মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)

তাওবা অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৫
তাওবা অধ্যায়
তাওহীদবাদী বান্দাদের জন্য আল্লাহর রহমত সম্পর্কিত

পরিচ্ছেদ: আল্লাহর রহমত তাঁর ক্রোধ থেকে অগ্রবর্তী থাকে
৩৫. আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ্ তা'আলা আসমান ও যমীন সৃষ্টি করার পূর্বে স্বহস্তে নিজের উপর অবধারিত করে কিতাব লিখে নিয়েছেন। তারপর সে কিতাবখানা তার 'আরশের নীচে রেখে দিয়েছেন, তাতে লেখা আছে আমার রহমত আমার ক্রোধের অগ্রবর্তী থাকে।
তাঁর দ্বিতীয় বর্ণনায় তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ যখন সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করে মুক্ত হলেন, তখন তিনি তাঁর 'আরশের উপর লিখে দিলেন, আমার রহমত আমার ক্রোধের অগ্রবর্তী থাকে।
তাঁর তৃতীয় বর্ণনায় তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা'আলা সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করার পর তাঁর কিতাবে লিখে দিলেন এবং তা তাঁর 'আরশের উপর রেখে দিলেন, আমার রহমত আমার ক্রোধের অগ্রবর্তী থাকে। অন্য শব্দে: আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর বিজয়ী থাকবে।
তাঁর চতুর্থ বর্ণনায় নবী করিম (ﷺ) বলেন, আল্লাহ্ যখন সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেন, তখন স্বহস্তে নিজের উপর অবধারিত করে লিখে নিয়েছেন, আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর বিজয়ী থাকবে।
كتاب التوبة
أبواب ما جاء في رحمة الله عز وجل لعباده الموحدين

باب في أن رحمة الله تعالى سبقت غضبه
عن أبي هريرة (6) عن النبي صلى الله عليه وسلم قال ان الله عز وجل كتب كتابا بيده لنفسه (7) قبل أن يخلق السموت والأرض فوضعه تحت عرشه فيه رحمتي سبقت غضبي (وعنه من طريق ثان) (8) قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لما فرغ الله من الخلق كتب على عرشه رحمتي سبقت غضبي (وعنه من طريق ثالث) (9) قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لما قضى الله الخلق كتب في كتابه فهو عنده فوق العرش إن رحمتي سبقت غضبي (وفي لفظ) غلبت غضبي (10) (ومن طريق رابع) (11) عن النبي صلى الله عليه وسلم قال لما خلق الله الخلق كتب بيده على نفسه ان رحمتي غلبت غضبي

হাদীসের ব্যাখ্যা:

উলামায়ে কেরাম বলেন, বান্দার প্রতি আল্লাহ তা'আলার দয়া ও ক্রোধ দ্বারা মূলত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাঁর ইচ্ছাকে বোঝানো হয়ে থাকে। সুতরাং বাধ্য ও অনুগত বান্দাকে ছাওয়াব ও প্রতিদান দেওয়া হচ্ছে তাঁর রহমত এবং অবাধ্যকে শাস্তিদান ও লাঞ্ছিত করা হচ্ছে তাঁর ক্রোধ।

এ হাদীছ দ্বারা আল্লাহ তা'আলার রহমতের ব্যাপকতা বোঝানো উদ্দেশ্য। অর্থাৎ বান্দা অপরাধ করলে আল্লাহ তা'আলা যত না দ্রুত শাস্তিদান করেন, তারচে' সৎকর্ম করলে অনেক বেশি দ্রুত পুরস্কৃত করেন। বরং আল্লাহ তা'আলা শাস্তিদানের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া আদৌ করেন না। বান্দা পাপ করলে তিনি ফিরিশতাকে অপেক্ষা করতে বলেন যাতে তাড়াহুড়া করে তা লেখা না হয়; বরং তাকে তাওবার সুযোগ দেওয়া হয়। তারপর আবার একটি অপরাধের ক্ষেত্রে একটি পাপই লেখা হয়। অপরদিকে সৎকর্মের ক্ষেত্রে লেখা হয় দশগুণ নেকী। আবার পার্থিব নি'আমতরাশিতে সাধারণভাবে তিনি কে বাধ্য কে অবাধ্য সে পার্থক্যও করেন না। এখানে তাঁর রহমত ও দয়া সকলের জন্য অবারিত। তিনি তাঁর আলো-বাতাস, মাটি-পানি, খাদ্যসামগ্রী প্রভৃতি কাফের-মুশরিককেও ভোগ করতে দিচ্ছেন। এই অবারিত রহমতের প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা আলা সূরা আ'রাফে ইরশাদ করেন
وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ
আর আমার দয়া, সে তো প্রত্যেক বস্তুতে ব্যাপ্ত।

তবে তাঁর খাস রহমত অর্থাৎ আখিরাতের নাজাত ও জান্নাতের অফুরন্ত নি'আমতরাজি কেবল মু'মিন-মুত্তাকীর জন্যই নির্ধারিত। সূরা আ'রাফের এ আয়াতেই এর পরে ইরশাদ হয়েছে-
فَسَأَكْتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَالَّذِينَ هُمْ بِآيَاتِنَا يُؤْمِنُونَ
‘সুতরাং আমি এ রহমত (পরিপূর্ণভাবে) সেইসব লোকের জন্য লিখব, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় এবং যারা আমার আয়াতসমূহে ঈমান রাখে।'

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

এ হাদীছ দ্বারা আমরা আল্লাহ তা'আলার রহমতের ব্যাপকতা সম্পর্কে ধারণা পাই । কাজেই কোনও অবস্থায়ই তাঁর রহমত থেকে হতাশ হতে নেই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান