মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)
নবীগণ (আ) সম্পর্কিত তথ্যাবলী অধ্যায়
হাদীস নং: ৭১
নবীগণ (আ) সম্পর্কিত তথ্যাবলী অধ্যায়
পরিচ্ছেদ : দাউদ (আ)-এর মর্যাদা, তাঁর কিরাআত ও মধুর কণ্ঠস্বর
(৭১) আবূ হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন, কিরাআত যাবুর পাঠকে দাউদ (আ) এর জন্য সহজ করে দেওয়া হয়েছিল। তিনি তাঁর চতুষ্পদ জন্তুকে (সওয়ারী) জিন পরানোর নির্দেশ দিতেন। আর তা পরানোর আগেই তার কিতাব পাঠ শেষ হয়ে যেত। আর তিনি তাঁর স্বহস্তে উপার্জিত খাবার ভিন্ন অন্য খাবার গ্রহণ করতেন না।
(বুখারী ও অন্যান্য। হাদীসটি গরীব)
(বুখারী ও অন্যান্য। হাদীসটি গরীব)
كتاب أحاديث الأنبياء عليهم وعلى نبينا الصلاة والسلام
باب ما جاء فى فضله وقراءته وحسن صوته
عن أبى هريرة (1) عن رسول الله صلي الله عليه وسلم قال خفف على داود عليه السلام القراءة (2) وكان يأمر بدابته فسرج وكان يقرأ القرآن قبل أن تسرج دابته (3) وكان لا يأكل إلا من عمل يده
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম ছিলেন বনী ইসরাঈলের একজন নবী। তিনি হযরত ইয়া'কুব আলাইহিস সালামের পুত্র ইয়াহুদার বংশে জন্মগ্রহণ করেন। এ বংশে বহু নবীর জন্ম হয়েছে। তাঁর আগে এ বংশে কেউ রাজত্ব লাভ করেনি। রাজত্বের অধিকারী হতো হযরত ইয়া'কূব আলাইহিস সালামের অপর পুত্র ইফরাঈমের বংশ। এভাবে নবুওয়াত ও রাজত্ব বনী ইসরাঈলের দুই শাখায় ভাগ হয়ে গিয়েছিল। সর্বপ্রথম হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের মধ্যেই রাজত্ব ও নবুওয়াত উভয় মর্যাদার সম্মিলন ঘটে। কুরআন মাজীদে তাঁকে 'খলীফা' উপাধিতেও ভূষিত করা হয়েছে।
তিনি বনী ইসরাঈলের বাদশা হয়েছিলেন খৃষ্টপূর্ব আনুমানিক ১০০০ সনের দিকে। তখন ফিলিস্তীনের অধিকাংশ এলাকা আমালিকা বংশের দখলে ছিল। তাদের দখল থেকে ফিলিস্তীনকে মুক্ত করার জন্য আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তালুতকে বনী ইসরাঈলের বাদশা বানিয়ে দেওয়া হয়। তিনি তার বাহিনী নিয়ে আমালিকা বংশের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম তখন এক নওজোয়ান। তিনিও তালুতের নেতৃত্বে এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উভয়পক্ষে ঘোরতর যুদ্ধ হয়। শেষপর্যন্ত আমালিকা বংশের পরাজয় ঘটে। তাদের রাজা নিহত হয়। তার নাম ছিল জালুত। তাকে হত্যা করেছিলেন হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম। তালুতের মৃত্যুর পর হযরত দাউদ আলাইহিস সালামই ফিলিস্তীনের রাজত্ব লাভ করেন। তিনি খৃষ্টপূর্ব আনুমানিক ৯৬৩ সনে ইন্তিকাল করেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ১০০ বছর। তিনি ৪০ বছর ফিলিস্তীন শাসন করেন।
তাঁর একটি মু'জিযা ও অলৌকিকত্ব ছিল লোহা নরম হয়ে যাওয়া। তাঁর হাতের স্পর্শমাত্র শক্ত লোহা মোমের মতো নরম হয়ে যেত। তিনি তা দ্বারা বর্ম ও বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করতেন। কুরআন মাজীদে তাঁর সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-
وَاذْكُرْ عَبْدَنَا دَاوُودَ ذَا الْأَيْدِ إِنَّهُ أَوَّابٌ (17) إِنَّا سَخَّرْنَا الْجِبَالَ مَعَهُ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِشْرَاقِ (18) وَالطَّيْرَ مَحْشُورَةً كُلٌّ لَهُ أَوَّابٌ (19) وَشَدَدْنَا مُلْكَهُ وَآتَيْنَاهُ الْحِكْمَةَ وَفَصْلَ الْخِطَابِ (20)
এবং স্মরণ করো আমার বান্দা দাউদ (আলাইহিস সালাম)-কে, যে ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। নিশ্চয়ই সে ছিল অত্যন্ত আল্লাহ-অভিমুখী। আমি পর্বতমালাকে নিয়োজিত করেছিলাম, যাতে তারা তার সঙ্গে সন্ধ্যাবেলা ও সূর্যোদয়কালে তাসবীহ পাঠ করে। এবং পাখিদেরকেও, যাদেরকে একত্র করে নেওয়া হতো। তারা তার সঙ্গে মিলে আল্লাহর (অভিমুখী হয়ে) যিকিরে লিপ্ত থাকত। আমি তার রাজত্বকে করেছিলাম সুদৃঢ় এবং তাকে দান করেছিলাম জ্ঞানবত্তা ও মীমাংসাকর বাগ্মিতা।(সূরা সোয়াদ (৩৮), আয়াত ১৭-২০)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
وَأَلَنَّا لَهُ الْحَدِيدَ (10) أَنِ اعْمَلْ سَابِغَاتٍ وَقَدِّرْ فِي السَّرْدِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا
আর আমি তার জন্য লোহাকে নরম করে দিয়েছিলাম। যাতে তুমি পূর্ণ মাপের বর্ম তৈরি কর এবং কড়াসমূহ জোড়ার ক্ষেত্রে পরিমাপ রক্ষা কর। আর তোমরা সকলে সৎকর্ম করো।(সূরা সাবা' (৩৪), আয়াত ১০-১১)
আলোচ্য হাদীছ বলছে যে, হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতে পরিশ্রম করে কামাই-রোজগার করতেন এবং তা দ্বারা জীবন নির্বাহ করতেন। অর্থাৎ একজন শক্তিশালী ও বড় বাদশা হওয়া সত্ত্বেও তিনি রাজকোষ থেকে কিছু গ্রহণ করতেন না। জীবন নির্বাহের জন্য নিজ রোজগারের উপর নির্ভর করতেন। কীভাবে রোজগার করতেন, তা এ আয়াত দ্বারা জানা যাচ্ছে। অর্থাৎ তিনি লোহা দ্বারা আসবাবপত্র তৈরি করে তার বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করতেন।
বর্তমানে যারা লোহার বা কামার, অর্থাৎ যারা লৌহকর্মকে পেশা বানিয়ে তা দ্বারা জীবন নির্বাহ করে, তাদের জন্য হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের জীবনে আদর্শ রয়েছে। তাদের পেশা কেবল বৈধই নয়; বরং একজন মহান নবীর কাজও বটে। তাই এরূপ পেশাদারদের অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখা উচিত নয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. জীবন নির্বাহের জন্য পরনির্ভরশীল না হয়ে নিজ হাতে পরিশ্রম করা উচিত।
খ. নিজ হাতে পরিশ্রম করে খাওয়া হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের আদর্শ।
গ. পূর্ববর্তী নবীগণও আমাদের জন্য অনুসরণীয়।
ঘ. কোনও বৈধ পেশাকে তুচ্ছ মনে করা উচিত নয়।
তিনি বনী ইসরাঈলের বাদশা হয়েছিলেন খৃষ্টপূর্ব আনুমানিক ১০০০ সনের দিকে। তখন ফিলিস্তীনের অধিকাংশ এলাকা আমালিকা বংশের দখলে ছিল। তাদের দখল থেকে ফিলিস্তীনকে মুক্ত করার জন্য আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তালুতকে বনী ইসরাঈলের বাদশা বানিয়ে দেওয়া হয়। তিনি তার বাহিনী নিয়ে আমালিকা বংশের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম তখন এক নওজোয়ান। তিনিও তালুতের নেতৃত্বে এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উভয়পক্ষে ঘোরতর যুদ্ধ হয়। শেষপর্যন্ত আমালিকা বংশের পরাজয় ঘটে। তাদের রাজা নিহত হয়। তার নাম ছিল জালুত। তাকে হত্যা করেছিলেন হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম। তালুতের মৃত্যুর পর হযরত দাউদ আলাইহিস সালামই ফিলিস্তীনের রাজত্ব লাভ করেন। তিনি খৃষ্টপূর্ব আনুমানিক ৯৬৩ সনে ইন্তিকাল করেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ১০০ বছর। তিনি ৪০ বছর ফিলিস্তীন শাসন করেন।
