيُنَادِي مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ: أَنْ قَدْ صَدَقَ عَبْدِي، فَأَفْرِشُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ، وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى الْجَنَّةِ، وَأَلْبِسُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ " قَالَ: «فَيَأْتِيهِ مِنْ رَوْحِهَا وَطِيبِهَا» قَالَ: «وَيُفْتَحُ لَهُ فِيهَا مَدَّ بَصَرِهِ» قَالَ: «وَإِنَّ الْكَافِرَ» فَذَكَرَ مَوْتَهُ قَالَ: " وَتُعَادُ رُوحُهُ فِي جَسَدِهِ، وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُولَانِ: لَهُ مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ: هَاهْ هَاهْ هَاهْ، لَا أَدْرِي، فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ: هَاهْ هَاهْ، لَا أَدْرِي، فَيَقُولَانِ: مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟ فَيَقُولُ: هَاهْ هَاهْ، لَا أَدْرِي، فَيُنَادِي مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ: أَنْ كَذَبَ، فَأَفْرِشُوهُ مِنَ النَّارِ، وَأَلْبِسُوهُ مِنَ النَّارِ، وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى النَّارِ " قَالَ: «فَيَأْتِيهِ مِنْ حَرِّهَا وَسَمُومِهَا» قَالَ: «وَيُضَيَّقُ عَلَيْهِ قَبْرُهُ حَتَّى تَخْتَلِفَ فِيهِ أَضْلَاعُهُ» زَادَ فِي حَدِيثِ جَرِيرٍ قَالَ: «ثُمَّ يُقَيَّضُ لَهُ أَعْمَى أَبْكَمُ مَعَهُ مِرْزَبَّةٌ مِنْ حَدِيدٍ لَوْ ضُرِبَ بِهَا جَبَلٌ لَصَارَ تُرَابًا» قَالَ: «فَيَضْرِبُهُ بِهَا ضَرْبَةً يَسْمَعُهَا مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ إِلَّا الثَّقَلَيْنِ فَيَصِيرُ تُرَابًا» قَالَ: «ثُمَّ يُعَادُ فِيهِ الرُّوحُ» (رواه احمد وابو داؤد)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

উক্ত হাদীসের আলোকে এখন প্রশ্ন হল কবরের যিন্দেগী বলতে কি বুঝায়? বা যাকে কবরের মধ্যে দাফন করা হয় না, যার মৃতদেহকে পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয় বা শ্মশানে জ্বালিয়ে দেয়া হয় এবং দেহ ভস্মকে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেয়া হয় তাকে কি করে কবরের যিন্দেগীর বর্ণিত শাস্তি বা পুরস্কার দেয়া হবে?

কবরের আযাব সম্পর্কে যে সব হাদীস বর্ণিত হয়েছে, সে সম্পর্কে ব্যাখ্যাকারীগণ বলেন: কবরের আযাবের অর্থ, আলমে বারযাখের আযাব। মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত বিশাল যিন্দেগীকে বারযাখের যিন্দেগী বলা হয়। কুরআনের বিভিন্ন স্থানে তার উল্লেখ রয়েছে। সূরা 'আল-মুমিনুন'-এ বারযাখের যিন্দেগী সম্পর্কে বলা হয়েছে,

وَمِن وَرَائِهِم بَرْزَخٌ إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ -

"তাদের (মৃত ব্যক্তিদের) সামনে রয়েছে বারযাখ যা তাদেরকে পুনরত্থিত করা পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে।" (সূরা 'আল-মুমিনুন' - ১০০)
অর্থাৎ আল্লাহ্ মৃত ব্যক্তি ও দুনিয়ার মধ্যে এক পর্দা টেনে দেন-যার ফলে সে দুনিয়ার দিকে প্রত্যাবর্তন করতে পারে না এবং কিয়ামত পর্যন্ত দুনিয়া ও আখিরাতের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করতে থাকে।

আলমে বারযাখের প্রমাণ সূরা ইয়াসীনেও রয়েছে। সত্যকথা বলার কারণে এক মুমিনকে তার জাতির লোকেরা হত্যা করে। মৃত্যুর পর আল্লাহ্ তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেন। বেহেশত লাভের পর তিনি তার জাতির জন্য মঙ্গল কামনা করতে থাকেন। বলা হয়েছে,

قِيلَ ادْخُلِ الْجَنَّةَ ۖ قَالَ يَا لَيْتَ قَوْمِي يَعْلَمُونَ (26) بِمَا غَفَرَ لِي رَبِّي وَجَعَلَنِي مِنَ الْمُكْرَمِينَ (27)

"তাকে বলা হলো, জান্নাতে প্রবেশ করো, সে বলে উঠলো হায়! আমার সম্প্রদায় যদি জানতে পারতো। (২৬) কিরূপ আমার প্রতিপালক আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিত করেছেন। (২৭)" (সূরা ইয়াসীন - ২৬-২৭)

মুসনাদে আহমদ গ্রন্থে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা)-এর সূত্রে বর্ণিত আছে। তোমাদের মধ্যে যার মৃত্যু হোক না কেন তাকে সকাল-সন্ধ্যা তার শেষ বাসস্থান দেখানো হয়। সে জান্নাতী কিংবা জাহান্নামী হোক তাকে বলা হয় কিয়ামতের দিন আল্লাহ কর্তৃক তোমার পুনরুত্থানের এ বাসস্থান হবে তোমার।

কিয়ামত অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত মৃত ব্যক্তি আলমে বারযাখে অবস্থান করবে। তাই তার দেহ পানিতে ভাসুক বা মাটিতে নষ্ট হোক বা জ্বালানো হোক, তাতে কিছু আসে যায় না। সেখানে রূহ হয় শাস্তি, নয় আরাম উপভোগ করবে। মৃত্যুর সাথে সাথে যে সাওয়াল-জাওয়াব হয় তা আলমে বারযাখে হয়ে থাকে। মৃত ব্যক্তির রূহকে সাওয়াল করার জন্য আল্লাহ আলমে বারযাখে কবরের অবস্থা সৃষ্টি করতে পারেন। এবং সাময়িকভাবে রূহকে দেহের ভেতর রাখতে পারেন বা রূহ মনে করতে পারে যে, সে দেহের মধ্যে রয়েছে। দেহ ছাড়া রূহ কিভাবে সুখ-শান্তি অনুভব করবে তা 'স্বপ্ন' থেকে সহজে বুঝা যায়।

স্বপ্নে আমাদের রূহ দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়ায় এবং আমাদের দেহ বিছানায় পড়ে থাকে। আলমে বারযাখে যে শাস্তি বা আরাম দেয়া হবে তা স্বপ্নের মত অনুভবের পর্যায়ে থাকবে না, বরং তা হবে বাস্তব। নেক লোকের জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হবে এবং মন্দলোকের জন্য জাহান্নামের দরজা খুলে দেয়া হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ মা'আরিফুল হাদীস (মাওলানা মনযূর নোমানী রহ.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান