মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)

নবীগণ (আ) সম্পর্কিত তথ্যাবলী অধ্যায়

হাদীস নং: ৮৩
নবীগণ (আ) সম্পর্কিত তথ্যাবলী অধ্যায়
পরিচ্ছেদ : আল্লাহর নবী ইয়াহইয়া (আ) কর্তৃক বনী ইসরাঈলকে উপদেশ
৮৩. হারিছ আল-আশ'আরী (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ্ তা'আলা ইয়াহইয়া ইবন যাকরিয়াকে (আ) পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন, যাতে তিনি নিজে তা আমল করেন এবং বনী ইসরাঈলকে তা আমল করার নির্দেশ দান করেন। কিন্তু তিনি (তা প্রচারে) প্রায় বিলম্ব করে ফেলেছিলেন। এমতাবস্থায় ঈসা (আ) তাঁকে বললেন, আপনাকে পাঁচটি বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হলো, যাতে করে আপনি নিজে আমল করতে পারেন এবং বনী ইসরাঈলকেও তা আমল করতে নির্দেশ দেন। (কিন্তু আপনি এখনও তা প্রচার করেননি)। এখন আপনি বলুন, আল্লাহর সেই নির্দেশ আপনি পৌছাবেন, না কি আমি পৌঁছে দেব? ইয়াহইয়া (আ) তাঁকে বললেন, প্রিয় ভাই, আপনি যদি আমার আগে এই নির্দেশ প্রচার করেন তাহলে আমার ভয় হয় আমাকে শাস্তি প্রদান করা হবে অথবা যমিন আমাকে গ্রাস করে ফেলবে। অতঃপর ইয়াহইয়া (আ) বনী ইসরাঈলকে বাইতুল মাকদিস-এ একত্রিত করেন। মসজিদ লোকে ভর্তি হয়ে যায়। তিনি মিম্বরে বসে আল্লাহ্ তা'আলার প্রশংসা ও গুণকীর্তন করেন এবং সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা পাঁচটি বিষয়ে আমাকে নির্দেশ প্রদান করেছেন, যাতে আমি নিজে আমল করি এবং তোমাদেরকেও সেই অনুসারে আমল করার নির্দেশ প্রদান করি। সর্বপ্রথম নির্দেশ, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কোন শরীক করবে না। এর উদাহরণ হচ্ছে- কোন লোক তার সৎ উপায়ে অর্জিত রূপা অথবা সোনা দিয়ে একটি দাস ক্রয় করলো। দাসটি কাজ-কর্ম করছে ঠিকই, কিন্তু তার কামাই জমা দিচ্ছে মনিবের কাছে নয় বরং অন্যের কাছে। তোমাদের কে এমন আছ যে, তার ক্রীতদাস এইরূপ হোক, তা চাইবে? নিশ্চয় তোমাদের রব আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদের সৃষ্টি করছেন তোমাদেরকে রিযিক দান করেছেন। সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। আমি তোমাদেরকে আরো নির্দেশ দিচ্ছি সালাত কায়েম করা সম্পর্কে। নিশ্চয় আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর চেহারা তথা মনোযোগ নিবিষ্ট রাখেন তাঁর সালাতরত বান্দার চেহারার প্রতি-যতক্ষণ সেই বান্দা এদিক-সেদিক দৃষ্টিপাত না করে। সুতরাং তোমরা যখন সালাত আদায় করবে, তখন এদিক-সেদিক দৃষ্টিপাত করবে না। আর তোমাদেরকে সিয়াম পালন সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছি। কারণ, এর উদাহরণ হচ্ছে, সেই ব্যক্তির ন্যায়, যার কাছে একটি মিশকের পাত্র রয়েছে, তার সঙ্গী দলের প্রত্যেকেই সেই মিশকের সুগন্ধি নিতে পারছে। (জেনে রাখ) রোযাদার ব্যক্তির মুখের গন্ধ আল্লাহ্ তা'আলার কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়ে উত্তম। আর আমি তোমাদেরকে সাদকা প্রদান সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছি। কারণ এর উদাহরণ হচ্ছে সেই ব্যক্তির ন্যায়, যাকে শত্রুপক্ষ বন্দী করে ফেলেছে, তার দুই হাত গর্দানের কাছে নিয়ে শক্ত করে বেঁধে নিয়েছে এবং তাকে হত্যার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। এমতাবস্থায় সে তাদেরকে বললো, তোমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য এমন কিছু আছে কি যদ্বারা আমি মুক্তিপণ দিয়ে তোমাদের কাছ থেকে রেহাই পেতে পারি? এইভাবে সেই ব্যক্তি অল্প ও বিস্তর পণ্যের মাধ্যমে শত্রুদের কাছ থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিল। আর আমি তোমাদেরকে অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকর (স্মরণ) করতে নির্দেশ দিচ্ছি। কারণ এর উদাহরণ সেই ব্যক্তির ন্যায়, যাকে শত্রু ধাওয়া করেছে, সে দৌড়ে এসে দ্রুত একটি দুর্গে আশ্রয় নেয়। (জেনে রেখ) বান্দা যখন আল্লাহ্ তা'আলার স্মরণে (যিকিরে) মগ্ন থাকে, তখন সে শয়তান থেকে সেই দূর্গে আশ্রয় গ্রহণকারী ব্যক্তির চেয়েও অধিক নিরাপদ থাকে। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আমিও তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ে নির্দেশ প্রদান করছি, যা আল্লাহ্ তা'আলা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে- জামা'আত, শ্রবণ, আনুগত্য, হিজরত ও জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ। কেননা, যে ব্যক্তি জামাআত থেকে এক বিঘত (অর্ধেক হাত) পরিমাণ দূরে বের হয়ে যায়, সে যেন তার গলা থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলল (অর্থাৎ ইসলামের বিধিবিধান থেকে বের হয়ে গেল) যতক্ষণ না সে ফিরে আসে। আর যে ব্যক্তি অজ্ঞতার যুগের সম্বোধন দ্বারা কাউকে আহ্বান করে, সে জাহান্নামের লাশ হবে। লোকজন জিজ্ঞেস করলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। যদিও সে রোযা ও সালাত পালন করে? রাসূল (ﷺ) বলেন, হ্যাঁ রোযা ও সালাত পালন করলেও এবং নিজেকে একজন মুসলিম মনে করলেও (জাহান্নামে যাবে)। সুতরাং তোমরা মুসলিমগণকে ঐসব নামে আহ্বান করো যে নামে আল্লাহ তাদেরকে নামকরণ করেছেন, তথা মুসলিম, মুমিন, আল্লাহর বান্দা।
(এই হাদীসের বরাত ও ব্যাখ্যার জন্য দ্রঃ পৃ. ১৯৭; হাদীস নং ৭৯।)
كتاب أحاديث الأنبياء عليهم وعلى نبينا الصلاة والسلام
باب وصية نبى الله يحي لبنى اسرائيل
عن الحارث الأشعرى (4) أن نبى الله صلي الله عليه وسلم قال إن الله عز وجل يحي بن زكريا، بخمس كلمات أن يعمل بهن وأن يأمر بنى اسرائيل أن يعملوا بهن فكاد أن يبطئ، فقال له عيسى إنك قد أمرت بخمس كلمات أن تعمل بهن وأن تأمر بنى اسرائيل أن يعملوا بهن، فأمَّا أن تبلغهن وإمِّا أبلغهن، فقال له يا أخى أنى أخشى إن سبقتنى أن أعذب أو يخسف بى، قال فجمع يحي بنى أسرائيل فى بيت المقدس حّى امتلأ المسجد وقعد على الشرف فحمد الله وأثنى عليه ثم قال إن الله عز وجل أمرنى بخمس كلمات أن أعمل بهن وآمركم أن تعملوا بهن، أو لهن أن تعبدوا الله ولا تشركوا به شيئا، فان مثل ذلك متل رجل أشترى عبدا من خالص ماله بورق أو ذهب فجعل يعمل ويؤدى عمله الى غير سيده فأيكم يسره أن يكون عبده كذلك؟ وإن ربكم عز وجل خلقكم ورزقكم فاعبدوه ولا تشركوا به شيئا، وآمركم بالصلاة فان الله عز وجل ينصب وجهه بوجه عبده ما لم يلتفت، فاذا صليتم فلا تلتفتوا، وآمركم بالصيام فان مثل ذلك كمثل رجل معه صرة من مسك فى عصابة كلهم يجد ريح المسك وان خلوف فم الصائم أطيب عند الله من ريح المسك، وآمركم بالصدقة فان مثل ذلك كمثل رجل أسره العدو فشدوا يديه الى عنقه وقربوه ليضربوا عنقه فقال هل لكم أن أفتدى نفسى منكم؟ فجعل يفتدى نفسه منهم بالقليل والكثير حتى فك نفسه، وآمركم بذكر الله كثيرا وإن مثل ذلك كمثل رجل طلبه العدو سراعا فى أثره فأتى حصنا حصينا فتحصن فيه، وإن العبد أحصن ما يكون من الشيطان إذا كان فى ذكر الله عز وجل، قال وقال رسول الله صلى الله عليه وسلم أنا آمركم بخمس: الله أمرنى بهن، بالجماعة والسمع والطاعة، والهجرة والجهاد فى سبيل الله، فأنه من خرج من الجماعة قِيد شبر فقد خلع ربقة الاسلام من عنقه الى أن يرجع، ومن دعا بدعوة الجاهلية فهو من حثاه جهنم، قالوا يا رسول الله وإن صام وصلى؟ قال وأن صام وصلى وزعم أنه مسلم، فادعوا المسلمين بما سماهم المسلمين المؤمنين عباد الله عز وجل
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ - হাদীস নং ৮৩ | মুসলিম বাংলা