তাঁর একটি মু'জিযা ও অলৌকিকত্ব ছিল লোহা নরম হয়ে যাওয়া। তাঁর হাতের স্পর্শমাত্র শক্ত লোহা মোমের মতো নরম হয়ে যেত। তিনি তা দ্বারা বর্ম ও বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরি করতেন। কুরআন মাজীদে তাঁর সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-
وَاذْكُرْ عَبْدَنَا دَاوُودَ ذَا الْأَيْدِ إِنَّهُ أَوَّابٌ (17) إِنَّا سَخَّرْنَا الْجِبَالَ مَعَهُ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِشْرَاقِ (18) وَالطَّيْرَ مَحْشُورَةً كُلٌّ لَهُ أَوَّابٌ (19) وَشَدَدْنَا مُلْكَهُ وَآتَيْنَاهُ الْحِكْمَةَ وَفَصْلَ الْخِطَابِ (20)
এবং স্মরণ করো আমার বান্দা দাউদ (আলাইহিস সালাম)-কে, যে ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। নিশ্চয়ই সে ছিল অত্যন্ত আল্লাহ-অভিমুখী। আমি পর্বতমালাকে নিয়োজিত করেছিলাম, যাতে তারা তার সঙ্গে সন্ধ্যাবেলা ও সূর্যোদয়কালে তাসবীহ পাঠ করে। এবং পাখিদেরকেও, যাদেরকে একত্র করে নেওয়া হতো। তারা তার সঙ্গে মিলে আল্লাহর (অভিমুখী হয়ে) যিকিরে লিপ্ত থাকত। আমি তার রাজত্বকে করেছিলাম সুদৃঢ় এবং তাকে দান করেছিলাম জ্ঞানবত্তা ও মীমাংসাকর বাগ্মিতা।(সূরা সোয়াদ (৩৮), আয়াত ১৭-২০)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
وَأَلَنَّا لَهُ الْحَدِيدَ (10) أَنِ اعْمَلْ سَابِغَاتٍ وَقَدِّرْ فِي السَّرْدِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا
আর আমি তার জন্য লোহাকে নরম করে দিয়েছিলাম। যাতে তুমি পূর্ণ মাপের বর্ম তৈরি কর এবং কড়াসমূহ জোড়ার ক্ষেত্রে পরিমাপ রক্ষা কর। আর তোমরা সকলে সৎকর্ম করো।(সূরা সাবা' (৩৪), আয়াত ১০-১১)
আলোচ্য হাদীছ বলছে যে, হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতে পরিশ্রম করে কামাই-রোজগার করতেন এবং তা দ্বারা জীবন নির্বাহ করতেন। অর্থাৎ একজন শক্তিশালী ও বড় বাদশা হওয়া সত্ত্বেও তিনি রাজকোষ থেকে কিছু গ্রহণ করতেন না। জীবন নির্বাহের জন্য নিজ রোজগারের উপর নির্ভর করতেন। কীভাবে রোজগার করতেন, তা এ আয়াত দ্বারা জানা যাচ্ছে। অর্থাৎ তিনি লোহা দ্বারা আসবাবপত্র তৈরি করে তার বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করতেন।
বর্তমানে যারা লোহার বা কামার, অর্থাৎ যারা লৌহকর্মকে পেশা বানিয়ে তা দ্বারা জীবন নির্বাহ করে, তাদের জন্য হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের জীবনে আদর্শ রয়েছে। তাদের পেশা কেবল বৈধই নয়; বরং একজন মহান নবীর কাজও বটে। তাই এরূপ পেশাদারদের অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখা উচিত নয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. জীবন নির্বাহের জন্য পরনির্ভরশীল না হয়ে নিজ হাতে পরিশ্রম করা উচিত।
খ. নিজ হাতে পরিশ্রম করে খাওয়া হযরত দাউদ আলাইহিস সালামের আদর্শ।
গ. পূর্ববর্তী নবীগণও আমাদের জন্য অনুসরণীয়।
ঘ. কোনও বৈধ পেশাকে তুচ্ছ মনে করা উচিত নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)